শুরু থেকেই জলদস্যুদের সাথে নাবিকদের সৌহার্দ্যপূর্ন সম্পর্ক গড়ে উঠল । হবেই না বা কেন ? কেউ তো সামান্যতম প্রতিরোধ গড়ে তুলে বিরক্ত করে নি । জাহাজের নাবিক, মাস্টার এবং ক্যাপ্টেন অত্যন্ত সুন্দর ভাবে সমস্ত কিছু অভ্যস্ত ভঙ্গীতে সামলে নিয়েছেন । যার কারনে এতদিন পরেও দস্যুদল ও জিম্মীদের পারস্পরিক বোঝাপড়া ঠিক আছে এবং সম্প্রতি আরো বেড়ে গেছে বলে খবরে প্রকাশ । যদিও, জমানো রসদের সীমিত ভান্ডারে হোস্ট ডাকুদের আপ্যায়ন করতে গিয়ে কৃচ্ছ সাধন করেও খাবারে টান পড়বে বলে মনে হচ্ছে ।
কি করে এটা সম্ভব হলো ? জিম্মি কর্মী এবং পাইরেটসদের বন্ধুত্বপূর্ন সহাবস্থান, মুরগী এবং শেয়ালের দোস্তি ?!
ক্যাম্নে কি ?
উত্তর: আমরা বাংলাদেশের যারা সাধারন জনতা তারা প্রতিদিন এহেন শত প্রকার ডাকাত বাহিনীর সাথে শান্তিপূর্ন অবস্থানে বসবাস করছি । তারা কেউ আমাদের জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, বন্ধু, আত্মীয় ইত্যকার সম্পর্ক আছে বা হচ্ছে । সমাজে যে যতবড় দস্যু তার তত বেশী মান, কেউ পাতি কেউ বড় কেতা থেকে মাননীয় .. .., যন্ত্রী, কাগজের মালিক, কর্পোরেট হাউজ নামে বিশাল মোগলীয় সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন । তাদের চোখ ঝলসানো বাড়ী-ঘর, হাল মডেলের গাড়ী থেকে অন্যান্য যাবতীয় বিলাস-ব্যাসনের অন্ত নাই । কারো ধর্মে ব্যাপক ভক্তি, ফি-বছর উমরাহ্ করেন, স্বপরিবারে পবিত্র হজ পালন করেছেন আগেই, কেউ দানবীর হাজী মোহসিন ; শীতে কম্বল, ইদে সস্তা জাকাতের কাপড়, চাল-ডাল-চিনি-সেমাই প্যাকেট বিতরন ও ফটোশুট করে থাকেন, রোজায় পথশিশুদের সাথে ইফতার করে প্রায়ই কাগজের হেডলাইন হন। এদেরকে আমরা সবাই চিনি আমাদেরই চারপাশে ভুমিদস্যু, ব্যাংক দস্যুগন সকলেই নমস্য ব্যক্তি; ইদানীং তেলদস্যু, মুরগী ও ডিমদস্যু এমনকি আলু, পেয়াজ, খেজুর এমনকি বাঙ্গিদস্যুদের ব্যবসাও সমীহ জাগানীয়া পর্যায়ে জমে উঠেছে - তারাও দিনে-সপ্তাহে কয়েকশো্ কোটি হাপিস করে দিচ্ছেন শোনা যায়। সরকার যন্ত্র তাদের সিন্ডিকেশনে অসহায় হয়ে পড়েছেন অথবা মন্দ লোকেরা যেমন বলে যে অসহায় হবার ভান করা হচ্ছে । তবে বিশেষ একপ্রকার দস্যুদের নাম ইচ্ছা করেই এড়িয়ে গেলাম । আশা করি সকলেই বুঝবেন, কখনো পঁচা শামুকে পা কাটে- এই ধরনের অখাদ্য লেখাও কোন মাননীয়ের আঁতে ঘা পড়লে জান-কপাটি হতে পারে বিধায় ঐ বিশেষ শ্রেনীভুক্ত ভল্ডারমটদের নাম মুখে আনতে নেই । এইসব সুসংগঠিত বাহিনীর নেতা ও তাদের চ্যালা-চামুন্ডাদের তরিকা এবং অব্যর্থ শাঁড়াসী আক্রমনের স্ট্র্যাটেজিস্টদের সামনে সোমালিয়ান ডাকাতেরা নেহাতই কাঁধে বন্দুক ঝোলানো একপাল নাদান আফ্রিকান বালকমাত্র ।
সূূতরাং, বিবিধ ডাকাত পরিবেষ্টিত সমাজে যাদের জন্ম ও বেড়ে উঠা, তারা ’সাগরে পেতেছি শয্যা, শিশিরে কি ভয়.. .. ..’
তো, এতসব ডাকু-বাটপাড়দের সাথে ডেলি লাইফে আমাদের এই চলাফেরার কারনে তাদেরকে হ্যান্ডেল করার সহজাত দক্ষতা তৈরী হয়েছে এবং এই হ্যান্ডস-অন কম্যুনিটি ট্রেনিং এখন কাজে লাগছে । মুক্তিপন সম্পর্কে কিছু আলোচনা না করি । আমরা যারা সামাজিক জিম্মী তারা দ্রব্যমূল্য, কর, মুদ্রাস্ফিতি, অর্থ পাঁচার হরেক কিসিমের নামে অদ্ভুত-অকারন সব পন দিয়েই তো বেঁচে আছি- নাবিকদের জন্য কিছু করা হলে তা হবে ’ফর এ গুড রিজন’ । তাই আশা করি ও দোয়া করি, জলদস্যুদের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক বজায় রেখেই আমাদের নাবিক জিম্মী ভাইয়েরা মুক্ত হয়ে, অক্ষত দেহে পরিবারে ফিরে আসবেন, আমীন ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১৬