হিজবুত তাওহীদের কাছে আমার প্রশ্নের
বিস্তারিত উত্তর দিয়েছেন তারা
১. প্রশ্ন: রাষ্ট্রধর্ম কি হবে ।
ইসলাম,অসাম্প্রদায়িক,ধর্ম যার যার দেশ
সবার।
রাষ্ট্রধর্ম কথাটি নব-উদ্ভাবিত। এরশাদের
সময় এই ভাওতাবাজি সৃষ্টি করা হয়েছে
ধর্মবিশ্বাসী মুসলিমদেরকে ধোঁকা দিয়ে
জনপ্রিয়তা হাসিল করার জন্য। এটা এক
প্রকার ধর্মব্যবসা।
.
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম শুধু সংবিধানের পাতায়
লিখে রাষ্ট্রব্যবস্থায় কোনো বুনিয়াদি
পরিবর্তন না এনেই সস্তা জনপ্রিয়তা
অর্জনের একটি কৌশল ছিল এটি।
.
রাষ্ট্র হলো মানবসমাজের একটি বৃহত্তর
সংগঠন। কয়েকটি মানুষ মিলে পরিবার হয়,
কয়েকটি পরিবার মিলে সমাজ হয়। সমাজস্থ
নাগরিকগণ কতগুলো মৌলিক শর্তসাপেক্ষে
ও মৌলিক প্রয়োজন পূরণের জন্য একটি
বৃহত্তর সমবায় গড়ে তুলেছে তাকে রাষ্ট্র
বলা হচ্ছে।
.
বর্তমানে যে রাষ্ট্রব্যবস্থা বিরাজ করছে
তা একটি আধুনিক রূপ। রাষ্ট্র এখন মানুষের
জীবনের প্রতিটি বিষয়ে ইন্টাফেয়ার
করছে, প্রতিটি বিষয়ের উপর করারোপ
করছে।
.
অতীতে কোনো কালে এত ব্যাপকহারে কর
আদায় এবং জনগণের সার্বিক বিষয়ের উপর
এত খবরদারি কোনোকালে ছিল না। মানুষ
অনেক স্বাধীনতা ভোগ করত, কিন্তু এখন
সিস্টেমের বেড়ি তাকে প্রতি পদে পদে
স্মরণ করিয়ে দেয় যে সে আধুনিক রাষ্ট্রে
বসবাস করছে।
.
ধর্মের যে রূপ বিশ্বময় এখন তৈরি হয়েছে, এ
জাতীয় রূপ দিয়ে স্রষ্টা কোনো কালে ধর্ম
পাঠান নি। উপাসনালয় কেন্দ্রিক, পুরোহিত
নির্ভর, অনুষ্ঠানসর্বস্ব যে ধর্ম আমরা
দেখছি এটা সম্পূর্ণ নতুন ধারণা যা মধ্যযুগে
ইউরোপে বিকশিত হয়েছে।
.
ধর্মগুলো চিরকালই ছিল একটি সামষ্টিক
জীবনব্যবস্থারূপে। মানুষের ব্যক্তিগত,
পরিবার, সমাজ, অর্থনীতি, দণ্ডবিধি,
প্রশাসন, শিক্ষা সবকিছু মিলিয়ে কীভাবে
পরিচালিত হবে তা স্রষ্টা, আল্লাহ, ঈশ্বর
তাঁর নবী-রসুল-অবতারদের মাধ্যমে
পাঠিয়েছেন।
.
ঐ বিধানগুলোও ঐ সমাজের মানুষের
জীবনযাত্রা, সংস্কার ইত্যাদির সঙ্গে
মানানসই ছিল। ঐ জীবনব্যবস্থা অনুসরণ
করার ফলে সেই সমাজে বাসকারী সকলেই,
সব বিশ্বাসের মানুষই এমন কি
অবিশ্বাসীরাও সমানভাবে শান্তি
পেয়েছে, সুফল পেয়েছে।
.
কাজেই রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম কথাটি ভুল। এমন
কোনো সিস্টেম আল্লাহ রাখেন নি।
ইসলাম একটি জীবনব্যবস্থা যেমন গণতন্ত্র,
সমাজতন্ত্র একটি জীবনব্যবস্থা।
.
“ধর্ম যার যার, দেশ সবার” - এ জাতীয়
মুখরোচক কথা আসলে ধর্মকে সামষ্টিক
জীবন থেকে বিতাড়িত করার পাঁয়তারা
মাত্র। কারণ রাষ্ট্রীয় জীবন থেকে ধর্মকে
আলাদা করার কারণেই আজ মানুষের জীবন
ভারসাম্য হারিয়ে, নৈতিক অধঃপতনের
শিকার হয়েছে।
.
