অভিনন্দন-তোমাদের। তোমাদের বিবেকতাড়িত প্রস্থানে বেঁচে গেল মানবতার বৈভব অনেকটা। কেন গুলি চালাবে অসহায় মানুষের বুকে? যারা আক্রমণ করেনি তোমাদের স্বদেশ, লুণ্ঠন করেনি তোমাদের সম্পদ, তারা কীভাবে শত্রু হয়ে উঠলো? এসব প্রশ্ন তীরবিদ্ধ করেছে তোমাদের, মস্তিষ্কের নিউরণে ঝড় উঠেছে, তোমরা স্থির থাকতে পারলে না, তোমরা চঞ্চলতায় ছুঁয়েছো বোধের অতল। সমুদ্র পেরিয়ে কেন? নোনাজলে কেন আরও মানুষের অশ্রু ও কান্নার জল মিশবে?
শুধু হুকুমের দাস? মোহরের লোভ? পেশাবৃত্তি আর জীবিকার জন্য শুধু কপটতা? যদেচ্ছাচার? মিথ্যাচার? বুজরুকি? রক্তচোষা? দংশন? না-এইকালে মানুষের যুক্তি ও স্বাধীনতার তেজ খানিকটা হলেও তোমাদের মধ্যে জেগে উঠেছে! পুরো অন্ধ হয়ে যান্ত্রিক-নির্দেশ মানোনি! তোমরাও যে মানুষ-তা ভুলে যাওনি! অসারতা বুঝতে পেরেছো। কার ও কীসের জন্য যুদ্ধের এই উন্মাদনা?
তোমরাও জেনেছো--অবরোধ আর কূটকৌশলে ইরাক হয়েছে আগেই নুব্জ, শক্তির প্রতাপে চরম মাত্রায় ছাঁচের মধ্যে ফেলে আবারো কেন বলপ্রয়োগ? এর মানে কী? উদ্ধারের নামে রাহুগ্রস্ত করা নয়? শুধু সমরসাফল্য দিয়ে কি সত্যতা ও যথার্থতা প্রমাণ করা যায়? রণবাদ্য বাজলেই ন্যায়যুদ্ধ শুরু হয়? সৈনিকের পোশাক পরলেই কি বোধ ও বিবেচনা থাকবে না? শুধু শুধু দাসবৃত্তি--মধ্যযুগ পার হয়ে এইকালেও!
তোমরা ফিরে গেলে--রণেচ্ছু না হয়ে, আত্মজিজ্ঞাসার মধ্যে ফিরে পেলে মানবিকতা কাকে বলে? যা বুশ ও ব্লেয়ার অবকাশযাপন ও ক্ষমতার ভোগ-বিলাসে থেকে কখনো বুঝতে পারে না। তারা মানুষের সমর্থন ছাড়া হতে চাইছে বিশ্ববিজেতা ও ভুবনজয়ী? গণতন্ত্রের নামে তারা কোনঠাসা করা ঋণপত্র খুলতে চাইছে দেশে দেশে। বিদলন-বিপর্যস্ত করা মানুষ, জনপদ ও লুণ্ঠিত সম্পদ নিয়ে তৈরি করতে চাইছে স্বর্গরাজ্য! যে রাজ্যে থাকবে পুতুলসেনারা--যাদের মধ্যে দেশপ্রেম, মানবপ্রেম থাকবে না, থাকবে কিছু পদলেহী বিচারক কিন্তু বিচারবুদ্ধি থাকবে না।
তোমরাও কোর্টমাশাল বা বিচারের মুখোমুখি হচ্ছো--যেখানে ওকালতনামা-সালিশ-উকিল-সাক্ষী-বিচারক একই রেখায় হয়তো অধিষ্ঠিত হবে, হলেও এর বিপরীতে হাজার হাজার ন্যায়পাল জেগে থাকে সুবিচারের পক্ষে। তোমাদের মানবিক সজীবতা নিয়ে এখনো ভরসাস্থল তৈরি হয়--সেখানে আমরাও বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পারি।
মানবিক সজীবতা নিয়ে ভরসাস্থল
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:৩৬