somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আর এক সপ্তাহ বাকি : হুমায়ুন আজাদ এর ১৮তম প্রয়াণবার্ষিকী

০৫ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ৮:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
কাজী হাসান


আগস্ট বাঙালি জাতির জন্য এক বেদনার মাস, বলা যায় চিরকালীন শোকের মাস। ১৯৭৫ সালে এই মাসের ১৫ তারিখে আমরা সপরিবারে হারিয়েছি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের এক জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা হয়। যে হামলায় ২৪ জন নিহত হন এবং তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাসহ প্রায় ৩০০ লোক আহত হন।

একই বছর ১২ আগস্ট জার্মানীতে মারা যান বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠতম গবেষক, প্রথাবিরোধী সাহিত্যিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয় শিক্ষক ড. হুমায়ুন আজাদ। ওই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি তিনি বাংলা একাডেমির অমর একুশে গ্রন্থমেলায় জঙ্গী হামলার শিকার হয়ে প্রায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসেন।

হুমায়ুন আজাদ স্যার মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার রাড়িখাল গ্রামের কৃতি সন্তান। ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল তিনি ওই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একাধারে একজন কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, সমালোচক, গবেষক, ভাষাবিজ্ঞানী ও শিক্ষক। স্যারের সঙ্গে আমার পরিচয় ও প্রথম দেখা ১৯৯৬ সালের মে মাসে। সেদিন আমাদের ‘মাসিক বিক্রমপুর’ পত্রিকার জন্য তাঁর একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম আমি। এরপর বহুবার তাঁর মুখোমুখি হয়েছি আমি। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছি অনেক পত্রিকার জন্য। আমার অনুরোধে স্যার ‘আমাদের বিক্রমপুর’ নামে একটি পত্রিকায় অসাধারণ একটি স্মৃতিচারণমূলক লেখা লিখেছিলেন ১৯৯৭ সালে। ‘আমাদের বিক্রমপুর’ পত্রিকার সেই সংখ্যাটির মোড়ক উন্মোচনও করেছিলেন তিনি।

উপন্যাস, কাব্যগ্রন্থ, কিশোর সাহিত্য, সমালোচনা, অর্থবিজ্ঞান, ভাষাবিজ্ঞান, গবেষেণা ইত্যাদি বিষয়ে প্রায় ষাটের অধিক বই রচনা করেছেন তিনি। যেগুলোর বেশিরভাগই তাঁর জীবদ্দশায় এবং কয়েকটি মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়েছে। স্যারের সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয় ২০০৪ সালের ৬ আগস্ট শুক্রবার সকালে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁর ১৪ ই ফুলার রোডের বাসায়। সেদিন স্যারের বাসায় স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি ভিড় ছিলো। জানতে চাইলে স্যার বলেন পরের দিন তিনি দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন, তাই নিকটজনেরা দেখা করতে এসেছেন। স্যারকে আমার সেদিনই শেষ দেখা! স্যার অনেকটা নীরবেই দেশ ছেড়েছিলেন।

২০০৪ সালের ৭ আগস্ট ড. হুমায়ুন আজাদ স্যার জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের ওপর গবেষণা বৃত্তি নিয়ে জার্মানি যান। দুঃখজনক হলেও সত্য এক সপ্তাহ না পেরোনের আগেই ১২ আগস্ট বিদেশ বিভূঁইয়ে স্যারের অকাল মৃত্যু হয়। আমাদের প্রিয় স্যার, অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ চিরদিনের তরে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন রাড়িখালে, তাঁর পৈতৃক বাড়ির তরুর শীতল ছায়ায়।

আগামী শুক্রবার ১২ আগস্ট স্যারের ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। আমরা প্রতি বছর প্রয়াণবার্ষিকীতে সাহিত্যের এই মহীরূহকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে আমাদের সংগঠন 'সোনারং তরুছায়া'র পক্ষ থেকে বৃক্ষপ্রেমী শিক্ষার্থীদের গাছের চারা উপহার দিই। তাঁর ওপর আলোচনা করি নতুন প্রজন্মের জন্য। এতে স্যারের জ্যেষ্ঠ সন্তান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কর্মকর্তা, লেখক মৌলি আজাদ কয়েক বছর ধরে পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছেন। তিনি গত বছর আমাদের 'সোনারং তরুছায়া'র কম্পাউন্ডে সপরিবারে বেড়িয়েও গেছেন। তখন আমাদের 'সোনারং তরুছায়া পাঠাগার' এ অনেকগুলো বই উপহার দিয়েছিলেন।


যখন আমি অষ্টম শ্রেণির ছাত্র তখন হুমায়ুন আজাদ স্যারের অসম্ভব হৃদয়গ্রাহী স্মৃতিচারণমূলক বই ‘ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না’ পড়ে আমি প্রথম মৌলি আজাদকে চিনি। অত্যন্ত প্রাঞ্জল আদুরে ভাষায় ও মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুরের চির চেনা আঞ্চলিক শব্দে স্যার মৌলি আজাদকে চিঠি লেখার ঢঙে বইটি লিখেছিলেন। বইটির বেদনাদায়ক ঘটনাক্রম মনে পড়লে এখনও আমার চোখে জল চলে আসে!
আমাদের ‘সোনারং তরুছায়া’র হিজল গাছটি এবারের প্রয়াণবার্ষিকী প্রিয় হুমায়ুন আজাদ স্যারকে উৎসর্গ করবো আমরা।

[email protected]
www.facebook.com/kazihasan0
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ৮:৩৭
১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×