একদিন খুব সকালে বাস্তবতার দিনগুলো স্বপ্ন করে ঘুম ভেঙে উঠব আব্বুর সেই চিরচেনা ডাকে। " কখন সকাল হয়েছে এখনো উঠলে না"! চোখ খুলেই দেখব বাবার সাদা হয়ে যাওয়া উস্কোখুস্কো চুলগুলো আবার কুচকুচে কাল হয়ে গেছে। আমার নাকি সুরে কান্না " আর একটু ঘুমাতে দাও"। আম্মুর পাতলা হয়ে যাওয়া চুল নয়, সেই ঘন ঢেউ খেলানো চুল দুলিয়ে এসে আমাকে কোলে করে টেনে তুলবে। আম্মুর সারা গায়ে কাচা শাড়ির গন্ধ। আব্বুর এখন দোকানে যেতে কষ্ট হয়, আম্মু একা সারাদিন সংসারের কাজ করে ক্লান্ত হয়ে পরে, বাজারের থলেতে আজকাল মাছ মাংসের চেয়ে সবজির পরিমানটা বেশি থাকে, একটা চাকরী হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে, আব্বুর আর দোকানে যাওয়া লাগবে না, বাসার কাজের জন্য একটা লোক রাখব, বাজারের থলেটা আবার আমিষে ভরে যাবে, এসব সব চিন্তা ঝড়ের হাওয়ায় উড়ে যাবে। চিন্তা শুধু একটাই, সকালের নাস্তাটা খেয়েই আপুর সাথে হাড়ি পাতিল খেলা নিয়ে বসতে হবে, দাদার নতুন লাগানো গাছটার পাতা তরকারি হিসাবে দারুন হবে, কিভাবে যে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে গাছের পাতাটা ছেঁড়া যায়...।দুপুর হতেই আম্মু এসে গোসোল করিয়ে দেবে, গরম ভাত মেখে খাইয়ে দেবে, গায়ে হাত বুলিয়ে ঘুম পারিয়ে দেবে। বিকেল হতেই ঘুম থেকে উঠে উঠোনে দৌড় ঝাপ খেলা। সন্ধ্যায় আম্মুর কাছে অ আ পড়া। একটু পরেই আব্বুর দরজায় ধাক্কা, আমার বুকের ভেতর উত্তজনা, চকলেট্টা যে আনতে বলেছিলাম এনেছে তো?।আব্বু ঘরে ঢুকতেই দৌড়ে আব্বুর কোলে ঝাপিয়ে পড়ি, আব্বু দুই হাতে আমাকে লুফে নিয়ে ওপরে উঠিয়ে বুকের মধ্যে চেপে ধরে, আমার ঘর ফাটানো হাসির রোল, আব্বুর পকেটে খুজে পাওয়া একটা চকলেট, তাই আপুর সাথে অমৃতের মত ভাগ করে খাওয়া। তারপর আব্বুর হাতে রাতের খাবার, সাথে রূপকথার গল্পের ডোজ। এবার সারাদিন পর একটা ছোট্ট বিছানায় আমি, আপু, আব্বু, আম্মু ঘুমাবো, আব্বুর পিঠ চুলকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া.....।
সত্যি বলছি, ঘুম ভেঙে খুজে পাওয়া এমন একটা সকাল দেখার জন্য হাজার রাত অপেক্ষা করতে আমি প্রস্তুত ...।