somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"বর্তমানে উৎপাদিত প্লাস্টিক দিয়ে রেপিং করা যাবে সারা বিশ্ব"

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বর্তমানে,বিশ্বে যে পরিমান প্লাস্টিক উৎপাদন হয়েছে তা দিয়ে অনায়াশে সমগ্র বিশ্বকে খুব সহজেই রেপিং করা যাবে ...... সাম্প্রতিক এক গবেষনায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
মানুষের এ অবিবেচক আচরন ভবিষ্যত প্রজন্মকে আরো ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।আমাদের এই পৃথিবী এমনিতেই নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে,উপরন্তু মানব সৃষ্ট এইসব ধ্বংসাত্বক কার্যক্রম সেইসব ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।এই কারনেই ক্লাইমেট চেঞ্জ ,ক্লাইমেট রিফিউজি সাড়া পৃথিবীব্যপি খুবি পরিচিতি টার্ম।দুর্যোগে আক্ক্রান্ত হবার ঝুঁকিতে বাংলাদেশ রয়েছে প্রথম সারিতেই।তাই প্লাস্টিক ব্যবহারে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। আম্রা যদি এখনই এইসব ঝুঁকি মোকাবেলায় কার্যকরী ভুমিকা না রাখি,তাইলে পৃথিবীর সাথে আমাদের এই প্রিয় মাতৃভুমিও ধংসের মধে পড়বে,পড়েছেও।
গবেষনাটি প্রকাশ করেছে Anthropocene নামের একটি আন্তর্জাতিক জর্নাল।গবেষনায় দেখা যায়,পৃথিবীর এমন কোন প্রান্ত নাই যেখানে এই প্লাস্টিক দ্রব্যর দুষন হয় নাই।আমাদের বাংলাদেশ চারিপাশ তথা পরিবেশের কথা চিন্তা করলেই বিষয়টা খুব সহজেই অনুধাবন করা যায়।বর্তমানে অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় প্লাস্টিকের ব্যবহার অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে।আমাদের বাসা বাড়ির প্রতিটি রুমেই এখন প্লাস্টিকের তৈরি নানা জিনিষপত্র শোভা বর্ধন করে ।টিবির বিজ্ঞাপনের দিকে তাকালেও প্লাস্টিক পন্যর আধিক্য অতিমাত্রায় চোখে পড়ে।আর এই সব পন্য ব্যবহারের পর তা আমাদের চারপাশেই ফেলি।পানির ঝার,প্লাস্টিকের ব্যগ,বাটি,অব্যবহ্রত সিডি,ডিভিডি,নাইলনের দড়ি,কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ,থালা বাসন এমন কি কিছু ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের মাইক্রো উপাদান সহ নানা পন্যর মাধ্যমেই আমরা আমাদের চারপাশকে দূষিত করছি,যা আমাদের জীবন তথা সামগ্রিক ব্যবস্থাকেই বিপদসংকুল করে তুলছে।


ইংল্যান্ড এর Leicester University -র Professor Jan Zalasiewicz ছিলেন এই গবেষনা কর্মটির প্রধান।তিনি বলেন," আমরা জানি বর্তমানে মানুষ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাবে প্লাস্টিক পন্য ব্যবহার করে থাকে এবং গত ৭০ বছরে তা নানা ভাবে প্রয়োজনের তাগিদেই বৃদ্ধি পেয়েছে।মজার বিষয় হলো,এই প্লাস্টিকের ব্যবহার-পরবর্তী সামগ্রিক প্রভাব এবং তার গভীরতা যে কি মারাত্বক,সে সম্পর্কে আমাদের আসলেই কোন ধারনা নাই।এই পন্যগুলো যে কেবল সাগড় কিংবা নদীতে ভেসে আছে তা নয়,মহাসমুদ্রের গভীর তলদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে এই সর্বনাশা প্লাস্টিক অর্থাৎ আমাদের এই ধরা যে তার স্বাভাবিক অবস্থায় নাই,দিনে দিনে তার দশা যে খারাপের দিকেই ধাবিত হচ্ছে,তা তারই স্পষ্ট নিদর্শন বললে অত্যুক্তি হবে না।যার পরিনাম হবে আসলেই ভয়াভহ।
গবেষনায় সবচেয়ে আকর্ষনীয় ব্যপার হল,গবেষকগন এই গবেষনার মাধ্যমে প্লাস্টিক পন্যকে নতুন ভুতাত্ত্বিক যুগের নির্ধারক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।১২০০০ বছর আগে Holocene যুগের সুচনা হয়।বর্তমানে প্লাস্টিক এর এই অতিমাত্রায় ব্যবহারের কারনে Holocene যুগের সমাপ্তি হবার ঘন্টা বাজছে বলে অনেকে মন্তব্য করেন।নতুন যুগের সুচনা হচ্ছে,যাকে বিজ্ঞানিরা Anthropocene নামে অবিহিত করেছেন।অর্থাত প্লাস্টিককে Anthropocene যুগের ইন্ট্রোডিউসার তথা সুচনাকারী হিসেবে বর্তমানে বিভিন্ন সভা সমাবেশে তর্ক বিতর্ক শুরু হয়েছে।


