somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটদের গল্প: সাফওয়ানের ঘুড়িভ্রমণ!

২২ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সাফওয়ানকে খুশি করার জন্য তার নানু বাসায় বেড়াতে এলে সবসময় একগাদা চকলেট নিয়ে আসেন। এবার একটু ব্যতিক্রম ঘটল। তিনি সাফওয়ানের জন্য নিয়ে এলেন ইয়া বড় একটা ঘুড়ি। দশাসই সাইজের ঘুড়িটা ৭ বছর বয়সি সাফওয়ানের প্রায় সমান। নিজের সাইজের ঘুড়ি পেয়েতো সাফওয়ান মহা খুশি। সে তখনি জেদ ধরল ঘুড়ি উড়াবে। নানু দেখলেন বাইরে প্রবল বাতাস। এখুনি ঘুড়ি উড়াবার উপযুক্ত সময়। নানু তাই তার নাতিকে নিয়ে পাশেই খোলা মাঠে ঘুড়ি নিয়ে গেলেন। নাটাই হাতে নিয়ে তিনি বললেন, যাও ঘুড়িটা উড়িয়ে দিয়ে আস। সাফওয়ান ঘুড়িটা হাতে নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে মাঠের শেষ প্রান্তে গিয়ে ঘুরে দাড়ালো। নানু বললেন, এবার ছাড়ো। কিন্তু ঝড়ো বাতাসের কারণে সাফওয়ান নানুর কথা শুনতে পেল না। নানু কিন্তু ভাবলেন সাফওয়ান নিশ্চয়ই ঘুড়িটা ছেড়ে দিয়েছে। তিনি সজোরে নাটাই ঘোরানো শুরু করলেন। ফলে যখন ঘুড়িটা আকাশে উঠে গেল তখন নানু খেয়াল করলেন সাফওয়ানের যেখানে দাড়িয়ে থাকার কথা সেখানে সাফওয়ান নেই! ঘুড়ি না হয় আকাশে উঠে গেল, কিন্তু সাফওয়ানটা কোথায় গেল?
দাদুতো পড়লেন মহাসমস্যায়। সাফওয়ানটা যে কই গেল! নাটাই ছেড়ে তাই তিনি সাফওয়ানকে খুঁজতে শুরু করতে চাইলেন যখন, তখন শুনতে পেলেন,

“নানু! নানু! এই যে আমি!”

চিৎকার শুনে নানু প্রথমে ডানে তাকালেন, তারপর বামে। না সাফওয়ানকে তো কোথাও দেখা যাচ্ছে না।

“নানু!! উপরে তাকাও!!”

নানু তখন ঘুড়ির দিকে তাকালেন। আরে! ঘুড়ির পিঠে ওই তো সাফওয়ান। তুমুল বাতাসে ঘুড়ি তো সাঁই সাঁই করে উড়ছে। আর ঘুড়িকে জাপটে ধরে উড়ছে সাফওয়ানও!!

“কী সর্বনাশ! কী সর্বনাশ!”

নানু তাড়াতাড়ি নাটাই ফেলে হাত দিয়ে ঘুড়ির সুতা টানতে থাকলেন। সাফওয়ানকে নিয়ে ঘুড়িটা দ্রুত নানুর দিকে আসতে থাকল। কিন্তু নানু জানেন, তাকে খুব সাবধানে ঘুড়ি নামাতে হবে। খুব দ্রুত টানলে আবার ঘুড়িটা চরকির মতো ঘোরা শুরু করবে। তখন সাফওয়ানের ঘুড়ি ধরে রাখতে সমস্যা হবে। তাই তিনি খুব সাবধানে কিন্তু যতোটা পারা যায় দ্রুত ঘুড়িটা টানতে থাকলেন। কিন্তু খানিক পরেই ঘটনাটা ঘটে গেল। ঘুড়িটা তার সুতা ছেড়ে ভোকাট্টা হয়ে গেল। স্বাধীনতা পেয়ে ঘুড়িটা তখন বাতাসের বেগে ছুটে চলা শুরু করল। নানুও চিৎকার দিয়ে দৌড় শুরু করলেন ঘুড়ির পিছু পিছু।

“বাঁচাও বাঁচাও!! সাফওয়ানকে বাঁচাও!!”