ধর্মহীন সামষ্টিক জীবনের প্রভাবে
ব্যক্তিজীবন তার ধর্মবোধ হারাতে বাধ্য
হয়। যেমন রাষ্ট্রীয় জীবনে যদি সুদ প্রচলিত
থাকে তাহলে ব্যক্তিগতভাবে মানুষ সুদমুক্ত
থাকতে পারে না। আমাদের কথা হচ্ছে
“ধর্ম সবার দেশও সবার”।
.
ধর্মের উদ্দেশ্য মানবকল্যাণ, রাষ্ট্রের
উদ্দেশ্যও মানবকল্যাণ। তাহলে ধর্ম ও
রাষ্ট্র কেন একে অপরের পরিপূরক হতে
পারবে না? আমরা বিশ্বাস করি, বৃহত্তর
জনগোষ্ঠীর ধর্মবিশ্বাসকে সঠিক খাতে
প্রবাহিত করা গেলে ধর্মবিশ্বাস দেশ ও
জাতির কল্যাণে, উন্নয়নে কাজে লাগানো
সম্ভব। সে উপায় আমাদের জানা আছে।
২. জিজিয়া কর
.
আগে এদেশের জনগণকে বুঝতে হবে ন্যায়-
অন্যায়ের পার্থক্য কি? চলমান
জীবনব্যবস্থার অসারতা মানুষকে বুঝতে
হবে। যদি তারা বুঝতে পারে তাহলে হতে
পারে সব ধর্মের মানুষই অন্যায়ের বিরুদ্ধে
এবং ন্যায়ের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হবে।
.
যদি কোনো ব্যক্তি ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান
নেয় তাহলে অবশ্যই সে মুসলিম যে অধিকার
ভোগ করে সেই অধিকারই ভোগ করবে। তার
কাছ থেকে কোনো বাড়তি কর গ্রহণ করার
পক্ষপাতি আমরা নই।
.
আপনি কি জানেন যে, আল্লাহর হুকুম
অনুযায়ী সকল প্রকার শিক্ষা সম্পূর্ণ
বিনামূল্যে দেওয়া বাধ্যতামূলক। অথচ
বর্তমানে শিক্ষা থেকে ভ্যাট
প্রত্যাহারের জন্য কতই না আন্দোলন করতে
হচ্ছে।
.
দোকান থেকে একজোড়া জুতা কিনতে
হলেও ভ্যাট, ট্যাক্স, ছোট পানের দোকান
দিতেও ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে
কেউ কোনো মন্তব্য করে না। কিন্তু
জিজিয়ার ব্যাপারে কতই না সতর্ক! অথচ
জিজিয়ার যে বিধান আল্লাহ দিয়েছেন
তা নির্ধারিত ছিল কেবল অমুসলিমদের
নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। অন্যদিকে
যাকাত আল্লাহ প্রদত্ত মুসলমিদের জন্য কর
ব্যবস্থা যা কোনো অমুসলিমকে দিতে হয়
না।
.
সে যা-ই হোক, এই যৎসামান্য জিজিয়াও
অমুসলিমদের চিরকাল দিতে হবে এমন
বিধানও আল্লাহ দেন নি। কারণ আখেরি
যুগে ঈসা (আ.) এসে যখন বিশ্বময় শান্তি
প্রতিষ্ঠা করবেন তিনি জিজিয়া কর রহিত
করবেন এমন ভবিষ্যদ্বাণী আল্লাহর রসুল
করে গেছেন।
৩. হিযবুতের সবাই মুসলিম কিনা?
.
হেযবুত তওহীদে সব ধর্মের লোক আছেন।
আমরা আমাদের সেমিনারগুলিতে ‘সকল
ধর্মের মর্মকথা - সবার ঊর্ধ্বে মানবতা’
নামক ডকুমেন্টারি ফিল্ম দেখিয়েছি।
.
সেখানে সনাতন ধর্মী, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান,
উপজাতি অনেকেই আমাদের সম্মেলনে
এসেছেন এবং দু’হাত তুলে আমাদেরকে
সমর্থন জানিয়েছেন, একাত্ম হয়েছেন।
.
আমরা বিশ্বাস করি তারাও আমাদের
দলভুক্ত। কারণ আমাদের এটি একটি
আদর্শিক আন্দোলন। কেউ আমাদের
আদর্শের সঙ্গে একমত হলেই তিনি আমাদের
সহযাত্রী।
.
এমনকি ধর্ম-অস্বীকারকারীদেরও সমর্থন
হেযবুত তওহীদের প্রতি রয়েছে। বিভিন্ন
এলাকায় যে ডকুমেন্টারি দেখানো হয়,
বিভিন্ন জায়গায় পত্রিকা বিক্রি করা হয়,
সেখানেও আমাদের অনেক সনাতনধর্মী
ভাইয়েরা উদ্যোগী হয়ে তাদের মহল্লায় বা
মন্দিরে আমাদের ডকুমেন্টারি দেখানোর
আয়োজন করেছেন।
.
