somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সময়ের আস্তাকুঁড়ে নিজেকে খুঁজি

০১ লা অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জীবনের লক্ষ্য নিয়ে কখনো তেমন মাথা ঘামাইনি। কি হতে চাই এ ব্যাপারে কেউ প্রশ্ন করলে এড়িয়ে যেতাম। পড়াশুনায় বরাবরই ছিলাম অমনোযোগী। প্রতিদিনের ধরাবাঁধা নিয়মকানুন ভালো লাগতো না। প্রতিদিন সকালে মায়ের ঘ্যানর ঘ্যানর, মক্তবে হূজুরের বেত, স্কুলে অংক-ইংরেজি স্যারের এ্যাকশন এসব বিষের মতো ঠেকতো।


স্কুল ছুটি হলে এক দৌড়ে বাড়ী ফিরে আসতাম। বইগুলো কোনমতে খাটের উপর ছুড়ে ফেলে ভো-দৌড়। নাওয়া-খাওয়ার কথা মনেই হতো না। পাড়ার বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা, বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়ানো, শিতলক্ষ্যার শীতল পানিতে ঘন্টার পর ঘন্টা ডুব সাঁতার খেলে চোখ লাল করে ফেলা বর্ষার বৃষ্টিতে ছুটাছুটি করে সর্দি-জ্বরের বাহানায় স্কুল কামাই, বিলের নতুন পানিতে খুঁচি জাল আর বড়শিতে মাছ ধরা।


সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে সূর্যটা বিলের ঐ পাড়ে গাছগাছালির আড়ালে লুকাতেই কখন যে অন্ধকার নেমে আসতো টেরই পেতাম না। এই তো ছিলো কৈশরের দুরন্তপনা। এসব নিয়ে মায়ের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। ছেলেটা বুঝি এক্কেবারে বখে গেলো। রাতে বাড়ি ফিরতেই মায়ের বকুনি আর মাঝে মাঝে কিছু উত্তম-মধ্যম।
দশটা মানুষের কৈশর যেমন কাটে আমার কৈশর তার খুব বেশি ব্যাতিক্রম কিছু নয়। তবে সবার মাঝে কিছু বৈচিত্র তো থাকেই। আমার কৈশরের আগের কথা। বয়স তখন ঠিক কতো মনে নেই তবে যেহেতু ঘটনাগুলো মনে আছে তাই খুব বেশি ছোট হওয়ার কথা নয়।


দুপুরে রান্না করে মা গিয়েছেন গোছল করতে। আমি বাড়ান্দায় সদ্য ডিম থেকে ফোটা হাঁসের বাচ্চাগুলো নিয়ে খেলছিলাম, হঠাৎ মনে হলো তাঁদের গোছল করানো দরকার। ভাবনামতো কাজ। বালতির পানিতে গোছল করাতে করাতে সাত-আটটা বাচ্চার সবগুলোকে মেরে সারি করে শুইয়ে রাখলাম। মা এসে তো থ!
- এইডা কি করছস?
- চুপ কতা কইয়্যেন না, গোসল করাইয়্যা গুম (ঘুম) পাতাইছি।
মা আমাকে এজন্যে মারধর বা বকাঝকা করেননি। শুধু আল্লাহর কাছে বলতেন-
- এইডা আমার গরো (ঘরে) কি দিলা মাবুত! এই বেক্কলরে (বোকা) ইটটু জ্ঞান বুদ্দি দেও।


আরেক দুপুর, যথারীতি মা রান্না করে গেলেন গোছল করতে। উঠোনে কয়েকটা মুরগী ঘুড়াফেরা করছে। ভাবলাম দুপুরের সময়, ওদের নিশ্চয় খিদে পেয়েছে। ঘরে গিয়ে কিছু ভাত এনে ছিটিয়ে দিলাম। খাওয়া শেষ হলে ওরা চলে যাচ্ছিলো তাই আরো কিছু ভাত এনে দিলাম। এবার এদের সাথে যোগ হলো আরো কিছু মুরগী, হাঁস।
আমি ভাত দিতে থাকলাম আর আশপাশ থেকে যতো হাঁস-মুরগী, ছাগল-ভেড়া, কুকুর-বিড়ালের মেলা জমতে লাগলো। আমার উঠোনে এতো পশু পাখির মেলা আমি আর দেখিনি! তখন আমার যা আনন্দ হচ্ছিলো তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এক পর্য্যায়ে পুরো পাতিল ঢেলে দিলাম। তারপর তরকারির পাতিল। তরকারী নিয়ে দুই মুরগির টানাটানি সে কি যে মজার দৃশ্য।


