মনে হলো দেখতে দেখতে বছর ঘুরে গেলো। সেই সেদিন রোজা শুরু হলো, শেষ হয়ে " রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ
আমি বলছি আমার অনুভুতির কথা, এবং আমি দৃঢ়্ভাবে বিশ্বাস করি, আমি এখন যা বলবো, সেগুলো বলার জন্য সাধারন জ্ঞানই যথেষ্ট। এর জন্য ইসলামের ইতিহাস বা ধর্মীয় শাস্ত্রে পন্ডিত হবার প্রয়োজন হয় না। বয়স অনেক ছোট থাকতে রমজানের মাস শুরুর আগের জুম্মাবারে খুতবা শুরুর আগে সম্মানিত ইমাম সাহেব নিজেই প্রশ্ন করে প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন " ১১ মাসের সব খারাপ কাজ বন্ধের জন্য রমজান মাসের আহ্বানে সাড়া দিতে গেলে হঠাত ব্রেক কষে দাঁড়ানো গাড়ী যেমন কিছুটা স্কিড করে যায়, তেমন হতেই পারে, কিন্তু ব্রেক করা টা বাধ্যতামুলক"। এখন অর্বাচীন অথবা নবীন লেখক হিসেবে আমার বিবেচনায় আমি মনে করি এই স্কিড করার পরিমান খুব বেশী হলে তাতে দুর্ঘটনা ঘটার সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এ ধরনের গাড়ী রাস্তায় চালানোর উপযুক্ত তো নয়ই, বরং একে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওয়ার্কশপে নেয়া সকলের জন্য উত্তম। এবিষয়ে আশা করি লেখার উপসংহারে আবার দৃষ্টিপাত করবো।
যাক, যা বলছিলাম, প্রতিবার রোজার সময় কিছু কিছু বিষয় খুব দৃষ্টিকটু লাগে। এজন্য আজ "আওয়াজ" এ এ নিয়ে শাউট করেছিলাম। প্রতিক্রিয়া বহুমূখী। এ জন্যই ব্লগে এলাম, ১৪০ বর্নে অনেক কিছুই প্রকাশ করা যায় না। নিন্দুকেরা যদি বলেন - "এতো অসংযমী কেন তুমি
গত কয়েক বছর যাবত দিন শেষের আলো ও অফিস ছুটির সময়ের ব্যবধান ছিলো কমবেশী ১১০-১২০ মিনিট বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার চেয়ে কিছুটা বেশী। এসময়ের ব্যবধানে সাধারনভাবে বাড়িতে পৌছা গেলেও ইফতার কেনার জন্য অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হয় বিধায় এ সময়কাল যথেষ্ট নয় বলে আমরা তাড়াহুড়ো করি, এটা হয়তো অনেকেই যুক্তি দেখাবেন। আমি যৌক্তিক কথা মানবো না এমন ভাব নিয়ে এ লেখা লেখতে ও বসি নি। এ যুক্তি টা মেনে নিলাম। কিন্তু অফিস ছুটি শুরুর আগেই বিকেল ৩ টা থেকে যে তাড়াহুড়ো টা হয়, এবং সে সময় যে সংযমহীনতার পরিচয় দেখি সেটা মেনে নিতে তো মন চায় না। অনেকে ই বলবেন - তোমার মন কি চায় সেটা বিবেচনার বিষয় নয়, বিবেচ্য বিষয় হলো ইফতার ও রমজানের অংশ, সুতরাং বাড়ির সবাই কে নিয়ে একসাথে ইফতার করাটা জরুরী। রাজার পুকুরে দুধ ভরার গল্পটা মনে পড়ে যাচ্ছে - আমি ভাবছি সবাই তো দুধ ঢালবে, আমি একা না ঢাললে ধরা পড়ার সম্ভাবনা নাই, কিন্তু "আমি" র সংখ্যা যখন "সবাই" রাজার পুকুর তখন শুষ্ক গর্ত মাত্র। তেমনি শুধু আমাকেই পরিবারের সাথে ইফতার করতে হবে এটা না ভেবে যদি ভাবতাম - আমাদের সবাইকে যার যার পরিবারের সাথে বসে ইফতার করতে হবে তাহলে বোধহয় সবাই সেটা পারতাম। এখন যা হয় সেটা হলো কেউ মাত্র কোনভাবে পারি, আর বাকি সবাই হাফাতে হাফাতে রাস্তায় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা/সংঘটন ঘটাতে ঘটাতে পারি।
আমরা যারা ব্যক্তিগত যানবাহনে আসা যাওয়া করি তারা/তাদের চালকেরা যে রকম, ঠিক তেমনি হলেন পাবলিক যানবাহনের চালকেরা। কেউ কাউকে ছাড়বেন না
সমস্যা হলো এই জিনিস টা এতো খাই, তার পরেও আমাদের শিক্ষা হয় না। কারন ধর্মকে আমরা ধারন করি না, জীবনের সাথে একীভুত করি না, এটাকে অলংকার হিসেবে প্রদর্শন করি শুধু। ধর্মকে জীবন চলার পথ হিসেবে মানি না, ক্ষমার একটি উপায়, পাওয়ার একটি অবলম্বন হিসেবে দেখি শুধু। তাই যদি না হবে, তবে শব-এ-বরাত এর (বৃহস্পতিবারের) রাতে কেন রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম থাকবে না, কিন্তু অন্য যে কোন বৃহস্পতিবারের রাতে কেন উপচে পড়া ভীড় থাকবে রাস্তায়। কেন এই বৃহস্পতিবারেই শুধু উপচে পড়া ভীড় থাকবে মসজিদ গুলোতে, অন্য বৃহস্পতিবার গুলো কেন হবে - ওয়াও, উইক এন্ড নাইটস।