আমাদের পত্রিকাতে অনেক সনাতন ধর্মের
ভাই সাংবাদিকতার কাজ করছেন,
আমাদের সকল কাজেই সহযোগিতা করছেন।
আমরা যে কাজ করছি তা কেবল
মুসলমানদের কাজ নয়, এটা মানুষের কাজ।
৪. নেতা অমুসলিম:
.
প্রথম কথা হচ্ছে, হেযবুত তওহীদ আল্লাহর
আন্দোলন, আল্লাহর সিদ্ধান্ত ছাড়া এ
আন্দোলনে কেউ নেতা হবে না এ বিষয়ে
আমরা নিশ্চিত। দ্বিতীয়ত, আমাদের দর্শন
কী?
.
তাকে অবশ্যই মোমেন বা বিশ্বাসী হতে
হবে। আল্লাহর প্রদত্ত সংজ্ঞা মোতাবেক
বিশ্বাসী সেই ব্যক্তি যিনি আল্লাহ ও
রসুলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে (অর্থাৎ
সকল সত্যের পক্ষ অবলম্বন করে), তার উপর
অটল থাকে এবং জীবন ও সম্পদ উৎসর্গ করে
আল্লাহর রাস্তায় (অর্থাৎ
নিঃস্বার্থভাবে মানবতার কল্যাণে,
পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য)
সংগ্রাম করে।
.
এটাই হেযবুত তওহীদের সদস্য হওয়ার
যোগ্যতা, নেতা হওয়ারও এর চেয়ে বেশি
কোনো শর্ত নেই। তবে নেতা হওয়ার প্রথম
অযোগ্যতা হচ্ছে যে নেতৃত্বের অভিলাসী
হবে সে কস্মিনকালেও নেতৃত্বলাভ করবে
না।
.
এক কথায় সত্যকে ধারণ করে মানবতার
কল্যাণে যে নিজের জীবন ও সম্পদ উৎসর্গ
করে সংগ্রাম করবে এবং কোনো
অবস্থাতেই মিথ্যার সঙ্গে আপস করবে না
সে যে ধর্মেরই বিশ্বাসী হোক সে হেযবুত
তওহীদের নেতৃত্ব পেতে পারে।
৫. অমুসলিমদের উৎসবে সহযোগিতা করা হবেন নাকি বন্ধ করে দেওয়া হবে
অমুসলিমদের উৎসব পালনে সহযোগিতা
তো অবশ্যই করা হবে, তবে সরকারের
সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা থাকবে কি না
সেটাই প্রশ্ন। আপনি ঘোর কলিযুগে বাস
করে সত্যযুগকে কতটা হৃদয়ঙ্গম করতে
পারবেন?
.
শুধু এটুকু বলি। এমন একটি সমাজ কল্পনা করুন
যেখানে সবাই তার সম্পদ অন্যকে দিতে
চায় কিন্তু নেওয়ার মতো কাউকে খুঁজে পায়
না। আজকে সর্বত্র নাই-নাই, তাই এমন
সহযোগিতা পাওয়ার প্রশ্ন আপনার হৃদয়ে
জাগ্রত হচ্ছে হয়তো।
৬.সংখ্যালঘু নির্যাতন
সংখ্যালঘু শব্দটি অপরিচিত হয়ে যাবে,
নির্যাতনের প্রশ্নই আসে না। সব মানুষ যখন
আদম-হাওয়ার সন্তান অর্থাৎ প্রত্যেকে ভাই
ভাই তখন কি সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু জাতীয়
কোনো ধারণাই সেই সমাজে থাকতে পারে
না।
.
এই সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ সৃষ্টি করেছে
পশ্চিমা ঔপনিবেশিকরা। তারা
রাজনীতিক কারণে হিন্দু-মুসলিম বিভেদ
সৃষ্টি করেছিল। এ জাতীয় বিদ্বেষ সেই
ডিভাইড অ্যান্ড রুল নীতির উত্তরাধিকার।
৭.কটূক্তি বিষয়ে
কটূক্তি:যে কোনো কথা যা সমাজে
অন্যায়-অশান্তি, অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি
করে তা ধর্মবিদ্বেষ হোক বা সাম্প্রদায়িক
বিদ্বেষ হোক আমরা তার বিরুদ্ধে। সেটা
বাক-স্বাধীনতা নয়।
.
তবে ধর্মের বিরুদ্ধে ঘৃণা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে
নয়, বরং যদি এর অকল্যাণকর দিক বা ত্রুটি
কারো দৃষ্টিতে ধরা পড়ে তবে সে তার
যৌক্তিক ও তথ্যভিত্তিক সমালোচনা
অবশ্যই করতে পারবে। এ অধিকার আল্লাহই
দিয়েছেন এবং সমালোচনা ও
ত্র“টিবিচারের আহ্বান করেছেন।
https://m.facebook.com/asun.system.take
i.paltai/