somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৮ জুলাই ২০২৪

৩০ শে নভেম্বর, ২০২৪ ভোর ৫:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যাত্রাবাড়ীর এক গলি থেকে ফজর নামাজ পড়ে ৩/৪ টা ছেলে মেইন রোডের দিকে যাচ্ছিল। তাদের উদ্দেশ্য, ভোর হবার আগেই যাত্রাবাড়ী চিটাগং রোড হাইওয়ে দখলে নেয়া

আর মাত্র ৫ টা বিল্ডিং পরে গলি শেষ, সামনে মেইন রোড। হঠাৎ গুলির শব্দ, তাদের একজন সঙ্গী লুটিয়ে পড়ল। ছেলেটার নাম মারুফ। হতবিহ্বল বাকীরা বুঝতে পারছিল না কোথা থেকে গুলি এসেছে, কে গুলি করেছে। এদিকে লুটিয়ে পড়া সঙ্গীর শরীর থেকে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে। তার দিকে ভালো ভাবে তাকাতেই ২য় গুলির শব্দটা শোনা গেল। উপস্থিত সবাই মাটিতে শুয়ে পড়ল। এদের গায়ে গুলি লাগে নি। এরা নিরাপত্তার জন্য শুয়েছে৷ আহত মারুফকে টেনে হিঁচড়ে গলির ভেতরে নিয়ে যাওয়া হলো। মারুফের কাঁধ ছুয়ে গুলি বেরিয়ে গেছে। রাবার বুলেট না। এটা স্নাইপার বুলেট। এগুলো যুদ্ধে ব্যবহার করা হয় আরেক দেশের সৈন্য হত্যা করতে।
এদিকে যাত্রাবাড়ী বাসী গত ৩ দিন গুলির শব্দ শুনে অভ্যস্ত তবে এখন ভোর হওয়ায় শব্দের মাত্রাটা বেশি ছিল। এলাকার সবার ঘুম ভেঙে গেল। অনেকে বাসা থেকে নেমে গেল। বাইরে কী হচ্ছে জানার জন্য।

গুলির শব্দের উৎস নিয়ে আলোচনা করে বের করা হলো গলির মাথায় কোনো বাড়িতে স্নাইপার আছে। গলি থেকে বের হলেই গুলি করবে। কিন্তু কোন বিল্ডিং এ স্নাইপার সেটা জানে না কেউ। আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে হলে মেইন রোডে যেতে হবে। যদিও এটা যাত্রাবাড়ী। মেইন রোডে যাওয়ায় অনেকগুলো রাস্তা আছে। আশেপাশের গলি থেকেও সেইম তথ্য এলো। গলি থেকে বের হতেই অদৃশ্য স্থান থেকে তাদের উপর গুলি করা হয়েছে।

এলাকাবাসী সিদ্ধান্ত নিল যে করেই হোক স্নাইপারের লোকেশন বের করতে হবে। এটা বের করার জন্য জানবাজ কিছু লোক দরকার যার গুলি খাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কয়েকজনকে আগে গলি থেকে বের হতে হবে। পেছনে পেছনে কিছু লোক দেখবে কোন বাসা থেকে গুলি করছে। কে হবে সেই জানবাজ?

ইন্টার পড়ুয়া একটা ছেলে আগে যেতে রাজি হলো। সে একা একা আগে যাবে।

ছেলেটার নাম অনিক। সে বন্ধুর সাথে কোলাকুলি করল। এক বন্ধুর কানে কানে বলল "আমার কিছু হলে মাকে সান্ত্বনা দিস।" বন্ধু দুস্টামি করে উত্তর দিল "আর তোর ক্রাশ?" অনিক উত্তর দিল "তাকে আমার কথা বলিস।'

