somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি বই মেলার গল্প

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

// এটি একান্ত একটি কল্পিত গল্প।

একটি ফাইফ ফিফটি ফাইফ সিগারেট ধরাতে ধরাতে সুমন আজকের দিনটির কথা ভাবছিল। ফেব্রুয়ারীর এই সময়টাতে টাকা মেডিকেলের শহীদ মিনারের গেটের দিকটাতে হাঁটতে সুমনের বেশ ভাল লাগে। এখন দুপুর বারটার মত বাজে। এন এক্স ভবনের নীরস গণিতের সাব সিডিয়ারি ক্লাস শেষ করে সে শহীদ মিনারের উল্টো পাশ দিয়ে টি এস সির দিকে যাচ্ছে। খালি পেটে সিগারেট খেতে ভাল লাগছে না। পেট থেকে মোঁচর দিয়ে ব্যাথা করছে। আকাশী রংয়ের জিনস প্যান্ট ও জ্যাকেটে এই দুপুরে একটু গরম লাগছে। তারপরেও সে জ্যাকেট না খুলে হাঁটতেই লাগল। আজ বীথির সাথে দেখা হওয়ার সম্ভবনা আছে। কিন্তু যোগাযোগ করতে ইচ্ছে করছে না। কমলা রংয়ের টিএনটির টেলিফোনের বুথটি টি এসটি তে গেলেই পাওয়া যাবে, কিন্তু সেখানে আধ ঘন্টার লম্বা লাইন। এখন অপেক্ষা করতে ভাল লাগছে না। টি এস সির ক্যাফেতে সুমন ওর কয়েকজন বন্ধু পেয়ে গেল।
-কিরে খবর কি?
সুমন চা সিংগারার অর্ডার দিয়ে পুরোনো হলুদ পাঁচ টাকার নোটের বদলে দুটাকা পকেটে ভড়তে ভড়তে ভাবল আজ রিকসার ভাঁড়া কম হবে-"ভাল।" -সুমন হাসল আর রুবেলের দিকে তাকালো।
রুবেলের চরিত্র নিয়ে সুমনের মনে সব সময়ই প্রশ্ন জাগে। এখনই সে যাবতীয় মেয়েঘটিত নস্ট কাল্পনিক গল্প শুরু করবে। সুমন ওকে পাত্তা দিল না।
ঐপাশে আনিস বসে আছে বিরস মুখে। - কি আনিস কেমন আছ? - সুমন কাউকে তুমি, কাউকে তুই ডাকে। আনিস চুপচাপ টাইপের ছেলে, পড়াশোনাতে খুব ভাল। ওরা তিন বন্ধুই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স ফ্যাকাল্টির ছাত্র।
এখন কি করবে? বই মেলাতে যাই চল- আনিস জিগ্যেসু চোখে তাকাল।

ওরা টি এস সি দিয়ে বই মেলার দিকে হাঁটতে শুরু করল এই দুপুরেই মেলা বেশ জমে উঠেছে। বাংলা একাডেমীর গেইটে বেশ জটলা। এখানে রুবেলের মত ছেলেরা মেয়েদের জন্য বিপদজনক হয়ে উঠে। কয়েকদিন আগে নিউজে এসেছিল, একজন উনিশ বিশ বয়সী মেয়ের পোষাক ছিড়ে কুটি কুটি করেছে এই জটলাতে। আজ পুলিশের পাহাড়া আছে।

একাডেমীর মেইন গেটের ভেতড়েই চত্তরে উঠতি কবি সাহিত্যিকদের আড্ডা দেখা যাচ্ছে। ওরা তিনজন "অন্য" প্রকাশনীর দিকে গেল। হুমায়ন স্যারের সাথে অবশ্য হলে বা ক্লাসেই দেখা হয়। তবে মেলাতে হয়তো এই ভীড়ে ওদের চিনতে পারবেন না। ভয়ের কিছু নেই। স্যারের নতুন বইয়ের খোজে ওরা এগিয়ে গেল।

মেলার বই গুলোকে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়। পুরোনো উপন্যাস, সেখানে রবীন্দ্রনাথ , নজরুল থেকে ভারতীয় লেখকদের বই। এই বইগুলোর পাঠকরা বেশ সিরিয়াস। কিছু উঠতি তরুন তরুনী হুমায়ুন আহমেদ, হুমায়ুন আজাদ, জাফর ইকবাল, উন্মাদ ইত্যাদি পরে। কিছু কবিতার পাঠক আছে, শামসুর রাহমানের কবিতা সব থেকে বেশী চলে। মুক্তিযুদ্ধের কিছু বই আছে, তবে তেমন পাঠক নেই। তবে ইদানিং জাহানারা ইমামের নাম শোনা যাচ্ছে। আনিস "একত্তুরের দিনগুলো" কিনে এর কালো কভারের দিকে গভীর মনোযোগ দিয়ে কি পড়তে ব্যাস্ত হয়ে গেল।

একটি বইয়ের দোকান থেকে মাকসুদের নতুন একটি গান "মেলায় যাইরে " ভেসে আসছে। বেলা পরতে শুরু করেছে। একটু পরেই বিকেলের কালচারাল পোগ্রাম শুরু হবে।রুবেল ব্যাস্ত হয়ে গেল। - চল এই আলোচনা শুনতে ভাল লাগবে না। এখানে চাম নাই। চল বেরিয়ে যাই।

