somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইন্টারনেটের স্বাধীনতা রাষ্ট্র নয়, ব্যক্তি হোক নির্ধারক

১০ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কাজী আলিম-উজ-জামান
ইন্টারনেট গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ব্যক্তিমানুষ, রাষ্ট্র, সমাজকে প্রভাবিত করে চলেছে। এই শতাব্দীতে ইন্টারনেট ছাড়া জীবনযাপন কল্পনাও করা যায় না। নাগরিকের চিন্তা-ভাবনাকে আরও শানিত করে তাঁকে পরিণত করেছে বিশ্ব নাগরিকে। ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের নাগরিক আর পরাক্রমশালী রাষ্ট্রের নাগরিকের মধ্যে পার্থক্য অনেকটা ঘুচিয়েছে ইন্টারনেট। কারণ উভয়েরই সমান ক্ষমতাবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তথ্যের স্বাধীনতার অধিকার আর ইন্টারনেটের স্বাধীনতা সমার্থক। অনেক দেশই তথ্যের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। পরোয়া করে না ইন্টারনেটের স্বাধীনতায়ও। গনতন্ত্রের সঙ্গে ইন্টারনেট স্বাধীনতার নিবিড় সম্পর্ক বর্তমান। উদার গণতান্ত্রিক দেশগুলো নাগরিকের স্বাধীনতা, ক্ষমতায়ন ও সুযোগ-সুবিধায় বিশ্বাস করে। পক্ষান্তরে স্বৈরতন্ত্রের ছদ্মাবরণে মোড়া কথিত গণতান্ত্রিক সরকারগুলো বিশ্বাস করে না অবাধ তথ্য প্রবাহে। জনগণের স্বাধীনতাকে তারা ভয় পায়। এসব দেশের সরকার ইন্টারনেট বন্ধ বা ফিল্টার করে, সাইবার হামলা চালিয়ে, বিভিন্ন লেখা বা পোস্ট মুছে দিয়ে, সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে নজরদারিসহ বিভিন্ন অবৈধ উপায়ে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রন করে।
২.
মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছে ২০১৩ সালের ইন্টারনেট স্বাধীনতার প্রতিবেদন। বিশ্বখ্যাত পিউ রিসার্চ সেন্টার এ প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে ৬০টি দেশে ইন্টারনেট ও ডিজিটাল মিডিয়ার স্বাধীনতার চিত্র। এ প্রতিবেদন অনুযায়ী, কম শিক্ষার হার, অর্থনৈতিক বৈষম্য, দূর্বল অবকাঠামো উন্নয়নশীল দেশে ইন্টারনেট সম্প্রসারণের সবচেয়ে বড় বাধা।
চিলি ও আর্জেন্টিনায় ইন্টারনেটের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত সবচেয়ে বেশি। এ দেশদুটির দুই-তৃতীয়াংশ মানুষই অনলাইন ব্যবহার করে। আবার ইন্দোনেশিয়া ও উগান্ডায় ইন্টারনেটের স্বাধীনতার ব্যাপারে জনগণের মধ্যে সচেতনতা এখনও তেমনভাবে তৈরি হয়নি। অপরদিকে হুগো শাভেজের ভেনেজুয়েলা ও গত দুই বছর যাবত উত্তাল থাকা মিশরে ইন্টারনেটের স্বাধীনতার পক্ষে জনগণের সমর্থন অত্যাধিক, যদিও ব্যবহারের দিক দিয়ে দেশদুটি খুব বেশি এগিয়ে নেই।
এই প্রতিবেদনে সবচেয়ে হতাশাজনক চিত্র বেরিয়ে এসেছে পাকিস্তানে। সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে কম সোচ্চার দেশগুলোর তালিকায় একেবারে নিচে আছে দেশটি। জরিপে অংশ নেওয়া সে দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারিদের মধ্যে মাত্র ২২ শতাংশ সেন্সরশিপের বিরোধিতা করেছে। ৬২ শতাংশ ব্যবহারকারি কোনো উত্তর দেয়নি অথবা সিদ্ধান্তহীন থেকেছে। জরিপের তথ্যমতে, তরুণতর শ্রেণী, যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৯ এর মধ্যে, সব দেশেই সরকারের নিয়ন্ত্রনহীন ইন্টারনেট ব্যবস্থার পক্ষে মত প্রকাশ করলেও একমাত্র পাকিস্তানেই তারা ব্যতিক্রম।
ধর্মীয় অবমাননাকর ভিডিও প্রচারের দায়ে পাকিস্তানে জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম ইউটিউব বন্ধ ১৮ মাস। ভিডিওটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হলেও ইউটিউব খুলে দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে খোদ সে দেশের বিচার বিভাগ পর্যন্ত প্রশ্ন তোলে।
