somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হ য ব র ল - ২

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি উপরে আর যায় হই ভিতরে যথেষ্ট সৎ ও সহানুভূতিশীল - এই কথাটি তনুশ্রীদিকে কি আজ বোঝাতে পারলাম? নাকি তনুশ্রীদি তার নারীসুত্রেপ্রাপ্ত স্বাভাবিক নারীদৃষ্টিতে অনেক আগেই স্ক্যান করে ফেলেছে আমার ভিতর ও বাইরেটা?

আগের স্কুলে D.Oর duty আমিই করতাম।তাই এখানে সুধীর স্যার আমাকেই বলেছিলেন ডিউটিটা নিতে। কিন্তু আমি সবে বদলি হয়ে এখানে এসেছি- এখনো এলাকার মানুষদের চিনিনা।এখনি এই কাজ.. একটু আমতা আমতা করে শেষে অবশ্য রাজি হয়েছিলাম।আমি না নিলে বেচারা তনুশ্রীদিকেই করতে হবে।

কাজ তো নয়। শাস্তি। এক মাস কোন ছুটি পাওয়া যাবে না। আর হবি তো হ কাজ শুরু হবে ঠিক পুজোর আগে।পুজোর ছুটির দিন গুলোতে যখন বন্ধুবান্ধবরা দার্জিলিং কিম্বা রাজস্থনে আনন্দ করে ট্যুর করে বেড়াবে আর ফেইসবুকে তার জ্বলন্ত আপডেট ছাড়বে আমি তখন একা মাস্টার স্কুলে বসে গ্রামের মানুষদের ভোটার তালিকায় নাম সংশোধনের কাজে ডুবে থাকব আর উত্তর দিয়ে যাব কেন হতচ্ছাড়া সরকারের কর্মচারীরা বারবার ওদের নামের বানান ভুল করে... এমনকি রবিবারেও নিস্তার নেই।

দায়িত্বটা নেওয়ার কথা বলে একটু দমেই গিয়েচ্ছিলাম।আমার ইচ্ছা ছিল অন্তত এই বছরটা এর থেকে মুক্তি পেতে।কিন্তু স্যার এমন ভাবে রিকুয়েস্ট করলেন না বলতে পারলাম না।

মাঝখান থেকে উদ্ধার করল তনুশ্রীদি। বলল - 'থাক, ও সবে এসেছে, মুখ দেখে মনে হচ্ছে কাজটা করারও খুব একটা ইচ্ছা নেই, এবছরটা আমিই করে দিই।'

আমার একটু আঁতে ঘা লাগল। একজন মেয়ে হয়ে কাজটা স্বেচ্ছায় করে দেবে আর আমি পারব না? প্রতিবাদ করে বললাম, -না না ,ঠিক আছে,স্যার এত করে যখন বলছেন... তাছাড়া আমি আগেও তো এই কাজ করেছি..

-থাক মুকুল, অনেক বাহাদুরি দেখিয়েছ, কাজটা আমিই করব-আমাকে থামিয়ে দিয়ে ঝাঁঝিয়ে উঠেছিল তনুশ্রীদি। আমি তো বটেই, সুধীর স্যার পর্যন্ত চমকে উঠেছিলেন সেইদিন।

