somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাওসার চৌধুরী
জন্মসূত্রে মানব গোত্রভূক্ত; এজন্য প্রতিনিয়ত 'মানুষ' হওয়ার প্রচেষ্টা। 'কাকতাড়ুয়ার ভাস্কর্য', 'বায়স্কোপ', 'পুতুলনাচ' এবং অনুবাদ গল্পের 'নেকলেস' বইয়ের কারিগর।

দুধ নিয়ে কেলেঙ্কারি; নেই কোন জবাবদিহিতা।

২৭ শে জুন, ২০১৯ বিকাল ৩:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাজেট আসলে আমার মতো নিম্নবিত্ত মানুষের হার্টবিট বেড়ে যায়। কারণ, আমরা অতি সাধারণ জনগণ; না পারি বাজেট পূর্ব আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে, না পারি নিজেদের অভাব-অনুযোগ-শঙ্কার কথা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জানাতে। আমরা অর্থনীতির বিরাট বিরাট তথ্য আর অগ্রগতি বুঝি না; শুধু বুঝি নিত্য প্রয়োজনীয় চাল-ডাল-লবণ-দুধ-তেল-পেয়াজ ইত্যাদির দাম কমছে কিনা? অথবা স্থির আছে কিনা? আমরা না পারি চুরি করতে, না পারি আওয়াজ করে নিজেদের দারিদ্র্যতা প্রকাশ করতে, না পারি পেটের খিদে সহ্য করতে। এজন্য নীরবে শুধু পর্যবেক্ষণ করি।

পৃথিবীর সব সভ্য দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা হয় বাজেটে। যাতে অল্প আয়ের মানুষের কষ্ট না হয়। প্রয়োজনে সরকার ভর্তুকীর ব্যবস্থা করে। কারণ, এই বাজেটের সিংহভাগ যোগান দেয় এসব খেটে খাওয়া মানুষ। আমাদের দেশের অতি উচ্চবিলাসী, অতি ধনী এমপি/মন্ত্রীরা কি এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখেন?

এবারের বাজেটে গুঁড়ো দুধের দাম বেড়েছে। কিন্তু এর বিকল্প হিসাবে পাস্তুরিত তরল দুধের যোগান ও মান ঠিক আছে কিনা তা কি যাচাই করা হয়েছে? গত দুই-তিন বছর থেকে দেশের নামকরা সব পাস্তুরিত দুধ কোম্পানীর প্যাকেটে ডিটারজেন্ট/শ্যাম্পুর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। শুধু শ্যাম্পু দিয়েও এসব দুধ তৈরী করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। এগুলো নিয়ে টিভি, পত্রিকায়ও অনেক লেখালেখি হয়েছে। আর পাস্তুরিত দুধে খাল-নালা-ড্রেন-টয়লেটের পানি তো হরহামেশা মেশানো হয়। এসব প্রতিবেদন দেখে কোন সুস্থ মানুষ এসব দুধ নামক বিষ কিনে খাবার কথা নয়। এজন্য বিকল্প হিসাবে বাধ্য হয়ে গুঁড়ো দুধ খাচ্ছে। আমরাও গুঁড়ো দুধ খেতে চাই না; চাই শতভাগ নিরাপদ আর পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ পাস্তুরিত তরল দুধ। বিএসটিআই/সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কি তা করতে পেরেছে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার ও ফার্মেসি অনুষদের গবেষণার তথ্যমতে,"পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধে ডিটারজেন্ট, এন্টিবায়োটিক ও ফরমালিন, গুঁড়া মশলায় (হলুদ) টেক্সটাইল রঙের উপস্থিতি এবং তেল (পামওয়েল, সরিষা, সয়াবিন), ঘি ও ফ্রুট ড্রিংকস বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) নির্ধারিত মান উত্তীর্ণ হতে পারেনি।"

