somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সঙ্গীত-কাব্য ও ইসলাম

১৪ ই জুলাই, ২০১৬ ভোর ৬:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বন্ধ্যা আলেমদের মনগড়া ফতুয়ার জঞ্জালের নিচে যাদের মন সঙ্গীত বিষয়ে সংশয়পূর্ণ-এই রচনাটি তাদের জন্য।যাতে যেসব বিশ্বাসীগণ যারা বিষয়টি নিয়ে হীনমৌনতায় ভোগেন এবং কিছু কাঠ মোল্লার অন্ধ অনুসারীগণ যারা শরিয়াতের এই স্পর্শকাতর বিষয়সমুহও পক্ষে-বিপক্ষে যাচাই না করে একাতারে গান-বাজনাকে হারাম বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন, তারা যাতে বিষয়টির সত্যতা উপলব্ধি করতে সক্ষম হন। ওইসব গোঁড়া আলেমগণ নিজেদের অতিমাত্রায় ধর্মভীরু প্রমাণ করবার জন্য সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও-মূলত তারা সাধারণ বিশ্বাসী জনগণের বিদ্বেষ ছাড়া আর কিছুই অর্জন করেননা!! সৃষ্টিকর্তা কি কখনও কোন সৃষ্টিশীল কর্মে অন্তরায় হতে পারে??

যারা সঙ্গীতকে নিষিদ্ধ মনে করেন তাদের প্রতি আমরা এই প্রবন্ধের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করলাম-“আল্লাহ তার বান্দাদের জন্যে যেসব শোভনীয় উপকরণ ও পবিত্র জিবিকা দান করেছেন, কে তা নিষিদ্ধ ঘোষণা করল? (সূরা আরাফ :৩২)।

যদি আপনি বন্ধ্যা আলেমদের অন্ধ অনুসরণ না করে মুক্তমনে ফুরকানের আলোর মানদণ্ডে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চান তবে এর বিরুদ্ধে বিশুদ্ধ ও সুস্পষ্ট দলিল পেশ করুণ যার বিরুদ্ধে সর্বসম্মত আইনবেত্তাগন কোন প্রকার সন্দেহ পোষণ করেননি।এবং ইতিহাসের সত্যতাকে অবশ্যই আপনাকে গ্রহণ করতে হবে যদি সেই সম্বন্ধে বিতর্কের অবকাশ না থাকে- কোন ডিগ্রি বা টাইটেলের অহমে নিজের জ্ঞানকে শ্রেষ্ঠ এবং এই অধমের বক্তব্যকে হেয় প্রতিপন্ন করবেননা।
“কে বলছে এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়-কি বলছে তাই গুরুত্বপূর্ণ।”

সঙ্গীত কিংবা কবিতা মানব মনের গভীর চেতনা ও অনুভূতি প্রকাশের একটি শক্তিশালী মাধ্যম। যা শিল্পেরই একটি অধ্যায়। যে শিল্পের মাধ্যমে কথা,ছন্দ ও সুরের ঐশ্বরিক তালের স্পন্ধনের সমন্বয়ে সৃষ্টি হয় একটি সঙ্গীত। যার মাধ্যমে মানুষ তার মনের গভীর অনুভবগুলো প্রকাশ করে থাকে। একটি কবিতা কিংবা সঙ্গীতের মাধ্যমে সমাজকে অনেক গভীর বার্তা প্রদান করা সম্ভব। পবিত্র কুরানে একটি আয়াতও নেই যেখানে আল্লাহ্‌ সুস্পষ্ট ভাবে সঙ্গীতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। শুধু পবিত্র কুরআন কেন বাইবেল-বেদ-গিতা সহ পূর্ববর্তী একটি ঐশীগ্রন্থও পাওয়া দুষ্কর যেখানে সঙ্গীতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

আবার “কিং ডেভিডকে আমরা দাউদ (আঃ) বলে জানি। তিনি মূলত ধর্মনেতা,যোদ্ধা, জ্ঞানী ব্যক্তি সর্বোপরি একজন নবী ছিলেন। ইতিহাসের পাতায় তাঁকে আমরা দেখতে পাই একজন কবি ও সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবেও” –(সেনানায়ক-মহানবী (সঃ)− যুদ্ধ ও শান্তি −ব্যারিস্টার তমিজুল হক, পৃষ্ঠা)।

আর ইঞ্জিলের তো বহু অধ্যায় ঈশ্বরের কাওয়ালী ও প্রশংসনীয় গানে ভরপুর। আর যেহেতু পবিত্ত্র কুরআন পূর্ববর্তী ঐশীগ্রন্থের সমর্থক এবং কুরআনের কোন আয়াতে যেখানে স্রষ্টা সঙ্গীতকে রদ করেননি-সেখানে সঙ্গিতের মতো এই ঐশ্বরিক উপহারকে বাতিল ঘোষণা করবার অধিকার ওই বন্ধ্যা আলেমদের কে প্রদান করেছে??

