সামনে বই মেলা; এজন্য লেখক, প্রকাশক, প্রেস সবাই খুব ব্যস্ত। সবার একটাই উদ্দেশ্যে ফিনিশ প্রোডাক্টস্ অর্থাৎ বইটি যাতে নির্ভুলভাবে পাঠকের হাতে পৌছে। এক্ষেত্রে প্রকাশক ও প্রেসের চেয়ে লেখকদের দায় সবচেয়ে বেশি। কারণ, বইটিতে মুদ্রণজনিত বা তত্ত্বগত কোন ভুল হলে পাঠকের নিশানা থাকে লেখকের দিকে। কিন্তু লেখকদের সবাই কি বিষয়টি নিয়ে সিরিয়াস? কিংবা পাঠকদের হাতে যথাসম্ভব নির্ভুল বইটি তুলে দিতে দায়িত্বশীল!!
একজন লেখকের ফেইসবুক স্টেটাস দিয়ে শুরু করি- (হুবহু কপি করা);
"অবশেষ শেষ হলো। আলহামদুলিল্লাহ। গতকাল দুপুর তিনটায় বসেছিলাম লিখতে। উঠলাম আজ সন্ধ্যা ছয়টায়। ২৭ ঘন্টা! হ্যাঁ, একবার ভাত, দুইবার নাস্তা খাওয়া বাদ দিলে এই ২৭ ঘন্টা সময় আমি একটানা লিখেছি। ঠিক একটা জায়গায় বসে। তার আগের দিন লিখেছিলাম টানা ১৬ ঘন্টা, তার আগের দিন ১৪ ঘন্টা।
ফলাফল, ১ লাখ ১৮ হাজার শব্দের ★★★ (নতুন উপন্যাস); যা ★★★ (গত বছরের বই মেলায় প্রকাশিত উপন্যাস) থেকে ২৭ হাজার শব্দ বেশি। আপাতত চোখে অন্ধকার দেখছি। কী প্যাডে আঙুল পড়ছে না ঠিকমতো। সবচেয়ে বড় কথা.. ঘুম আসছে না।
অবসাদ আসতেছে। এই অবসাদ কত কঠিন হয় কে জানে।"
স্টেটাসটি পড়ে থো বনে গেলাম; এমনও সম্ভব!! একখানা কিতাব (উপন্যাস) তিনি পয়দা করলেন তিন দিনে!! ১ লাখ ১৮ হাজারেরও অধিক শব্দ লেখে!!! গিনেজ বুক ওলারা খবর পেলে একখানি নোবেল থুক্কু ম্যাডেল ঠিকই লেখককে দিতেন; আশা করি, কেউ একজন এ বিষয়টির খবর তাদেরকে দিবেন।
গত বছরও এই লেখকের এই অবস্থা হয়েছিল; তবে তখন নোবেল খানি লিখতে মাসখানে লেগেছিল; এবার তা নেমে আসলো ৩ দিনে!! তাহলে সামনের বইমেলায় ৩ ঘন্টায় একখান নোবেল পয়দা হবে? এখন তো টি টুয়েন্টির জামানা পাঁচ দিনের টেস্ট খেলে সময় নষ্ট করার কোনই মানে নেই!!
অবাকের বিষয় এই লেখকের বই নাকি গত বছর সেই প্রকাশনীর বেস্ট সেলার হয়েছিল। তবে বইটি বাজারে আসার পর বেশ কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে। এজন্য লেখক সময় সল্পতায় অজুহাত দিয়ে দ্বিতীয় মুদ্রণে তা সংশোধন করার আশ্বাস দেন। কিন্তু কথা হলো, সাইক্লোন গতিতে লেখতে গিয়ে যে ভুলগুলোে হলো এই দায় পাঠক নেবে কেন? লেখক কি নিজের ভুলের জন্য সংশেধিত বইটি ঠকে যাওয়া পাঠকদের বিনা মূল্যে আবার বিতরণ করেছেন?