পাস্তুরিত দুধের সাতটি নমুনায় ‘ফ্যাট ইন মিল্ক’ এর বিবেচনায় ছয়টি নমুনা; ‘সলিড নট ফ্যাট’ বিবেচনায় পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধের ১০টি নমুনার সবগুলো; ‘এসিডিটি এনালাইসিস’ বিবেচনায় পাস্তুরিত দুধের একটি নমুনা ও অপাস্তুরিত দুধের তিনটি নমুনা; ‘টোটাল ব্যাকটেরিয়া কাউন্ট’-এ পাস্তুরিত দুধের সাতটি নমুনার সবগুলো, ‘কলিফর্ম কাউন্ট’-এ পাস্তুরিত দুধের সাতটি নমুনার দুইটি, ‘স্টেফাইলোকক্কাস স্পেসিজ কাউন্ট’ হারে পাস্তুরিত দুধের পাঁচটি নমুনার পাঁচটি মানোত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছে।

গবেষনা মতে, "খাদ্যপণ্যে যত্রতত্রভাবে এসব ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহৃত হলে আমরা বাঁচতে পারব না। মরে যাব। মানুষ ও পশুর জন্য ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিক সম্পূর্ণ আলাদা। গরুকে মানুষের এন্টিবায়োটিক দিলে, দুধ ও মাংসের মাধ্যমে তা আবার মানুষের শরীরেই প্রবেশ করে। যা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর বিষয়। তিনি বলেন, পরীক্ষায় পাস্তুরিত দুধের সাতটি নমুনার সবগুলোতেই মানব চিকিৎসায় ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিক লেভোফ্লক্সাসিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন ও এজিথ্রোমাইসিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এছাড়াও অপাস্তুরিত দুধের একটি নমুনাতে ফরমালিনও মিলেছে। অন্য একটিতে পাওয়া গেছে ডিটারজেন্ট।"

অথচ বিএসটিআই কিছুদিন আগে ১৪টি ব্র্যান্ডের পাস্তুরিত দুধে আশঙ্কাজনক কিছু নেই বলে আদালতে প্রতিবেদন দেয়! ব্র্যান্ডগুলো হলো পুরা, আয়রান, আড়ং ডেইরি, ফার্ম ফ্রেশ মিল্ক, মো, মিল্ক ভিটা, আফতাব, আল্ট্রা, তানিয়া (২০০ গ্রাম ও ৫০০ গ্রাম), ইগলু, প্রাণ মিল্ক, ডেইরি ফ্রেশ, মিল্ক ফ্রেশ এবং কাউহেড পিওর মিল্ক।

বাজারে প্রচলিত ৮টি ঘিয়ের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা চালানো হয়। এগুলো হলো- বাঘাবাড়ি, প্রাণ, মিল্কভিটা, মিল্কম্যান, সমির ও টিনে বিক্রি হওয়া নামবিহীন দু’টি নমুনা। বিএসটিআই স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ঘিয়ে জলীয় উপাদান ও আয়োডিন ভ্যালু যতটুকু থাকার কথা রয়েছে এসব নমুনায় তার থেকে বেশি পাওয়া গেছে।

এই বিএসটিআই দিয়ে আমাদের হবেটা কী? দুধের মতো এতো গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যে ভেজাল ধরতে পারে না যে মাথামোটা সরকারি সংস্থা এদের বাঁচিয়ে রেখে কি লাভ আমাদের? প্রতি মাসে পাবলিকের করের শত শত কোটি টাকা যে সংস্থার পেছেনে খরছ হয়, সেই পাবলিকের কাছে তাদের কোন দায় নেই কেন? সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কি এই দুর্নীতির আখড়া প্রতিষ্ঠানটিকে জবাবদিহির আওতায় আনতে ব্যর্থ? নাকি নিজেরাও জড়িত? মিল্ক ভিটার মতো সরকারি দুগ্ধ খামারের দুধে এন্টিবায়োটিক, শ্যাম্পু আর ডিটারজেন্ট থাকবে কেন? এগুলোর জবাব দিতে হবে।



ফটো ক্রেডি,
গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৭
২৯টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×