আজ ২৬ শে মার্চ । বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস । ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে হঠাৎ করে থেমে গেল ঢাকা । নেমে এলো কবরের নিস্তব্ধতা । শুরু হয় পাকবাহিনীর বর্বরোচিত এবং কাপুরুষোচিত ক্রেকডাউন । এই ভয়াল ‘কালরাত্রি’র পর রক্তে রাঙা নতুন সূর্য উঠেছিল ১৯৭১ সালের এই দিনে । পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্ব ঘোষিত হয়েছিল । বঙ্গবন্ধুর ডাকে উজ্জীবিত বাঙ্গালী ২৫শে মার্চের পর নতুন করে উজ্জীবিত হয় । এ ঘোষণার মাধ্যমে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল জাতি। প্রস্তুত হয় পৃথিবীর ইতিহাসের নৃশংস হ্ত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নেয়ার । দীর্ঘ নয় মাস রক্তপাত আর অজস্র প্রাণের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনে প্রিয় স্বাধীনতা । লাল-সবুজের পাতাকা নিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে জন্ম নেয় বাংলাদেশ । এবার জাতি স্বাধীনতার ৪২ বছর পূর্তি পালন করছে।
বীর বাঙ্গালি দেশমাতার জন্য প্রিয়জন, পরিবার, ঘরবাড়ি ছেড়ে অসীম অনিশ্চয়তায় জীবনকে বাজি রেখে রক্তিম পথচলা শুরু করে । এ এক অপার্থিব অনুভূতি, এটিই দেশপ্রেম। যার ফলাফল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। নতুন প্রজন্ম বুকে এমন দেশপ্রেম ধারণ করুক।
বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মফিদুল হক বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধ যেমন ছিল কঠিন ও কঠোর লড়াই, যার পেছনে ছিল দীর্ঘ সাধনা ও অধ্যবসায়, সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও নবায়নও তেমনি কঠিন ও কঠোর সাধনার বিষয়। এটা নিরন্তর পরিচালিত এক সংগ্রাম, যা এখন রূপ নিয়েছে নির্মাণ ও বিকাশের, ব্যাপকতর মানুষের জীবনে মুক্তি অর্থবহ করে তোলার বহুমুখী আয়োজন ও প্রয়াসের। আর তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের জন্য বিমূর্ত ধারণা নয়, অতীতের গৌরবের সঙ্গে বর্তমানের করণীয়ের তা বাস্তব সেতুবন্ধ, এই যোগসূত্র নিবিড়ভাবে ধারণ করার মধ্য দিয়ে আমরা পেতে পারি সুন্দর আগামী নির্মাণের প্রেরণা ও শক্তি।' আর এ প্রেরণার শক্তিই হলো আমাদের নতুন প্রজন্ম।
আমার মনে হয় তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস সম্পর্কে আজও অন্ধকারে। তাদের ধারণা নেই কিভাবে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা। আমি অনেক নতুন প্রজন্মকে জিজ্ঞেস করেছি, মুক্তিযু্দ্ধ সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা আছে কি নেই। তাদের বক্তব্য, 'বেশি কিছু জানে না, তবে এটুকু জানে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন ।' আবার কেউ কেউ অত্যন্ত সচেতন। অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের নতুন নতুন ঘটনা শুনে তা নিয়ে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছে।
আমরা চাই সকল বিভ্রান্তি দূরে ঠেলে মুক্তিযুদ্ধের সুদীর্ঘ সঠিক ইতিহাসটি বিশ্বের সব নাগরিক জানুক। নতুন প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা প্রচুর, আশা অনেক, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তারা জানতে চায়। আর যে উদ্দেশ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল সেই অসাম্প্রদায়িক, সন্ত্রাসমুক্ত, শোষণমুক্ত ও শ্রেণীহীন সমাজব্যবস্থা গঠনের জন্য তারা সদাজাগ্রত।
মার্চ বা ডিসেম্বর এলেই আমাদের তর্ক জমে ওঠে কে স্বাধীনতার ঘোষক আর কেই বা জাতির পিতা। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখেন এবং লেখার সময় বাটখাড়াটা তার দিকেই ভারী করে দেন। তাই লেখাটা বস্তুনিষ্ঠ না হয়ে একতরফা হয়ে ওঠে। আবার যে দল ক্ষমতায় আসে সে দল তার হয়ে লিখতে বসে। সত্যিটা কেউ স্বীকার করতে চায় না। ফলে স্কুল-কলেজের কোমলমতি ছাত্রছাত্রী একেক সময় একেক ইতিহাস পড়ে এবং বিভ্রান্ত হয়। বুঝে উঠতে পারে না কোনটা সত্যি।
আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য কিছু বই:
১। মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর: একটি নির্দলীয় ইতিহাস— গোলাম মুরশিদ, জানুয়ারি ২০১০, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা। অনেক তথ্য ঘেঁটে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটা নিরপেক্ষ নির্দলীয় ইতিহাস লেখার চেষ্টা করেছেন গোলাম মুরশিদ।
২। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বইয়ের তালিকা
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০১৩ সকাল ৯:৩১