somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাঠান মুলুকে - ২ (দুই)

১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আফগানিস্তানের প্রকৃতি


প্রথম পর্বে আফগানিস্তানের পরিচিতি অনেকটাই লিখেছি। আজ প্রকৃতি নিয়ে কিছুটা লিখতে বসেছি।

আফগান প্রকৃতি অনেকটা বৈরীই বলা যায়। পাথরের পাহাড়, মরুভুমি, ফসলী জমি সবই আছে। পাহাড়ে কোন রকমের গাছ দেখা যায় না বললেই চলে।

আফগানিস্তানের আয়তন ৬,৪৭,৫০০ বর্গ কিলোমিটার, জনসংখ্যা মাত্র তিন কোটি। প্রচুর খালি সমভুমি পড়ে আছে, তা রেখে কেন যে ওরা গাদাগাদি করে পাহাড়ের উপর বাস করে, তা আমার মাথায় আসে না। দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন, একটার উপর আরেকটা ম্যাচের বক্স সাজানো আছে।


আফগানদের প্রধান খাবার রুটি। সেই রুটির সাইজ মাশ আল্লাহ্‌ জীবনেও ভুলবো না। দৈর্ঘে তিন ফুট হবে, প্রস্থে হবে দেড় ফুট আর ঊচ্চতায় এক ইঞ্চি। আমাদের দেশে তন্দুর রুটি যেমন চুলায় তৈরী করে, চেমনি চুলায় বানানো। সাধারনতঃ সবাই ওই রুটি কিনেই খায়। যখন কিনে নিয়ে যায়, সে আরেক দৃশ্য- কাঁধে করে নিয়ে যেতে হয়। আমি যে গেষ্ট হাউসে ছিলাম, সেটা অফিসের গেষ্ট হাউস। দুপুরে সব অফিস স্টাফরা ওখানেই খেত। আমি এক পাঠান ড্রাইভারকে ওই রুটি দুইটা খেতে দেখছি সাথে বড় এক ডিস সবজি। যেখানে আমি দুপুরে ছয় ভাগের এক ভাগ খেতে পেরেছি। ওখানে মাছ খুব কমই পাওয়া যায়। ভেড়া, দুম্বা, গরু, খাশী সব কিছুর গোশতই পাওয়া যায়। এক কেজি গোশত প্রায় দশ লিটার পানি দিয়ে রান্না করে, মানে ঝোল রাখে। ওরা ওই তরকারীটাকে বলে "সুরুয়া।" বাটি ভর্তি সুরুয়া আর খুব বেশি হলে দু'টুকরো গোশত নিয়ে তাতে রুটি ভিজিয়ে খায়। আমিও খেয়েছি, মজাই লাগে। আফগানরা তৈলাক্ত খাবার বেশী খায়, ভীষণ পরিশ্রমী আর পাহাড় বেয়ে উঠতে হয় বলে, হয়তোবা সেটা বার্ন হয়ে যায়। আশেপাশের দেশ থেকে ভাল বাসমতি চালও আসে, ওরা বিরিয়ানীও পছন্দ করে। ভেড়া বা দুম্বার গোশতে প্রচুর চর্বি হয়, সেটা ওরা খুব পছন্দ করে খায়। আমরা একদিন ফ্রেশ ভাত রান্না করতে বলেছিলাম, খাবার সময় দেখি তাতে লবন দেয়া আছে, আর আছে আস্ত জিরা। লবণ ছাড়াও যে ভাত রান্না হয়, এটা ওরা চিন্তাই করতে পারে না।



-----------------------------পাহাড়ী নদির ভিতরে অতিথীশালা


















------------------------এমন দুর্গম স্থানেও সুর্য্যের কী দারুণ রঙিন আভা


নানা রকমের ফলের চাষ হয় এখানে। অসম্ভব মিষ্টি সব ফল। আপেল বা আঙ্গুরের কথা না হয় বাদই দিলাম। খারবুজা নামে একটা ফল হয়, যা আমাদের দেশের ফুটি বা বাঙ্গির মত। প্রায় তরমুজের মতই রসালো এবং দারুন মিষ্টি। আর বাদামেরতো কথাই নেই। কত প্রজাতির বাদাম যে ওই দেশে চাষ হয় তার ইয়ত্তা নেই। সব্জিও চাষ হয়, তবে তা সীমিত।







আর চাষ হয় পপি। পপির ফল থেকে হেরোইন তৈরী হয়। কি ভাবে তা বানানো হয় সেটা আমি বলতে পারছি না। মুলতঃ তা’ পাচার হয় আমেরিকাতেই। আমেরিকানদের ধ্বংস করবার এটাও এক ষড়যন্ত্র।







-----------------------------------------------নিষিদ্ধ পপি চাষ


শীতের সময় তুষারে আবৃত হয় সিংহ ভাগ অঞ্চল। মাঝে মাঝে তুষার ঝড়ও হয়। আবার মরু ঝড়ও দেখা যায়। পাহাড় আর মরুভুমিতে ঘেরা বলেই হয়তোবা পানির অভাব ওই দেশে। পানির স্তর অনেক নিচে। তবে আল্লাহ্‌র রহমতে, পাহাড় বেয়ে ঝরনা নামে। সেই পানিই সুপেয়, একেবারে ডিসটিলড্‌ ওয়াটার। পাহাড়ী নদীগুলোতে যখন পানি থাকে না, তখন মনে হয় যেন পাথরের নদী। আর যখন পানি আসে, প্রবল খরোস্রোতা। দু'একটা জায়গায় পাহাড়ী ঝর্ণা দেখা যায়, যার পানি রঙ্গীন। খাওয়া যায়। স্বাদ একেবারে কোমল পানীয় কোকের মত। অবিশ্বাস্য!!! সুবহান আল্লাহ্‌। মনে পড়ে, সূরা আর রাহ্‌মানের সেই ক'টা লাইন," তোমরা বিধাতার কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে।"( ফাবিয়াইয়ে আ'লা এ রব্বেকুমা তুকাজ্জেবান)।




