১৯ ডিসেম্বর।ভোর ছটায় ঘুম থেকে উঠে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে গোছানো ব্যাগটা কাঁদে নিয়ে রাস্তায় নেমে এলাম।উদ্দেশ্য সায়দাবাদ থেকে নোয়াখালীর চাটথিলগামী সাতটার বাস ধরা।ফাঁকা রাস্তা দিয়ে সি এন জি খুব দ্রুত ছুটছে সায়দাবাদের দিকে।ঢাকা ক্লাব পার হওয়ার পর দেখলাম সামনে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে কেউ একজন সি এন জি থামানোর ইশারা দিচ্ছে।কাছে গিয়ে দেখলাম একটি ছয়-সাত বছর বয়সের মেয়ে।আমি চালককে গাড়ি থামাতে বললাল।মেয়েটি কাছে এসে বলল তাকে একটু হাইকোটের কাছে নামিয়ে দিতে,সে ঠান্ডায় হাটতে পারছেনা।তাকে তুলে নিলাম।সে গিয়েছিল শাহবাগ ফুল গোছানোর কাজে কিন্তু লোক বেশি হওয়ায় তার কাজ জোটেনি।এই হীম সকানে সে একবার হেঁটে এসেছে কিন্তু সে আর যেতে পারছিলোনা।তার পা অবশ হয়ে আসছিলো।তার গায়ে একটা ছেঁড়া জামা আর পাতলা একটা স্যুয়েটার।হাঁটু থেকে নিছে আর কিছু নেই এমনকি স্যান্ডেলও নেই।সে রীতিমত ঠকঠক করে কাঁপছে।আমি কিছু বলতে পারিনি শুধু ভেজা চোখে তাকিয়েছিলাম ও নেমে যাওয়ার আগ পর্যন্ত।
ঠিক সময়েই বাস ছাড়ে।ঢাকাকে পেছনে ফেলে বাস ছুটে ছলছে আমার নাঁড়ি পোতা গ্রামের দিকে।আর ছুটছে নিষ্ঠুর শীতে ঠকঠক করে কাঁপা একটি তুলতুল দেহ।কিছুতেই মাথা থেকে যাচ্ছেনা ফ্যাকাসে মুখটা অথছ মনে করিয়ে দেয় কত নিগূড় সত্য।মেয়েটির মতই বয়স ছিল তখন আমার।কি কারনে যেন বাবা তার বন বিভাগের চাকরি হারিয়ে জীবিকার তাগিদে পৈতৃক সম্পত্ত্বীও প্রায় শেষ করে এনেছেন।অবাভ তখন আমাদের চারজনের সংসারের নিয়ন্ত্রন নিয়ে নিয়েছে।সেই দিনগুলুতে কনকনে শীতের সকালে কাঁচালন্কা মাখা পান্তা খেয়ে অমৃত সমান তৃপ্তি পেয়েছি।এইরকম শীতের দিনে ছেঁড়া জুতো তার দিয়ে বেধে পরিয়ে দিতেন মা।মা পরম যত্নে পুরোনো কাপড়ে কান মাথা পেছিয়ে বেধে দিতেন।বছরের পর বছর তালি দেওয়া ভারি কাঁথার ওজনে হাসপাস করতাম।তখন আমার দুপাশে বালিশ দিয়ে কাঁথার ভার কমানোর চেষ্টা করতেন মা।একটা শিমুল তুলার লেপের জন্য বাবাকে বলতেন।বাবা আনব আনব করেও আর আনতেন না।শীতের রাতগুলোতে মা আমাকে পরম মমতায় ছেঁড়া কাঁথা গায়ে দিয়ে শুইয়ে দিতেন।আমি তাকিয়ে থাকতাম মায়ের মুখের দিকে,দেখতাম তার চোখের কোনে সবসময় জমে থাকা জল চেরাগের আলোয় চকচক করতো।
এই মেয়েটি আজ আমাকে বহু বছর পর কাঁদালো।এমন দিন আমি পিছনে ফেলে এসেছি তাই মেয়েটির কষ্ট আমি বুঝতে পারছি।ঢাকায় ফিরে গত ২৫ তারিখ কিছু গরম কাপড় কিনে সকাল সাতটায় শাহবাগ গিয়ছিলাম।না মেয়েটিকে পাইনি।হাইকোটের যেখানে নেমেছিল সেখানেও পাইনি।হয়তো পুলিশের তাড়া খেয়ে অন্য কোন ফুটপাতে সে আবাস গড়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:২৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



