somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাংবিধানিক ক্রটির কারনেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে ভয়াবহ পরিনতির দিকে !

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৪:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে এমন একটি পর্যায় এসে দাড়িয়েছে যে নুন্যতম সচেতন ব্যক্তিটিও আজ ভয়াবহ রাজনৈতিক সংঘাতের কথা ভেবে আতংকিত হচ্ছে। বাংলাদেশের একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তি ও একজন আইনজীবী হিসাবে সম্ভাব্য এই সংঘাতের জন্য আওয়ামীলীগ, বিএনপি কিম্বা কোন রাজনৈতিক সংগঠনকেই আমি দায়ি করি না। এর জন্য দায়ি আমাদের সংবিধানের ত্রুটি বা শাসন ব্যবস্থার ত্রুটি। পদ্ধতিগত ভুলের জন্য বাংলাদেশ বারবার ভয়াবহ সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে অথচ এই মারাত্মক ভুলটি সংশোধন করা হচ্ছে না। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় পার্লামেন্টারি শাসন বলতে যা বোঝায় বাংলাদেশের সংবিধানের ত্রুটির কারনে তা কোন ভাবেই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশে শুধুমাত্র নামেই ‘সংসদিয় শাসন ব্যবস্থা’ প্রকৃত পক্ষে বাংলাদেশের শাসন ব্যাবস্থাটি প্রেসিডেন্টশিয়াল শাসন ব্যাবস্থা।

এই সাংবিধানিক ভুলের সুত্রপাত এবং এর সমাধানটি কি তা আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই।

পার্লামেন্টারি শাসন বলতে বোঝায় পার্লামেন্ট হবে রাষ্ট্র পরিচালনায় সকল ক্ষমতার উৎস। পার্লামেন্ট বলতে শুধু সরকারী দলের এমপি মন্ত্রিদেরকে বোঝায় না, সরকারী দল ও বিরোধি দল উয়ভের সমন্বয়েই পার্লামেন্ট। এই ভুলের সুত্রপাত ১৯৯১ সাল থেকে-
১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের সংবিধানকে ৫ম সংশোধনির মাধ্যমে প্রধান মন্ত্রি শাসিত সরকার থেকে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারে রূপান্তরিত করে এই রূপন্তরের হাত ধরেই ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যাবস্থা বিদ্যমান ছিল। ১৯৯০ এর গণ আন্দোলনের মাধ্যমে এরশাদ সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের ঐক্যমতেই সংবিধানের দাদশ সংশোধনির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার থেকে আবার প্রধান মন্ত্রি শাসিত সরকারে রূপান্তরিত করা হয় কিন্তু এই রূপান্ত প্রক্রিয়াটিতে ছিল মারাত্মক ভুল। এই রূপান্তরে রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির নিকট থেকে প্রধান মন্ত্রির হাতে আর্পণ করা হলেও সংসদিয় স্থায়ি কমিটি গুলিকে ক্ষমতায়ণ করা হয়নি। প্রকৃত পক্ষে সংসদিয় স্থায়ি কমিটিগুলিকে ক্ষমতায়ণ না করা হলে সংসদিয় শাসন ব্যবস্থা কোনদিনও প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এত বড় ক্রটি পৃথিবীর কোন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নেই।

একটি গণতান্ত্রিক দেশে যতগুলি মন্ত্রণালয় থাকবে প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সংসদিয় স্থায়ি কমিটির আন্ডারে থাকতে হবে। সংসদিয় শাসন ব্যবস্থায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রির নিয়োগ প্রধান মন্ত্রি প্রদান করলেও ঐ মন্ত্রি ও মন্ত্রণালয়টি স্থায়ি কমিটির কাছেই হিসাব-নিকাশ পেশ ও জবাবদিহিতা থাকতে হবে এমনকি সংশ্লিষ্ট স্থায়ি কমিটি মন্ত্রির কাজে সন্তুষ্ট না হলে মন্ত্রিকে বরখাস্ত করার ক্ষমতাও সংসদিয় স্থায়ি কমিটির থাকতে হবে। সংসদিয় স্থায়ি কমিটিতে শুধু সরকারি দলের এমপিরাই থাকে না, সেখানে আনুপাতিক হারে বিরোধি দলের এমপিও থাকে। আনুপাতিক হারে সংসদিয় স্থায়ি কমিটির চেয়ারম্যানও বিরোধি দলের এমপিদেরকে প্রদান করতে হয়।

এই সাংবিধানিক ত্রুটির কারনে বাংলাদেশে প্রেসিডেন্টশিয়াল শাসন ব্যবস্থার আদলে মন্ত্রি নিয়োগ থেকে বরখাস্ত বা অপসারণ সকল কিছুই প্রধানমন্ত্রির হাতে বিদ্যমান।

আমরা ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে অতি অল্প কারনেই বিভিন্ন মন্ত্রিদের পদত্যাগ করতে দেখি, তাদের পদত্যাগ করতে দেখে বাহবা দেই, ভারতে মন্ত্রি/মিনিষ্টাররা কি ভিন্ন গ্রহের প্রাণি? তাদের এই সততা কোথা থেকে এসেছে? তারা পদত্যাগ পত্র জমাদেয় স্থায়ি কমিটির কাছে জবাবদিহি করার ভায়ে কারন তারা জানে স্থায়ি কমিটির সরকারি দলের সদস্যরা তাকে ছেড়ে দিলেও বিরোধি দলের সদস্যরা তাকে ছাড়বে না।

কিন্তু বাংলাদেশের সাংবিধানিক ত্রুটির কারনে সংসদিয় স্থায়ি কমিটিগুলি নিষক্রিয়। এমনও কিছু সংসদিয় কমিটি রয়েছে যে কমিটিগুলি পাঁচ বছরে একটি মিটিং পর্যন্ত করেনি। যদি ক্রটি সংশোধন করে সংসদিয় স্থায়ি কমিটিগুলি সক্রিয় করা যায় তাহলে বাংলাদেশ কোন সরকারই পাঁচ বছরের জন্য ট্রামকার্ড হাতে পেয়ে যেমন খুশি তেমন ভাবে দেশ চালাতে পারবে না। আর বিরোধি দলও জনগণকে বলতে পারবে না আমরা যেহেতু ক্ষমতায় নেই সেহেতু আমাদের কোন দায়-দায়িত্ব নেই কারণ একথা বল্লে জনগণ বলবে স্থায়ি কমিটিতে আপনাও তো আছেন মন্ত্রিকে কেন ধরছেন না? যে দেশে শাসন কার্যক্রমে সরকারী ও বিরোধি উভয় দলের অংগ্রহন নেই সে দেশে গণতন্ত্র কোন দিনও প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। একটি দল আর একটি দলকে অবিশ্বাসের চোখে দেখবে আর জন্ম নিবে ‘তত্বাবধায়ক সরকারের’ বির্তকের মতো হাজারও বির্তক, দেশ এগিয়ে যাবে ভয়াবহ পরিনতির দিকে, আর আমরা সাধারণ মানুষেরা পৃষ্ট হব রাজনীতির জাতাকলে।
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×