somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটদের গল্প: সাফওয়ান যখন মুক্তিযোদ্ধা!

৩১ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে অবাক করা একটা ঘটনা ঘটেছে। সাফওয়ান নামের দশ বছরের এক ছেলে মুক্তিযোদ্ধা সনদের জন্য আবেদন করেছে। প্রথম দিকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এটাকে পাগলের প্রলাপ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ যখন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ব্যাপারটা তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন, তখন তিনি আসলেই চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। নির্দেশনার সাথে প্রধানমন্ত্রী ছেলেটার লেখা একটা চিঠি সংযুক্ত করে দিয়েছেন। তিনি চিঠিটা পড়া শুরু করলেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
ঘটনাটা গত বছরের। পত্রিকা পড়তে পড়তে জানতে পারলাম, অলেক্সান্ডার রবিন নামের কোন এক বিজ্ঞানী নাকি টাইম মেশিন আবিষ্কার করেছেন যা দিয়ে অতীতে ভ্রমণ করা যায়। খবরটি পড়ে খুব পুলকিত হয়েছিলাম। সাথে মন খারাপও হয়েছিল এ জেনে যে মেশিনটি সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বাজারজাত করতে করতে আরো বছর দশেক লেগে যাবে। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার ফেসবুকে হঠাৎ করে একটা রিকোয়েস্ট আসল। রিকোয়েস্ট যিনি পাঠিয়েছেন তার আইডি আলেক্সান্ডার রবিন। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাক্সেপ্ট করার পর তিনি ধন্যবাদ দিয়ে একটা টেক্সট দিলেন। তিনি নিজেকে টাইম মেশিনের আবিষ্কারক পরিচয় দিয়ে আরো লিখলেন, পরীক্ষামূলকভাবে তিনি আমাকে টাইম মেশিনটা চড়তে দিতে চান। উন্নত দেশগুলোর বিজ্ঞানীরা গরীব দেশের মানুষদের তাদের গবেষণার গিনিপিগ বানায় এটা জেনেও আমি আলেক্সান্ডারের দেয়া সেই সুযোগটা লুফে নিতে সময় নিলাম না। ফিরতি টেক্সট এ আমার সে ইচ্ছের কথা জানালাম। তিনিও শর্ত জুড়ে দিলেন বিষয়টা গোপন রাখতে হবে।

তার ঠিক পনের দিনের মাথায় গভীর রাতে দেখি ফেসবুক মেসেঞ্জারে আলেক্সান্ডার সাহেবের কল। জানালেন, উনি আমাদের বাসার সামনের মাঠে দাড়িয়ে আছেন। আধা ঘন্টার জন্য বেরুতে বললেন। ঘরের জানলা দিয়ে চুপি চুপি বের হয়ে গেলাম আমি। দুরু দুরু বুকে মাঠে গিয়ে দেখি গোল বলের মতো বিশাল সাইজের একটা কিছু মাঠের ঠিক মাঝখানে দাড়িয়ে আছে। আর তার ঠিক সামনে দাড়িয়ে আছেন বিজ্ঞানি ড. আলেক্সান্ডার রবিন। ফেসবুকে তার প্রোফাইল থেকে তার ছবি আগেই দেখে নিয়েছিলাম। হ্যান্ডশেক করার পর তিনি আমার কাছে জানতে চাইলেন আমি ঠিক কোন সময়টায় যেতে চাই। উত্তরটা আমি আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম। বল্লাম, আগে জন্মিনি বলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পারি নি। তাই আমি সেই ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যেতে চাই। আমার ইচ্ছের কথা শুনে আলেক্সান্ডার সাহেব খুব অবাক হলেন। বললেন, খুব রিস্কি সময়টাই তুমি বেছে নিলে। আচ্ছা, যেতে চাচ্ছো যখন যাও। কিন্তু মনে রেখো ওখানে তুমি মাত্র পনেরো মিনিট সময় থাকতে পারবে। তার পিছু পিছু আমিও গোল বলের মতো দেখতে টাইম মেশিনের ভেতর ঢুকলাম। ডক্টর সাহেব মেশিনের একটিমাত্র সিটে বসে ড্রাইভিং মডিউলে তারিখ ঠিক করে দিলেন ২০/০৭/১৯৭১। তারপর উনার পকেট থেকে একটা পিস্তল বের করে দিয়ে বল্লেন, এটা সাথে নিয়ে যাও। কাজে লাগতে পারে।