ওরা দোয়েল চত্তরের দিকে হাঁটলে লাগলো। একটু দুরেই দোয়েলের আদুড়ে বিশাল ঠোঁটটি দেখা যাচ্ছে। এ সময় হঠাৎ কয়েকটি ককটেলের শব্দ পাওয়া গেল। সুমন পেছনে তাকিয়ে দেখে কিছু উত্তেজীত যুবক রামদা নিয়ে দৌড়ে বাংলা একাডেমীর দিকে যাচ্ছে। পুলিশ কাঁদানী গ্যাস ছুড়ে দিল। মুহুর্তেই পুরো এলাকায় আতং ছড়িয়ে গেল। আনিস কি পাগল হয়ে গেল। ওরা দেখল আনিস ওই জটলার দিকে দৌড়ে যাচ্ছে। রুবেল আতংকে মাটিতে বসে পড়েছে। সুমন আনিসের পেছন দৌড় দিল। ওরা বই মেলা মেইন গেটে এসে দেখল কয়েকজন মাটিতে পরে আছে। এরা সাধারন পাবলিক। ওরা কয়েকজনকে মাটি থেকে ওঠালো । একজন ছাড়া সবাই মোটামুটি ভালই ছিল। একটি রিকশা নিয়ে কয়েকজন মিলে রক্তাক্ত মানুষটিকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেল।

আনিস ও সুমন যখন ঢাকা মেডিকেল থেকে বের হল তখনও বিকেল শেষ হয়নি। আনিসের বইটি হারিয়ে গেছে দৌড়াদৌড়িতে। সুমন ভাবল "একত্তরের দিনগুলো" আর পড়া হবে না। ওকে আরেকদিন বইটি কিনে গিফট করতে হবে। রুবেল হয়ত বাসায় চলে গেছে, ওর পাত্তা নেই।

বিকেলের রোদে শহীদ মিনারটিকে অসাধারন লাগছে। সোনালী রোদ্রের আবরনে লাল কাপড়ে আব্রিত মিনার মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে, যেন মেঘের সীমা পেরিয়ে, ঐ আকাশের উপরে। তবু সেখানে কিছু আঁধার আছে, কিছু কালো মেঘের ছায়া। আজ বই মেলাতে যেটা হল সেটি হল এই কালো মেঘ, কুসংস্কারের ছায়া, অশিক্ষার আধাঁর। এই আধাঁরে আর কতদিন মুক্তচিন্তা বাধাঁ পাবে, মুখ ধুবড়ে পড়বে- এসব আবোল তাবোল ভাবতে ভাবতে সুমন কার্জন হলে দিকে রওয়ানা হল একাই। আনিস ও চলে গেছে একটু আগে।

সন্ধ্যা হবে একটু পরেই। কালো পিচের প্রশস্ত রাস্তার পাশেই লালচে প্রকান্ড কার্জন হলের পাশ দিয়ে সুমন হাঁটছিল। পাশে একটি রিকশা দাড়াল।
- এই যে? আপনি কোথায় যাচ্ছেন? একটু দাড়ান ।
মনে হল বাতাস থেমে গেল, শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে। বুকের ভেতর ড্রাম বাজতে লাগল। সুমন অবাক হয়ে ফিরে তাকাল। এই শেষ বিকেলটি যেন গোধুলীর সব সোনালী ভালবাসা নিয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়াল। সুমনের মুখে কথা আসছিল না।
-আপনার সাথে দেখা করার জন্য সেই দুপুর থেকে কলা ভবনে অপেক্ষা করছিলাম। আপনি কোথায় ছিলেন?
রাগলে বীথি আপনি করে কথা বলা শুরু করে। আজ কি কোন বিশেষ দিন? ও বাসন্তি শাড়ী পড়েছে কেন? সুমন কি কিছু ভুলে গেছে? আজ কি ওদের কোন প্লান করা ছিল? এরকম হাজার প্রশ্নের মাঝে, সুমন মাতাল চোখে ওর প্রেয়সীর গভীর কালো চোখের দিকে তাকিয়ে রইল।
-এইতো একটু ব্যস্ত ছিলাম।
-উঠে এসো।
সুমন বিথীর পাশে উঠে বসল।

দুপাশে নাম না জানা গাছের সারি। রাস্তার নিয়ন বাতিগুলো জ্বলতে শুরু করেছে । স্বপ্নের পংখীরাজের মত দুলতে দুলতে রিকশা চলছে, দুরে একটি সুন্দর স্বপ্নের খোঁজে। রুপালী রাতের আলোয় একটি সুখী যুগল চলছে স্বপ্নের জাল বুঁনে।

সেদিনের বই মেলা থেকে একটি কবিতার বই কেনা হয়েছিল বন্ধুদের লুকিয়ে। সুমন সেই বইটি বিথীকে দিতে ভুলে যায়। কয়েকটি কবিতা মাঝে মাঝে ঘুরে ঘুরে মনে আসে। রবি বাবুর এটিও ছিল সেখানেঃ
"
দিবস রজনী, আমি যেন কার আশায় আশায় থাকি।
তাই চমকিত মন, চকিত শ্রবণ, তৃষিত আকুল আঁখি॥
চঞ্চল হয়ে ঘুরিয়ে বেড়াই, সদা মনে হয় যদি দেখা পাই--
'কে আসিছে' বলে চমকিয়ে চাই কাননে ডাকিলে পাখি॥
জাগরণে তারে না দেখিতে পাই, থাকি স্বপনের আশে--
ঘুমের আড়ালে যদি ধরা দেয়, বাঁধিব স্বপনপাশে।
এত ভালোবাসি, এত যারে চাই, মনে হয় না তো সে যে কাছে নাই--
যেন এ বাসনা ব্যাকুল আবেগে, তাহারে আনিবে ডাকি॥
"
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×