* * *

আজ ছিল তনুশ্রীদির সেই D.O dutyর শেষ দিন। আমার উপরেই দায়িত্ব ছিল তনুশ্রীদির সঙ্গে থেকে পঞ্চয়েতে কাজের সমস্ত ফাইলপত্র জমা করে দেওয়ার।আপ্লুত হলাম। স্কুল শেষ করে দুইজনে একসাথে সাইকেলে করে আসছিলাম। রাস্তায় নামল তুমুল বৃষ্টি, ফাইলের ব্যাগ গেল ছিড়ে,আমরা তখন মাঝমাঠে।আশপাশে কোন বাড়ী ঘর নেই যে ছুটে আশ্রয় নোব। সঙ্গে ছাতা আছে বটে কিন্ত ও বৃষ্টি ছাতা টাতার ধার ধারে না।অগত্যা রাস্তার ধারে একটা ঝাঁকড়া গাছের নিচে দুজনে দাঁড়ালাম। মাঠের মাঝখানে তুমুল বৃষ্টির মধ্যে আমি একজন মহিলার সঙ্গে.. অভিজ্ঞতা হয়নি কোনদিনও.. হলেই বা সে মহিলা দিদির মত.. আমার থেকে বছর তিনেকের বড়.. আমি কিছুটা আড়ষ্ট হয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে ভাবছিলাম বৃষ্টিটা কখন ছাড়বে।হটাৎ তনুশ্রীদির তীক্ষ্ণ চিৎকারে চমকে উঠলাম..

হাঁ করে তো ওদিকে তাকিয়ে আছো.. ব্যাগ টা যে বৃষ্টিতে ভিজে একশা হয়ে গেছে সে খেয়াল আছে?

সসব্যাস্ত হয়ে দেখলাম তনুশ্রীদির সাইকেলে একটা ব্যাগ বৃষ্টিতে বিজছে।ঝাঁ করে মাথায় রাগ উঠে গেল। ব্যাগ টা ওনার.. আছে ওনার সাইকেলে ঝোলানো.. আর আমায় সবকিছু খেয়াল রাখতে হবে। সমস্ত আড়ষ্টতা দূরে হাটিয়ে দৃঢ ভাবে তাকালাম ওর দিকে..হয়ত ভীষণ একটা কিছু বলে দিতাম।কিন্তু খুব রেগে গেলে কথা জোগাতে পারিনা।মুখ থেকে শুধু বেরল -তুমি আমায় কি ভাবো বলতো?

আমার এই রূপ তনুশ্রী আগে কোনদিন দেখে নি। প্রথমটাই স্পষ্ট থমকে গিয়েছিল । তারপর হটাৎ হো হো করে হেসে উঠল। শেষে কোনরকমে হাসি থামিয়ে বলল - হাঁদা..

* * *

কাজটা যত সহজে মিটবে ভেবেছিলাম তত সহজে মিটল না।মেল ফিমেল ভোটার, ছবি সমেত কতজন, ছবি ছাড়া কতজন সব আলাদা করে হিসাব করে দিতে হবে। তনুশ্রীদিতো রেগে কিছু কথাই শুনিয়ে দিল অফিসারকে। ফরম্যাট গুলো আগে দিলে তো ঠিকমত বানিয়ে রাখা যায় আগে থেকে। এখন বসে বসে করা সম্ভব?

আমি এই কাজ আগে করেছি। জানতাম এই পরিস্থিতি হতে পারে। বুঝলাম ঝগড়াকরে লাভ হবে না। শেষে সেই আমাদেরি করতে হবে। তনুশ্রীদির কাছথেকে ফাইল নিয়ে বসে পরলাম।ও খানিক গজ গজ করল। যাক, শেষে আমার সঙ্গে বসল। তনুশ্রীদি এক এক করে নামগুলো বলতে থাকল আর আমি হিসাব করে টিক দিতে থাকলাম। কাজ শেষে করে বেরিয়ে আসতে আসতে ৬টা বেজে সন্ধ্যে।

এখন দিন কাল খারাপ। আমি বাড়ি পৌঁছে দেবার কথা বললাম।কিন্তু কে শোনে কার কথা। সাইকেলটা শক্ত করে ধরে গট গট করে বাড়ির পথে হাঁটা দিল। বলে গেল- তোমার ফিরতে দেরি হয়ে যাবে। যাও, বাড়ি গিয়ে খেয়ে নাও।

বাড়ি ফিরতেই ফোনটা বেজে উঠল। তনুশ্রীদি। বলল বর নিতে এসে গেছে। এবার আমার আর না ভাবলেও চলবে।

এটাই তো তনুশ্রীদি, নাকি?

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:১২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×