উনি বাইরে চলে গেলে কিছুক্ষণের মধ্যেই খুব দ্রুত গতিতে মেশিনটা ঘুরতে শুরু করল। আমি ড্রাইভিং মডিউলে ধরে চোখ বুজে ফেললাম। খুব ভয় করতে থাকল আমার। কিছুক্ষণ পর মেশিনটা স্থির হয়ে থাকল। আমি ধীরে ধীরে দরজা খুলে বের হয়ে এলাম। চারদিকে অন্ধকার আর মুহুর্মুহু গুলির আওয়াজ। বুঝলাম সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রেই চলে এসেছি। অন্ধকার সয়ে এলে দেখতে পেলাম আমার ঠিক সামনেই খাকি পোষাক পড়া দশ পনেরজন মানুষ মাটিতে হামাগুড়ি দিয়ে সামনের দিকে গুলি করছে। আর সামনের দিক থেকে বাবা রে, মা রে বলে চিৎকার ভেসে আসছে। আমি বুঝলাম আমার সামনে যারা তার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এটা বুঝতে পারতেই পুরোটা মন জুড়ে চরম ঘৃণা জেগে উঠল। চিৎকার দিয়ে পকেটে রাখা পিস্তলটা বের করলাম। হঠাৎ পেছন থেকে শব্দ শুনতে পেয়ে এবং টাইম মেশিনটার আলোর ঝলকানিতে হানাদার বাহিনী হকচকিয়ে পেছন ফিরে তাকাল। আর আমিও এক নাগাড়ে গুলি করতে করতে সবকটা জানোয়ারকে আহত করে ফেললাম। তখন অন্ধকারের ভেতর থেকেই মুক্তিবাহিনীর উল্লাস ধ্বনি শুনতে পেলাম। তারা দৌড়াতে দৌড়াতে আমার দিকেই এগিয়ে আসছিল। কিন্তু আমার তো তখন সময় শেষ! আমি তাড়াতাড়ি দৌড়ে টাইম মেশিনে উঠতে গেলাম। হঠাৎ ডান পায়ের পেছনে একটা আঘাত লাগল। বুঝলাম, নীচে পড়ে থাকা আহত হানাদারদের কেউ গুলি করেছে আমায়। তবু দাড়ালাম না। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দৌড়াতে থাকলাম। একসময় মেশিনে উঠে গেলাম, আর মেশিনটাও চলতে শুরু করল। আমাকে ফিরে আসতে দেখে গবেষক বুঝলেন তার অ্যাক্সপেরিমেন্ট সফল হয়েছে। গুলি লাগার প্রাথমিক চিকিৎসাটাও বোধ করি তার জানা ছিল। তিনি আমার পায়ের আঘাত পাওয়া জায়গাটা দেখে বললেন, অল্পের জন্য গুলিটা ভেতরে প্রবেশ করে নি। আমাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তিনি বিদায় নিয়ে টাইম মেশিনে উঠে গেলেন। আর আমিও বাসায় ফিরলাম।

তারপর থেকে আমি আমার আগের মতো করেই সময় কাটাচ্ছিলাম। কিন্তু কিছুদিন আগে একটা ওয়েবসাইটে এক মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার পড়ার পর আমার মনে হলো আমিও মুক্তিযোদ্ধা সনদ পাওয়ার অধিকার রাখি। আপনার সুবিধাটার জন্য সেই সাক্ষাৎকারটার স্ক্রীনশট আর আমার ডান পায়ের সেই আঘাতের চিহ্নটার একটা ছবি সংযুক্ত করে দিলাম।

বিনীত
সাফওয়ান সামী

কর্মকর্তা সাহেব এবার ওয়েবাসাইটের সেই স্ক্রীণশটটি পড়া শুরু করলেন।

“মোহনপুর ক্যাম্প ঘেষে আত্রাই নদীটি চলে গেছে ভারতীয় সীমানায়। এক সন্ধ্যায় নদীর সে পথেই নৌকা নিয়ে আমরা চলে আসি গন্তবের কাছাকাছি। সন্ধ্যা গড়িয়ে আসে মধ্যরাত। সবাই পজিশন নেই একটা কবরস্থানের ভেতর। অপেক্ষার পালা। রাত দেড়টা। পরিকল্পনা ছিল ভারতীয় সীমান্ত থেকে প্রথমে মোহনপুর ভিওপি ক্যাম্প লক্ষ্য করে শেল নিক্ষেপ করা হবে। তাই হল। শত শত শেল গিয়ে পড়ল ক্যাম্পে। কিন্তু অবাক কান্ড। পাকিস্তানী সৈন্যদের কোন প্রত্যুত্তর নেই। সবাই পালিয়ে গেল নাকি? এই ভেবে আমরা এগোই সামনে। চলে আসি ক্যাম্পের ১৫০ গজের ভেতর। ওমনি বৃষ্টির মতো গুলি চালায় ওৎ পেতে থাকা পাকিস্তানী সৈন্যরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পাশে কয়েকজনকে দেখি গুলিবিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত শরীরে গোঙাচ্ছে। “মারে, বাবারে, বাঁচাও” এরকম আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠে বাতাস। হঠাৎ তখনই আমরা সবাই দেখতে পাই আকাশ থেকে বলের মতো কিছু একটা নেমে আসল মাটিতে। আর সেটা থেকে বের হয়ে এল এক ভিনগ্রহী এলিয়েন। দেখতে সে অনেকটা মানুষের মতোই। একটু পরেই তার হাতে অত্যাধুনকি একটা অস্ত্র ঝলসে উঠতে দেখলাম। এবং মুহুর্তের মধ্যে পাকিস্তানী বাহিনী থেকে ধেয়ে আসা গুলিবর্ষন থেমে গেল। আমরা বুঝতে পারলাম, আমাদের জন্য আকাশ থেকে এক দৈব সাহায্য নেমে এসেছে। আমরা বিজয়োল্লাস করতে করতে এগুতে থাকলাম। কিন্তু আমাদের এগিয়ে যাওয়া দেখে সেই এলিয়েনটা তার ফ্লাইং সসারে উঠে গেল। তারপর বল সদৃশ সেই বাহনটি মুহুর্তের মধ্যে উধাও হয়ে গেল।”

পড়া শেষে এবার কর্মকর্তা সাফওয়ানের পাঠানো পায়ের সেই ছবিটাও দেখলেন। তাতে খুব স্পষ্ট করেই বুঝা গেল পায়ের সেই ক্ষতটা গুলি লাগার কারণেই হয়েছে।

সবকিছু নিরীক্ষার পর তবু তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি আরো একটু ইনভেস্টিগেট করবেন। সেই বিজ্ঞানীর সাথে কথা বলার চেষ্টা করবেন। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেল সেই বিজ্ঞানী আর বেঁচে নেই। সেই টাইম মেশিনের আইডিয়াটাও তিনি প্রকাশ কের যেতে পারেন নি।

কমকর্তা তাই বাধ্য হয়েই সাফওয়ানকে মুক্তিযোদ্ধা সনদ প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিলেন।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:১৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×