somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু
সমাজে অগ্রগতি ও পুর্ণতা নির্ভর করে সমাজের বসবাসকারী সকলের সার্বিক কল্যানে এবং উন্নতির মাধ্যমে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের দেশের শিশুরা দারিদ্রতার কারণে অবহেলিত। পৃথিবীতে কিছু কিছু মানুষের জন্ম পূর্ববর্তীতে মায়ের অসতর্কতার কারণে বা জন্ম পরবর্তী কোন কারণে কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবীতে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু হয়ে জন্মে।

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু একটি ব্যাপক অর্থ নির্দেশক শব্দ। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর গড় মান সাধারন মানুষের থেকে বেশী হয় আবার কমও হয়। অর্থাৎ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু বলতে বুদ্ধির দিক থেকে মেধাবী এবং গুরুতরভাবে প্রতিবন্ধী শিশু উভয়কে বুঝায়। এই দুই ধরনের শিশুর ক্ষেত্রে বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
'বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু' সংজ্ঞা:
:) যে সকল শিশুর ইন্দ্রিয় ক্ষমতা বুদ্ধি বা শারীরিক ক্ষমতা এতটাই ভিন্ন যে কারণে তাদের জন্য বিশেষ শিক্ষা বা বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহনের প্রয়োজন হয়। সেই সকল শিশুকে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু বলে।
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু বলতে সেই সব শিশুদের বুঝায় সমবয়স্কদের তুলনায় যাদের বুদ্ধি সংবেদন, শারীরিক বৈশিষ্ট্য, ভাব বিনিময় ক্ষমতা ও সামাজিক দক্ষতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য মাত্রার কম বা বেশী হয় তাকেই ব্যতিক্রমী শিশু বলে আখ্যায়িত করা হয়। অর্থাৎ যারা সাধারণর বাইরে তারাই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু ।
বুদ্ধাংকের দিক থেকে বলা যায় যাদের বুদ্ধাংক ৭৫ এর নিচে এবং ১২০ এর উপরে বা বাইরে তারাই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু।

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু লক্ষনাবলী :
১। বুদ্ধি :
সাধারন শিশুদের তুলনায় বুদ্ধিমত্তা গড় মানের চেয়ে কম বা বেশি হয়।
২। সংবেদনঃ
সংবেদন ক্ষমতার পার্থক্য হয়, এর মধ্যে যেমন চোখ ও কান প্রধান আবার তেমন শোনার ও দেখার পার্থক্য হয়।

৩। ভাববিনিময়ঃ
ভাববিনিময় করার ক্ষেত্রে পার্থক্য হয়।
৪। আচরনগত পার্থক্যঃ
আচরনের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী শিশুর মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়।

৫। শারীরিক ক্ষমতাঃ
শারীরিক নড়াচড়া অর্থাৎ অঙ্গ সঞ্চালন দক্ষতার অক্ষমতা। ইচ্ছামত নড়াচড়া করতে পারে না।
৬। সামাজিক দক্ষতাঃ
সামাজিক দক্ষতার ক্ষেত্রে অক্ষম হয় বা পার্থক্য দেখা যায়।

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু বৈশিষ্ট্য :

১। অনগ্রসর শিশু প্রধানত পরীক্ষায় কম নম্বর পায়। শ্রেণীতে চুপচাপ থাকে এবং সাধারণ সংশোধনের ব্যাপারেও ধীরগতি প্রদর্শন করে।

২। মানসিক ভাবে অনগ্রসরদের অভিযোজন ক্ষমতা কম হয়। নিজেদের আবেগ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কোন সক্রিয়তা থাকে না।

৩। সাধারন ভাবে কোন পাঠ শিখতে যতটুকু সময় লাগার কথা তার চেয়ে বেশী সময় লাগে অথচ কিছু না বুঝলে অপরের সাহায্য গ্রহনেও ততটা আগ্রহ দেখায় না।

৪। ব্যতিক্রমী ছেলে-মেয়েরা সাধারন ও স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে উঠে। তবে একটু বড় হবার সাথে সাথে অপরের তুলনায় তাদের গ্রহন ক্ষমতা, কর্মক্ষমতা, পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা কম হতে দেখা যায়।

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর প্রকারভেদ :

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন -
(১) প্রতিভাবান শিশু,
(২) প্রতিবন্ধী শিশু।

নিচের চার্টের মাধ্যমে এই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর শ্রেনী বিভাগ তুলে ধরা হলো :



