(এ পোস্টটি চাঁদ রাতে লেখা। মডেম সংক্রান্ত জটিলতায় পোস্টটি করা যায়নি।)
বছরের আর্বতনে চলে এসেছে ঈদুল ফিতর-২০১২ । দীর্ঘ এক মাস সংযমের পর বাধহীন আনন্দ । আমার একমাত্র ছেলেকে নিয়ে তার দাদু বাড়ীতে ঈদ করছি। অনেক মজা পায় আমার টুকুন সোনা –এটা এক অন্যরকম আনন্দ । কিন্তু আব্বু-আম্মুর সাথে সব ভাই-বোন মিলে যে ঈদ ছিল সেগুলো ছিল অসাধারণ । অবশ্য দু’টি ভিন্ন অনুভূতি । আমার ছেলের গ্রামে ঈদ করার সুযোগ নেই –হয়তো হবেও না । ঢাকায় ইট-পাথরের শহরেই ঈদ করতে হয় । সে কি করে বুঝবে গ্রামে ঈদ করার কী অপার আনন্দ !!
আমার আব্বু আমাদের প্রতি বছর ঈদে গ্রামের বাড়ী নিয়ে যেতেন । আমরা ছ’ভাই-বোন কী মজাই না করতাম ! কাজীন দের সাথে দিনভর গল্প-আড্ডা , মারামরি ,চিৎকার,সকাল-সন্ধ্যা ঘুরে বেড়ানো –কী না ছিল ? এমন কি সমস্ত রাত চলতো আমাদের আড্ডা ।
আমার মনে আছে , আমি তখন স্কুলে পড়ি – যথারীতি ঈদে বাড়ী যাবার পরিকল্পনা হচ্ছে । ঈদে টেলিভিশনে কত সুন্দর আনুষ্ঠান হয় –দেখতে পারি না । আমাদের দাদু বাড়ী বিদ্যুৎ ছিল না-ছিল না কোন টিভি । আমরা আব্বুর কাছে আবদার করলাম যেন আমাদের টিভি টা বাড়ীতে নিয়ে যাওয়া হয় । আব্বু দীর্ঘ সময় নিয়ে চিন্তা করে কেমন করে যেন রাজী হয়ে গেলেন –আমরা খুশীতে চিৎকার করে উঠলাম । আব্বু হয়তো আনন্দ দিতেই এমন কষ্টকর কাজটি করতে সম্মত হয়েছিলেন । অতঃপর আমরা ছ’ ভাই-বোন , আব্বু-আম্মু ও আমাদের টিভি-বিশাল এই দল নিয়ে এক মহা কষ্টকর ভ্রমণ শেষে আমরা বি-বাড়ীয়া থেকে রসূলপুর এসে পৌঁছলাম ।
ঈদের দিন সন্ধ্যায় ব্যাটারী দিয়ে টিভি চালানো হলো-দেখা গেল কিছুক্ষণের মধ্যেই গ্রামের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা, ঘরে জায়গা দেয়া যাচ্ছে না । অগত্যা আমাদের বিশাল উঠোনে টেবিল এনে টিভি টা রেখে দেয়া হলো । সব্বাই খুব আনন্দ নিয়ে উপভোগ করলো । কেননা আশেপাশে বেশকটি গ্রামে কোন টিভি ছিল না । সেদিন আমি বেশ মজা পেয়েছিলাম । অনুষ্ঠানে নৃত্য হচ্ছিল-একজন নৃত্যশিল্পী চমৎকার নাচছিল, আমার পাশে বসা এক মহিলাকে বলতে শুনলাম-হিতি ইৎ কইরা আত-ফা লরায় কিল্লাই ? হাগল অই গেছে নাই –ও আমার আল্লা । এই দিন যাই করতাম –কোন বাধা দিতেন না আব্বু-আম্মু । কি মজা.............।। একটা দিন অন্তত রক্ষে.....।
ঈদের আগের দিন রাত পর্যন্ত আম্মু আমাদের জন্য জামা সেলাই করতেন আর রাত জেগে বিভিন্ন খাবার বানিয়ে রাখতেন । আমরা বোনেরা একেক জন একেক কাজ করতাম –কেউ ঘর গোছাতো ,কেউ নিজের স্পেশাল আইটেম রান্না করতো । ঘর সাজানোতে অবশ্যই কাঁচা ফুল থাকতে হবে।
ঈদের দিন সকালে আব্বু সহ দুই ভাইকে নতুন পাঞ্জাবী পরিয়ে আম্মুর হাতের সেমাই-ফিরনী খাইয়ে নামাজে পাঠাতাম-আমরা বোনেরা গেইট পর্যন্ত পৌঁছে দিতাম । অদ্ভূত অনূভূতি ..........!
খুব, খু......উ.........ব মিস্ করছি । এই ঈদে সিমি ও থাকবেনা আব্বু-আম্মুর সাথে । প্রথাগত নিয়মে শ্বশুর বাড়ীতেই তাকে ঈদ করতে হচ্ছে........আজব সব নিয়ম ।। এমনি করে একদিন রিমি, মিনিকেও চলে যেতে হবে.........আব্বু-আম্মু রয়ে যাবে একা । ভাবতেই খুব কষ্ট হচ্ছে –বিষাদে ছেয়ে যাচ্ছে.........। এই রিমি ! কেমন করে আজ চটপটি, পুডিং .......এসব বানাবি? পারবি তো? না পারলে ফোন দিস্-রেসিপি বলে দিব । আমি আছি.....। বাবু আবার কবে কখন আমাদের সাথে ঈদ করবে .........জানিনা ।
সব্বাইকে ঈদ মোবারক ।।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