-------------------------------------প্রাকৃতিক কোলার ঝর্ণা























--------------------------------------শীতের আফগানিস্থান






-----------------------------------------বর্ষার পাহাড়ি নদি


আফগানিস্তানে এখন গাড়ী কিনতে কোন ট্যাক্স দিতে হয় না, আমেরিকা শাষিত বলেই হয়তোবা। আমাদের দেশে যেখানে ২০০%, ৩০০% ট্যাক্স দিতে হয়। বিভিন্ন ধরনের ব্র্যান্ডের গাড়ী ওখানে পাওয়া যায়। আমি দেখেছি, সাধারন টাউন সার্ভিসের গাড়ীগুলো মার্সিডিসের বাস। তারপরও পাহাড়ী অঞ্চলে এখনো চলছে ঘোড়া, গাধা। চলছে মানুষ, বইছে বোঝা। মরুভূমিতে চলে উট।

















---------------------------------- মরু/পাহাড়ি বাহন


ওদের জাতীয় খেলার নাম," বুচ কাশি"। খেলোয়াররা সব ঘোড়-সওয়ারী। মেশের চামড়ার ভিতর খর ঢুকিয়ে একটা আকৃতি বানায়। তারপর সেটা নিয়ে চললো খেলোয়ার, কোন একটা গোলপোষ্টে সেটা প্রবেশ করাতে হবে।আরেকদল কেড়ে নেবার চেষ্টায় থাকে। এভাবেই খেলা এগিয়ে চলে। উটের যুদ্ধও ওদের প্রিয় খেলার একটি, আমাদের দেশের মোরগ যুদ্ধের মত। অবশ্য আমাদের দেশে মোরগ যুদ্ধ এখন বিলুপ্ত প্রায়।











----------------------জাতীয় খেলা," বুচ কাশি"





-----------------------------------------লড়াকু উট



এখনো মাঝে মাঝে দেখা যায়, তালেবানদের তান্ডবের দৃশ্য। এখানে ওখানে পরিত্যক্ত পোড়া গাড়ী, বিকল ট্যাংক, দেয়ালে অজস্র বুলেটের চিহ্ন। তালেবানদের গেরিলা আক্রমন এখনও আছে। সব আমেরিকা বিরোধী। আফগানদেরও সরকারী চাকুরী করতে দেবে না তালেবানরা। আমি যখন ছিলাম, তখন একটা সিডি বেরিয়েছিল। কয়েকজন আফগান পুলিশ সদস্যকে তালেবানরা ধরে নিয়ে গেছে। তাদের সবাইকে জবাই করে, ধরের বুকের উপর মাথাটা রেখে দিয়েছে। সেই দৃশ্য ভিডিও করে বাজারে ছেড়ে দিয়েছে। তাতে হুমকী দেয়া হয়েছে, "কেউ যদি আমেরিকার অধীনে চাকুরী করে তাদেরো এই দশা হবে"। কী হিংস্র, নরপিশাচ এরা!!! আমার হাসবেন্ড এই সিডি টা দেখেছিলেন। আমি সইতে পারব না বলে, আমাকে দেখান নি। সাধারন আফগানরা তালেবান বিরোধী। তারা শান্তি চায়।











------------------------------টিভিটাও গুলি করে ভেঙ্গে রেখে গেছে


ইউ এন-এর রোড প্রজেক্টের কাজ দেখার জন্য মন্ত্রীর গাড়ী বহর এবং ইউ এন-এর গাড়ী বহর যাচ্ছিল, সাথে আগে পিছে পুলিশের গাড়িতো ছিলই। সিকিউরিটি টীমকে বলা হয়েছিল নির্দিষ্ট একটা সময়ে মন্ত্রী ওই এলাকা ক্রস করবেন। সম্ভবত কেউ একজন খবরটা তালেবানদের জানিয়ে দেয়। গাড়ী বহর যাবার সময় সামনে থেকে পুলিশের গাড়ী একটা উড়ে গেল, মাটিতে পুঁতে রাখা এক ধরনের বোমা যা রিমোট দিয়ে ফাটানো হয়েছিল। ওই গাড়িতে তিনজন পুলিশ সদস্য ছিল, তাদের একজন সাথে সাথেই মারা যায়, একজনার পা উড়ে যায়, আরেকজন গুরুতর আহত ছিল। মন্ত্রী সাহেব নিজের গাড়ী রেখে আগেই মাঝের দিকে থাকা ইউ এন-এর গাড়ীতে ছিলেন। তার মানে এনারা জেনেই বের হন, কিছু একটা অঘটন হয়তো হতেও পারে। পরে আরো কয়েকটা পুঁতে রাখা বোমা উদ্ধার করা হয়।








-----------------------------------------উদ্ধারকৃত বোমা

পাঠান মুলুকে - ১ (এক)


ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১:২৫
৪৯টি মন্তব্য ৪৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×