শিশুর আইকিউ

‘ইন্টেলিজেন্ট কৌশেনট’কে সংক্ষেপে ‘আইকিউ’ নামে অভিহিত করা হয়। জার্মান সাইকোলজিস্ট উইলিয়াম স্টার্ন ১৯১২ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। কারও বুদ্ধির মাত্রা নিরূপণের জন্য আইকিউ স্কোর নির্ণয় করা হয়। এ জন্য নানা ধরনের মানসম্মত টেস্ট আছে। এর যেকোনো একটি ধরে আইকিউ স্কোর করে নেওয়া হয়। আসলে একটি ফর্মুলার ভিত্তিতেই আইকিউ মাপা হয়।
আইকিউ: ১০০ – মন-বয়স/স্বাভাবিক বয়স
তবে সারা জীবন একই আইকিউ বহাল রেখে একজন জীবন কাটাতে পারবে এর কোনো স্থির নিশ্চয়তা নেই।

শিশুর বুদ্ধি বিকাশে নানা প্রভাব:
আইকিউ নির্ধারণে যেসব ফ্যাক্টর ভূমিকা রাখে:
*সাধারণ বুদ্ধিমত্তা
*মানসিক প্রতিবন্ধিত্ব
*বংশগত
*পারিবারিক প্রতিবেশ
*গর্ভাবস্থায় শিশুভ্রূণের বৃদ্ধি ও বিকাশের সুবিধা-অসুবিধা
*পুষ্টি
*লিঙ্গ
*জাতিগোষ্ঠী প্রভৃতি।


শিশু কীভাবে দক্ষতা অর্জন করে:


শিশু যখন কোনো বিষয়ে নৈপুণ্য অর্জন করে, তা নানা ধাপ বেয়ে তবেই অর্জিত হয়। যেমন, ১. কৌতূহল থেকে নতুন কিছু চেনা। ২. নতুন চেনা থেকে নতুন আবিষ্কার। ৩.আবিষ্কার করে আনন্দ।৪. আনন্দ পুনঃপুনঃ কর্ম-প্রচেষ্টায় উদ্দীপনা আনে। ৫.পুনঃপুনঃ সম্পাদনা নিয়ে আসে দক্ষতা ও পারঙ্গমতা। ৬. পারঙ্গমতা নতুন দক্ষতার সূত্রপাত ঘটায়। ৭. নতুন দক্ষতা জন্ম দেয় আত্মবিশ্বাসের। ৮. আত্মবিশ্বাস নিজেকে পরখ করার, যাচাইয়ের সুবিধা এনে দেয়। ৯. নিজের ওপর আস্থা ও নিরাপত্তার ভিত খুঁজে পায়। ১০. এ ধরনের নিরাপত্তা, সুরক্ষা আরও সৃজনশীলতা এবং আরও নতুনের খোঁজে উদ্যম আনে। ১১.নিজের নতুন সৃষ্টিসুখের উল্লাসে মেতে ওঠে শিশু, বেড়ে ওঠে সে বিকাশের উচ্ছল প্রাণরসে।


নার্সারি বয়সের শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত না হলে সে এসবে পারদর্শিতা দেখাতে পারে:

১.নিজের নাম বলতে পারে। বলতে পারে পরিবারের সদস্যদের নাম।
২.উচ্চারণে ও ভাবভঙ্গি নিয়ে ছড়া আবৃত্তি করতে সক্ষম।
৩. শিশু গানে ও ছড়ার সুরে কণ্ঠ মেলাতে পারে।
৪. নিয়মনীতি মেনে খেলাধুলার আনন্দে অংশ নেয়।
৫. শরীরের বিভিন্ন অংশের নাম জানাতে পারে।
৬. বিভিন্ন ছবির দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে গল্পের কাঠামো গড়ে নেয়।
৭. নিজের মতো করে নানা গল্প রচনা করে।
৮. প্রকৃতি বর্ণনায় সিদ্ধ; যেমন, ফুল, ফল, পাখি, পশু, গাছপালা চেনে এবং এসব সম্পর্কে বলতে পারে।
১০. অঙ্ক করার পূর্বধাপ হিসেবে ছোট-বড়, কম-বেশি—এসব বোঝাতে সক্ষম।
১১. ১ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যা গুনতে পারে।
১২. সহজ প্রশ্নের উত্তরদানে সমর্থ, তা যদি তার পরিচিত ভুবনের হয়।
১৩.ছোটখাটো নির্দেশনা মেনে চলতে সমর্থ।
১৪.নিজে নিজে কাজ করে সৃষ্টিশীলতা প্রদর্শনের চেষ্টা করে।
১৫,কীভাবে নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হয়, তা শিখে যায়।
১৬.খেলা শেষে খেলার সরঞ্জাম গুছিয়ে রাখতে সক্ষম।
১৭.কতগুলো সামাজিক আচার-ব্যবহার শিখে নেয়; যেমন অভ্যর্থনা জানানো, বড়দের সম্মান দেখানো, ধন্যবাদ জ্ঞাপন ইত্যাদি।
১৮.রাগ, আনন্দ-বেদনা—এসব ভাবাবেগের অনুভূতিও প্রকাশ করতে পারে শিশু।
---------------------------------------------------------------------------------
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১০ ভোর ৫:৫৮
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×