somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যারা বিয়ে করবেন ভাবছেন; তাদের জন্য

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আপনি (বিয়ে-পূর্ব) পছন্দের/রিলেশানশীপের যে অবস্থাতেই থাকুন না কেনো (প্লেটোনিক পছন্দ/ কাছাকাছি পছন্দ/ একতরফা পছন্দ/ দু'তরফা পছন্দ/ ব্লা ব্লা ব্লা), তিনটা কারণে কখনোই বিয়ে করবেন না। নেভার এভার (আমার ব্যক্তিগত মত)।

এক- "এখন যদি এ বিয়ে না হয় 'ও' খুব কষ্ট পাবে"- চিন্তাটা ভাল করে খেয়াল করে দেখুন। আপনি কিন্তু ভাবছেন না যে আপনি কষ্ট পাবেন। কারন আপনি সাবকনশান্স মাইন্ডে ভাল করেই জানেন আপনার কষ্টটা আপনি সামলে উঠতে পারবেন। এখন যেটা কাজ করছে সেটা হলো অপরজনের প্রতি 'ভালবাসা' না, sympathy. এই সিম্প্যাথি যদি আপনার বিয়ের ফাউন্ডেশান হয়, বিয়ের এক থেকে দুই বছরের মাথায় যখন বাস্তব জীবনের ঠেলায় এই সিম্প্যাথি ফুরিয়ে যাবে, তখন তো আপনাদের বিয়ের ফাউন্ডেশানটাই সরে যাবে! বিয়ে কী হাওয়ায় ভর দিয়ে টিকে থাকবে তখন?!

দুই- "এই বিয়ে না হলে 'ও' আত্মহত্যা করবে"- তাই? বিয়ের পর যখন দু'টো তিনটে বাচ্চা হবে, যখন সংসারের ক্লান্তি আপনাকে ঘিরে ধরবে চারিদিক থেকে, আই গ্যারান্টি ইউ তখন নিজের কপাল চাপড়াবেন আর ভাববেন এরচে' তার আত্মহত্যা করাই ভাল ছিলো! 'তুমি আমাকে বিয়ে না করলে আমি আত্মহত্যা করবো'- এর অর্থ আপনি একজনের ব্ল্যাকমেইলের ফাঁদে পড়ে বিয়ে করলেন। বা এই বিয়ে না হলে সে আত্নহত্যা করবে- আপনার আতংক। বিয়ের মূল ফাউন্ডেশানটা যেখানে ব্ল্যাকমেইল বা আতংক, এই বিয়ের ফিউচার কী?!

তিন- "বিয়ের পরে 'ও' নিশ্চয়ই চেইঞ্জ হয়ে যাবে আস্তে আস্তে"- ওহ প্লীজ! ভবিষ্যত সম্ভাবনা/আশা'র উপর ভিত্তি করে আর যাই করেন না কেনো, অন্ততঃ বিয়ে করার মত ভুল করবেন না। আর 'ও'কে যদি চেইঞ্জ করার কথাই ভাবেন, তার মানে কী দাঁড়ালো? আপনি তাকে ভবিষ্যত 'চেইঞ্জড' একজন হিসেবে দেখতে চান, তার বর্তমান-কে আসলে এক্সেপ্ট করে নিতে পারেন নি, অথচ সে বর্তমানকেই বিয়ে করতে যাচ্ছেন! তার মানে অনেকটা এমন, আপনার মাথায় জীবনসংগী হিসেবে কল্পনা একরকম, আর বিয়ে করছেন আরেক রকম, আর ভাবছেন, যাকে বিয়ে করছেন তাকে আপনার কল্পনার মত বানিয়ে নিবেন!! এক্সকিউজ মী! আপনার পার্টনার কোনো প্রানহীন পুতুল না যে নিজের ইচ্ছেমত সাজিয়ে নিবেন বা নিতে পারবেন!

বিয়েকে আপনি যতই 'আপনার' আর 'আরেকজনের' মধ্যকার বিষয় মনে করুন না কেনো, বিয়ে আসলে কোনোভাবেই শুধু দুইজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না (এমনকি লুকিয়ে বিয়ে করলেও)। বিয়ে হয় দু'জনের ব্যাকগ্রাউন্ডের মধ্যে, দু'জনের বেড়ে উঠার মধ্যে, দু'জনের চিন্তা-ভাবনার মধ্যে, দু'জনের পরিবারের এবং সমাজের মূল্যবোধের মধ্যে। [আর এরেইঞ্জড ম্যারেজে অবশ্যই দু'জনের পুরো পরিবারের এবং আত্মীয়স্বজনের মধ্যে]।

এ কারণেই খুব কমন এমন ঘটনাও ঘটে যেখানে খুব পছন্দের দু'জন দু'জনকে বিয়ে করে বিয়ের এক থেকে দুই বছরের মধ্যে আলাদা হয়ে যায় এবং দু'জন দু'জনের নামও শুনতে পারেনা! কারন আর কিছু না- দু'জনের টেষ্ট, মূল্যবোধ, জীবন নিয়ে সাবকনশান্স এটিচ্যুডের মধ্যে পার্থক্য/ভিন্নতা।