হাঁ তবে পবিত্র কুরআনে বিভ্রান্ত কবির নিন্দা করা হয়েছে, এবং তাদের অনুসরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।তবে তার অর্থও এই নয় যে কুরআনে কাব্যচর্চা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। বরং উক্ত আয়াতে সেইসব কবিদের সমালোচনা করা হয়েছে যারা তাদের কাব্যের ভাষায় ইসলাম ও নবীজিকে আক্রমণ করত।

উক্ত আয়াতে বলা হয়েছে-“বিভ্রান্তরাই কবিদের অনুসরণ করে। তুমি কি প্রত্যক্ষ করোনা উদ্ভ্রান্তের ন্যায় তারা ঘুরে বেড়ায়। এবং তারা যা (কবিতার ভাষায়)বলে বাস্তবে তা করেনা। তবে যারা বিশ্বাসস্থাপন করে, সৎকর্ম করে, আল্লাহ্‌র স্মরণে অধিক মাত্রায় নিবিষ্ট এবং অত্যাচারিত হলে নিজেদের আত্মরক্ষায় সচেষ্ট হয়েছে-তাদের জন্য এই বানী প্রযোজ্য নয়।”

যখন পবিত্র কুরআনের এই বানী অবতীর্ণ হল তখন আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা, কাব ইবন মালিক ও হাসসান ইবন সাবিত কাঁদতে কাঁদতে নবীজির নিকট উপস্থিত হয়ে নবিজিকে বলেন- ‘হে আল্লাহ্‌র রাসুল(সঃ)! কবিদের প্রতি এই আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে আর আমরা তো কবি।”

উত্তরে নবীজি বলেন- ‘আগে পুরো আয়াতটি পড়ে দেখো, এখানে বিশ্বাসী(মুমিন)ও সৎকর্মপরায়ণদের কথা বলা হয়নি।’

মুলত উক্ত আয়াতটিতে সেই সব কবিদের বিভ্রান্ত বলা হয়েছে যেই মুস্রিক কবিরা তাদের কবিতার মাধ্যমে নবীজির নামে কুৎসা রটাত এবং অত্যন্ত অশ্লীন ও অসার ছন্দের ভাষায় ইসলাম ও ইসলামের অনুসারীদের আক্রমণ করত। মক্কার মুস্রিকদের কবিতার ভাষায় রাসুল এতোটাই ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন যে তাদের অসার কাব্যের পাল্টা প্রতিউত্তর দেবার জন্য নবীজি তিনজন কবিকে নিয়োজিত করেছিলেন। যারা ইসলাম ও নবীজির হয়ে স্রষ্টাদ্রোহী কবিদের কাব্যিক আক্রমণের প্রতিউত্তর দিতেন। ইসলামের পক্ষে যে কবিগণ আল্লাহ্‌ ও রাসুলের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন এই তিনজনই হল আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা, কাব ইবন মালিক ও হাসসান ইবন সাবিত। এ থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে- সব কিছুরই ব্যাবহারিক দুটি দিক আছে। ভালো আর মন্দ- সৎ এবং অসৎ। এখানে ফলাফল নির্ভর করছে নিয়তের উপর। যেখানে নবীজি বলেছেন- ‘প্রত্যেক মানুষকেই তার নিয়ত এর উপর কর্মফল প্রদান বা বিচার করা হবে।” যেখানে ওইসব মন্দ চরিত্রের মুস্রিক কবিগণ যারা অসার ভাষায় ইসলামকে আক্রমণ করবার জন্য আল্লাহ্‌ তাদের বিভ্রান্ত বলেছেন ঠিকই- কিন্তু তার সাথে যেসব কবি ইমানদার ও সৎ তাদের ক্ষেত্রে এই ‘বিভ্রান্ত’ কথাটি প্রযোজ্য নয় এই ঘোষণাও দিয়েছেন। যারা ইসলামের পক্ষে তাদের কবিতার ভাষায় কুফফার কবিদের বিরুদ্ধে কাব্যযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল।

ঠিক এই কারনেই নবিজী বলেন-” যারা হাতিয়ার দিয়ে আল্লাহ্‌ ও রাসুলকে সাহায্য করেছে, জিহবা দ্বারা সাহায্য করবার জন্য কে তাকে বাঁধা প্রদান করল ?

