সুতপা বসেই ছিল...বিছানার উপরে। দুই হাতে গাল ভর করে...ঘুম থেকে উঠার পরের এই আধা ঘন্টা ঘোরের মধ্যেই থাকে...শত ব্যস্ততার মাঝেও এই অভ্যাস ছাড়তে পারে নি.।খুব যে আন্তরিক ইচ্ছা ছিল, তাও না। চুপচাপ বসে থেকে ভাবতে ভালই লাগে ,মনে মনে ভেবে নেয়া আজকে কি কি করার আছে। কাজে আসে। আজকের কথা আলাদা, স্ব-ঘোষিত ছুটির দিন। মেরীল্যাণ্ডের ব্যস্ত জীবনে অবাস্তব আনন্দ। আজকে তাদের বিয়ের এক বছর।দেশ থেকে আসার আগেই জানতো সময়ের অভাব থাকবে,কিন্তু এত তা আসলেই ভাবে নি। চুপ করে বসে ভাবছিল সে কথাই।এক বছর??সত্যিই??কবে?রাসেল অফিসে।কখনই সকালে বিরক্ত করে না ,ইনটেলের চাকরিতে সুতপার মজা।atleast ভোর ৬টায় ঘুম থেকে উঠতে হয় না।সুতপা মিটিমিটি হাসলো,রাসেল কখনোই ইমোশনকে পাত্তা দেয় নাই,man of rules.আর সুতপা??emotional fool!!রাসেলের মনে অবশ্যই আছে,রাতের বেলায় ঠিক মতই পেয়ে যাবে ফুলের বোকে,ডায়মণ্ড অথবা দামি সুগন্ধী অথবা একটা চেক।ভুল ভাবছেন..রাসেল কিন্তু আসলেই ভালো হাসব্যাণ্ড।সুতপা আবার শুয়ে পরলো,রাসেল কখনোই ভাববে না,সুতপাকে আজকে আবার বিয়ের শাড়িতে দেখি,যদিও পরলে খুশিই হবে,কিন্তু ও কখনোই নিজে চাবে না।জোরেই হেসে ফেললো.,কেউ জানতে পারলে ভাববে কি অসুখি আমরা।আসলে রাসেল অমনই,সবসময়ই..loving,caring and responsible husband.ভালোবাসার বিয়ে ওদের।বিয়ের আগেও এমনই ছিল।সুতপা উঠে পড়লো,আজকে অনেক রান্না-বান্না।বিশাল মেনু।কেক বেক করাও বাকি।হঠাৎ করেই মনে পড়লো,তারিক ভাই চলে যাবেন দেশে আর দুইদিন পরে ,বলেছিলেন দেশে কিছু পাঠাতে চাইলে যেন দেই,উনার ব্যাগ খালি।তড়িঘড়ি করে দৌড়ালো আউটলেট মলে।
সুন্দর লাগছে,রাসেল বলে উঠলো, আমি ভাগ্যবান,বউকে মিথ্যা বলতে হয় না।সুতপা হাসতে হাসতে বললো,রাসেল ভালোবাসি তোমাকে অনেক।বলা শেষ হবার আগেই রাসেলের বুকে আশ্রয় পেল।আহ্!!সুতপা ভাবলো,এই এক মিনিটের বিনিময়ে ওর সারাজীবন দিয়ে দিতে পারে,অনেক ভালোবাসি তোমাকে।খাবে চলো।ওয়াও!!কখন রাধলে এতকিছু?জানতে হবে না এত কথা,খাও তো আগে!
কেক বের করতে করতে সুতপা বললো,তারিক ভাইয়ের অফিস তোমার দুই ব্লক পরেই,SO,তুমি কালকে মনে করে উনাকে প্যাকেট টা ড্রপ করবে।OK?কিসের প্যাকেট?দেশে পাঠাচ্ছি। ননদিনীর জন্মদিন গেল না?আর আমার ভাইয়ের ছেলের জন্য একটা ট্রাক।সুতপা খেয়ালও করলো না,রাসেলের চোখ-মুখ শক্ত হয়ে যাচ্ছে।তোমার ভাইয়ের ছেলে মানে?এই বাসা থেকে তোমার ভাইয়ের ছেলের জন্য এক পয়সার জিনিসও যাবে না।হিন্দি সিরিয়ালের মত মনে হলেও,এটা যে বাস্তবে ঘঠছে,তা নিয়ে সুতপার কোন সন্দেহ হল না।খালি একটাই সমস্যা,কেন?উত্তর আসলো,ওরা secondary.আজকে ১০ডলারের খেলনা,আগামীকাল১০০০ ডলারের চেক।trust me,আমি খুব ভালো করে জানি।শোন,কাউকেই কিছু পাঠানোর দরকার নেই।ব্যাস.end of discussion.
চোখের উপরে হাত রেখে শুয়ে রাসেল ভাবছিল নিজের জীবনের কথা,ছোটবেলার কথা।আব্বু-আম্মু বাসায় নেই,ছোট্ট রাসেল খেলছে,বড় ফুপি এসে কান ধরে নিয়ে গেল বাসায়,ফুপির টেবিলে ছোট দুই পায়ের ছাপ।টেবিলের উপরের তাকেই ছোট চাচুর কমিক্সের সব বই কিনা!দুই ঘন্টার প্রথম এক ঘন্টা রাসেল বের হওয়ার চেষ্টা করেছিল,মাকড়শাওয়ালা বাথরুমটা ও বরাবরই ভয় পেত।আব্বু যে কেন ওকেই আরো বকা দিল,সেটা আজো রাসেল জানেনা।কিন্তু এটুকু জানে,ওরা ভাই-বোন আর মা,আব্বুর কাছে secondary...আজো।আজ যেন আব্বুর জন্মই দেখলো সুতপার মধ্যে।ওর নিজের ভালোবাসাকে ও নষ্ট হতে দিবে না....কিছুতেই না।ব্যাগে পড়ে রইল ব্রডওয়ের টিকেট আর সুতপার নাম লেখা ব্রেসলেট।
দেয়ালের দিকে মুখ করে শুয়ে সুতপা ভাবছিল,একটা খেলনা ওর ভালোবাসাকে মরণাপন্ন করে দিল?এত সহজ?হাতের উপর দু ফোটা পানি পড়ভেই মনে হলো কারোরই এই দুনিয়াই কাঁদা উচিত না,যখন চোখের পানি মুছে দেওয়ার কেউ থাকে না।tonight,it's gonna be a long night....

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





