somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কি করি আজ ভেবে না পাই , পথ হারিয়ে কোন বনে যাই

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত হয়ে উঠলে জহুর স্যার উদাস হয়ে বলেন কবে যে বাড়ি যাব.......!!! তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে হয়ত বলবেন বেশি করে খাও ,শোনো এখানে খাওয়াটাই একটা বিনোদন । সময় যত বাড়ছে সবার হাঁপিয়ে উঠার মাত্রাটাও বেড়ে যাচ্ছে । মিশনের প্রথমদিকের পরম আরাধ্য বিষয় যেমন টিভিতে ডিশ সংযোগ,ইন্টারনেট সুবিধা এবং নিয়মিত বিনোদনের অন্যান্য ব্যবস্থা যেমন ভলিবল খেলা,স্ক্রাবল খেলা,কার্ড খেলা এসবকিছু এখন দিনের আকাশের চাঁদের মত কম আকর্ষনীয় মনে হয় । নিজেদের ক্যাম্পের চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া, উঁচু কয়েকটা নিরাপত্তা পোস্ট, গেইটে ভারী অস্র হাতে সতর্ক প্রহরী সব মিলিয়ে গল্পের একটা জেলখানার বর্ণনার কথা মনে পড়ে । কোম্পানি সদরে থাকলে শুধু এমনটা অনুভব হয় কারণ কাজ ছাড়া বাহিরে যাওয়ার কোনো উপায় নাই নিরাপত্তা জনিত কারণে । ডানে বামে সামনে পিছে উপরে নিচে আশেপাশে যত গ্রাম আছে সব দেখা হয়ে গেছে।গ্রামই বা আর কত দেখব ? আমার বাড়ি চৌদ্দগ্রাম তারপর সেই জোবরা গ্রাম পাঁচ বছর ওখানে ছিলাম(চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ) ।সেখান থেকে পদোন্নতি হয়ে সোজা কঙ্গোর গ্রাম ।এখন সয়ে গেছে কারণ এক জায়গায় বেশি দিন থাকায় মোটামুটি শিকর গজিয়ে যাওয়ার অবস্থা । প্রাদেশিক রাজধানী বুকাভু ৬৪ কি মি দুরে তাই উপলক্ষ্য ছাড়া যাওয়া হয়না । অনেকে যখন জানতে চায় রাজধানী কিনসাসার কথা আমি বলি আমার অবস্থা গ্রামের সেই কৃষক গনি মিয়ার মত যে কখনো ঢাকা শহর দেখেনি ।শুনেছি ১৬০০ কিমি দুরের এই শহরে গরিব কঙ্গোর ধনী লোকদের বসবাস ।
দেশের চিন্তা একটু ভুলে থাকার জন্য কত আয়োজন । দেখা হলেই শাকিল স্যার বলেন কি হে যুবক খবর কি । আরো আছে কথার ফাঁকে ফাঁকে উনার বিখ্যাত ডায়ালগ " ইয়া আসকারী কুল্লু খালাস ,কুল্লু কয়েস " সম্ভবত এর অর্থ হে সৈনিকেরা সব কাজ শেষ ,সব ভালো হয়েছে । হাসি কান্না আশে পাশের মানুষকে সংক্রমিত করে সেজন্য সবাই উনার উঁচু মাত্রার প্রাণ খোলা হো হো হা হা হাসিতে আমোদিত হন। সুন্দর পরামর্শের জন্য তানভির স্যারকে ধন্যবাদ। স্যার বলেন পড়া শুনা করতে পারো সময়টা ভালো কাটবে। আমি ভাবি ' বই পড়া ভালো ছেলে ভাঙ্গা তার স্বাস্থ্য ,মোটামোটা বই গিলে সে আস্ত ' ছড়াকারের সেই ছাত্রটির মত আমি আর সে রকম রইলাম কই । বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সব রেখে এসেছি । কেমন যেন আদু ভাই টাইপের মনন ও মেধা কাজ করছে আমার মধ্যে । বই দেখলে ভয়ে আমার " জল তেষ্টা পায় "।মেজর মিজান স্যার বরাবরই একজন পজিটিভ মানুষ। বেশি বেশি কথা বলার জন্য তিনি সবসময় তাগাদা দেন কারণ আমার কথা বলার পরিমানটা আশংকাজনক ভাবে কমে গেছে। ছোট কাল থেকে আমি একজন স্বল্পভাষী মানুষ কিন্ত এখানে এটা এতটাই কমে গেছে যে একদিন রাতে গুনছিলাম সারা দিনে কয়টা কথা বলেছি । আমার খুব মনে পড়ছে আরিফ স্যারের কথা।