somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ছেলেমেয়েরা

২৭ শে জুন, ২০০৯ রাত ৩:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


লাবিবের কাণ্ডকীর্তি


ছেলেমেয়েদের নিয়ে লেখা হয় না অনেকদিন। প্রতিদিন ওরা কতো কিছু করে, ঘটায় তার কোনো ইয়ত্তা নেই। সেগুলো খুব রসাত্মক ও উপভোগ্য; আমাদেরকে সারাক্ষণ আনন্দমুখর ও প্রাণবন্ত রাখার জন্য তার ভূমিকা অনন্য। কিন্তু সব সময় তা লিখে রাখা যায় না।

তবে আজকের ঘটনাটা না লিখে পারছি না।

লাবিবের মা আমসত্ত্ব বানিয়ে রোদে শুকোচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে। আমাদের ডুপ্লেক্সের ছাদে প্রতিদিনই ওগুলোকে শুকোতে দেখি- দুটি চালুনির উপর থরে থরে খুব সুন্দর করে টুকরোগুলো সাজিয়ে রাখা হয়; ইষৎ বাদামি রঙের অতিশয় লোভনীয় টুকরোগুলো দেখলেই জিভের ডগায় পানি জমে, কিন্তু হাত বাড়িয়ে এক টুকরো মুখে নেব তা আর হয়ে ওঠে না, ব্যস্ততার জন্য। ও হ্যাঁ, একদিন একটা টুকরো তুলে মুখে নিয়ে গিলেছিলাম, তবে যতোখানি দর্শনধারী, গুণবিচারের পর ততোখানি উৎরে যেতে পারে নি, এটা ঠিক।

বিকেলের দিকে পাইলট, ঐশী আর ওর মা ঘুমোচ্ছিল; আমি আমার কাজে মহাব্যস্ত- ব্লগিংয়ে। আর লাবিব?

লাবিব! আমাদের লাবিব! লাবিব... কোথায় তুমি আব্বু?

আমি ডাকতে থাকি সোফায় বসেই। কিন্তু লাবিবের কোনো সাড়াশব্দ নেই।

ডুপ্লেক্সের দোতলায় তিনটি রুম। একটাতে পাইলট, আরেকটাতে ঐশী, অপরটায় আমরা তিনজন থাকি। নিচতলা থেকে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলে সামনে ও ডানে ঐ রুম তিনটি, আর বাম দিকে দরজা পেরোলেই একট টুকরো মনোরম উঠোন- এ আমাদের ছাদ- বিকেলে চেয়ার টেনে বসি, রাতে পারিবারিক আড্ডা- কখনো বারবিকিউ। আর এই ছাদটুকু হলো লাবিবের খেলার মাঠ। তাকে পাওয়া যায় নিচতলার দোলনায়, ল্যাপটপে টম এন্ড জেরির সামনে, টিভির সামনে, পাইলট আর ঐশীর সাথে ঝগড়া-ঝাটিতে; আর অন্য কোথাও না পাওয়া গেলে নির্ঘাত লাবিবকে পাওয়া যাবে তার ফুটবল, গাড়ি, ক্রিকেট, যাবতীয় খেলনা-অখেলনা সহ এই ছাদে।

লাবিবকে ডাকতে ডাকতে ছাদের দিকে যেতেই দেখি সে এগিয়ে আসছে রুমের দিকে। আমাকে দেখে তার স্বভাবসুলভ মিষ্টি করে হেসে দিয়ে লাবিব আহ্লাদি স্বরে টেনে টেনে বলে- আমি এইখানে!
তুমি একা একা ছাদে কী করছিলে?
আচার খাচ্ছিলাম।
আচার! বুঝলাম সে আসলে আমসত্ত্ব খাচ্ছিল।

ওর সাথে টুকিটাকি কথা বলতে বলতে আমসত্ত্বের চালুনির কাছে এসে দেখি একটা চালুনিতে মাত্র তিন টুকরো আমসত্ত্ব পড়ে আছে, বাকিগুলো লাবিব সাবাড় করেছে।

