বর্তমানে বাংলাদেশে ক্যান্সার আক্রান্ত মহিলাদের মধ্যে ২৪.৩% রোগী স্তন ক্যান্সারে ভুগছে।প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে এ রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।
স্তন ক্যান্সার যাদের ঝুঁকি রয়েছে:
# শিশুকে বুকের দুধ যাঁরা দেন না।
# চর্বি জাতীয় খাদ্য বেশী বেশী গ্রহন করেন যারা।
# স্থূলাঙ্গিনী
# কম বয়সে ঋতুবতী হওয়া অথবা দেরীতে পিরিয়ড বন্ধ হওয়া।
# ৩০ বৎসরের পর প্রথম সন্তান লাভ অথবা নিঃসন্তান
# বয়স ৩৫ এর উর্ধ্বে হলে
# পরিবারের কারও স্তন ক্যান্সার থাকলে তার পরবর্তী প্রজন্মের
সদস্যদের হতে পারে।
# জীনগত পরিবর্তনের ফলে। যেমন:BRCA1, BRCA2 ইত্যাদি
জীনের পরিবর্তনের ফলে স্তন ক্যান্সার দেখা দিতে পারে।
# মদপান করলে
স্তন ক্যান্সারের উপসর্গ:
* স্তনে চাকা বা পিন্ড অনুভূত হওয়া,
* স্তনের চামড়া মোটা হওয়া,গোটা হওয়া, স্তন ফুলে যাওয়া,
* স্তনবৃন্ত স্পর্শে ব্যথা করা
* স্তনের চামড়ার রং পরিবর্তন হওয়া(কমলা লেবুর খোসার মত)
* স্তনের বোটা দিয়ে অস্বাভাবিক নি:সরণ বিশেষ করে রক্ত বা পূজঁ যুক্ত
নি:সরণ ,
* স্তনের বোটা ভিতরে দিকে ঢুকে যাওয়া,
* স্তনে ক্ষত
প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার নির্ণয়:
** A. স্তন ক্যান্সারকে যদি প্রাথমিক অবস্থায় ধরে ফেলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা করা যায় তবে শতভাগ ক্যান্সার নিরাময় সম্ভব। এজন্য নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করার অভ্যাস করতে হবে। অন্তত: প্রতি মাসে একবার নির্ধারিত একটি তারিখে।নিম্নে নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষার কয়েকটি পদ্ধতি সচিত্র বর্ণনা করা হল:
১.গোসলের সময়:স্তনে কোথাও কোন চাকা কিংবা কোন অংশ পুরু মনে হয় কিনা তা পরীক্ষা করুন।
২.আয়নার সামনে:
লক্ষ্য করে দেখুন, স্তনের রং-এ এবং আকৃতিতে কোন পরিবর্তন, স্ফীতি কিংবা কোথাও কোন টোল পড়েছে কিনা।
ক)প্রথমে কোমরে হাতের তালু রেখে নীচের দিকে সজোরে চাপ দিন যাতে বুকের মাংস পেশীতে টান ধরে।
খ)এরপর দু'হাত উপরে তুলে ধরুন এবং ইতোপূর্বে বর্ণিত পরিবর্তনগুলো লক্ষ্য করুন।
৩.বিছানায় শুয়ে:
ক)ডান কাঁধের নীচে বালিশ এবং মাথার নীচে ডান বাহু রাখতে হবে। বাম হাতে সব আঙ্গুল একসঙ্গে মেলে অগ্রভাগ দিয়ে আস্তে আস্তে চাপ দিয়ে ছোট চোঠ চক্রাকারে পরীক্ষা করুন।
খ)এরপর স্তনবৃন্ত চেপে ধরে দেখতে হবে কোন কিছুর ক্ষরণ বা স্রাব বের হয় কিনা দেখুন।
অথবা এই লিংক থেকে ভিডিওগুলো দেখে নিতে পারেন:
http://www.youtube.com/watch?v=X4edfuE2PwE
উপরিউক্ত পদ্ধতিতে নিজে নিজে স্তন পরীক্ষার পর যদি কোন অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ে তবে অতিসত্তর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং নিম্নোক্ত পরীক্ষাসমূহ করাতে হবে।
B.প্রয়োজনীয় পরীক্ষা
# স্তনে আল্ট্রাসনোগ্রাফী করা,
#F.N.A.C টেস্টের মাধ্যমে ডায়াগনোসিস করা
# সন্দেহ হলে বায়োপসি করে সঠিক রোগ নির্ণয় করা
# প্রয়োজনবোধে M.R.I ও অন্যান্যপরীক্ষাও করা
৩.যাদের লক্ষন নেই:
যাদের কোন লক্ষণ দেখা দেয়নি তারাও নিরাপত্তার জন্য স্ক্রিনিং C.B.E ; B.S.E ; M.A.M.O করাতে পারেন।
বায়োপসি: পিন্ডটি পূর্ণ অথবা আংশিক অপারেশন করে নিয়ে নিম্নোক্ত পরীক্ষাসমূহ করাতে হবে।
*Fine-needle aspiration.
*Needle biopsy.
*Surgical biopsy.
স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা :
১.শল্য চিকিৎসা(Surgery): স্তন এবং আরও কিছু অংশবিশেষসহ অপারেশন করতে হয় অথবা স্তন কেটে বাদ দিতে হয়।
২.রেডিও থেরাপি(Radiation therapy)
৩.কেমোথেরাপি(Chemotherapy)
৪.হরমোন থেরাপি(Hormonal therapy)
৫.জৈবিক থেরাপি(Biological therapy)
স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক প্রতিরোধ:
## বিয়ে এবং প্রথম সন্তান ধারন ৩০ বছরের আগেই সম্পন্ন করতে
হবে।
## পরিমিত আহার ও হালকা ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরকে হালকা
পাতলা রাখতে হবে।
## অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাদ্য এবং ফাস্ট ফুড কম খেতে হবে।
## হলুদ-সবুজ শাক-সব্জি বেশি খেতে হবে।
## ভিটামিন এ, সি, ই, ডি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
## সামুদ্রিক মাছ, সয়াবিন খেতে হবে।
## গ্রিন টি, রসুন, অলিভ অয়েল, বাদাম ইত্যাদি খেতে হবে।
## শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
## মদপান থেকে বিরত থাকতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৫:১৩