somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসলেই অনেক বড় ভাগ্যবান আমি

০৯ ই জুন, ২০১৭ রাত ৮:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি যে কতবড় ভাগ্যবান একজন তা বলে বোঝাতে পারবো না। একসময় আমার নিজেকে খুব হতভাগা কেউ একজন বলে মনে হতো… আনলাকি পারসনদের মধ্যে নিজেকে অন্যতম সেরা একজন ব্যাক্তি বলে মানতাম আমি, ভাগ্য যাকে কখনই কোনদিন সাহায্য করেনি। দুর্ভাগ্য যার পিছনে সব সময় লেগেই আছে। এরকম একটা অবস্থানে দাড়িয়েও আজ হঠাৎ করে নিজেকে আমার এতোটা ভাগ্যবান মনে হচ্ছে… কিন্তু কেন?? আমি আগে কখনও চিন্তা করিনি জন্মগত ভাবেই আমি এতোটা ভাগ্যবান। তাহলে নিজেকে কোনদিনও আমি ওভাবে হতভাগ্য মনে করতাম না। আজ শুধুমাত্র ভাগ্যের কারণে আমি কতো যে পরিশ্রম, কতো কষ্ট থেকে পরিত্রান পেয়ে গেছি সেটা কল্পনাও করতে পারবো না। নিজেকে আজ সত্যিই অনেক বড় ভাগ্যবান কেউ একজন বলে মনে হচ্ছে।

৫-৬ মিনিট লাগবে…পুরোটা পড়বেন এবং মনযোগ দিয়ে পড়বেন… না হলে পুরোটাই আপনার মাথার উপর দিয়ে যাবে, মাথাতে কিছুই ঢুকবে না...

আচ্ছা, আসল কথায় আসি। আমার নিজেকে এতো ভাগ্যবান মনে হওয়ার কারণটা কি? কারণটা হচ্ছে, মহান আল্লাহ্ তা’লা আমাকে এমন একটি পরিবারে জন্মহগ্রহণ করিয়েছেন যে পরিবারটি হচ্ছে একটি মুসলিম পরিবার। আর এটাই হচ্ছে আমার ভাগ্যবান হওয়ার মূল কারণ। কি এটা শুনে মনে হচ্ছে না যে আমি ভাগ্যবান? আচ্ছা, লেট মি এক্সপ্লেইন…