মুসলিম কালচারে এ কারণেই দেখবেন বিয়ের ব্যপারে 'কূফূ' বলে একটা শব্দ আছে, যার অর্থ suitable match. আপনি নিজে পছন্দ করে বিয়ে করুন বা আপনার গার্ডিয়ান পছন্দ করুক, একটা ব্যপার অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত- আপনাদের দু'জনের মধ্যে suitable matching হচ্ছে কিনা। এটা কীভাবে খেয়াল করবেন, আমি জানিনা। অভিজ্ঞরা/সিনিয়ররা/গুরুজনেরা ভাল বলতে পারবেন।

তবে নিজের পর্যবেক্ষন থেকে এতটুকু বলতে পারি- বিয়ের মাঠে নামার আগে একদিন ঠান্ডামাথায় বসে আপনি নিজেকে নিয়ে ভাবুন। আপনি কি পছন্দ করেন, আপনার প্রচন্ড প্যাশন কীসে, আপনি জীবন থেকে কী চান, জীবনকে যাপন করার কী ধরনের স্টাইল আপনি ফলো করেন ইত্যাদি ইত্যাদি। মোট কথা আপনি কেমন। তারপর যাকে বিয়ে করবেন বলে ভাবছেন তার সাথে আপনার চিন্তাভাবনার কতটুকু মিল। অন্ততঃ বেসিক বিষয়গুলোতে।

নতুবা দেখবেন, বিয়ে করেছেন পৃথিবীর সুন্দরতম (!) মেয়েটাকে বা পৃথিবীর দ্য মোষ্ট ওয়ান্টেড (!) ব্যাচেলর ছেলেটাকে, বিয়ের পরের ঘটনা- আপনার সংগী ফুল বীট দিয়ে গান শুনে '...call in all sexy girls all around the world.. boom boom boom!' আর আপনি শুনেন রবীন্দ্র সংগীত! আপনার সংগী প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতেই চায় না, আর আপনার ভাল লাগে এডভেঞ্চার, ঘুরে বেড়ানো, পৃথিবী দেখা! আপনার সংগী ইন্ট্রোভার্ট টাইপ- মানুষজন-আত্মীয়স্বজনের হাংগামা তেমন পছন্দ করেনা, আর আপনি সবসময় হৈচৈ মানুষজন-বন্ধুবান্ধব নিয়ে থাকতে পছন্দ করেন!

ব্যক্তিগত মিল/অমিলের পাশাপাশি পারিবারিক মিল/অমিলও খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ে-পূর্ব রোমান্টিকতায় ব্যক্তিগত/পারিবারিক মিল/অমিল আপনার কাছে নগন্য হতে পারে, কিন্তু অভিজ্ঞদের/গুরুজনদের জিজ্ঞেস করে দেখুন, বিয়ের পর এগুলোই এক একটা ডাইনামাইট হয়ে যায়।

বিয়ে কোনো হাসি-ঠাট্টা না। তাই "অনুভূতি"র উপর নির্ভর না করে reasoning এর উপর নির্ভর করুন বেশী। আমরা মানুষ তো, মানুষের অনুভূতি ক্ষনস্থায়ী। আজকে আপনার যাকে ভাল লাগছে কালকে যে তাকে ভাল লাগবেই- সে অনুভূতির উপর আপনি গ্যারান্টি দিতে পারবেন না। কিন্তু আপনি ধরুন বই পড়তে ভালবাসেন, সেওও বই পড়তে ভালবাসে- যেহেতু এটা আপনাদের ব্যক্তিত্বের প্যাটার্ন- গ্যারান্টি দিতে পারবেন ভবিষ্যতেও দুইজনেই বই পড়তে ভালবাসবেন। আর কিছু নিয়ে কথা বলার না থাকলেও তখন দু'জনে অন্ততঃ বই নিয়ে কথা বলতে পারবেন! বা, দু'জনেই যদি মুভি দেখতে পছন্দ করেন, বা এই ধরনের কোনো একটা মিল এটলিষ্ট।

নতুবা বিয়ের পরে দেখবেন আপনার বউ খুব মনযোগ দিয়ে হিন্দী সিরিয়াল দেখছে, আর আপনি সিলিং'র দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন 'হা জীবন'! অথবা, আপনার জামাই রেগুলার বন্ধু-বান্ধবদেরকে নিয়ে এসে তাদের সাথে চরম আড্ডা দিচ্ছে, বেশ হৈ চৈ হচ্ছে, বুঝাই যাচ্ছে চরম মাস্তি, আর আপনি রান্নাঘরে একলা একলা গরমে তাদের সবার জন্য রান্না করতে করতে ঘামছেন আর বুকের ভিতরের কষ্ট লুকিয়ে ভাবছেন 'এটাই কী জীবন?'

There is a wise saying- think before you do.
ভালকরে ভেবেচিন্তে বিয়ে করুন, উটকে আগে দড়ি দিয়ে বাঁধুন, তারপর আল্লাহ ভরসা বলুন। স্রেফ আল্লাহ ভরসা বলে সাঁতার না জেনে বিয়ের কুয়ায় ঝাপ দিয়েন না! ডুবে মরবেন!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:১৪
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×