somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুমিনীয় বিশ্বাস সন্ত্রাস এবং বিষাক্ত বাতাস

২৬ শে মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৫:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবিঃ বছর চারেক আগে তোলা

সকাল বেলা পিসি খুলতেই নিচের কোণায় চোখ পড়ল। মাইক্রোসফট জানিয়ে দিল আজকের বাতাস এর অবস্থা "সিভিয়ার", মানে বাতাস ভয়াবহ দূষিত। আমাদের জন্য এটা নতুন কোন বিষয় না। প্রায় প্রতিদিনই আমরা দূষিত বায়ুতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাচ্ছি। এই বাতাসে যেমন আছে বিষাক্ত নানা গ্যাস, তার সাথে নিশ্চয়ই আছে সাম্প্রদায়িক, মুমিনীয় বিষবাষ্প। খুব বেশি কিতাবি শুনালেও এর চেয়ে ভালোভাবে এটি প্রকাশ করার কোন শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না।

ঘটনা অনেকটা এমন-

বাসা থেকে বেরিয়ে দোকানে গিয়ে সিগারেট কিনলাম। কিনে ঠিক বাসায় ফিরে আসছিলাম। সিগারেট পকেটে। পরনে ছিল হাফপ্যান্ট আর একটা টিশার্ট। টিশার্টটা একটা মেটাল ব্যান্ডের। তো, টিশার্টের আর্টওয়ার্কটা অনেকটা এরকম যে, দেবী কালী জিহবা বের করে দাঁড়িয়ে আছেন। ভাবতে পারেন কেনো এগুলা পরি? কারণ এটাই আমার চয়েস অফ ড্রেস। শীতকালেও হাফপ্যান্ট পরি, সবসময়ই এমন আর্টওয়ার্কের টিশার্টই পরি। এই সভ্য যুগে এসে কাউকে আমার ড্রেস কোড নিয়ে ব্যখ্যা দেয়ার প্রয়োজন বোধ করছি না। ড্রেস এর কথা ঊল্লেখ করার যুক্তি অচিরেই খুঁজে পাবেন।

তো, গলিতেই এলাকার কিছু ছোটভাই বসা। ওরা আমাকে বেশ সম্মান করে সবসময়ই। চলে যাচ্ছিলাম। ডাক দিল-
-"ভাই"
-"কিরে?"
-"রোজা রাখছেন?"
-"না"
টিশার্টের আর্টওয়ার্কের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল-
-"ভাই, তুমি কি মুসলমান?!"
অবাক হয়ে তাকালাম পাঞ্জাবী, টুপি পরা ছোটভাইয়ের দিকে। সবসময় পরে না। রোজা দেখেই হয়ত পরল। আমি তাকিয়ে হাসলাম একটু। আবার একই প্রশ্ন। সাধারনত আমি পলিটিক্স, ধর্ম এগুলা নিয়ে কথাবার্তা এড়িয়ে চলি। কিন্তু যে এপ্রোচে ও আমাকে জিজ্ঞেস করল, উত্তরটা দিয়েই দিলাম।
-"না"
-"মানে? তুমি মুসলিম না?"
আবারও হেসে বললাম-
-"না"
-"কি বল ভাই, কষ্ট পাইলাম। তুমি আল্লারে বিশ্বাস কর না?"

আমি ঠিক বুঝতে পারলাম ওর উদ্দেশ্য। যেভাবে দেশে মুমিনরা বিশ্বাস সন্ত্রাস চালাচ্ছে তাতে ও আমাকে যতই সম্মান করুক ইসলামের দিকে তাকিয়ে চাপাতি হাতে নিতে সময় লাগবে কয়েক সেকেন্ড। তাঁর উদাহরণ দেয়াটা বাহুল্য মনে করছি। চোখের সামনে হাজার উদাহরণ। অভিজিত, দীপন এর কথা ভুলে যাওয়ার কোন কারন দেখি না!

বলে রাখা ভালো, ধর্ম নিয়ে এই ছোটভাই এর জ্ঞান চেতনা পর্যন্তই। এলাকার নিয়মিত গাজাখোরদের মধ্যে ও একজন। এমনকি ইফতারের পর গাজার দাওয়াত ও দিলো।