আজকে আমি যদি মুসলিম ব্যতীত অন্য কোন ধর্মের অধিকারী হতাম তাহলে কি হতো? আচ্ছা, এটা বোঝানোর জন্য ধরে নিলাম আমি যদি আজ একজন হিন্দু হতাম… অর্থাৎ কোন হিন্দু পরিবারে যদি আমার জন্ম হতো তাহলে আমার আজ কি অবস্থা হতো? জন্মের পরপরই আমি তো আর বুঝতাম না ধর্ম কি জিনিস, হিন্দু কি? মুসলিম কি?? এসব কিছুই বুঝতাম না তখন। একটি নিশ্পাপ শিশু হয়ে আমাকে আমার সৃষ্টিকর্তা দুনিয়াতে পাঠাতেন। ধীরে ধীরে যখন বড় হতাম… তখন হয়তো আমার বাবা-মা আমাকে শেখাতেন যে আমি একজন হিন্দু। আমি সনাতন ধর্মের অধিকারী একটি মানুষ। তারপরে আমাকে শেখানো হতো যে আমার সৃষ্টিকর্তা কে বা কারা… এক এক করে সব হিন্দু দেবতা আর ভগবানের নাম জানানো হতো আমাকে। বলা হতো কোন দেবতা, কোন ভগবানের কি কাজ, কি ক্ষমতা। কেমন করে তাদের খুশী করতে হয়। কিভাবে তাদের পূজা করতে হয়। আমাকে শেখানো হতো মূর্তিপূজা করার সব নিয়মকানুন। আমিও ভদ্র ছেলের মতো আমার বাবা-মায়ের দেখানো পথে মূর্তিপূজা করা শুরু করতাম। সব ভগবান ও দেব দেবীদের পূজা করে তাদের খুশী করার চেষ্টা করতাম। যখন আমার অর্থের প্রয়োজন হতো তখন ধন সম্পদের দেবী লক্ষীর পূজা করতাম বেশী বেশী… যখন আমার শক্তির প্রয়োজন হতো তখন শক্তির দেবী দুর্গার পূজা করতাম। বুদ্ধি ও বিদ্যার প্রয়োজনে দেবী সরস্বতীর সরণাপন্ন হতে হতো আমাকে। এভাবে আমি পুরোপুরি আপদমস্তক একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়ে গড়ে উঠতাম। তারপরে বড় হতে হতে আমি যখন যৌবনে পা দিতাম… সতের আঠারো কিনবা উনিশ বছর বয়স হতো আমার… ধর্ম জিনিসটাকে তখন পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারতাম যে আসলে জিনিসটা কি… এটা খায় নাকি মাথায় দেয়… আর আসে পাশে হিন্দু ধর্ম বাদেও আরো অসংখ্য অন্যান্য ধর্ম দেখে তখন একটা কনফিউশন তৈরী হতো। আমার মনের মধ্যে ধীরে ধীরে একটা প্রশ্ন তৈরী হতো … আমি কি সঠিক পথে বা সঠিক ধর্মেই আছি? এই প্রশ্নটা আমার অবশ্যই মনে হতো কারণ মুসলমান হিসেবেও আমার এই প্রশ্নটা মনে হয়েছিল। মনে হয়েছিল যে, ইসলামই কি সৃষ্টিকর্তার প্রেরিত ধর্ম? যদি না হয় তাহলে তো বিশাল বড় একটা সমস্যা হয়ে যাবে… অনেক বড় শাস্তি ভোগ করতে হবে। পরবর্তিতে নিজে থেকেই যখন এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করেছিলাম তার পরে থেকে কনফিউশনটা কেটে গেছে আর নিজেকে আমি একজন মুসলিম বলেই তাই দাবী করি। তো যায়হোক যেটা বলছিলাম, যদি আমি হিন্দু হতাম তখন তবে ওই আঠারো বা উনিশ বছর বয়সে আমার নিশ্চিত এই ভূত মাথায় চাপতো যে আমি আসলে কোন পথে যাবো। আমি কি ঠিক পথে আছি না ভুল পথে আছি… আমি যখন বুঝতে পারতাম যে হিন্দু ধর্ম বাদেও আরো অনেক ধর্ম এই দুনিয়ায় আছে আর সব গুলো ধর্ম ভিন্ন ভিন্ন ইশ্বরে বিশ্বাস করতে বলে। সেই থেকে শুরু হতো আমার কনফিউশন আর কষ্ট…. কারণ আমাকে সত্যিটা জানতে হতো। কোন ইশ্বরে বিশ্বাস করবো আমি সেটা আমাকেই খুঁজে বের করতে হতো। এই কথাগুলো আমি আমার বাবা-মায়ের কাছেও বলতে পারতাম না। কারণ তারা যদি জানতো যে তাদের ছেলের মনের মধ্যে ধর্ম নিয়ে একটা অস্থিরতা কাজ করছে তখন তারা আমাকে বুঝাতো যে দেখ কনক, হিন্দু ধর্মটাই হচ্ছে আসল ধর্ম। এটাই ঠিক ধর্ম। অন্যসব ধর্ম ভুল। অথবা আমাকে বোঝানো হতো এইভাবে যে, সব ধর্মই ঠিক, এক একটা ধর্ম এক একটা পথ মাত্র কিন্তু গন্তব্য সবার একই। এসব বলে আমাকে কোনরকম বুঝিয়ে দেওয়া হতো আর এসব নিয়ে মাথা ঘামাতে কড়াভাবে নিষেধ করা হতো আমাকে। কিন্তু আমি তো এসব ঝাড়ি শুনে বসে থাকার ছেলে নই… আমাকে তখন যেটা করতে হতো, তা হলো অনেক অনেক পড়াশোনা, আমার হিন্দু ধর্মের সব ধর্মগ্রন্থ গুলো পড়ে শেষ করে তারপরে পড়তে হতো আবার মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ কোরআন আর তারপরে পড়তে হতো বাইবেল… আর এই সবগুলোই আমার করতে হতো লুকিয়ে লুকিয়ে… ভেবে দেখুন আমার অবস্থাটা তখন কি রকম হতো। আমার কোন বন্ধুকেও ব্যপারটা খুলে বলতে পারতাম না, কারণ সে হয়তো জিনিসটাকে আমার মতো না ভেবে বিষয়টা নিয়ে মজা করতো… পাগল বলতো বা অপমান করতো। তারপরে একসময় যখন আমার জ্ঞানচর্চা সম্পন্ন হতো, বই পড়ে, ধর্মগ্রন্থ পড়ে ও ইন্টারনেট ঘেঁটে সব ধর্মগুলোর বিবৃতি নিয়ে তুলনা করে আমি যখন বুঝতে পারতাম যে পৃথিবীতে সত্য আর শ্রেষ্ঠ ধর্ম একটাই আছে আর তা হলো ইসলাম। তখনই শুরু হতো আমার আসল কষ্ট করার পালা।

