প্রতিদিনই পত্রিকার পাতা খুলেই যখন পড়তে হয়ে একের পর এক ধর্ষণের খবর তখন আমি স্তম্ভিত হয়ে পরি।
আমি আরও স্তম্ভিত হয়ে পরি তখন, যখন দেখি সেই ধর্ষণের দোষ ধর্ষককে নয়, দেওয়া হচ্ছে সেই ধর্ষিতাকেই।
১. ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সালে এই চার বছরে বাংলাদেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩০৯২ জন নারী। মানে সেই ৪ বছরের প্রতি বছরে ৭৭৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন। যদি অারেকটু হিসাব করি দেখা যায় প্রতি মাসে সেসময় ধর্ষণের শিকার হয় ৬৫ জন নারী। সেসময় গড়ে প্রতিদিন ২.১১ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন। এতক্ষণ তো বললাম ১০-১৪ সালের কথা। কিন্তু বর্তমানে যখন ধর্ষণ মহামারির আকার ধারণ করেছে একবার ভাবুন এখনকার নারীদের বর্তমান অবস্থা।
কখনো এই ৩ হাজার ৯২ জন নারীর মধ্যে কারো ঘটনা মিড়িয়াতে এসেছে, বাকি অনেকের ঘটনাই মিডিয়ায় প্রকাশ হয় নাই। মিড়িয়ায় ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশের সাথে সাথে আবাল সমাজ ঝাঁপিয়ে পড়েছে সেই ধর্ষিতার উপর। দোষ চাপানো চেষ্টা করা হয়েছে সেই ধর্ষিতাদেরই উপর। তারা বোরকা/হিজাব পড়লো না কেন? তারা রাতে সেখানে গেলো কেন? তারা একা রাস্তায় বের হলো কেন? তাই তারা ধর্ষণে শিকার হয়েছে । তর্কের খাতির মেনে নিলাম যে হিজাব না পড়লে, কোথাও একা গেলে বা রাতে বের হলে তাকে ধর্ষণ করা আবালদের যুক্তিতে জায়েজ।
এবার আসুন আরেকটি পরিসংখ্যান দেখিঃ
২. গত বছর ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর এই ৯ মাসে ধর্ষণের শিকার হয় ৩২৫ জন শিশু। এর মধ্যে ৪৮ জন শিশুকে গণধর্ষণ ও ২৫ জন শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। হিসাব করলে দেখা যায় গতবছরের ৯ মাসের প্রতিদিন ১.২০ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়।
প্রশ্ন এখন এখানে, প্রতিদিন ১.২০ জন শিশু কেন ধর্ষিত হচ্ছে? ওরা হিজাব পরে নাই তাই? ওরা রাতে কোথাও বের হয়েছিলো তাই? ওরা কোথাও একা গিয়েছিলো তাই? নাকি ওরা এমন কোন পোশাক পড়েছিলো যা দেখে কুকুরগুলো নিজেদের ধরে রাখতে পারে নাই??? সেই আবালদের কাছে প্রশ্ন।
প্রতিদিন পত্রিকার পাতা থুলতে ভয় হয়, প্রতিমুহুর্তে ভয় হয়।আজ না জানি কোন মায়ের চোখের মনিকে কিংবা কোন ভাইয়ের আদরের বোনকে কুড়েকুড়ে খেয়েছে কুকুরেরা।
ভয়ে থাকি হয়তো আমার কিংবা আপনার আদরের ছোট বোনটিও সেই কুকুদের লালসার শিকার হতে পারে। এসব থেকে আমাদের বোনদের রক্ষার্থে প্রয়োজন সবারই ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের প্রতিরোধ। নয়তো আমার আপনার বোনরা নিরাপদে স্কুলে যেতে পারবে না, মন খুলে হাসতেও পারবে না।
আজ কোন মেয়ে ধর্ষিত হলে সেই মেয়েটির দোষ কিংবা তার পোশাকের দোষ দিচ্ছেন, গোপনের হেসে মজা নিচ্ছেন। একবার পাশে তাকিয়ে দেখুন আপনারওতো একটা আদরের বোন আছে, সবসময় দুষ্টুমি করছে। কাল যদি সে স্কুল থেকে ফেরার পথে কোন কুকুরের লালসার শিকার হয় এবং অাপনার মতো অন্যরাও যখন আপনার বোনেরই দোষ খুঁজবে তখন আর আপনার করার কিছুই থাকবে না।
সময় থাকতেই আসুন ঐক্যবদ্ধ হই । সকল ধর্ষকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। নারীদের জন্য গড়ে তুলি নিরাপদ এক বাংলাদেশ।
তথ্যসূত্রঃ
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি ও
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম
ধর্ষক মুক্ত বাংলাদেশ চাই
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৭ রাত ১২:৪৫