somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট্ট বেলার স্মৃতি - ১ (আমাদের স্যার এবং একটি শিশু গাছের মৃত্যু)

১৮ ই এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সেই ছোট বেলায় হঠাৎ একদিন আমাদের ঘরে এক স্যার এসে হাজির। উনাকে থাকতে দেয়া হলো কাচারী ঘরেই। বাবা অফিসে গেলেই আমরা হয়ে যেতাম মুক্ত স্বাধীন। এখন তা আর হবেনা, না স্কুল ফাকি দেয়া হবে? না ডাঙ্গুলি মারবেল ডুব সাঁতার কিংবা কাদামাঠে সারাদিন ফুটবল খেলা। না ভর দুপুরে কাঁচা আম চুরি করে খাওয়া। আসার সাথে সাথেই স্যারটির প্রতি রাগ হতে শুর হলো। কি আর করা স্যারের প্রতি প্রচন্ড রাগ নিয়েই আমাদের বন্ধী জীবনের শুরু।

স্যার যেখানে থাকতেন, মানে আমরা যেখানে পড়তাম সে কাচারী ঘরের সামনের খোলা জায়গাটিতে উঠে আসা আগাছা গুলো আর নিত্যকার ময়লা স্যার আমাদের দিয়েই প্রতিদিন নিয়ম করে পরিস্কার করাতেন। স্যারের প্রতি রাগটা আরো কয়েকগুন বেড়ে গেল। একদিন কি মনে করে জানি আম জাম কুল ও শিম সহ আরো কয়েকটি চাড়া গাছ তিনি যত্ন করে রেখেই দিলেন। তখন কিন্তু এসব গ্রামঞ্চলে প্রতি পদে পদেই দেখা যেত। তাই আম জাম লতা পাতায় তিনি কাচারী ঘরের সামনে আলাদা কোন সৌন্দর্য ঠিক ঠাক খুঁজে পেলেন না। একদিন সেসব মুলোতপাঠন করে বিনাশ করা হলো। আবারও সুনসান পরিস্কার উঠোন। বিকেলে চেয়ার পেতে বসে বই পড়তে একটু আরাম অনুভব করতেন সেই খোলা জায়গায়।

স্যার ছিলেন খুবিই পরহেজগার। আমাদের বাবার মতোই। অন্য সময় আমরা হাতের নাগালের বাইরে থাকলেও ঠিক সন্ধ্যায় মাগরিবের নামযটা উনার সাথেই পড়তেই হতো। উফ এ আরেক ঝামেলা। শুধু নামায পড়া পর্যন্ত হলেই হতো। সেখানে আবার ক্বেরাত গুলো ঠিকঠাক করে উচ্চস্বরে উনাকে শুনিয়ে পড়তে হবে। রুকু সিজদাও এদিক ওদিক করা যাবেনা। নামায শিক্ষা পর্যন্ত ঠিকিই ছিলো। একদিন উনি আযান শিখানোই মনোযোগী হলেন। উফ অসহ্য।

তাও আবার বাইরে দাড়িয়ে দিতে হবে। পড়লাম আরেক বিপত্তিতে। কি আর করা? কাচারী ঘরের বাইরে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কানে আঙ্গুল দিয়ে উচ্চস্বরে মাগরিবের আযান দিতে লাগলাম। পুরো আযান দিতে হলোনা, অর্ধেক দিয়েই ভাগলাম। কারণ, হঠাৎ আযান শুনে পাড়া প্রতিবেশি সবাই দৌড়ে এসে হাজির। সবাই কানা ঘুষা করতে লাগল আরে আরে কার বাচ্চা হলোরে ? ছেলে না মেয়ে? (কারণ তখন কারো বাচ্চা হলেই বড় করে আযান দেয়া হতো।) পাড়ার এক দুষ্টু আপুতো বলেই বসলো, কিরে তোদের স্যারের মেয়ে হলো না ছেলে? সবাই হেসে কুটি কুটি। সে এক বিচ্ছিরি অবস্থা। সে কি লজ্জা পেয়েছিলাম। কিন্তু স্যার দমবার পাত্র নন। উনি কে কি বলে সে সবের তোয়াক্কা না করে আমাদের আযান শিখানোয় ব্যস্থ। পাড়ার এক জন মুরব্বি এসে জড়ো হওয়া সবাইকে তাড়িয়ে দিলেন।