তিনি দেশে ছুটিতে চলে গেছেন আরো আগে । মিশনে মানসিক ভাবে সেট হবার জন্য স্যার অনেক সাহায্য করেছেন। মন খারাপ দেখে একদিন আমাকে জোর করে দই খাইয়ে বললেন " কাইয়ুমু ( তিনি কঙ্গোলিজ বাচ্চাদের মত করে ডাকতেন ) দই খাবা বেশি , শরীর ও মন দুইটাই ভালো থাকবে । এই মুবনে( সাউথ কিভু প্রদেশের ওয়ালুন্গু অঞ্চলের এই গ্রামে আমাদের কোম্পানি সদর অবস্থিত ) দই বানানোর আইডিয়াটা চাকা আবিস্কারের মত এক বিশাল মাইলফলক "।মেজর আমিন স্যারের উদ্যোগে আমাদের ক্যাম্পের পেছনের উঁচু পাহাড়ের বুতুজা গ্রামে গিয়ে দুই দিন ফুটবল খেলে এসেছি। আমাদের ভালোই লাগছিল খেলার সুযোগ পেয়ে ।ডাক্তার মাসুদ স্যারের কি খেলে কি হয় চিকিত্সা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সেটা ব্যাখা করে নিয়মিত খাওয়া ও ব্যায়ামের উত্সাহ দেয়াটা মনে থাকার মত ঘটনা ।রুমমেট এনাম স্যার সারাবছর ব্যাপী বিশেষ করে জানতে চাইলেন বিশেষ কারো কথা " কি যোগাযোগ হয়েছে তো ? "। কোনো জবাব পাননি কখনো ,আরে থাকলেই তো পেতেন ,তবু নিরলস ভাবে জিগ্গেস করে গেছেন । তাঁর ধ্যৈর্য দেখে অপর রুমমেট মামুন স্যার আর আমি যখন হাসি তখন তিনিও আমাদের সঙ্গী হন। রুমের ভিতর হোয়াইট বোর্ড এর উপর নানা রকম লেখালেখি , আঁকাআঁকি দেখে যে কারো মনে হতে পারে এটা কোনো ক্লাস রুম এখনই কোনো টিচার লেকচার দেবেন । খালিদ স্যারের রুমে পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ততার চিত্র এটি । ভালো লাগল কারণ সময়টা ভালো ভাবে কাজে লাগিয়েছেন একমাত্র তিনিই । আমাদের কমান্ডার জাকির স্যারের অংশগ্রহণে মিশনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ফিল্ড মেসের প্রতিদিনের প্রানবন্ত আলোচনা ও জমজমাট আড্ডাটা বেশ উপভোগ্য ছিল । আনোয়ার স্যার ও আমিরুল স্যারের ক্যাম্পের লোকজনের প্রতিদিন ৮০ কি মি পথ পাড়ি দিয়ে খাওয়ার পানি নিয়ে আসাটা আসলেই অবাক হওয়ার মত ব্যাপার ।
অবসরে সৈনিকদের কেউ কেউ সবজি বাগান করে যাদের একজনের কথা আলাদা করে বলতেই হবে ।মশালচী আবুলের শসা বাগানের সাফল্যগাঁথা অত্র ক্যাম্পে একটি উল্ল্যেখযোগ্য ব্যাপার । অধিনায়ক মহোদয় থেকে শুরু করে সকল অফিসার শসা খেয়ে সন্তুষ্ট । বেচারা আমাদের কন্টিনজেন্টের একজন দুর্বল অথচ তুলনামূলক কর্ম তত্পর লোক যে প্রায়ই অধিক দুর্বলতা হেতু জ্ঞান হারায় । আমরা কিছুটা চিন্তাগ্রস্ত হই ।
আমাদের একটি ক্যাম্পের অবস্থান গভীর জঙ্গল ও পাহাড় ঘেরা স্বল্প বসতির লুবিম্বে টু গ্রামে।ওই জায়গাটা দেখে আমার প্রথম অনুভুতি হয়েছিল - এখানে ক্যামনে মানুষ থাকে !! পরে জানলাম তার চেয়েও ধারণাতীত গহীন জঙ্গলে মানুষের বাড়ি ঘর আছে।এ এলাকাটাকে "রেইন ফরেস্ট " বলা হয় । বিনা নোটিশে প্রতিদিন দুপুর থেকে দুম দাম শব্দে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত এখানে অতি সাধারণ ঘটনা। তখন আকাশ মেঘে ঢাকা শাওন ধারা ঝরে গাওয়ার পরিবর্তে আমি হিসাব করি ৩৬৫ দিনের আর কয় দিন বাকি আছে । ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় বিকেল বেলা ঘুরাফেরা করার জায়গা নাই ওখানে।কারো ঘুরার জন্য মন চাইলেও ক্যাম্পের চারপাশে একনজর তাকালেই কবিতার লাইন মনে পড়বে " কি করি আজ ভেবে না পাই পথ হারিয়ে কোন বনে যাই " ।

জহিরুল কাইয়ুম
মুবনে . ডি আর কঙ্গো
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১১ সকাল ১০:৫৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×