একটা সফর সেরে বাড়ি যাচ্ছি। এখনও ৫ থেকে ৬ ঘন্টার পথ বাকি। বসে বসে কিভাবে সময় কাটবে সেটাই ভাবছি।
আইলের ওপাশে এক মহিলা একটা ছবি আঁকছেন। এখন আবার ভাবছেন। একটা ডাইরি নিয়ে আর কিছু রং পেন্সিল সাথেই ছিল। একটু ভেবে এবার আঁকছেন। এখনো বুঝতে পারিনি কি আকছেন। সিটে পা উঠিয়ে বসেছেন। সাধারণত পথে সবাই ঘুমান, কিন্তু উনি, ব্যতিক্রম। একটা গোলাপী সুয়েটার পরা, পঞ্চাশের মধ্যে বয়স হবে। নাম দিলাম গোলাপী।
আমার পাশে ইয়া মোটা এক লোক বসেছেে। হাফ পেন্ট পরা। রোমশ পা প্রায় লেগে যাচ্ছে। খুবই অসস্থিকর অবস্হা। দেখে মনে হচ্ছে নেটিভ ইনডিয়ান। ওরা সবাই একটু বড়সর। দুই সিটের দেড়টাই ওনার দখলে। আমার অবস্থা খুবই কাহিল।
ওইদিকে গোলাপী বেগমর ছবিটি একটি কঠামোতে চলে এসেছে। গোলাপীর পিছনে এক ভদ্রলোক বসেছেন। নীল শার্ট পরা ঐ ভদ্রলোক একটা কঠিন বই পরছেন। বইয়ের মলাট দেখে মনে হচ্ছে ইতিহাসের উপর কোন বই হবে। ওনাকে দেখেই মনে হচ্ছে অনেক দ্য়ার শরীর। নাম দেয়া যাক দয়াল বাবা। দয়াল বাবার অনেক বয়স হবে।
গোলাপী বেগম এখন পানি পান করছেন আর হাসি হাসি মুখে বসে আছেন। এদিকে পাশের মোটা দেখি একটা ল্যাপটপ বের করে দেখার চেষ্টা করছে। কিন্তু বেচারা এতই বড় যে সামনের সিটের মঝে ঐ গ্যাপটুকু ও নেই। এখন কি একটা অফিসিয়াল রিপোর্ট পড়ে দেখছে।
প্লেনটা বেশ দুলছে। কি জানি কি ব্যাপার। বাইরে বেশ বাতাস হবে। আচ্ছা ভারি ঠান্ডা বাতাস নিচে নামলে, গরম বাতাস উপরে উঠে। এভাবেই তো ঝড় তৌরি হয়, ভাবার চেস্টা করছি, মাথা কাজ করছে না। কেবিনের এসি ঠিক মত কাজ করছে না হয়ত। একটু গরম লাগছে। পাইলট সাহেব বারাবার দুঃখ প্রকাশ করছেন।
পরীর মত সুন্দরী একজন নারী খাবার পরিবেশন করছেন। সুন্দর মেয়েরা রাগী রাগী হয় না। এই ভদ্রমহিলার কাজই হচ্ছে হাসি হাসি মুখে খাবার দেয়া, কিন্তু উনি কেন যেন রেগে আছেন।
গোলাপী বেগমের ছবিটা একটা এবিষ্ট্রেক ছবিই হবে। ভাল আর্টিস্ট মনে হয়। বাদবাকি সব লোকেরা চোখ বন্ধ করে মরার মত ঘুমাচ্ছে ।
গোলাপী বেগম জিজ্ঞাসা করলাম, কি আঁকছেন। উনি বললেন তেমন কিছু না, জাস্ট প্লেইং। দয়াল বাবার বই পড়া ভালোই চলছে। কোনদিকে খেয়েল নেই। এই দিকে মোটু আমার সাইটের জায়গা দখল করে বসে আছে। গায়ে পরে মোটুর সাথে ভাব জমালাম। সে একটা
ন্যটিভ ইনডিয়ান এরিয়ার এক্সিকিউটিভ ম্যানেজার। কোথায় যেন একটা ট্রেনিং দিয়ে বাড়ি যাচ্ছে। বেশ আলাপী মানুষ।
কিছুক্ষণ পরে প্ল্যান ল্যান্ড করবে। ঘুমের ঘোর থেকে জেগে উঠছে সবাই। প্লেনের নাচা নাচি একটু কমেছে।
গোলাপী বেগম আমাকে ছবিটা দিয়ে দিল। আমি বললাম এটা কি একেঁছে। বললো -এলোমেলো ভাবে ছবিটা একেছে, কোন মানে নেই। ভদ্রমহিলাকে আমার অনেক মহান মনে হল।
এদিকে পরীর মত সুন্দরী আমাদের দিকে এসে হাসি উপহার দিয়ে গ্লাস ইত্যাদী সংগ্রহ করে চলে গেলেন। মনে হয় ওনার মন ভাল হয়ে গেছে।
সবাই একটু পরে ব্যাস্ত হয়ে যাবে, ব্যাগ নিয়ে চলে যাবে নিজের ঠকানায়। কারো সাথেই আর দেখা হবে না। আমাদের জীবনটা অনেকটা এই আটসাটো কেবিনে কিছূ সময় কাটানোর মত। এই ছোট্ট জীবনে কেউ জীবনকে সার্থকতা দেয় কাজ করে। আর বেশিরভাগ আমজনতা শুধু ঘুমায়। নাক ডেকে ডেকে ঘুমায়।
আরো কিছু ছবি নিচে দিলাম। উপরের হেডিং ছবিটি গোলাপী বেগমের।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১৯ ভোর ৫:৫১