somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্যেলভ্যেলেদের কথা - ১

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমিও একদিন ছোট্ট ছিলাম ৷ঐ ছেলেটা , ভ্যেলভ্যেলেটা টাইপের৷ তোমার মত৷

মাধ্যমিকে  স্টারপেয়ে   বিশাল কিছু একটা করে করে ফেলেছি ভাব নিয়ে তখন সায়েন্স নিয়ে পড়ছি ৷ মনে তখন সদ্য উড়ুউড়ু  ভাবটা গজিয়েছে ৷ ফাঁকফোকর পেলেই সাইকেল নিয়ে পালাতাম ৷ কালনার চারিদিকে ১৫-২০ কিমি তখন আমার নখদর্পনে ৷শীতকালগুলোতেই আমার পালানো টা জমত ভালো ৷
এইরকম একটা শীতের দুপুরে চলেগেছি বাকুলিয়া৷ বাকুলিয়া কবি রঙ্গলালের বাসভূমি ৷রঙ্গলালের নাম শুনেছিলুম আগে। বাকুলিয়া যে তার জন্মস্থান তাও বোধায় আবছা জানতাম।কিন্তু সেটি যে আমার একরকম ঘরের পাশেই তা সেইদিনই আবিষ্কার করেছিলাম।একটা এই বড় স্কুল না লাইব্রেরি ওনার নামে। একটা টলটলে বিলের ধার দিয়ে রাস্তা৷ সেখানে রাস্তার ধারে ধারে তখন ইউক্যালিপ্টাস না আকাশমনি গাছ ক্রমশ বাড়ছে ৷ অদ্ভুত ভালো লাগত রাস্তাটা৷একা একা বিলের জলের ধারে দাড়িয়ে দেখতাম সাদা আকাশের ছায়া পড়েছে বিলে। বিলের স্থির জলে তাদের ঈসৎ নীল লাগে৷ একটা দুটো সাদা মেঘের টুকরো আলগা ভেসে আছে৷ জলে তাদেৱ ছায়া  দেখে আরো রূপসী মনে হচ্ছে ৷ কিছু বক-পানকৌড়ি জলে র ধারে ধারে উদাসীন ৷এই সব বসে বসে দেখতে আমার কত যে বেলা বয়ে গেছে৷
সেদিন অনেকটা সাইকেল চালিয়ে পা ব্যাথা ৷ বিলের কাছে একটা সাঁকোর উপর দুইধাৱে বসার জায়গা৷ সেখানে বসে দম নিচ্ছি আর মনে মনে ভাবছি তোমাৱ কথা ৷ হ্যা , সত্যি তোমার কথা ৷

না, মানে এক্কেবারে হুবহু যে তুমি তা বলছিনে ৷ তবে এখনকার তোমার সঙ্গে তার বেসিক স্ট্রাকচারের বেশ কিছু মিল ছিল৷তোমার মতই সে আকাশ  ভালবাসত, রোদ্দুর ভালবাসত, বৃষ্টি ভালবাসত। হটাৎ তাকে দেখেছিলাম ৷ একদিন তার বাবার সাইকেলের ক্যারিয়ারে বসে সে যাচ্ছিল ৷তোমার মতই রোগা পাতলা৷ একটা ম্যাড়ম্যেড়ে হলুদ রঙের ফ্রক পরে ছিল সে৷ এমনিতে একটু ফরসার দিকেই৷ আর গালে একটু সাদা সাদা ছোপ৷ শীতের শেষে ত্বক যেন খোলস ছাড়ছে৷ বিশ্বাস করবে কী জানিনা, ওর মনে মনে নাম ঠিক করেছিলাম অনামিকা৷
আমার দিকে তাকিয়ে সে অদ্ভুত সুন্দর ভাবে হেসেছিল৷ সে হাসিতে কারোর মন জয় করার চেষ্টা ছিল না, নিজেকে জাহির করা ছিল না, তাতে কোনো বিজুরির চমক , অথবা এখন কাৱ উঠতি নায়িকাদের অতিরঞ্জিত চোখ ঠেলে অবাক হবার মেকি ভাব কোনোটাই ছিল না৷  ষ্পষ্ট কী ছিল তা এত বছর পর আমি আৱ ব্যাখ্যা  করতে পারি নে৷তবু এই টুকু বুঝতে পারি সেই মেয়েটি যেন আমাকে সেখানে সেই প্রকৃতির নির্জন কোলে চুপটি করে বসে থেকতে বলেছিল৷ বলেছিল , এই আকাশ দেখো , তুমি তোমার অনামিকাকে দেখতে পাবে , জলের বুকে কান পাতো , তোমার অনামিকার মৃদু হাসির কলতান শুনতে পাবে, এই মেঠো বাতাসে তোমাৱ দুহাত প্রসারিত করো , দেখবে তোমার অনামিকা তোমার আলিঙ্গনে ধরা দেবে ৷

তারপর আমি তন্ময় হয়ে দেখেছিলাম কীভাবে আস্তে আস্তে তার হাসি মাখা মুখ ফিকে হতে হতে মিশে গেছে সবুজ মাঠে, আকাশে, বাতাসে , দিগন্তে৷
তারপর তার খোজে আমি বেশ কদিন, কমাস, কবছৱ আশপাশের গ্রাম গুলোতে সাইকেলে টো টো করে ঘুরেছি ৷ তাকে আর খুজে পাইনি ৷

এখন আমার স্কুলটা ওই দিকেই ৷ মাঝে মধ্যে মন কেমন হলে ওই রাস্তা ধৱে আসি৷ দেখি সেই বাঁক, সেই ঝিল, টলটলে জল, হাওয়ায় ঢেউ লেগেছে তার বুকে৷ দূরে চাষীরা ব্যাস্ত মাঠে, তাদের মৃদু গুনগুন গান কানে আসে৷ সেই বসবার জায়গাটায় গিয়ে দেখি সেই ছোটোবেলাৱ আমিটা এখনো সেখানে বসে৷ সেই একইরকম তন্ময়তায় চেয়ে আছে তোমার পথের পানে৷
মাঝে মাঝে মনে হয় একদিন তোমায় নিয়ে গিয়ে হাজির করাই ওর সামন৷ গিয়ে ওকে বলি দ্যাখৱে গরু, তুই এখানে মন কেমন করে বসে আছিস ? তোর অনামিকা কোথাও না কোথাও আছেই , কোথাও না কোথাও ছিলই, কোথাও না কোথাও থাকবেই
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×