somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নীলমণিলতা : বসন্তের ফুল ফুটেছে শরতে

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ৮:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কাজী হাসান

আমাদের ঋতু বৈচিত্র্যে এখন নানারকম পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এবারের বিগত বর্ষায় তেমন বৃষ্টিপাত কিন্তু হয় নি। তবে দশদিন আগে এই সেপ্টেম্বরে টানা তিনদিন মুষলধারায় যে বৃষ্টি হলো, তা বর্ষার বৃষ্টিকেও হার মানিয়েছে। আবার বিশেষজ্ঞ মহলের অনেকেই আশঙ্কা করছেন, শীত এবার তার স্বরূপে আসবে কিনা। দেরি হবে না স্বাভাবিক সময়ের আগে আসবে! গত কয়েক বছর ধরে এদেশের মানুষ শৈত্যপ্রবাহের মুখোমুখি হয়নি, হয়নি সে সময়ের অনাকাঙ্খিত হিমশীতল বৃষ্টিধারারও।

আমাদের ‘সোনারং তরুছায়া পাঠাগার’ এর সামনের গাছে অবাক করে দিয়ে বসন্তের অপূর্ব ফুল ‘নীলমণিলতা’ ফুটে যাচ্ছে এই শরতেও। যে ফুল সাধারণতঃ বছরে একবার ফোটে, সেই ফুল এই নিয়ে আমাদের এখানে ফুটেছে চার বার। প্রিয় নীলমণিলতা ফুলের সৌন্দর্যে যে কেউ মুগ্ধ হবেন! নাম না জানা বিদেশী জাতের এই ফুল গাছের একটি চারা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত শান্তি নিকেতনের ‘উত্তরায়ণ’ এর এক কোণে তাঁর প্রয়াত বন্ধু পিয়র্সন রোপণ করেছিলেন। অনেকদিন পরে এর ফুল ফোটে। এর অপূর্ব মনোহর বর্ণচ্ছটায় মুগ্ধ কবিগুরু ওই ফুলের নামকরণ করেছিলেন ‘নীলমণিলতা’। সেই ফুল নিয়ে তিনি কবিতা লিখেছিলেন। সেই কবিতার অংশবিশেষ হচ্ছে~

ফাল্গুন মাধুরী তার চরণের মঞ্জীরে মঞ্জীরে
নীলমণিমঞ্জরির গুঞ্জন বাজায়ে দিল কি রে।
আকাশ যে মৌনভার
বহিতে পারে না আর,
নীলিমাবন্যায় শূন্যে উচ্ছলে অনন্ত ব্যাকুলতা,
তারি ধারা পুষ্পপাত্রে ভরি নিল নীলমণিলতা।...

মূলতঃ মধ্য আমেরিকা থেকে আসা নীলমণিলতা ফুল এ দেশের আবহাওয়ায় টিকে থাকার উপযোগী। গমের শীষের আদলের ঈষৎ বেগুনী আভার এই ফুলের কলি দেখে কোনওভাবেই অনুমান করা যায় না কি অপরূপা ফুল ওই কলি থেকে ফুটে বেরোবে! ‘নীলমণিলতা’ নাম হলেও এর রঙ পুরোপুরি নীল নয়। গাঢ় বেগুনী রঙের ফুলটির পাপড়িগুলো তিন চারদিনে ক্রমশ হালকা বেগুনী রঙ ধারণ করে। ঝরে পড়ার আগে এর দুই স্তরের পাপড়িগুলো হয় হালকা শ্যাওলা রঙের। পাতলা পাপড়িগুলো যখন বাতাসের তোড়ে আশপাশে ঝরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়, এক অপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয় তখন! সেই পাপড়িগুলো হাতে তুলে নিলে যে কোনও পুষ্পপ্রেমীর মনে অপূর্ব ভালো লাগার সঞ্চার ঘটবে।

নীলমনিলতা ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম : Petrea volubilis, (ইংরেজিতে বলে : purple wreath, queen's wreath, sandpaper vine, এবং nilmani)। এটি হচ্ছে Verbenaceae পরিবারের Petrea’র একটি লতানো গুল্ম।

আমাদের নীলমণিলতা বৃত্তান্ত : সিরাজগঞ্জের স্কুল শিক্ষিকা বৃক্ষপ্রেমী মাহমুদা রহমান আপা অনলাইনে গাছের চারা বিপণন করেন। আমাদের এখানে নির্ভরযোগ্য কোনও কুরিয়ার সার্ভিস না থাকায় আমাদের শুভানুধ্যায়ী কবি সুলতানা শাহরিয়া পিউ আপার ঢাকার বাসার ঠিকানা দিয়েছিলাম তাঁকে। তার আরেকটি কারণ পিউ আপা সহসা আমাদের ‘সোনারং তরুছায়া’য় আসবেন বলে কথা ছিলো। আর আসলে আমার নামে পাঠানো গাছটি তিনি নিয়েও আসতে পারবেন। বৃক্ষপ্রেমী মাহমুদা রহমান আপার পাঠানো নীলমণিলতা গাছের চারা গত বছর ২১ জুন গ্রহণ করেন পিউ আপা। পিউ আপা ‘সোনারং তরুছায়া’য় আসেন ২৮ আগস্ট। প্রায় দু’মাস বেড়ানোকাল শেষে সেদিন পরিব্রাজক ‘নীলমণিলতা’ গাছের চারাটি বুঝে নিই আপার কাছ থেকে।

কিছুদিন পার করে নীলমণিলতা ফুল গাছের চারাটি ২৩ সেপ্টেম্বর আমাদের নবনির্মিত ‘সোনারং তরুছায়া পাঠাগার’ এর সম্মুখ প্রাঙ্গণে আমাদের প্রিয় শুভার্থী বৃক্ষপ্রেমী স্থপতি নভেরা গওহর আপার নামে উৎসর্গ করে রোপণ করাই। আজ ‘প্রিয় নীলমণিলতা’ গাছটি রোপণের এক বছর পূর্ণ হলো। যাই হোক তারপর আমাদের সেবা য‌ত্নে চারাটি দ্রুতগতিতে বড় হতে থাকে। প্রিয় নীলমণিলতা গাছে প্রথম ফুল ফোটে রোপণের প্রায় ছ’মাস পরে গত ১ মার্চ। দু’সপ্তাহ একাধারে ফুটে গাছটি বিরতি নেয়। গত ৭ এপ্রিল থেকে আবার আসা নতুন কলিতে দ্বিতীয় ধাপে ফুল ফুটতে থাকে সপ্তাহখানেক ধরে। ৬ মে আবার কলি চোখে পড়ে আমার। পরদিন থেকে তৃতীয় ধাপেও ফুটতে থাকে প্রিয় নীলমণিলতা ফুল। গত ১০ সেপ্টেম্বর সকালে সদ্য ফোটা ফুলে হঠাৎ চোখ আটকে যায় আমার। বাহ্ এক বছরে চতুর্থবারের মতো ফুটলো মনোহর নীলমণিলতা ফুল! এরপর ফুটেই চলেছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেয়া নামের এই ফুলের সৌন্দর্য যে কি মনকাড়া দৃষ্টিনন্দন, স্বচোক্ষে না দেখলে তা অনুধাবন করা যাবে না!

প্রিয়দর্শিনী নীলমণিলতার রূপে আমরা সবাই মুগ্ধ!

ছবি ও লেখা কাজী হাসান


তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ৮:২৭
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×