প্রধান গবেষক Professor Jan Zalasiewicz আরো বলেন,এই প্লাস্টিক পন্য এমন কিছু ক্ষতি সাধন করছে যা আমাদের একেবারেই চিন্তার বাইরে।এতে তিনি সমুদ্রের মাছের উদাহরন টেনে আনেন।বর্তমানে নদনদীতে যে মাছ পাওয়া যায়,তার একটা উল্লেকযোগ্য অংশই প্লাস্টিক।মৎস্য এবং অন্যান্য জলজ প্রানী এই প্লাস্টিককে তাদের খাদ্য মনে করে খেয়ে থাকে।উপকুলবর্তী পাখী তার ছানাকে নানা প্রকার প্লাস্টিক দ্রব্য খাওয়াচ্ছে।এতে পাখি এবং পাখির বাচ্ছা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং পরিনামে আমাদের জীববৈচিত্রে আঘাত আসছে।প্লাস্টিক খেয়ে পাখ-পাখালি এবং পশুপাখী এই পৃথিবীর উপরিভাগে মল ত্যগ করছে যা প্লাস্টিক বই কিছুই নয়।যা ধীরে ধীরে সমগ্র পৃথিবীর উপরিভাগে প্লাস্টিকের একটি নতুন আস্তরন তৈরি করছে।
বর্তমানে প্রতিবছর বার্ষিক ৩০০ মেট্রিক টন প্লাস্টিক উৎপাদন হয়। Professor Jan Zalasiewicz উল্লেখ করেন,১৯৫০ সাল পর্যন্ত আসলেই তেমন কোন প্লাস্টিক পন্য ছিল না কিন্তু বর্তমানে তা ভয়াভহ আকার ধারন করেছে।এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ,বর্তমানে বিশ্বে বসবাসকারী ৭০০ কোটি মানুষের ওজন আর বর্তমানে বার্ষিক উৎপাদিত প্লাস্টিক এর পরিমান প্রায় সমান।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ বিলিয়ন টন প্লাস্টিক দ্রব্য তৈরি হয়েছে যা এই শতাব্দী শেষ নাগাদ ৩০ বিলিয়নে পৈছাবে।সহজেয় অনুমেয়,কি ঘটতে যাচ্ছে, যা অবশ্যই নিয়ন্ত্রন করতে হবে ।
২০১৪ সালে এক গবেষনায় দেখা গেছে,উল্লেখযোগ্য পরিমানের প্লাস্টিকের উপাদান উত্তর মেরু তথা আর্কটিক অঞ্চলে স্তরাকারে পাওয়া গেছে,যা প্রশান্ত মহাসাগর থেকে বয়ে এসে জমা হয়েছে বলে অনুমান করা হয়।মেরু অঞ্চলকে সাধারণত Pristine Zone তথা অদুষিত অঞ্চল বলে মনে করা হয়,এখানেও দূষন ঘটিয়েছে এই প্লাস্টিক।
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যপার হল,এটা ধ্বংশ হয় না।হলেও তা খুবি ধীরে ধীরে।যা মানব জাতির জন্য এক সুদুরপ্রসারী দূর্ভোগের কারন হিসেবে অবির্ভূত হয়েছে। আগেই উল্লেখ করেছিলাম ,বাংলাদেশ দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ঝুকিপুর্ন দেশগুলোর মধ্যে একটি,তাই যত তাড়াতারি সম্ভব,তা মোকাবেলা করার জন্য আশু প্রতিকার গ্রহন করা অতীব জরুরি।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:২৬
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×