ধর্মে বিশ্বাসী মানুষ মাত্রই এইম ইন ডেড হচ্ছে নরক কে পাস কাটিয়ে স্বর্গে পৌছে যাওয়া । যেখানে তার জন্য অপেক্ষা করছে সুদৃশ্য বাগান যার নিচ দিয়ে প্রবহমান সুশীতল জলধারা, ফুল আর ফলে সুশোভিত গাছ , মদিরার পাত্র হাতে দণ্ডায়মান আয়ত নয়না অপ্সরা আর মৃত্যুহীন এক অনন্ত জীবন । পরকালের এ জীবন পেতে হলে প্রধানতম শর্ত হছে পুণ্য করতে হবে । তার বিধান ঈশ্বর নিজেই নির্ধারণ করে দিয়েছেন ব্যক্তি বিশেষের কাছে তাঁর বানী প্রেরণের মাধ্যমে আবার কোন কোন ধর্মে ঈশ্বর স্বয়ং অবতীর্ণ হয়েছেন মর্তে । ঈশ্বরের এইসব বিধি বিধান পালনেই অর্জিত হবে পুণ্য খণ্ডিত হবে পাপ ফলে মিলবে স্বর্গ । কিন্তু যারা কোন দিন পাপ করেনি তেমন মানুষদের স্বর্গ গমনের একটি চমৎকার কাহিনি রয়েছে হিন্দু পুরাণে ।
তখন সত্য যুগের আরম্ভ । সবে মানুষের সৃষ্টি হয়েছে , সবাই তখন সাধু ; সত্য যুগতো বনে কুঠির বেঁধে সব থাকেন । ফল-মুলে জীবন ধারণ চলে, ভগবানের নাম করেন , আর পরমানন্দে দিন কাটে । মা লক্ষ্মী তখন বৈকুন্ঠে, অন্নপূর্ণা কৈলাসে, মানে সোনা-রুপা এমন কি অন্নের পর্যন্ত প্রচলন হয় নাই সংসারে । এই ভাবে এক পুরুষ কেটে গেলো । তখন অকাল মৃত্যু ছিলনা , কাজেই হাজার বছর পরে এক সঙ্গে এক পুরুষের মৃত্যুর সময় হয়ে এলো । মানুষেরা ঠিক করলেন - চল আমরা সশরীরে স্বর্গে যাব । যেমন সংকল্প তেমনি কাজ । বেরিয়ে পড়ল সব।
বদরিকা আশ্রম পার হয়ে হিমালয়ের পথে পিঁপড়ের সারির মত মানুষ চলতে লাগলো । ওদিকে স্বর্গদ্বারে দ্বারী ছিল, সে দেখতে পেল, লক্ষ লক্ষ মানুষ কলরব করতে করতে সে দিকে ছুটে আসছে । সে ভয়ে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেল দেব-রাজ ইন্দ্রের কাছে - দেবরাজ মহা বিপদ উপস্থিত । কিসের বিপদ হে ? লক্ষ লক্ষ কারা স্বর্গের দিকে চলে আসছে পিঁপড়ের সারির মত , বোধ হয় দৈত্য-সৈন্য ।
দৈত্য-সৈন্য বল কি ? সঙ্গে সঙ্গে সাজ সাজ রব পড়ে গেলো । এমন সময় এলেন দেবর্ষি নারদ । বললেন দৈত্য নয় দেব-রাজ এরা মানুষ । তোমাদের অস্ত্রে ওদের কিছুই হবে না কারণ পাপ তো তাদের দেহে নাই , সুতরাং দেব-অস্ত্র অচল । দিব্যস্ত্র ফুলের মালা হয়ে যাবে তাদের গায়ে ঠেকে । তবে উপায় ? এত মানুষ যদি সশরীরে এখানে আসে তবে ? ইন্দ্র আর কথা বলতে পারলো না । তখন সবায় হয়তো দাবি করে বসবে এই সিংহাসন । শেষে বললেন চল নারায়ণের কাছে যাই । নারায়ণ শুনে হাসলেন , আচ্ছা চল দেখি । বলেই প্রথমেই পাঠালেন মা অন্নপূর্ণা কে । অন্নপূর্ণা এসে পথে এক বিশাল পুরী নির্মাণ করে ফেললেন , ভান্ডার পরিপূর্ণ করে রাখলেন এক-অন্ন পঞ্চাশ ব্যঞ্জনে । তারপর মানুষের দল সেখানে আসা মাত্র তাদের বললেন পথশ্রমে বড়ই ক্লান্ত তোমরা, আজকের মত তোমরা আমার আতিথ্য গ্রহণ কর । মানুষেরা পরস্পর মুখের দিকে চাইলো, রান্নার সুগন্ধে সকলেই মোহিত হয়ে গেলো । দলের কতক লোক কিন্তু মোহ কাটিয়ে বলল--স্বর্গের পথে বিশ্রাম করতে নাই । তারা এগিয়ে গেলো আর যারা থাকলো তারা অন্ন-ব্যঞ্জন খেয়ে পেট ফুলিয়ে সেখানেই শুয়ে পড়লো । বললে মা আমরা এখানেই যদি থাকি, রোজ এমনি খতে দেবে তো ? মা বললেন নিশ্চয় । তারা থেকে গেলো সেখানেই ।
যারা থামেনি, তারা চলল এগিয়ে । নারায়ণ তখন পাঠিয়ে দিলেন লক্ষ্মীকে । লক্ষ্মীর পুরী-- সোনার পুরী, সোনার পথ, সোনার ঘাট, সোনার ধুলো পুরীতে । দেখে মানুষের চোখ ধেধে গেল । মা বললেন এসব তোমাদের জন্য বাবা । এসো এসো পুরীতে প্রবেশ কর । এক দল প্রবেশ করলো । পথে আরও এক পুরী তখন নির্মাণ হয়ে আছে । ফুলের বাগান চারিদিকে , কোকিল ডাকছে , ভুবন ভুলানো গান শোনা যাচ্ছে -- আর এক অপূর্ব সুগন্ধ ভেসে আসছে । দরজায় দাঁড়িয়ে আছে অপ্সরার দল , এক হাতে তাদের অপরূপ ফুলের মালা আর এক হাতে সোনার পান পাত্র । তারা ডাকছে -- আসুন বিশ্রাম করুন , আমরা আপনাদের দাসী , সেবা করার জন্য দাঁড়িয়ে আছি । আপনারা তৃষ্ণার্ত - এই পানি পান করুন । সে পানি হচ্ছে স্বর্গীয় সুরা, দলে দলে লোক সেখানে ঢুকে পড়লো ।
নারায়ণ বললেন দেখতো ইদ্র আর কেউ আছে কি না ? ইন্দ্র স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললেন -- না । ভাল করে দেখ । একটা কি যেন নড়ছে , বোধহয় একজন মানুষ । নারায়ণ বললেন স্বর্গদ্বার খুলে রাখ , তুমি নিজে পারিজাতের মালা হাতে দাঁড়িয়ে থাকো। আমার মত সম্মান করে তাকে স্বর্গে নিয়ে এসো । ওর পায়ের ধুলয় স্বর্গ পবিত্র হোক ।
------------------------------------------------
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:২৬