ভুতের মুখে রাম নাম, এটা একটা প্রচলিত কথা। কিন্তু সেই ভুত যদি বিশেষ কেউ হন তবে চমকে না উঠে আর পারি না। যাক বিষয়টা খোলাসা করাই ভাল। গতকাল ২৬শে মার্চ আমাদের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আলোচনা সভায় জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রশংসা করে ভাষণ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক আন্দোলনের মূল বিষয় ছিলো বহুদলীয় গণতন্ত্র, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে থাকা কালেও বাংলাদেশের একক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন, দেশে ফিরে তিনি দৃষ্টান্তমূলক সিদ্ধান্ত নিয়ে রাষ্ট্রপতির পদ ছেড়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু ওআইসির সদস্য হয়েও ইসলামের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন বলেও নিজামী মন্তব্য করেন।
যাক এবার তার এই প্রশংসার পোস্টমর্টেম করা যাক।
তিনি কোন সময় এসে এই কথা বললেন, পাঠকরা একবার ভাবলেই বুঝতে পারবেন। যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া সরকার শুরু করে দিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন বলে দিয়েছেন পুলিশ চাইলে তাদের গ্রেফতারও করতে পারে এবং তাদের বিদেশে যাওয়া নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ঠিক এমন একটা পরিস্থিতিতে নিজামী এইভাবে আমাদের জাতির জনকের প্রশংসা করে নিজেকে কোন কাতারে ফেলার চেষ্টা করছেন কে জানে। সাংবাদিক হিসেবে এর আগে আমি একাধিকবার জামায়াতের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়েছি এবং নিজামী বক্তব্য এক কান দিয়ে শুনে অন্যকান দিনে আউট করে দিয়েছি। তারপর আমার ক্ষুদ্র স্মৃতিভাণ্ডারে যেসব কথা জমে আছে তাতে কোথায় এমন শব্দ নাই- স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি (নিজামী) তো কখন মুক্তিযুদ্ধকেই স্বীকার করেন নি এর আগে। তিনি এবং তার দল বলতো এটা ছিলো গৃহযুদ্ধ বিদ্রোহ র্আও কত কত ফালতু কথা। কিন্তু এবার তার মুখে কি শুনলাম। যাক আল্লাহপাক নিজামীর বোধোদয় ঘটিয়েছেন ৩৯বছর পর হলেও।
আমাদের প্রত্যাশা আসলে কি হতে পারে। হতে পারে যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আগে এমন আরও কথা আমরা শুনবো যা বাঙালি কোনদিন্ও কল্পণা করেনি। নিজামীর মুখে এমন কথাও শুনতে পারি-
তিনি এবং তার নেতা কর্মীরা চেতন অবচেতনে যাই বলুক আমরা কেবল তা শুনে হাসবো কিন্তু ক্ষমা করবো না। তাদের বিচার হবেই সরকার করবেই। পরশুরামের সেই গল্পটি বোধ হয় অনেকেরই জানা। ওই যে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বের সকল দেশের নেতারা উপস্থিত হয়েছেন। কিন্তু কেউ কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না আসলে কি করা যায় পরে যখন বিশ্বের সবচে ক্ষমতাশীল দুষ্টু রাষ্ট্রপধানের গায়ে সেই বিশেষ ইনজেকশন পুশ করে দেয়া হলো, যখন তারা গড়গড়গড়গড় করে সব সত্য স্বীকার করতে শুরু করলো কেন তারা বিশ্বকে ধোকা দিয়ে গরীবকে আরও গরীব করেছে কেন তারা খুন হত্যা এবং যুদ্ধ বাধিয়ে রেখে লুটপাট করেছে। তেমনিভাবে যুদ্ধাপরাধীদের শরীরে বোধ হয় এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইনজেকশন অলরেডি পুশ হয়ে গেছে। যার ফলে তারা বলতে শুরু করেছেন, সেই সব সত্য কথা। শুরুটা কিন্তু ভালই হয়েছে দলে প্রধানই প্রথমে সত্য স্বীকার করলেন। আর স্বীকার করলেন বাংলার স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এভাবেই বোধ হয় তারা আরও এমন সব সত্য প্রকাশ করবেন যা শুনে সবাই ঘৃণায় তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। শুধু নেবে না যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত বিচারক, তদন্তকারীরা। কারণ তারা বিচার করবেনই। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা এমনই।
জামায়াতের বড়-মাঝারী সব নেতাদের মুখে সরল সত্য তবে ঘৃণ্য কথা শুনে শুনে আর কেউ নতুন করে যুদ্ধাপরাধ করার সাহস দেখাবে না। সেই সাথে বাংলার আর কোন সন্তান জামায়াত এবং তাদের খুনি সংগঠন শিবিরে যোগ দেবার কথা মনেও আনবে না এমনও প্রত্যাশা আমাদের।
জামায়াতকে এভাবে দিনের পর দিন সেই সব ঘৃণ্যকাজের কথা স্বীকার করতেই হবে। এবং শেষাবধি তারা বিচারের কাঠগড়ায় দাড়িয়েও সত্য স্বীকার করে ক্ষমা চাইবে না- তারা বলবে আমরা অপরাধ করেছি আমাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারুন। যেভাবে আমরা দেশপ্রেমি বাঙালিকে হত্যা করেছি, নারীদের ধর্ষণে সাহায্য করেছি, যেভাবে অন্যের সম্পদ লুট করেছি। ঠিক সেভাবেই আপনারা আমাদের শাস্তি দিন। পৃথিবী জানুক যুদ্ধাপরাধীদের কোন ক্ষমা নেই।
আমার এই লেখার সাথে আশা করি পাঠক ব্লগার বন্ধুরাও একমত।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১০ বিকাল ৫:২৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