-"দেখ, তুই রোজা রাখসস। আমি হুদাই তোরে প্যারা দিতে চাইতেসি না।"
-"না ভাই, তুমি বল। আমার কোন সমস্যা নাই। কেন তুমি ইসলাম মানো না। ইসলামে তো সব দেয়া আছে"
মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল।
-"কি দেয়া আছে?"
-"দুনিয়ার যা কিছু আছে সবই দেয়া আছে কোরানে"
চুপ থাকলাম কয়েক দন্ড।
-"কেমনে মাছ উলটে খেতে হয়ে সেইটা পর্যন্ত বলা আছে।" (কেঊ জানলে জানাবেন!)
জানতাম ওর সাথে যুক্তি খাটবে না। তাও বললাম-
-"আচ্ছে। তো, মোবাইল ক্যামনে চালাইতে হয়? বলা আছে না কোরানে, বল আমারে"
চুপসে গ্যালো। গিয়ে বসলো।
-"ভাই, কষ্ট পাইলাম।"
-"মানে কষ্ট পাবি ক্যান। কোন হিন্দু বা বৌদ্ধ্য যদি এসে তোরে দাওয়াত্ দিত, তুই মানা করলে ওরা কি কষ্ট পেত? কি ধরনের কথা এগুলা?"
পাশ থেকে আরেকজন বলল-
-"ভাই বাদ দেন। ওরে রোজায় ধরসে, হুদাই প্যাচাল পারতেসে"
সে আবার বলল-
-"ভাই, তোমার টিশার্টে এগুলা কি। আর হাফ প্যান্ট পরে আছ"
-"তো? আমি কি আজকে নতুন পরতেসি?
পাশের জন যোগ করল-
-"ভাই সারাবছর যাই করি, এই এক মাস তো ঠিক হয়ে চলা উচিত"
কি আর বলব!
-"তোর কি ধারনা আমি এগারো মাস ভন্ডামি করার জন্য, তোগো দেখানোর জন্য এগুলা পরি?"
-"না ভাই, তাও। সবাইরে তো হিসাব দিতে হইব"
প্রথম ছোটিভাইটা উইক প্লটে ফিরে গ্যালো।
-"ভাই, তুমি কি নবিরে মানো না?"
বুঝলাম ঘটনা কোন দিকে যাচ্ছে। অ ওপেক্ষা করছে আমার মুখ থেকে কোন একটা বেফাস কথার।
-"কি মানমু? মানে, মানা বলতে তুই কি বুঝাইতেসস?"
-"ভাই, খুব কষ্ট পাইলাম। ভাবসিলাম তুমি মুসলিম"
-"দেখ, এ জন্যই তোরে প্রথমেই মানা করছিলাম, এগুলা নিয়ে কথা না বলতে"
-"না ভাই, কোরানে কিন্তু সব বলে দেয়ে আছে"
-"তাই? গাড়িতে চড়ার নিয়ম কি? কেমনে চড়ব?"
-"এইডা কি কইলা ভাই, রাস্তায় চলার আদব ছয়টা, কোরানে বলা আছে", পাশের জন যোগ করল
-"কোরানে কোন যায়গায় বলা আছে বল, রাস্তায় চলার আদব ছয়টা?"
-"সূরা বাকারার ৩০ নাম্বার.."
মোবাইল বের করলাম সাথে সাথে। ভুলভাল রেফারেন্স দেয়া ছোটভাই পল্টি নিল-
-"যেখানেই থাক, বলা আছে ভাই"
আর বাড়াতে চাইলাম না।
-"দেখ, তোর যা বিশ্বাস করতে মন চায় কর, তোরে বাধা দেয়ার রাইট আমার নাই। আবার আমারে বাধা দেয়ার কোন রাইট তোর নাই। আর হ্যাঁ, আমি যা করি, সব দিক দেখে, বুঝে, শুনে, পড়ালেখা করে তারপরই করি। তুই আমারে বলসস ঠিক আছে। ওট্টুকেই থাক"

অন্য একজন আসতেই প্রসংগ পালটে হালকা করলাম। বলা বাহুল্য, সন্ধ্যার পর গাজার দাওয়াত আবার পেলাম।

এই মুমিনীয় সন্ত্রাস দিনকে দিন বাড়ছে। আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস, আমার পরিবার ইসলাম মানে কি না, আমি কেন ইসলাম মানি না এটা জিজ্ঞেস করার অধিকার কারো নাই। সাংবিধানিকভাবে কিংবা নৈতিকভাবে কোন সভ্য সমাজে এগুলা কল্পনাতীত। কিন্তু যেহেতু অচিরেই আমরা আফগানিস্থানের মত শরিয়া শাসন চালু করতে যাচ্ছি, সেহেতু এটাই উত্তম আচরণ। অভিনন্দন ও শুভকামনা বাংলাদেশ!

শেষ করছি ব্যান্ড ক্রিয়েটরের লাইন দিয়ে-

"We're not afraid to live
We're not afraid to die,
We are the antidote to the radicalized
And as the cities drown in bloodbaths worldwide

We will survive
Totalitarian terror!

Welcome the destroyer!

Wielder to strike
Totalitarian terror,
Feeding the oppressor;

Resistance must rise when freedom has died......."

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০২৩ রাত ৮:৪৫
১৯টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×