somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চাপাতি প্রজন্মের তামাশা

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
বেশীরভাগ রাজাকার দেখতে এমনই ছিল। বর্তমানে শিবিরে যেমন দাড়ীওয়ালা পাওয়া কঠিন, একাত্তরেও অবস্থা তাই ছিল


প্রথম ছবিটা এক রাজাকারের আই.ডি। ২য় টা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধৃত কিছু রাজাকার।


একটা ভুল আচরণ বার বার করা হয়। এবারও করা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। সম্ভবত সাময়িক মেয়াদে আচরণটি আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস পর্যন্ত চলবে। এরপরও এই ভুল ও ন্যাক্কারজনক আচরণটি ঘটতে আরও কত দিন পর্যন্ত চলতেই থাকবে- আমাদের জানা নেই। বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবস এলে এই আচরণটি দেখা যায়। ত্রিশ-নিম্ন বয়সী একশ্রেণীর অতি উৎসাহী রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী বছরের বিভিন্ন সময়েও এ আচরণটি করে থাকে। কী সেই আচরণ এবার একটু ঘুরে দেখি।

অদ্ভুৎ একটি কুশপুত্তলিকা বানানো হয়। পাঞ্জাবি-পায়জামা পরা ওই কুশপুত্তলিকার মাথায় একটি টুপি বসানো। থুতনির জায়গাটায় পাট দিয়ে লাগানো কিছু দাড়ি। বানানো ওই মূর্তিটির গলায় কখনো জুতার মালা পরিয়ে দেওয়া হয়। কখনো বুকে লাগিয়ে দেওয়া হয় রাজাকার বা যুদ্ধাপরাধীর একটি নোটিশ। এরপর ঘৃণা প্রকাশ ও অপমানের তীব্র জঘন্য তামাশা শুরু হয়। কুশপুত্তলিকাটিকে শোভাযাত্রায় নিয়ে যাওয়া হয়। রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড় করানো হয়। শিশু-কিশোর, বাচ্চাদের সামনে নিয়ে এসে তামাশা করা হয়।

দোহাই! সবরকম রাজনীতির বাইরে এসে একটু ভাবুন! এটা আসলে কী হচ্ছে? আমরা কি ভেবে দেখেছি আপাদমস্তক ধার্মিক মুসলমানের একটি প্রতিমূর্তি বানিয়ে এই উপহাস ও অবমাননার ফলাফল কী? মুক্তিযুদ্ধের যে কোনো উপলক্ষ এলে এভাবে সব ধার্মিক মুসলমানকে আঘাত ও অপমান করার যুক্তিটাই বা কী? কোনো কারণে প্রিয় নবীজীর সুন্নতী পোশাক, বেশভূষা আর বেশিষ্ট্য নিয়ে এই ভয়ংকর তামাশা চলতে পারে কি না? অপরিণামদর্শী কিংবা চক্রান্তমূলক এই আচরণের ফলাফল কার পক্ষে কিংবা কার বিপক্ষে যাচ্ছে? এবং এতে কার ক্ষতি কিংবা কার লাভ হচ্ছে? কোনো পাঁড় বাম কিংবা কাট্টা ইসলাম বিদ্বেষী ছাড়া ঠান্ডা মাথায় এমন আচরণে কারো সম্মতি দেওয়ার কথা নয়। গণনাযোগ্য বড় কোনো রাজনৈতিক দলের উচ্চ পর্যায় থেকে এই আচরণের নির্দেশ দেওয়া আছে- এমন বিশ্বাস আমরা করতে চাই না। কিন্তু তারপরও এ কাজটি করা হচ্ছে।

করছে কারা? করছে রাজনীতি ও সংস্কৃতি অঙ্গনের ত্রিশ-নিম্ম বয়সী কিছু কিছু যুবক-তরুণ। যারা মুক্তিযুদ্ধেরও দশ বছর পর দুনিয়ায় এসেছে। এরা মুক্তিযুদ্ধও দেখেনি, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাও দেখেনি। এরাই ‘রাজাকার’ নামের একটা কল্পিত চেহারা মনের মধ্যে এঁকে বাছবিচারহীন ঘৃণার খেলা খেলছে। শেকড়ভুলা, আত্মপরিচয়হীন এসব তরুণ একদিকে চাপাতি হাতে মানুষের মস্তক কাটছে। অপরদিকে সকল পর্যায়ের ধর্মপ্রাণ মুসলমানের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ করে ‘স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তি’ হিসেবে নিজেদের জাহির করছে। নিজেদের ভয়ংকর সব অপরাধ ও নৃশংসতা কি এরা একটা-দুটো ন্যাক্কারজনক তামাশা দিয়েই ঢেকে রাখার কৌশল বেছে নিয়েছে?

