somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাজী আলিম-উজ-জামানের পাঁচটি কবিতা

১১ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কাজী আলিম-উজ-জামান | ৮ জুন ২০১৫ ১১:৫৮ পূর্বাহ্ন

ভাঙা কাঠের সেতু

আমাদের পুরানবাজার যেতে
একটা কাঠের সেতু পার হতে হয়,
দুই পাশে মসৃণ মফস্বল সড়ক
তবে সেতুটা যেন চশমার গর্ত
কোথাও পাটাতন নেই,
লোহা উঠে নড়বড়ে।

গ্রামের মানুষ দ্রুতবেগে এসে
সেতুর কাছে থেমে যায়,
সন্তর্পণে পা ফেলে, হড়কালেই বিপদ
নিচে নদী যদিও খরস্রোতা নয়
শান্ত বালুর নদী,
তার পরও কাদামাটি মেখে আহত হওয়ার ঝুঁকি
এ দেশে হাসপাতালে চিকিৎসার যে দশা!

ঠিক তাই, ভাঙা এ সেতুর কাছে এসে
এক পা বাড়ানোর আগে মানুষ একবার ভাবে
সামনে ভাসে ফেলে আসা জীবনের ভুলত্র“টি
ভালো হোক, মন্দ হোক আরেকবার ভাবনা
কল্যাণের জন্য খানিকটা স্থিরতা।

এবার গিয়ে দেখি,
সেতুটি জোড়াতালির জামা পরেছে
হনহন ছুটছে মানবগাড়ি
সেতুটি এই জনপদের মানুষের
বিবেকের আয়না হয়ে ছিল,
আয়নাটি টুপ করে নদীতে পড়ে গেছে।
najib.jpg

যখন তোমার নামটি করতে যাব

যখন তোমার নামটি করতে যাব
অমনি টেবিলে পড়ে থাকা কলমটি হারিয়ে খুঁজতে থাকি
মুহূর্তেই কালি নিঃশেষ
হাতের কাছে আরেকটি কলম কোথায় পাই!
খালি খাতাটি হঠাৎ ফুরিয়ে একশেষ
আরেকটি কোথায় পাই!

হঠাৎ হাতের কাছে একটি দরখাস্ত
শব্দেরা চিঠি লিখেছে, হপ্তা খানেকের ছুটি চায়
মেঘের বাড়ি যাবে, সঙ্গে যাবে জোনাকপোকারা
কামিনী ফুলও বায়না ধরেছে, গয়না পরে সঙ্গে যাবে।

চোখ মেলতেই দেখি,
ফেলে আসা আয়নায় ঝাপসা কুয়াশা
অতল জলে হারিয়ে গেছে স্মৃতির বড়শি
অভিমান করে ধর্মঘটে গেছে অতীত দিনেরা।

তোমাকে নিয়ে ঢুকে পড়ি পরাবাস্তব জগতে
সেখানেও শিকড়ছাড়া কিছু ছাড়া ছাড়া কলমিলতা
ব্যাকটেরিয়া, মস, ফাঙাসে ভরা স্যাঁতসেঁতে সিঁড়ি
ধুলোময় সফেদাতলা।

নাই বা পেলাম শানবাঁধানো পুকুরঘাট
একটি ছনের ঘর, রক্তজবা বাগান কই?
যেখানে এসে বসবে বিকেলের রোদ!
আচ্ছা বলো তো, ভালোবাসায় এত বিপত্তি কেন?


ভেসে যাই

আমার কোনো আপডেট নেই
বই পড়ি আর আকাশের সাথে বিড়বিড় কথা বলি
আমার রাস্তায় আমি একা একা হাঁটি
চারদিক তেপান্তরের মাঠ, দু-একটি বসতবাটি
হ্যাট মাথায় গালফোলা শিশুরা
অবাক বিস্ময়ে দেখে আলো হাওয়া।

মটরশুঁটির খেতকে সঙ্গী করে গল্পের বই পড়ি
আর কুশীলবদের নিয়ে শূন্যে ভেসে যাই
মেঘ-কুয়াশা গলাগলি বসত করে
অদেখা পথ পেরিয়ে গাড়ি পৌঁছে যায় মেঘের বাড়ি