পাঠকদের পকেটের কড়কড়া নোট দিয়ে কেনা বইটি লেখকের ভুলে অগোছালো হলে দায়ভার কি লেখকের নয়? পাঠকের কি ঠেকা লাগছে আবার এই বই ক্রয় করার। এগুলো পাঠকের বিশ্বাসের অবমূল্যায়ন নয় কি? সারা বছর ঘুমিয়ে থেকে তিনদিনে একটি বড় উপন্যাস লিখতে হবে কেন? আর সাহিত্যের প্রতি এই অশ্রদ্ধার কথা ফেইসবুকে ঘটা করে জানাতে হবে কেন? লেখক অতি বিজি মানুষ এটি বুঝাতেই কি বই মেলার তিনদিন আগে এমন স্টেটাস পোস্ট করা?
নাকি সাহিত্য ও পাঠকদের সাথে তামাসা করা!!
আরেকজন লেখক দীর্ঘদিন থেকে ফেইসবুকে নিজের বইয়ের বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছেন দেখলাম; সাথে বিকাশ নাম্বার সহ!! কমিশন ৫০%!! বইটি পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সংক্রান্ত। একজন পাঠক প্রশ্ন করলেন, 'এখন তো শান্তি চুক্তি হয়ে গেছে, তাহলে ৪৫০ টাকা দামে বইটি কেন কিনবো?' লেখকের উত্তর ছিল, শান্তি চুক্তির আগের অনেক বিষয় বইটিতে আছে, এজন্য বইটি পড়া দরকার!!
আরেকজন লেখক পোস্টার ছাপিয়ে বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন, "একটি কিনলে আরেকটি ফ্রি।"
বিষয়টি এরকম, বিশ্বকাপ ফুটবল শেষ হওয়ার পর কোন দল চ্যাম্পিয়ান হতে পারে তা নিয়ে বাজি ধরার মত!! এগুলো করে আর যাই হোক লেখক সমাজের আত্মমর্যাদাবোধে আঘাত আসছে এটা বলা বাহুল্য।
লেখালেখি হলো একটি সাধনা; কলম সৈনিকদের দীর্ঘদিন থেকে তিলে তিলে গড়ে উঠা ভাবনার একটি কল্পিত রূপ। এর আকৃতি ও অলঙ্করণের জন্য অনেক সময় লাগে। ভাবনার দরকার হয়। এজন্য পাঠকদের কাছে লেখকদের মর্যাদা অনেক উপরে। একজন লেখকের মৌলিক ভাবনাগুলো হলো তার দর্শন; যা একটি সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের একটি সময়ের সাহিত্যের প্রতীক। এ প্রতীকটির খুঁটি যত শক্ত হবে তার ফলাফলও তত সুদূরপ্রসারী হবে। একটি জাতির এগিয়ে যাওয়ার পেছনে মূল অনুঘটক হিসেবে কাজ করে বই। এজন্য অতি দামী এ আবেগকে নিয়ে ছেলেখেলা করার অধিকার কারো নেই। এটা দুঃখজনক।
উপরের স্কোর কার্ডটি একজন অভিষিক্ত টেস্ট ওপেনারের। প্রথম ইনিংসের ভুলগুলো দ্বিতীয় ইনিংসে সংশোধন করতে বদ্ধপরিকর তিনি। টি-টোয়েন্টির প্রতি উনার কোন আগ্রহ নেই। সারা জীবন টেস্ট খেলে কাটিয়ে দিতেই আনন্দ তাঁর !! (ধন্যবাদ)
অভিষেক টেস্টের ভেন্যুর ঠিকানা-
"উৎস প্রকাশন"- (প্যাভিলিয়ন ২২)
অমর একুশে গ্রন্থমেলা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা।
টিকেট- ২০০ টাকা (কভার মূল্য)
★★★ এছাড়া, সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে প্রথম আলোর আয়োজনে (১ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি) বইমেলায় উৎস প্রকাশনীর স্টলেও পাওয়া যাবে।
ফটো ক্রেডিট,
গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১৯ রাত ১২:৩৮