সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা যে একটা দেশকে ধ্বংস করে দিতে পারে তার অনেক প্রমান আমরা দেখেছি। আফ্রিকার অনেক দেশে খনিজ সম্পদে ভরপুর থাকা সত্ত্বেও আজ অনাহারে থাকে। দুর্ভিক্ষ তাদের জীবন যাত্রাকে আজ ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আল্লাহর নবী (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ পাক যদি কোন দেশকে ধ্বংস করতে চান তাহলে সেই দেশের অত্যাচারী শাসক ক্ষমতায় বসিয়ে দেন। আজ আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি এই দেশ স্বাধীনতার ৪২ বছর পর যতটুকু সামনে এগিয়েছিল তার থেকে কয়েকশ বছর পিছিয়ে যাবে।
যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে তা শিয়া সুন্নির যুদ্ধের থেকেও ভয়ংকর। আমরা একজন মুসলমান হয়ে আরেকজন মুসলমানকে হত্যা করছি। একমাত্র কাফিরদের বিরুদ্ধে যদি যুদ্ধে কেউ মারা যায় আল্লাহ তাকে শহীদের মর্যাদা দিবেন এটা জানতাম কিন্তু এই মুসলিম-মুসলিম যুদ্ধে যারা মারা যাবেন তারা কিসের মর্যাদা পাবেন।
এটাকে যদি সহীহ হাদীসের আলোকে বিশ্লেষন করি তাহলে বলব এটা একটা অনেক বড় "ফেৎনা" যা সহজে এই দেশ থেকে মিটিয়ে দেওয়া যাবে না। গোটা কতক নাস্তিক ইসলামকে অবমাননা করে যে ফেৎনার সৃষ্টি করেছিল তার প্রতিবাদে শত শত মুসলিমের জীবন দান আরেক ফেৎনায় পরিনত হয়েছে। যারা মারছে তারও আমার ভাই আর যারা মারা যাচ্ছে তারাও আমার ভাই। দেশের মানুষ আজ দু ভাগে ভাগ হয়ে গেছে রাজনৈতিক কারনে। এক গ্রুপ পক্ষ নিয়েছে শাহাবাগীদের আর অন্য গ্রুপ হেফাজতিদের। সবাই প্রস্তুত জীবন দেবার জন্য। এই যুদ্ধ কার বিরূদ্ধে কার? গোটা কতক নাস্তিক ইসলামের কিচ্ছু করতে পারবে না শাহাবাগে রাত দিন চিল্লাচিল্লি করলেও। যুগ যুগ ধরে ইয়াহুদী নাসারারা গণ আমাদের প্রাণ প্রিয় নবী (সাঃ) কে অপমান অপদস্ত করার জন্য চেষ্টা করে গেছেন, একবার ভাবুনতো এতেকরে কি নাবী (সাঃ) এর কোন ক্ষতি করতে পেরেছেন তারা? ইসলামকে কি ক্ষতি করতে পেরেছেন? বরং পশ্চিমা বিশ্বে আগের থেকে অনেক বেশী মানুষ ইসলাম গ্রহণ করছে। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ হলেন শ্রেষ্ঠ কৌশলী।
যারাই শাহাবাগে সবাইকে বলা হচ্ছে "নাস্তিক" আবার যারা হেফাজাতের নামে রাস্তায় নেমেছেন তাদের বলা হচ্ছে "জামাতের রক্ষক" একবার ভাবুনতো, আসলে বিষয়টাকি এমন? আমরা সাধারণ মানুষ জানি কেন শাহাবাগ আন্দোলন আর কেন এই হেফাজাতের সৃষ্টি।
অথচ এই দেশটা কত সুন্দর ভাবেইনা আমাদের সরকার সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারত। আমরা যারা আওয়ামীলীগ করে তারা প্রায়ই মিছিলে স্লোগান দেই "আমরা সবাই মুজিব সেনা"ষ এবং বক্তৃতার মঞ্চে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করি নিদের "শেখ মুজিবের আদর্শে" আদর্শবান বলতে বলতে। আবার বিএনপির সমার্থকরাও নিজেদের "জিয়ার আদর্শে" আদর্শন্বিত বলে মানুষের সম্মুখে প্রচার প্রসার চালিয়ে থাকে। আসলে আমরা এই মহান নেতাদের কোন আদর্শে আদর্শন্বিত?
যদি তাই হতো, তাহলে আমরা তাদের মতো করে দেশটাকে ভালবাসতাম। এই দুই মহান নেতা কেন জামাতের সকল অপরাধ ক্ষমা করে দিয়েছিলেন? কারন তারা ভালোবাসাদিয়ে ঘৃণাকে জয় করতে চেয়েছিলেন। প্রকৃত ইসলাম একথাই বলে, যদি কেউ আঘাত করে তার সাথে উত্তম ব্যবহার কর। ঘুণাকে ভালোবাসার উপরে রাখ দেখবে যে তোমাকে ঘৃণা করত সে অনুতপ্ত হবে। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে যে, অতীতে অনেক যুদ্ধ হয়েছে এবং যুদ্ধাপরাধীদেরকে ক্ষমা করে দেবার নজীরও রয়েছে অহরহ। দেশের মঙ্গলের কথা ভেবে আমরা আমাদের হিংসা বা ক্রোধকে কি একটু দমন করতে পারি না? যুদ্ধপরাধীদের বিচারের নামে আজ যা শুরু হয়েছে এটা কি একটা উন্নয়নশীল দেশের জন্য ভাল হচ্ছে?