লাবিব ওর প্রধান খাদ্য 'খিচুড়ি' খেতে খুব বাহানা করে, সেই লাবিব এতোগুলো আমসত্ত্ব খেয়েছে দেখে অবাক হলাম- ওর বোধ হয় টক জিনিস খুব পছন্দ। আমি আরেক টুকরো আমসত্ত্ব খেয়ে লাবিবকে কোলে নিয়ে রুমে এসে ব্লগিংয়ে বসে পড়ি।

সন্ধ্যার কিছু আগে। আমি টিভি দেখছি। লাবিবের মা খুব উত্তেজিত স্বরে আমাকে ডাকছে ছাদে যেতে।
এই, জলদি আসো, দেইখা যাও তোমার আল্লাদের পুত্র কী করছে।
আমি দেখছি, ও তোমার আমসত্ত্ব খেয়ে অর্ধেক করে ফেলছে।
আসছো না কেন? তোমাকে তো আমি এখানে আসতে বলছি।
আসতে পারবো না। ব্যস্ত আছি।
টেংরি ভাঙবো কিন্তু বাপবেটা দুজনের।

যাবো না যাবো না করেও উঠে গেলাম। ছাদে গিয়ে দেখি ঐশী মিটমিট করে হাসছে, ওদের মা খড়্গ হাতে লাবিবকে শাসাচ্ছে আর লাবিবের হাতের মুঠিতে কী যেন দলা পাকানো।

চাইয়া দেখো কী করছে। ওর মা বলে।

আমি চেয়ে দেখি, লাবিবের চারপাশে আমসত্ত্বের টুকরোগুলো ছড়িয়ে আছে, ওর হাতের মুঠিতে কিছু আমসত্ত্ব দলা পাকানো।

কী হয়েছে? জিজ্ঞাসা করি।
সে আমসত্ত্ব দিয়া খেলছে। আমার আসার আওয়াজ পাইয়া তাড়াতাড়ি কইরা টুকাইয়া জানালা দিয়া বাইরে ফেলতেছিল, যাতে ধরতে না পারি।

লাবিব কিটকিটিয়ে হেসে ঝাঁপ দিয়ে আমার কোলের উপর পড়ে। আমি লাবিবকে বুকের মধ্যে লেপ্টে ধরে বলি, খুব ভালো করেছো আব্বু, বাকিগুলোও এভাবে ফেলে দিও, কেমন?
হুম, তোমার লাই পাইয়াই পুলাডা এত্তো আল্লাদী হইয়া গেছে। আমার এতো সুন্দর আমসত্ত্ব!!!
আমি আর লাবিব টিভিরুমে চলে আসি।

আরও আশ্চর্যের ব্যাপার আছে। এসব কৃতকর্মের শাস্তি স্বরূপ ওর মা ওকে বেধরক পিটুনি দিয়ে থাকে। কিন্তু সেদিন সে এতোই অবাক হয়ে গিয়েছিল যে লাবিবকে পিটুনি দেয়ার কথা সে বেমালুম ভুলে গিয়েছিল।




তারপরের দিনের কথা।

বাসার উত্তর দিকের চত্বরে একটা শুকনো চৌবাচ্চা আছে। আমি পা দুলিয়ে চৌবাচ্চার ওয়ালে বসে হাবিজাবি ভাবছিলাম। দেখি দোতলার দরজা ডিঙিয়ে লাবিব ছাদে ঢুকলো। আলগোছে আমসত্ত্বের চালুনির কাছে গেলো। খুব সতর্ক ভাবে নিচু হয়ে হাত বাড়িয়ে তুললো। এমন সময়ে নিচতলা থেকে আমি ডেকে উঠি- লাবিব!
লাবিব চমকে আমার দিকে তাকায় আর মিষ্টি করে হেসে দিয়ে বলে- কিছু করি না।
তোমার হাতে কী?
কিছু না।
আমসত্ত্ব?
কিছু না।


সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ দুপুর ২:৩০
১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×