somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সবচেয়ে বড় জাহাজ গুলো (পর্ব ২)

১২ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আগের পোস্টে অনেকেই সহজ করে লেখার তাগিদ দিলেন। আজ চেষ্টা করবো তাই সহজ করে লিখতে।


সবচেয়ে বড় জাহাজ পর্বে আজ কথা বলব বাল্ক ক্যারিয়ার নিয়ে। বাল্ক ক্যারিয়ার বলতে বোঝায় সেসব জাহাজকে যাদের কার্গো হোল্ডে আপনি কোন মালামাল সরাসরি লোড করতে পারবেন। যেমন ধরুন বালুবাহী নৌকা গুলো যেমন সরাসরি তাদের হোল্ডে বালু নিয়ে নদীতে ভেসে বেড়ায় অনেকটা ওই রকম। এসব জাহাজে মূলত সিমেন্ট ক্লিঙ্কার, সার, খাদ্যশস্য, কয়লা, চীনামাটি, আয়রন ও্যর ইত্যাদি টাইপ জিনিস কোন প্যাকেজিং ছাড়াই সরাসরি লোড করা যায়।
আবার কোন কোন কার্গো যেমন রেলের ওয়াগন, লোহার বার, স্টিলের কয়েল শীট, কাগজের রোল, ড্রাম এগুলোও পরিবহন করা যায় এই স্ট্রাকচারের জাহাজে। অবশ্য ওগুলোকে আলাদা ভাবে জেনারেল কার্গো ক্যারিয়ার ও বলা হয়।



২০১১ সাল পর্যন্ত এই সবচে বড় বাল্ক ক্যারিয়ারের শ্রেষ্ঠত্ব ছিল MS BERGE STAHL এর।


কিন্তু MS VALE BRASIL বর্তমান বিশ্বের সবচে বড় বাল্ক ক্যারিয়ার। তুলনায় না গিয়ে সরাসরি এই জাহাজটি সম্পর্কে জানি।


লোহা তৈরির কাঁচামাল আয়রন ও্যর বহন করার জন্যই মূলত এই জাহাজটি তৈরি করা হয়। এর মালিক ব্রাসিলিয়ান মাইনিং কোম্পানি VALE S.A. যারা ব্রাসিল থেকে এশিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন বন্দরে বিপুল পরিমান আয়রন ও্যর পরিবহন করার জন্য জাহাজটি নির্মাণ করে। বাল্ক ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ক্লাস VLOC (Very Large Ore Carrier) এর এই জ্যৈষ্ঠ সদস্য



এক সাথে এত পরিমান আয়রন ও্যর বহন করতে পারে যা দিয়ে তিনটি গোল্ডেন গেট ব্রীজের সমপরিমান লোহা উৎপাদন করা যাবে।


VALE BRASIL তৈরি করেছে সবচে বড় কন্টেইনারবাহী জাহাজের প্রস্তুতকারক
অর্থাৎ দক্ষিন কোরিয়ার Daewoo Shipbuilding & Marine Engineering Co., Ltd। বড় জাহাজ বানানো মনে হয় তাদের নেশা। B-)


৩০ মার্চ ২০১১ সালে তারা জাহাজটি হস্তান্তর করে। এই জাহাজের ডেডওয়েট ৪০২,৩৪৭ টন। আগের পোস্টে অনেকেই জিজ্ঞেস করেছিলেন ডেডওয়েট কি জিনিস। খালি অবস্থায় জাহাজের ওজনকে ফুল লোডেড অবস্থার ওজন থেকে বাদ দিলে যা পাওয়া যায় সেটাই ডেডওয়েট। সহজ কথায় ডেডওয়েট হল জাহাজের ক্যারিং ক্যাপাসিটি। অর্থাৎ VALE BRASIL একসাথে ৪ লাখ ২ হাজার ৩৪৭ টন মালামাল বহন করতে পারবে। এই পরিমান আয়রন ও্যর দেয়ার জন্য তার কাছে মোট ১১ হাজার ১৫০ টি বড় ট্রাক কার্গো নিয়ে আসতে হয়। অবিশ্বাস্য না? সমগ্র বাংলাদেশ যদি ১০ টন হয় এ তবে কি??:-/:-*


জাহাজটির দৈর্ঘ্য ৩৬২ মিটার আর প্রস্থ ৬৫ মিটার। ড্রাফ্‌ট ২৩ মিটার। ড্রাফ্‌ট মানে হল ম্যাক্সিমাম লোডেড অবস্থায় তার ২৩ মিটার পরিমান অংশ পানির নিচে থাকবে। একটা ছোট তুলনা করি। আমাদের চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রবেশের জন্য একটি জাহাজের ড্রাফ্‌ট সর্বোচ্চ হতে পারবে ৯.২ মিটার। এর বেশি হলে তলা আটকে যাবে। VALE BRASIL কে বাংলাদেশে আমন্ত্রন জানাতে তাই কর্ণফুলী নদীকে আরও ১৪ মিটার গভীর করে খুঁড়তে হবে। থাক তোর এই দেশে আসার দরকার নাই।:D


অবশ্য শুধু চট্টগ্রাম নয়। বিশ্বের খুব কম পোর্টই VALE BRASIL কে আমন্ত্রন জানাতে পারে। জাহাজটিতে ৩৩ জন সমুদ্রচারী কর্মরত আছেন। মোট সাতটি কার্গো হোল্ড আছে এতে। মূলত চীনে এই বিপুল পরিমান লোহামাটি পৌঁছে দেয়ার জন্য একে তৈরি করা হলেও চীনা সরকার তাদের পোর্টের এবং একই সাথে নিজেদের দেশের শিপিং ইন্ডাস্ট্রির কথা চিন্তা করে একরকম আইন করেই ৩১ জানুয়ারি ২০১২ তে তাদের পোর্টে ৩ লাখ টনের উপরে কার্গোবাহী বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ নিষিদ্ধ করে। VALE BRASIL কে তাই ব্রাসিল থেকে আফ্রিকা, ফিলিপাইন এবং মালয়েশিয়ায় গিয়ে আয়রন ও্যর কমিয়ে ৩ লাখ টনের নিচে করে চীনে ঢুকতে হয়।:)


জাহাজটির ইঞ্জিন একটি MAN B&W 7S80ME-C8 টু স্ট্রোক ডিজেল ইঞ্জিন। প্রতিদিন এটি ৯৬.৭ টন ফুয়েল পোড়ায় আর ৭৮ আরপিএম এ ২৯২৬০ কিলোওয়াট ক্ষমতা প্রদান করতে পারে। এর সার্ভিস স্পীড ও তাই কম। মাত্র ১৫.৪ নট।
জাহাজটি তৈরিতে আনুমানিক খরচ হয় প্রায় ১১৫ মিলিওন ডলার।

কেমন লাগলো জানাবেন। সবাই ভালো থাকবেন।

আরও পোস্ট নিয়ে আসছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:৫৫
১০টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×