তরকারি খুব দ্রুত ফুরিয়ে গেলে যে যার মতো চলে যেতে লাগলো। উপায়ান্তর না পেয়ে এবার ডাউলের পাতিলটাও উপুড় করে দিলাম। খুব সামান্য সময় ওদের আঁটকে রাখলাম। ঘরে আর কিছুই খুঁজে পেলাম না। সব শেষ হলে আস্তে আস্তে সবাই চলে গেলো। মাথা তুলে চারপাশে চোখ ঘুরালাম। দেখলাম কয়েক ডজন চোখের দৃষ্টি আমাকে এফোঢ় ওফোঢ় করে দিচ্ছে।
শুধু পশুপাখি নয় আমার চারপাশে মানুষেরও যে ছোটখাটো একটা মেলা বসেছিলো তা আমি টেরই পাইনি। খাবার দেওয়াতে পশুপাখির মেলা বসেছে কিন্তু মানুষের মেলার কোন কারণ আমি খুঁজে পাইনি। ওদের খিঁদে পেয়েছে খাবার দিয়েছি, খেয়েছে চলে গেছে। এতে লোক সমাগমেরই বা কি আছে আর হাসাহাসিরই বা কি আছে।


তাদের দিকেও আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকালাম, দেখি একপাশে মা ও দাঁড়িয়ে আছেন। এতক্ষণ আমাকে কিছুই বলেননি, এবার মুখ খুললেন।
- সব যে খাওয়াইলাইছস ( খাইয়ে ফেলেছিস) আলা (এখন) আমরা কি খামু?
এ কথার জবাবে এক ঝলক হাসি ছাড়া আমার কাছে আর কিছুই ছিলো না।
পাড়া প্রতিবেশী কেউ কেউ মাকে বলতেন,
- আমনের (আপনার) এই পোলা আস্ত মগা (বোকা), এইডা যদি মানু (মানুষ) অয় তাইলে আমার আতের তাল্লা দা (হাতের তালু দিয়ে) বডগাছ জালাইবো (বটগাছ গজাবে, অসম্ভব বুঝাতে এই উপমা ব্যবহার করা হয়)


আবার কেউবা বলতেন
- আরে যেইত্তানে (যারা) ছুডুবালা (ছোটকালে) বেক্কল থাহে হেইত্তানে (তারা) বড় অইলে বালা (ভালো) কিছু অয়, যেইত্তানে ছুডুবালা পাকনা থাহে হেইত্তানে বড় অইলে কিছু অইতারে না। অনেক বড় বড় মাইনসেরা ছুডুবালা বেক্কল আছিল।
মা শুধু বলতেন,
- দোয়া কইরেন আললার মাল আললায় যে হেফাজত করে।

তারপর অনেকগুলো দিন অতিবাহিত হয়েছে। কি হয়েছি, কি হতে চাই তা নিয়ে এখনো পর্যন্ত গভীরভাবে তেমন ভাবিনি। সময়ের আস্তাকুড়েঁ নিজেকে খুজিঁ, জীবনের অঙ্ক মিলাতে চাই, সমাধান পাই না। তবে আল্লাহ যে সামান্য জ্ঞান দিয়েছেন তা দিয়ে শুধু এইটুকু ভাবতে পারি বা চাইতে পারি যে আমি একজন মানুষ হতে চাই, এটাই আমার লক্ষ্য। আচ্ছা আমার কি এর চেয়ে বেশী কিছু চাওয়া উচিত? যাই হই না কেনো মানুষ না হলে আমার সে হওয়ার কতটুকু মূল্য আছে । কিন্তু আমি কি মানুষ হতে পেরেছি?
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১:৩০
১৫টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×