নানুর চিৎকার শুনে মাঠে উপস্থিত সকলে ঘুড়ির পিছু ছুটল।

ওদিকে সাফওয়ান তো পাখির মতো উড়ে চলেছে। তার কতো স্বপ্ন ছিল পাখির মতো যদি উড়া যেতো কখনো! তার সেই স্বপ্ন আজ যেন সত্যি হল। ওই তো দেখা যাচ্ছে সাফওয়ানের স্কুল। নানু আসা উপলক্ষে আজ সাফওয়ান স্কুলে যায় নি। সে তার স্কুলের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ল আর বন্ধুদের নাম ধরে চেঁচাতে থাকল। বন্ধুরা সবাই তখন ক্লাস করছিল। হঠাৎ করে তাদের একজনের সাফওয়ানের আকাশে ওড়া চোখে পড়ে গেল। অমনি ক্লাস ফেলে সবাই একসাথে বাইরে বের হয়ে এল। সাফওয়ানের বয়েসী সকল বাচ্চাদের কাছে ঘুড়িতে করে সাফওয়ানের আকাশে উড়াটা মোটেও ভয়ের বলে মনে হল না। তারাও নীচে থেকে সাফওয়ানকে ডেকে তাদেরকে সাথে নিতে বলল। কিন্তু সাফওয়ান ততোক্ষণে তাদের সবার চোখের আড়ালে চলে গেছে।

খবর যেন সাফওয়ানের ঘুড়ির চাইতে দ্রুতবেগে ছড়িয়ে পড়ছে। সকল টিভি সাংবাদিকরা তাদের টিভি ক্যামেরা নিয়ে সাফওয়ানের অদ্ভুত ভয়ানক সেই উড়ে চলা লাইভ টেলিকাস্ট করা শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। পুলিশ ও র‌্যাব কর্তৃপক্ষ চলে এসেছে সাফওয়ানকে উদ্ধার করার জন্য। কেউ কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছে না। কী করা যায়, কী করা যায়?
এর মধ্যে অদ্ভুত একটি দৃশ্য দেখা গেল আকাশে। কোথা থেকে জানি এক দল পাখিও সাফওয়ানের ঘুড়িকে ঘিরে উড়ে চলছে। দেখে মনে হল পাখিদল সাফওয়ানকে এসকর্ট করে নিয়ে চলেছে অজানা কোন দেশে। দোয়েল, টিয়া, ময়না, ঘুঘু, কাক, ঈগল, চিল- কোন পাখিই বাদ পড়ে নি।

সাফওয়ানের বাবা-মার কাছেও খবর চলে গেছে ততোক্ষণে। সবার সাথে তারাও ছুটে চলেছেন সাফওয়ানকে উদ্ধার করার জন্য। হঠাৎ করে তখনই ঘটল ঘটনাটা। ঘুড়িটা আটকে গেল উঁচু একটা ইউক্যালিপটাস গাছের সাথে। আর সাফওয়ানও গাছের ডাল ধরে ঝুলে পড়ল। ভাগ্য ভাল, সাফওয়ান কিন্তু আরো অনেক আগে থেকেই গাছ চড়া জানতো। সে গাছ বেয়ে মিনিট দুয়েকের মধ্যেই নীচে নেমে এলো। সাফওয়ানকে ফিরে পেয়ে সকলেই খুশি হলো। আর নানুকে তার অসাবধানতার জন্য সবাই গালমন্দ করতে থাকল।

সাফওয়ান কিন্তু দৌড়ে নানুর কোলে উঠে গিয়ে বলল,
“তোমাকে ধন্যবাদ নানু। আমাকে আকাশে উড়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য।”
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৭
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×