কুয়াশায় ভেজা নারকেল পাতায় সাজানো ফটক
ঠকঠক করতেই খিড়কি আলগা করেন এক সন্ন্যাসিনী
শাদা শাড়ি, লাঠি হাতে কুঁজো বুড়ি
উঠোন যেন বরই পাতার বিছানা।

ঘরের দাওয়ায় চেয়ার পেতে বসে গল্পের নায়িকা
আদা-জলে চায় খায়, ঘুরে ঘুরে দেখে
এরা একাই, কোনো প্রতিবেশী ঠাওর হয় না
দূরে হাতছানি দেয় জেগে থাকা চাঁদের পাহাড়।

বই শেষ হয়, চোখ ব্যথা করে
শেষ পাতা গড়াগড়ি খায় কচি ফসলের ডগায়।

একটু কাঁদতে পারি?

আকাশে অল্প মেঘ ছিল
সাদা, ফ্যাকাশে আলুথালু মেঘ
হঠাৎ মেঘের ইচ্ছে হলো,
ঝকমকে কালো ওড়না পরতে।
সাদা মেঘেরা কালো মেঘদের চিঠি লিখল,
‘প্রিয় কালো মেঘেরা, তোমরা কেমন আছো
অনেক দিন তোমাদের দেখি না।
প্লিজ বেড়াতে এসো।
এখানে হরতাল-অবরোধ নেই,
পেট্রলবোমা নেই, নির্ভয়ে চলে এসো।’

এক আকাশ ছেঁয়ে গেছে গভীর কালো মেঘে
এক বুকের ওপর চেপে আছে বোবা পাথর
বৃষ্টি ঝরে না, কান্না আসে না
অসময়ে বৃষ্টির মিনতি করি
বৃষ্টি আসুক, ভিজে যাক তৃষ্ণার্ত কাঁঠাল পাতা।
ছাদে নেড়ে দেওয়া রঙিন সুতির শাড়ি
দৌড়ে ছাদে আসা শহুরে বধূও ভিজে যাক চুলসমেত।

আমি কি একটু কাঁদতে পারি
হিজলতলায় বসে?
হিজলের গা বেয়ে নেমে আসা বৃষ্টিধারা
আর আমার অশ্র“কণার মধ্যে গাঢ় মিতালি যদি হয়,
যদি লবণাক্ততা কমে
যদি আরও একটু পলি মাটি আসে
যদি আরেকটু সবুজ হয় এই ধূলিবসন
যদি আমরা মানুষেরা আরেকটু ভালো হই।


বেলা বয়ে যায়

বিকেলের বাতাসে ভেসে আসে শোক সংবাদ
হঠাৎ থেমে হাতের কাজগুলো গুছিয়ে ফেলি
তবু অবশিষ্ট থাকে অনেক কিছু
ছেলের স্কুল, টিফিনবাটি, প্রিয় মানুষের মুখ
বাবার ভীষণ শ্বাসকষ্ট, মায়ের অসুখ।

ফাটা চৈত্রের গনগনে নিসাড় দুপুর
কবরের নীরবতায় গুঁতো মারে ঝলসানো রোদ
শুকনো, বজ্রাহত তালগাছ দাঁড়িয়ে থাকে
রসপান শেষ হলে সবাই স্বার্থপর
ইটখোলায় পোড়ে মাঝারি স্বাস্থ্যের খেজুরবৃক্ষ

নিরতিশয় মানুষ পাশ ফিরে শোয়
আগুনে পোড়ে বিআরটিসি বাস
পোড়া মবিলের গন্ধ বাতাসের কাঁধে
সওয়ার হয়ে কারখানায় বার্তা পাঠায়
বাজারঘাট বসে, নিমেষে খালি হয় দেশি জাত

পা উঁচু করে ঝিমায় নির্মাণাধীন অবকাঠামো
রাস্তায় ডাংগুলি খেলে অপুষ্ট শিশুরা
থেকে থেকে ঘেউ ঘেউ করে ক্ষুধার্ত সারমেয়
শাঁ শাঁ করে চলে যায় কাচঘেরা জিপ
রাস্তায় পড়ে থাকে দুটি নিথর দেহ।

পুকুরে পানি নেই, নদীতীর ফেটে চৌচির
চৈত্রের ভোরবেলা কিচিরমিচির
চারখানা খবরের কাগজ, এক মগ লাল চা
একটু একটু করে চুমুক…।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×