somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তোমাদের জন্য ভালবাসা

০২ রা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক।
অনেকদিন আগের কথা। তখন আমি সবে ক্লাস ফাইভে পড়ি। আব্বুর চাকরির সুবাদে নতুন শহরে, ভাড়া নিয়েছি নবগঠিত এক আবাসিক এলাকায়। বাড়ীঘর এখনো পুরোপুরি হয় নাই! আবাসিক এলাকার পাশেই মুচিপাড়া। শহরের বসবাসের অযোগ্য স্থানগুলোর অন্যতম। একপাশে নির্মানাধীন সুরম্য অট্টালিকা, আর অন্যপাশে অবহেলিত পলিথিনের খাপড়া। বিকালে ফুটবল খেলি আবাসিকের অন্যান্য ছেলেমেয়েদের সাথে। হঠাৎ চোখে পড়ল কালো পলিথিনে ঘেরা নতুন একটি খুপড়ির দিকে। হয়ত আজই তৈরি করা হয়েছে। এখনো দুজন কাজ করছে সন্ধ্যা নামার আগে যতোটা পারে গুছিয়ে নেবার জন্য! সাথে দুরন্ত ফুটফুটে একটা বাচ্চা মেয়ে! বয়স আর কতই বা হবে? চার কি তিন?
সম্ভবত আম্মুকে বিষযটি বললাম। পরদিন স্কুলথেকে এসে দেখি পরিবারটি কলাপসিকল গেটের এপাসে বসে আছে । সাথে সেই ফুটফুটে মেয়েটি!
আম্মু তাদেরকে কিছু খাবার দিলেন, সাথে মুরগীর মাংস ! মাংস দেখে বাচ্চাটির মুখে হাসি ফুটে উঠল! বলল, বাবা গোস! কি ব্যাকুলতা ছিল তার কন্ঠে, চোখে পানি ধরে রাখতে পারিনি। সত্যি বলছি, কাউকে কোনদিন এতো তৃপ্তি করে খেতে দেখিনি। এখনো যদি কাউকে কখনো খাবার নষ্ট করতে দেখি আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে ঐ বাচ্চার ফুটফুটে মুখটি, যেন আমার কানে কানে বলছে "ভাইয়া গোস "

দুই।
রাজশাহী থেকে কুষ্টিয়া আসছি! শহরে প্রবেশের পথে সারি সারি ছাউনি ঘর। কাজে ব্যাস্ত মা বাবারা। আর বিভিন্ন বয়সী বাচ্চারা নোংরার ভিতর খালিগায়ে প্রচন্ড শীতে কুয়াশা পূর্ণ বিকালে খেলা করছে। আমার গায়ে জ্যাকেট, গলায় মাফলার আর ওদের গায়ে সুতোটিও নেই! কতই বা বয়স ওদের?? আমি যদি মধ্যবিত্ত একটা পরিবারে না জন্মে ঐখানে জন্মাতাম? চোখ সরিয়ে নিলাম। কিন্তু আমি চোখ সরালেই তো দৃশ্যপট পরিবর্তন হবে নাা। সেটা করতে হবে আপনাকে বা আমাকেই! কি এমন পরিবার থেকে উঠে এসেছি আমরা? এখন অনেক বড়ো লাটসাহেব হয়ে গেছি! ওসব নোংরা মানুষগুলোকে অবহেলা করছি, ঘূর্ণা করছি। চোখ বন্ধ করে ভাবছি, আমার যদি কোন সন্তান হয় তাকে অন্ততপক্ষে মাসে একদিন এদের সাথে খেলতে দিব, এদের সাথে একসাথে বসে খাব একদিন। পার্থক্য তো নেই! ওর আর আমার রক্ত তো একই! ওদের আর আমাদের জন্ম নোংরাতেই! আমরা কিছু টাকা উপার্জন করে ক্রেতাদুরস্ত পোশাক পরে বড়োবাবু হয়েছি, আর তাদের ফেলে রেখেছি ডাস্টবিনে।

তিন।
ঈদের কিিছুদিন আগে। কোন কারণে মনটা ভালো নেই। টিভি অন কললাম। চমকে উঠলাম মাছরাঙা টিভির একটা রিপোর্ট দেখে! এই কি মানবতা? সামান্য টাকার জন্য ফুটফুটে বাচ্চাদের ধরে লুলা, কানা কিংবা খোড়া করে দিচ্ছি! বিকিয়ে দিচ্ছি মানবতা, মাদক ধরিয়ে দিচ্ছি বাচ্চাদের হাতে। যে হাতে রংপেন্সিল দিয়ে সুন্দর সুন্দর ছবি আকার কথা সে হাতে আজ তারা করছে চুরি ,বেগারিং আর টানছে ড্যান্ডি ইয়াবা, গাজা আর সস্তা সিগারেট। আমরা ভদ্রসমাজ তাদের নাম দিয়েছি পথশিশু। তাদের নিয়ে পালন করছি দিবস। করছি র্যালী, সেমিনার, নাটক, আলোচনা সভা! দিনশেষে পথশিশুরা পথেই ঘুমিয়ে যাচ্ছে। তাদের জন্য নেই কোন বিছানা, নেই কোন বালিশ, মমতাময়ী মা শোনাচ্ছে না কোন ঘুমপাড়ানি গান।

আমরা আস্তে আস্তে সবকিছুর সাথে অভ্যস্ত হয়ে যায়। মেনে নেওয়াটাই আমাদের স্বভাব হয়ে যাচ্ছে। আমরা মেনেই নিচ্ছি এরা পথেই আছে, পথেই থাক। ওদের নিয়ে কি আপনার আমার কিছুই করার নেই? সব কি কিছু এনজিও আর দাতব্য সংস্থার কাজ? আর কতকাল মানবতা লুুটাবে পথের ধুলায়??
দিনশেষে তোমাদের জন্য কিছুই দিতে পারলাম না। তবে রইল আন্তরিক ভালবাসা। জানি এ ভালবাসা তোমাদের কাছে পৌছবে না, তবু ....
ভালো থেকে পথে ঘুমানো শিশুরা!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:১০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×