তবে পাকিস্তানীদের অনেকেই পিউ রিসার্চের এ প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ব্লগে একজন লিখেছেন, এটা এমন একটা জরিপ যে, ৮৫ শতাংশ পাকিস্তানি মোটরসাইকেল চালানোর সময় আইসক্রিম খেতে পারে, কিন্তু এদের ৯৫ শতাংশ আইসক্রিম বানানটি করতে পারে না। ওই ব্লগার এসব জরিপ অন্তত সত্য হওয়া উচিত বলে মত প্রকাশ করেন। আরেকজন লিখেছেন প্রবল ধর্মানুরাগের কারণে পাকিস্তানে যদি মাত্র ২২ শতাংশ মানুষ অবাধ ইন্টারনেট ব্যবহারের পক্ষে হয়, তবে মিশরে তা এত বেশি হয় কীভাবে? কারণ দুটি দেশের ধমীয় অনুশাসন তো অনেকটা একই রকম।
পিউ রিসার্চের জরিপ তালিকায় ভারত ও বাংলাদেশ নেই। ভারতে ইন্টারনেটের স্বাধীনতার পক্ষে জোরালো মতামত রয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ইন্টারনেটের ওপর কোনো সেন্সরশিপ নেই, তবে অসংখ্য ওয়েবসাইট নজরদারির মধ্যে রাখা হয়। বাংলাদেশেও একাধিকবার ইউটিউব ও ফেসবুক বন্ধ রাখা হয়েছিল।
কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশকে এই তালিকায় আনা নিয়েও প্রশ্ন আছে। কারণ উগান্ডার মত দেশের অনেক মানুষ জানেই না, ইন্টারনেট আসলে কী বস্ত্ত। দেশটির বিরাট এলাকা এখনও বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে।
চীন, কিউবা, মিয়ানমার, ইরান, উত্তর কোরিয়া, সৌদি আরব বৈশ্বিকভাবে ‘ইন্টারনেটের শত্রু’ হিসেবে পরিচিত। এসব দেশে কেবল সংবাদ ও তথ্য কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রনই করা হয় না, ইন্টারনেট ব্যবহারকারিদের জেল, জরিমানাসহ বিভিন্ন ধরনের শাস্তিও দেওয়া হয়ে থাকে। আবার রাশিয়া, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, তুরস্কের মত দেশ ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে নজরদারি মধ্যে রাখে। তাদের যুক্তি, প্রোগাগান্ডা ওয়েবসাইটগুলোকে নিয়ন্ত্রন করার প্রয়োজন আছে। চরমপন্িথরা সমাজে সহিংসতা ও ঘৃনা ছড়ানোর জন্য সামাজিক গণমাধ্যমগুলোকে বেছে নেয়। খোদ যুক্তরাষ্ট্রেও কিছু কিছু ওয়েবসাইট নিয়ন্ত্রন করা হয়।
তবে ভবিষ্যত বিশ্ব কতটা ইন্টারনেটনির্ভর হবে, তা আজ আমরা ফেসবুক দিয়েই বুঝতে পারি। চার পাশের স্বজন-বন্ধুদের খবরাখবর পাওয়ার জন্য আমরা ঢুকে পড়ি ফেসবুকে। দিনের মধ্যে অসংখ্যবার। আজ সবচেয়ে বড় সংবাদপত্রের নাম ফেসবুক, বড় রেডিওর নাম ফেসবুক, বড় টেলিভিশনের নামটিও ফেসবুক।
৩.
‘ডিক্লারেশন অব ইন্টারনেট ফ্রিডম’ সাক্ষরিত হয়েছিল ২০১২ সালে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ডানা বয়েড, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস, মজিলা ফাউন্ডেশনসহ কয়েকটি বৈশ্বিক নামকরা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি এতে সাক্ষর করেছিলেন। ওই ঘোষনাপত্রে ইন্টারনেটে কোনো সেন্সরশিপ নয়, নেটওয়ার্কে সর্বজনীন প্রবেশাধিকার, নতুন প্রযুক্তির নিরাপত্তা, ব্যক্তির গোপনীয়তার অধিকারসহ পাঁচটি মুলনীতি ঠিক করা হয়।
তাই অবাধ স্বাধীনতা মানে অবাধ স্বেচ্ছাচারিতা নয়, এ কথা মেনে নিয়েও বলতে হচ্ছে ইন্টারনেটের পরাধীনতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। রাষ্ট্রীয় এ অনাচার মানবাধিকারের পরিপন্িথ। সেন্সর যদি করতে হয়, তবে তা রাষ্ট্র নয়, সর্বশ্রেষ্ট জীব মানুষের বিবেচনার ওপরেই ছেড়ে দেওয়া হোক। ব্যক্তিই ঠিক করুক, তার পছন্দ-অপছন্দ।

কাজী আলিম-উজ-জামান: সাংবাদিক
ইমেইল: [email protected]
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×