হাসিমুখে অনিক গলির মুখের দিকে এগোলো। তার চোখে সতর্ক দৃষ্টি। আগে যেখানে মারুফ গুলি খেয়েছে ঠিক সেই স্থানে আসার সাথে সাথে গুলির শব্দ শোনা গেল। এদিকে অনিক আগে থেকেই একে বেঁকে চলছিল। গুলি তার গায়ে লাগে নাই। তবে গুলিটা আশেপাশের কোথাও দিয়ে গেছে বোঝা গেছে। অনিক পেছন দিকে না গিয়ে সামনের দিকে দৌড় দিল। এবার আরেকটা গুলি হলো। এটাও অনিকের গায়ে লাগে নাই। এদিকে অনিকের পেছন পেছন আরো ২ টা ছেলে এলোমেলো ভাবে দৌড়াচ্ছিল। পেছন থেকে শরীফ আর শাহাদাৎ ভাই মোটামুটি একটা ধারনা পেলেন কোন বিল্ডিং থেকে গুলি করেছে। এদিকে অনিক ও ২ টা ছেলে গলির মাথায় পৌঁছে গেছে। তারা একটা বিল্ডিং এর ঠিক নিচে অবস্থান করছে। এখানে উপর থেকে কেউ গুলি করতে পারবে না। এদিকে শরীফ আর শাহাদাৎ আগের জায়গায় ফিরে গেল। সেখানে এখন মিনিমাম ১০০ জন আন্দোলনকারী। আরো অনেকেই জড়ো হচ্ছে।

সবাই ইতিমধ্যে জেনে গেছে গলির মুখে অদৃশ্য স্নাইপার অবস্থান করছে। কোন বিল্ডিং থেকে গুলি করা হয়েছে সেই ধারনাও পেয়ে গেছে। তারা এটা নিয়ে বলাবলি করল। এক পর্যায়ে তারা জানতে পারল ঐ বিল্ডিংটার মালিক এক আওয়ামীলীগ নেতা। তার মানে তাদের ধারণা সঠিক। আওয়ামীলীগ নেতার বাসায় পুলিশ অথবা আওয়ামীলীগের স্নাইপার অস্ত্র তাক করে বসে আছে।

বিল্ডিং টা ৬ তলা। গুলি করা হয়েছে ৩ থেকে ৬ তলার মধ্য থেকে যেকোনো একটা ফ্ল্যাট থেকে। গলির যে পয়েন্টে ভোরে মারুফ গুলি খেয়েছে সেখান থেকে ৪/৫/৬ তলা ভালো করে দেখা যায়। তার মানে ৩ তলা থেকে গুলি করা হয় নি। আবার ছাদ থেকেও গুলি করা হয় নি। এদিকে ২ টা করে মোট ৬ টা ফ্ল্যাট আছে। ৩ টা ফ্ল্যাট আগেই বাদ দেয়া হলো। কারণ এই ৩ টা ফ্ল্যাট থেকে মেইন রোডের দিকে গুলি করা যাবে, গলির ভেতরের দিকে নয়। ৪/৫ ও ৬ তলাকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা হলো কিন্তু কাউকে দেখা গেলো না। ৫ তলার একজন মহিলা বারান্দায় এসে কী যেন দেখে রুমে ঢুকে গেলেন। তার মানে ৫ তলাতেও স্নাইপার নেই। অর্থাৎ ৪ ও ৬ তলার এদিকের ফ্ল্যাটের যেকোনো একটায় স্নাইপার আছে। এখন আন্দোলনকারীরা টার্গেট নিয়েছে এই বিল্ডিং এর দখল নিবে। তারপর বিল্ডিং এ ঢুকে স্নাইপারকে বের করবে। কাজটা খুবই ভয়ানক কারণ আন্দোলনকারী কারো হাতে পিস্তল নাই। লাঠি ও ইটের টুকরাই একমাত্র ভরসা।
আন্দোলনকারীরা এক এক করে গলির বিল্ডিং গুলোর দেয়ালের সাথে গা ঘেঁষে ঘেঁষে মেইন রোডের দিকে এগোলো। একজন একজন করে আগানোর কারণে উপর থেকে কেউ দেখার সুযোগ নেই। তাই গুলিও হলো না।