পড়তে পড়তে, আমার মনে এতো প্রশ্ন, কিন্তু আমি কতটুকু মানি, এ নিয়ে আপনাদের মনে বিরক্তিমুলক জিজ্ঞাসা এলো বলে। আগের লেখা গুলোতে ও বলেছি, আবার ও বলছি, আমার উদ্দেশ্য কাউকে অঙ্গুলীনির্দেশ নয়, বরং আত্মোপলব্ধির প্রয়াস নেয়া মাত্র। নিজেকে সাবধান করা, মন, মন রে, তুই যে পথে চলছিস সেটা কাউকে দেখানোর জন্য চলিস না, সবার ভালো যে পথে আছে, সে পথে চল, তার পরেও ছিটকে পড়ি সে পথ থেকে। এবং এ লেখার মধ্য দিয়ে আবারো নিজেকে মনে করিয়ে দেয়া, ফিরে আয় সোজা পথে। আসলে সংযমের জন্য শুধু রোজার মাস নয়, সব সময়ের ই একটি দাবী থাকে। কিন্তু আমরা তখন আর মানুষ থাকি না, সেই কাকের মতো আচরন করি, যার অভ্যাস চোখ বন্ধ করে রাখা। আমি বাড়ি ফিরে সবার সাথে ইফতার করবো সেটা যেমন কারো কারো মতে রোজার অংশ, তেমনি আমার অর্বাচীন মতে - আমার মতো সবাই যার যার ঘরে ফিরে পরিবারের সবাইকে সাথে নিয়ে ইফতার করুক সেটাই বোধ হয় রোজার একটি অংশ।
রমজানের মাসে ভ্রমন, যানবাহন শৃংখলা কেবল মাত্র সংযমের বিষয় নয়, কিন্তু এটা সবসময় দেখি এবং রোজার সময় খুব প্রকটভাবে দেখি বলেই বোধ হয় মনে বেশী দাগ ফেলেছে। সারাদিন উপোস থাকা যে রকম জরুরী, ঠিক সে রকম জরুরী মনকে সংযত রাখা। অধীনস্থকে কটু ভাষা প্রয়োগে অপদস্থ করা কিংবা উপরস্থকে মিথ্যা প্রশংসা /স্তুতিতে বন্যার্ত দের দলে সামিল করা সংযমের পরিচয় নয় নিশ্চিতভাবে। বাংলা ভাষায় কঠিন একটা শব্দ আছে - অন্তর্যামী, যার অর্থ আমরা অনেকেই বুঝি কিন্তু বোঝার চেষ্টা করি না। কথাবার্তা বা আচার আচরনের মধ্যে মনোবিজ্ঞানীরা ব্যক্তি মনের অনেক কিছুই ধরে ফেলেন, কিন্তু অন্তর্যামী যে কথাবার্তা বা আচার আচরন ছাড়াই সবকিছুই ধরে ফেলেন, তার ডিজিটাল প্রিন্ট আউট ছাড়া আমরা কি সেটা বিশ্বাস করার জন্য প্রস্তুত?
এরকম অনেক এলোমেলো ভাবনা মনে আসে, মনের কি দোষ? ১১ মাসে মন যা অনুশীলন করে না ১ মাসে তা কি আয়ত্ব করতে পারবে? তার ওপর যদি মন চায়, এই অনুশীলন করতে করতে ই ১ টা মাস পার হয়ে যাক, তাহলে তা অন্তর্যামী ছাড়া আর কে টের পাবেন? মন কেন চায় না, প্রতিটি রাত ই হোক শব এ বরাতের রাত, প্রতিটি রাতে আমার ভাগ্যলিপি লেখা হোক নুতন করে, কেন ১ রাতের লেখা ই থাকবে? আমরা কি সত্যিই জানি, এ লেখা অমোচনীয় কালিতে লেখা কিনা, এ লেখা অক্ষয় কাগজে লেখা কিনা? গানটা যখন শুনি তখন কিন্তু খুব ভালো লাগে - "হুম্মম্মম্মম্ম, যদি কাগজে লেখো নাম, কাগজ ছিড়ে যাবে, পাথরে লেখো নাম, পাথর ক্ষয়ে যাবে, হৃদয় এ লেখো নাম, সে নাম রয়ে যাবে", এ শুধু শোনা পর্যন্তই, অনুভবে রাখি না। যদি রাখতাম তাহলে সংযমের বিষয় টাকে অবশ্যই হৃদয় এ লিখে রাখতাম, সেটা থেকে যেতো অক্ষয়। মনে পড়ে যেতো, অন্তর্যামীর কাছে শুধু একরাতের নয়, প্রতিদিনের চাওয়া টাই আসল অক্ষয়।
অনেক বেশী বলে ফেলেছি মনে করলে আপনাদের নিরুৎসাহিত করবো, কারন সংযম নিয়ে আরো কিছু দুঃখবোধ এখনো শান্ত শিষ্ট লেজ বিশিষ্টর মতো অবশিষ্ট আছে, খুব শীগগির ই আসছি ফিরে, যদি না আপত্তিকর লেখার দায়ে পড়ি। সবাই ভালো থাকবেন, বিরক্ত হলেও অনুভুতি জানানো কে আমার দায়ীত্ব হিসেবে নিয়েছি, ইনশাল্লাহ্ পিছু হটবো না।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০০৯ ভোর ৫:০৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