সবার প্রথমে আমি বোঝাতে ব্যর্থ হতাম আমার বাবা-মাকে… তাদের কোনভাবেই এটা কনভেন্স করতে পারতাম না যে ইসলাম ধর্ম বাদে আর অন্য কোন ধর্ম সৃষ্টিকর্তার কাছে গ্রহণযোগ্য নয় । সেটা তিনি কোরআনে স্পষ্টকরে বলে দিয়েছেন। তারপরে আমার বাবা-মায়ের এতোদিনের ধর্ম-বিশ্বাসে আঘাত হানার কারণে তারা আমাকে আচ্ছা মতো যা বলার বলতো… আমাকে যখন তারা বোঝাতে ব্যর্থ হতো তখন আমাকে বাড়ি থেকেই হয়তো বের করে দিত। আমার আত্মীয়-স্বজন সবাই আমাকে খারাপ মনে করা শুরু করতো। পরিবারের একটা বিশাল কেলেঙ্কারি হয়ে যেত। আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পরে আমি হয়তো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতাম… তারপরেও সত্যিটা জানার পরে আমি কখনও অন্ধ বিশ্বাস করে আমার বাবা-মায়ের চাপিয়ে দেওয়া ধর্ম মেনে নিতাম না। কারণ লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি বা অসীমতম বছর জাহান্নামের আজাব ভোগ করার চেয়ে পৃথিবীর সমান্যতম কিছু বছরের কষ্ট ভোগ করা অনেক ভালো। মরে গেলেই তো পৃথিবীর সব কষ্ট শেষ হয়ে যাবে কিন্তু মরার পরে যে অনন্তকালের জীবন শুরু হবে সেখানের কষ্ট থেকে তো মুক্তি পাবো। এসব ভাবতে ভাবতে হয়ত আমি কোন মসজিদে বা কারো কাছে গিয়ে কালেমা পড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতাম। এক আল্লাহকে বিশ্বাস করতাম। তাকেই সৃষ্টিকর্তা বলে মেনে নিতাম। ওদিকে আমার বাবা এই কথা শুনে হয়তো আমাকে ত্যাজ্যপুত্র বলে ঘোষণা দিতেন। আমার মা কেঁদে কেঁদে মরেই যেত… আমার আত্মীয়স্বজন যে যেখানে আছে সবাই আমাকে ধিক্কার জানাতো, তীব্রভাবে ঘৃণা করতো। ভাবুন তো একবার… তখন আমার অবস্থাটা কি হতো? আমি কিভাবে বেঁচে থাকতাম? আমি হয়তো সবাইকে ছেড়ে চলে আসতাম ঠিকই কিন্তু সারা জীবন একটা কষ্ট আমার বুকের মধ্যে থেকেই যেত… সব কিছু জেনে শুনে বুঝেও আমি আমার প্রাণের থেকে প্রিয় মা-বাবাকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে পারলাম না। তারা অবিশ্বাসী হয়েই হয়তো দুনিয়া ছেড়ে চলে যেত। এই কষ্টটাই আমি কখনো সহ্য করতে পারতাম না। এটা যে কতোবড় দুঃখের হতো আমার জন্য সেটা তখন শুধু আমিই বুঝতাম। কাউকে বোঝাতেও পারতাম না শুধু মুখ লুকিয়ে কান্না করতাম…

কোন এক জীবন আমাকে পার করতে হতো একবার কি ভেবে দেখেছেন? আর আজ আমি এসবের কিছুই করছি না বা আমাকে কিছুই করতে হচ্ছে না। আমি জন্ম থেকেই ইসলাম ধর্মের অধিকারী হয়েছি। আল্লাহ্ তা’লা আমাকে কতোই না ভাগ্যবান করে এই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন একবার ভেবে দেখুন তো। এতো কষ্ট সহ্য করে আমাকে অন্যকোন ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করতে হয়নি। শুধু একটিবার ভেবে দেখুন… তাহলেই বুঝতে পারবেন আমি কতোবড় ভাগ্যবান একজন ব্যক্তি। আর এই ভাগ্যবানটা শুধু আমি একা নই, আপনি যদি মুসলিম হন তবে আপনিও… দুনিয়ার যতো জন্ম থেকেই মুসলিম মানুষ আছে সবাই ভাগ্যবান। আসলেই... এরকম ভাগ্য কতো জনের হয় বলুন?


ফেসবুকে আমি -- Káñàk The-Bøss





সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১৭ রাত ৮:১৫
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×