যারা অপরাধ করে তওবা করে আল্লাহ তাদের হয়তো ক্ষমা করে দিবেন। ক্ষমা হচ্ছে সব থেকে মহৎ গুন। যে গুনটা শেখ মুজিব বা জিয়ার ছিল সেই গুনটা তার অনুসারীদের কি সত্যই আছে? এটা আমার স্বল্প ব্রেনের চিন্তা ভাবনা কেউ ভুল না বুঝে একটু দেশের বর্তমান পরিস্থিতির দিকে তাকান বুঝতে পারবেন যে আমরা আজ কত অসহায়!!
স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে সেই শুকনা "ঘা" খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে কাচা বানালে তার ফল কি ভাল হবে? ৭১ কি আর আসবে এই দেশে? এই দেশে কি আর পাকিস্তানিরা এসে মা-বোনের ইজ্জত নিবে? নিজামী-সাঈদীরা কি আবার ধর্ষণ কার্য শুরু করবে? না-কি গোলাম আজম? তাদের প্রত্যেকের এক পা অলরেডি কবরে চলে গেছে। একটা কথা মনে রাখতে হবে, যে ব্যক্তি আল্লাহর দৃষ্টিতে অপরাধী সে যদি গোটা জাতীর দৃষ্টিতে নিরাপরাধী হয় কাল কেয়ামতের মাঝে তার বিন্দু মাত্র শাস্তি কম হবে না এবং কোন ব্যক্তি যদি গোটা জাতীর চোখে অপরাধী অথচ আল্লাহর দৃষ্টিতে নিরাপরাধী হয় তাহলেও তাকে আল্লাহ কোন শাস্তি দিবেন না।
প্রকৃত জজ হলেন "আল্লাহ"। আল্লাহু আকবার, সুবাহান আল্লাহী অবিহামদিহী সুবহানাল্লাহিল আযীম"
কোন ব্যক্তির নামে যদি মিথ্যা মামলা দিয়ে, মিথ্যা স্বাক্ষী হাজির করে বিচার কার্য সমাধা করা হয় এবং তার জন্য বিচারক যদি আসামীকে ফাসী দেয় তাহলে আল্লাহপাক কাকে কাল কেয়ামতের মাঠে সাজা দিবেন? যার ফাসী হয়েছে তাকে? না-কি প্রকৃত অপরাধীকে?
সুতরাং একটা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে যেন আমরা বড় ধরনের অন্যায়ে জড়িয়ে না পড়ি তার দিকে যেমন খেয়াল রাখতে হবে ঠিক তেমনি বৃহত্তর জাতীর স্বার্থে কোন বড় অপরাধীকেও ক্ষমা করে হলেও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নজির রাখতে হবে।
ছোট্ট একটা উদাহরণ দিয়ে শেষ করব। ধরুন বাংলাদেশ আজ দু'ভাগে বিভক্ত। এক দল চাচ্ছেন শাহাবাগী ইমরানের জয় হোক আর অন্যদল চাচ্ছেন হেফাজতের জয় হোক। এই পরিস্থিতিতে দেশে ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। যাকে বলে আমরণ গৃহ যুদ্ধ। সাধারণ মানুষ দিক বিদিক শূণ্য হয়ে এদিকে ওদিকে গা ঢাকা দিল। শাহাবাগীদের সাথে যোগ দিল সরকার দলীয় জোট এবং হেফাজতের সাতে বিরোধী দলীয় জোট। লড়াই চলছে আর চলছে.......। নয় মাস এই যুদ্ধ চলল এবং একদল পরাজিত হল। অন্যদল ক্ষমতায় গিয়ে পরাজিতদের খাগড়াছড়ি, বান্দারবনে তাড়িয়ে দিল।
পরাজিত দল দেখতে পেল তাদের আত্মীয় স্বজন দেশের এক প্রান্তে আর তারা অন্য প্রান্তে। যেহেতু তারা সর্বশান্ত ও পরাজিত তাই তারা ঠিক করল যারা ক্ষমতা দখল করে নিয়েছে তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নতুন ভাবে জীবন শুরু করার প্রস্তাব দিব। সেই মোতাবেক তারা কাজ করল। ক্ষমতাসীনরা দেখলেন অনেক হয়েছে যুদ্ধ বিগ্রহ, আর না এখন আমরা সকল রেষারেষী ভুলে নতুন ভাবে দেশকে সাজাই। তারা তাদের ক্ষমা করে দিল এবং সুন্দর ভাবে চলতে থাকল। এবার কোনটা জাতীর জন্য ভাল হবে? তাদের ক্ষমা করা না-কি পুনরায় ধরে ধরে জেলে পুরা?
আমার চিন্তা আর আপনার চিন্তা যে এক হবে তার কোন মানে নাই। আমি দেশের শান্তি চাই, সুন্দর করে বাঁচতে চাই। চুরি, ডাকাতি, হত্যা, গুম, ধর্ষণ এগুলো যেন ভবিষ্যতে আর কেউ না করে তার জন্য কঠিন আইনি ব্যবস্থাপনা চাই। আল্লাহ আমাদের হেফাজাত করুন। আমীন