তখন ছোট্ট মনে যেটা দেখতো সেটাই ভালো লাগতো। তার ফলেই হয়তো আমাদের আযান দেয়া, নামায পড়াটা দেখে আরো কিছু ছেলেফুলে তাদের ঘরের সামনে দাড়িয়ে পূব পশ্চিমের তোয়াক্কা না করেই মাগরিবের সময় উচ্চস্বরে আযান দেয়া আরম্ভ করতো। এটা একটা আযান আযান খেলায় পরিনত হলো। প্রথম প্রথম সবাই হাসলেও পরে আর হাসতোনা। একদিন স্যার সবাইকে ডেকে বল্লো, শোন প্রতিদিন একজন করে আযান দেবে, আর সবাই একসাথে এখানে নামায পড়বে কেমন? সবাই খুশি। যেদিন যার পালা আসতো আযান দেয়ার, তার সেকি প্রস্তুতী । সারাদিন খালি আযান আর আযান। কার থেকে কে সুন্দও করে আযান দেবে সেটাই ছিলো চেষ্টা। মাগরিবের সময় হলেই পাড়ার পিচ্চিপাচ্চা সব মাথায় টুপি দিয়ে হাতে মাদুর নিয়ে হাজির। ছোট মেয়ে বাবুরাও কান্নাকাটি করতো। স্যার তাদেরকেও দাঁড় করিয়ে দিতেন। আহ সেকি এক মধুর দিন ছিলো। একটি বার যদি ফিরে পেতাম সেসব দিন।

এভাবে ক,দিন যেতে না যেতেই স্যার আমাদের এতটাই আপন করে নিলো যে, স্যারের প্রতি প্রচন্ড রাগ আর ভয় কখন যে উধাও হয়ে গেল ঠেরই পেলাম না।

হঠাৎ একদিন দেখি কি একটা ফুলের গাছ নিয়ে হাজির। ঠিক কোন জায়গায় লাগাবেন সেটা নিয়ে অনেক সময় ধরেই সিন্ধান্ত নিতে হলো। পরে স্থির হলো উনি যেখানটায় চেয়ারে বসে বই পড়েন, ঠিক তার ডান পাশেই গাছটি লাগানো হবে। চাড়া গাছে ফুল ফুটবে, একটু ডানে হেল্লেই সুগন্ধ দোলা দিয়ে যাবে। কিন্তু উনার সেসব স্বপ্ন আমরাই নিশ্বেঃষ করে দিলাম ফুলের গাছটি লাগানোয় ভুল করে। ফুলের শিশু গাছটির গোড়ায় পলিথিনে মোড়ানো যেসব উর্বর মাটি ছিলো সেসব ছুড়ে ফেলে শক্ত মাটি খুড়ে সেখানটায় পুতে দিয়ে সে শক্ত মাটি আরো শক্ত করে ঠেসে দিলাম।

এরপর চারিদিকে মাটির ছোট্ট দেয়াল বানিয়ে সেখানে ডুবু ডুবু করে পানি জমা করে দিলাম। ফলে দুদিনেই ফুলগাছ মরে কাইত। সে সময় খেলাচ্ছলে কতো গাছের চাড়া তুলে ছুড়ে ফেলতাম, কতো ঢালপাতা ছিড়ে ছিড়ে খেলতাম তার কোন হিসেব নেই। কিন্তু এবার এ একটি ফুল গাছের জন্য আমাদের কেন জানি অনেক কষ্ট হলো। কতো কি না করেছিলাম সেই ফুল গাছটির জন্য। মরে যাওয়া গাছটির উপর বারবার পালি ঢালতাম এ আশায় যে, হয়তো সে আবার জেগে উঠবে। বড় কলাপাতা দিয়ে রোদ থেকে বাঁচানোর জন্য গাছটির উপর ছায়া দিতাম। কিন্তু না সে আর ফিরে এলোনা। সে চলে গেল আমাদের ছোট্ট শিশু মনে কষ্ট দিয়ে। সে হারানোর দুঃখ কেন জানি এখনো ভুলতে পারিনি, ভুলতে পারিনি সেই চাড়া গাছটির ধীরে ধীরে মরে যাওয়ার দৃশ্যও। গাছ বলে তাই বলতেও পারিনা ”ভাল থাকিস তুই যেখানেই আছিস”

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:৪৯
৪৫টি মন্তব্য ৪৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×