৫ মিনিটের মধ্যে আওয়ামিলীগ নেতার বাড়ির সামনে প্রায় শ খানেক আন্দোলনকারী হাজির হয়ে গেল।

এদিকে দারোয়ান এত লোক দেখে ভয় পেয়ে গেল। তাকে হুমকি ধামকি দিতেই সে গেইট খুলে দিল। সবাই এলাকার স্থানীয় পোলাপান। এদেরকে ক্ষেপিয়ে দারোয়ানের চাকরি করা যাবে না। গেইট খোলা পেয়েই হুড়মুড় করে ছাত্ররা বিল্ডিং এ ঢুকে পড়ল। একদল ৪ তলার টার্গেটেড ফ্ল্যাটের দরজায় আরেকদল ৬ তলার ফ্ল্যাটের দরজা ধাক্কা দিতে লাগল। ৪ তলার দরজা খুলল না কিন্তু ৬ তলার দরজা খুলে ফেলল। ভেতরে ভয়ার্ত বাসার লোকজনকে দেখে বুঝল এখানে কোন স্নাইপার থাকার কথা না। ৪ তলার দরজা কেউ খুলছে না। শব্দ শুনে পাশের রুমের দরজা খুলে একজন দেখা দিয়ে বললেন "এই বাসাটা ফাঁকা।" ফাকা বাসার কথা শুনে পোলাপানদের উৎসাহ আরো বেড়ে গেল। এক পর্যায়ে তারা দরজা ভেংগে ফেলল। ভেতরে হুড়মুড় করে ঢুকেই তারা সেই কাঙ্ক্ষিত স্নাইপারের দেখা পেল। পুলিশের পোষাক পরা দুইজন লোক রাইফেল হাতে এই বাসায় অবস্থান করছে। এই বাসাটা আসলেই ফাঁকা। দুইজন পুলিশ প্রাণ ভিক্ষার উদ্দেশ্যে মাফ চাওয়ার ভঙ্গিতে হাত জোড় করে রাখল। উত্তেজিত জনতার এখন এসব দেখার সময় নেই। তারা পুলিশ দুইজনকে উত্তম মধ্যম লাগানো শুরু করল। একজন এক রুমে দুইটা রাইফেল খুজে পেল। রাইফেলের নল এখনো গরম। তার মানে এই রাইফেল থেকেই গুলি করা হয়েছে। পুলিশ দুইজনকে মারতে মারতে বিল্ডিং এর নিচে নামানো হলো। এদিকে শোরগোল টের পেয়ে বিল্ডিং এর মালিক পালিয়ে গেল। তাকে অবশ্য বিল্ডিং এ হামলাকারী আন্দোলনকারীরা চিনত না। চিনলে তার পালানোর সুযোগ হতো না।

আধা ঘণ্টা পরে যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারে দুইটা উলঙ্গ লাশ ঝুলে রইল। তাদের পা উপরের দিকে আর মাথা নিচের দিকে। এদিকে সূর্য উঠে গেছে। রাস্তায় হাজার হাজার মাদ্রাসার ছাত্র তাকবির ধ্বনি দিচ্ছিল। আশেপাশের মাদ্রাসা থেকে পঙপালের মত ছাত্র আসছিল। খুনি পুলিশের এই পরিণতি দেখে সমবেত জনতার উৎসাহ বেড়ে গেলো। আজকে যাত্রাবাড়ীর বেরিকেড ভাঙতেই হবে। এমনিতেই যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর ব্রীজ ৩ দিন ধরে অচল৷ কয়েকশো গাড়ির চাকা পাংচার করে রাখা হয়েছে। চাইলেও এখান দিয়ে কোনো গাড়ি আসা যাওয়া করতে পারবে না। ১৮ জুলাই ২০২৪ ছিল আন্দোলনের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন।

(সংগৃহীত)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০২৪ ভোর ৫:৫১
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×