আজ প্রশ্ন উঠেছে, সুন্নতী লেবাস ও বেশভূষার এই প্রতীককে কেন ঘৃণার পাত্র বানানো হচ্ছে? বিজয় কিংবা স্বাধীনতার সঙ্গে এই প্রতীকের নেতিবাচক সম্পর্কটা কোথায়? মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ঘৃণীত মানুষ মানেই ধার্মিক মুসলমান-এরকম ঢালাও ও সরলীকৃত হিসাবটা কোত্থেকে এল? কেউ কেউ বলতে পারেন, মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা তো ধর্মের নামে এবং এ ধরনের বেশভূষা নিয়েই অনেক অপকর্ম করেছে। সুতরাং এটাতো হতেই পারে।’ আমরা বলতে বাধ্য যে, এরকম কথা যারা বলেন তারা একটা বিভ্রম ও ঘোরের মধ্যে আছেন। কারণ, জাতীয় ও আঞ্চলিকভাবে শতকরা দশভাগ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী আপরাধীর চেহারা-চিত্রও এরকম ছিল না। তবে কারো কারো যে ছিল, সেটা মিথ্যা নয়। একইভাবে বহু বীর মুক্তিযোদ্ধার বেশভূষাও তো এরকম ছিল। তাদের সংখ্যাও কম ছিল না। বর্তমানে বহু-বহু বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধার পোশাক-আষাক-বৈশিষ্ট্য একদম সুন্নতী ও গভীরভাবে ধর্মানুরক্ত মুসলমানের-এ কথাও ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না। এ কথাটি বোঝার জন্য সূক্ষ্ম ও জটিল কোনো ঐতিহাসিক হিসাবের ফাইল খোঁজার দরকার নেই। খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনেতিহাস নিয়ে শুধু দৈনিক প্রথম আলোর ধারাবাহিক প্রতিবেদনটি শুরু থেকে উল্টে দেখুন। সঙ্গে দেখুন বীর প্রতীক, বীর বিক্রমদের বেশির ভাগের চেহারা ও বেশভূষার ছবি। টুপি-দাড়ি শোভিত সুন্দর সুন্নতী বেশভূষা তাদের।

তাহলে কী দাঁড়ালো ব্যাপারটা? নেতৃস্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা তাদের পরিণত জীবনে যে প্রতীক ও ধর্মপ্রাণতার জীবন আগ্রহের সঙ্গে আপন করে নিয়েছেন আজকের ভুঁইফোড় তারুণ্য মতলবী উল্লাসে মুক্তিযুদ্ধের নামেই সেই মর্যাদাপূর্ণ জীবন ও প্রতীককে আঘাত করে চলেছে। এছাড়া এটাও তো মিথ্যা নয় যে, কেবল মুসলমানদের একটি অংশই নয়, চাকমা রাজার নেতৃত্বে মগ-চাকমা-রাখাইনদের বড় একটি অংশও একাত্তরে পাক আর্মির সহযোগিতা করেছে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে একাত্তরে বহু জায়গায় মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা পর্যন্ত করেছে এ দেশের বামপন্থীদের একটি অংশ। ভুলে যাওয়ার বিষয় নয় যে, একাত্তরে আক্রমণকারী পাকবাহিনীর কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ের কোনো কর্তা-কর্মীই ধর্মপ্রাণ মুসলমানের বেশভূষা ধারণ করত না। তাই ঢালাওভাবে ধার্মিক মুসলমানদের সর্বজনগ্রাহ্য একটি প্রতীককে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপরাধী হিসেবে দাঁড় করানোর পেছনে কোনো বাস্তব যুক্তি নেই। একইসঙ্গে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের এই প্রতীকের ধর্মীয় বৈশিষ্ট্যটির দিকেও চোখ রাখা উচিত। এ পোশাক ও আকৃতি তো ইসলামের একটি বৈশিষ্ট্য ও শি’আর। হাজার বছর ধরে এ পোশাক ও আকৃতিই অবলম্বন করে এসেছেন দেশে দেশে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। সুতরাং বুঝে বা না বুঝে এ প্রতীকের অপমান ও এর প্রতি ঘৃণার প্রকাশ প্রকারান্তরে ইসলামেরই অবমাননা। একজন-দু’জন বা দুই-চার ডজন মানুষের কারণে এ বেশভূষা ও প্রতীককে টার্গেট বানানো যায় না।

যুদ্ধাপরাধের বিচার, পদত্যাগী বিচারপতির স্কাইপি সংলাপ, বিচারবিরোধী ষড়যন্ত্র কিংবা বিচার বাস্তবায়নে প্রত্যয় ও কর্মসূচি নিয়ে এখানে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই। আমরা শুধুই বলতে চাই, যুদ্ধকালীন বর্বরতা ও অপরাধের জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানের প্রতীক বানানো ও তার অপমানের ধারাবাহিক তামাশা বন্ধ করা উচিত। এটা রাজনীতির বিষয় নয়। এবং এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কেবল অপরাধীর প্রতি ঘৃণা প্রকাশের মাঝেই বিষয়টা থেমে থাকছে না। এর সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে ইসলাম বিরোধী আক্রোশ। এর পেছনে কাজ করছে মুসলিম জাতিসত্তা বিরোধী চক্রান্ত ও সুদূর প্রসারী সাম্প্রদায়িকতা। ভুল ও ন্যাক্কারজনক এ আচরণে কারো কোনো কল্যাণ ঘটছে না। বরং এসব অতি উৎসাহী আচরণের ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক খেসারত অনেক মারাত্মক হতে পারে। আমরা বলব, চাপাতি প্রজন্মের হাতে ঘৃণার চেতনা নির্মাণের সব দায়িত্ব ছেড়ে দিলে সমূহ অঘটন, দুর্ঘটনা ও বিপদ

সবাইকে চেপে ধরতে পারে। সেই চেপেধরা থেকে পক্ষ-বিপক্ষ কেউ রক্ষা পাবে না। সুতরাং এসব বিষয়ে প্রবীণ ও প্রকৃত দায়িত্বশীলদের মনোযোগ দেওয়া উচিত।

মূল লেখা
http://www.alkawsar.com/article/811

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৪৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×