দ্বিতীয়ত, বক্তব্যের ৩৮% গ্রহনযোগ্যতা হলো বক্তার গলার স্বর, বাক্যের দৈর্ঘ, ভলিউম এবং কণ্ঠের গভীরতা, মাধুর্য ও অন্যান্য গুণাবলী সহ ভোকাল উপাদান- এর সমষ্টিগত কারনে হয়ে থাকে । এর মানে হল- আমরা যে নির্দিষ্ট শব্দগুলি ব্যবহার করি তার চেয়েও বড় ব্যাপার হল, আমরা যেভাবে কথা বলি, তার গুরুত্ব এই ৩৮% । ভোকাল টোন ব্যক্তির আবেগ, দৃষ্টিভঙ্গি এবং উদ্দেশ্য প্রকাশ করে । যার ফলে ৭ই মার্চের ভাষনে এক সুবিশাল জনগোষ্ঠী প্রভাবিত হয়ে একটি নতুন দেশের অভ্যুদয় ঘটায়। পরিপূর্ন শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, ঐ একই বক্তব্য অন্য যে কোন নেতা কোন মঞ্চে বক্তৃতা করলে আশানুরুপ ফল হবে না, এমনকি প্রেস ব্রিফিংয়ে ঐ বক্তব্য পাঠ করলে সেটা ফ্লপ করবে । এর জন্য দরকার বঙ্গবন্ধুর সুগভীর কন্ঠ, তার গলার আবেগ ও আন্তরিকতা; সেটা যারা তার সামনে ছিলেন তাদেরকে যেমন ঐসময়ে তাড়িত করেছিল, আজো কোন লাউড স্পিকারে বেজে উঠলে প্রজন্মব্যাপী মানুষকে সমান উজ্জীবিত করে ।
অবশেষে, ৫৫% অ-ব্যক্ত যোগাযোগকে বোঝায়, যা শরীরের ভাষা, মুখের অভিব্যক্তি, অঙ্গভঙ্গি এবং অন্যান্য চাক্ষুষ সংকেতগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে। আমাদের বডি ল্যান্গুয়েজ বা দেহের ভাষা প্রায়শই আমাদের আবেগ, আন্তরিকতা এবং সত্যতাকে শব্দের চেয়ে অনেক বেশী কার্যকরভাবে প্রকাশ করে। এতে মুখ-ভংগী, চোখের যোগাযোগ, হাত-পায়ের, শরীরের নড়াচড়া এবং সামগ্রিক আচরণের বিষয়টি রয়েছে, যার সবকটিই বক্তার বার্তা অন্যরা কীভাবে গ্রহণ করে তার নির্ধারক হিসাবে কাজ করে ।
দৈনন্দিন, সামনা-সামনি যোগাযোগের ক্ষেত্রে, যোগাযোগের সূত্র হিসাবে মেহরাবিয়ানের ৭-৩৮-৫৫ বুঝে ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনি নিজেকে আরো গ্রহনযোগ্য ও প্রভাবশালী হিসাবে উপস্থাপন করতে পারবেন । তাহলে, এটা বিশেষ করে প্রত্যক্ষ যোগাযোগের বেলায় মনে রাখতে হবে যে, শুধুমাত্র বক্তব্যের কন্টেন্ট নয়, তারও থেকে বেশী গুরুত্বপূর্ন আমাদের কণ্ঠস্বর তথা বাচনভঙ্গী এবং শরীরি ভাষা । এই বিষয়গুলিকে সঠিক চর্চা করে আমাদের নিজের এবং অন্যদের অ-মৌখিক সংকেতের দিকে মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে, আমরা সাবলীল যোগাযোগ, ব্যক্তিদের মধ্যে আন্ত:সংযোগ এবং পুরো কাজের পরিবেশের উন্নয়ন করতে পারি এবং নিজের বক্তব্য ও মতামতের গ্রহনযোগ্যতা বাড়িয়ে প্রভাব বিস্তার করতে পারি ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:৫৬