– উত্তরে কবি ছাবিত বলেন আমি প্রস্তুত।” (শাওকি দায়ফ ২/৪৭)।

এখানে একদল কবি যারা কবিতা লিখেছেন তাদের অসৎ নিয়তে যারা তাদের অসার কবিতার মাধ্যমে সত্যের দ্বীন ইসলামকে আক্রমণ করেছিল। প্রক্ষান্তরে- আরএকদল কবি কবিতা লিখেছে একটি সৎ নিয়তে-হক বা সত্য দ্বীনের পক্ষে মিথ্যা কাব্যকে পরাভুত করার জন্য। তাহলে দেখা যাচ্ছে আমাদের কবিতা কিংবা গান যদি সত্যকে সমুন্নত করবার উদ্দেশ্যে লিখা কিংবা গাওয়া হলে-কখনই তা মন্দ ভাবার কারণ নেই বরং তা অবশ্যই একটি মহৎ ও সৎকর্ম।

নবীজি নিজেও কবিতার প্রতি দুর্বল ছিলেন। তিনি কবিতা শুনতে ভালবাসতেন। সেইসব কবিতা যেসব কবিতায় ভাল ভাল ম্যাসেজ আছে। এই জন্যই তিনি(সঃ)বলেছেন-“যে কবিতা সত্যনিষ্ঠ তা সুন্দর। আর যে কবিতায় সত্যের অপলাপ হয় – তাতে মঙ্গল নেই” (মিস্কাত)।

নবিজি আরও বলেন- ‘কিছু কিছু বাগ্মীতায় যাদু আছে, আর কিছু কবিতায় রয়েছে জ্ঞান ও হিকমত (শাওকি দায়াফ, তারিখ-২-৪৪)।” এছাড়াও সহি বুখারির একটি হাদিসে উল্লেখ আছে- যেখানে নবীজি বলেছেন-“ ভাল কবিতায় নিহিত আছে গভীর জ্ঞান ও কৌশলের বাণী।’’

এ থেকে এটাই প্রতিয়মান হয় যে- যে কবিতার বানী তার জ্ঞানের ছন্দে সত্যকে তুলে ধরে, এবং যে কাব্যে শিক্ষণীয় কিছু আছে তা অবশ্যই বিশুদ্ধ ও ভাল। এবং এইসব কাব্য চর্চায় ইসলাম তো কখনো বাঁধা প্রদান করেইনা বরং উৎসাহ প্রদান করে। অপরপক্ষে আমার কবিতা বা গানের ভাষায় যদি আল্লাহদ্রোহী কোন ম্যাসেজ থাকে, যদি মক্কার মুস্রিকদের মতো আমরা অশ্লীন ও অসার ভাষায় কবিতা বা গান লিখি এবং সেইসব কবিতা বা গান ইসলামী মূল্যবোধ ও শিক্ষার বিরুদ্ধে যায় তবে অবশ্যই সেইসব গান হারাম বা নিষিদ্ধ। ঠিক যে কারণে নবীজি অশ্লীন ও অসার কাব্যের বিরোধিতা করেছেন আর ভাল কবিতা চর্চায় উৎসাহ মূলক কমেন্ট করেছেন- ঠিক একই কারণে নবীজি ঐসব গানের বিরুদ্ধাচারণ করেছেন- যেসব গানে অসার কিংবা কলুষতাময় উপাদান বিদ্যমান। তাই আমরা অবশ্যই বলিউডের সেইসব গান পরিহার করবো যেই গানের ভাষায় বলা হয়-‘তুঝমে রাব দিখতাহে ইয়ারা মে কিয়া কারুন…”

চিন্তা করুন- গানের মাধ্যমে নায়ক তার নায়িকার মাঝে তার ‘রবকে’ দেখতে পাচ্ছে। শিরক!!!

এটা চরম সত্য যে তাগুদি সমাজ ব্যবস্থায় এমন কুফুর আর শিরকের ভাষায় কাব্য ও গান ভরপুর। নিশ্চিতভাবে সেসব সঙ্গীত ও কাব্য পরিহার যোগ্য। বর্তমানে খুব কম জন্রার গানেই সত্য উঠে আসে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে ওই কুফরদের অসার গানের জন্য পৃথিবীর সব সঙ্গীতই ইসলামে নিষিদ্ধ।এমন প্রেক্ষাপটে যখন সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সত্যের গানের লিরিকের বড়ই ক্রাইসিস সেখানে ইসলাম আরও হুমকির মুখে পড়ে যখন বন্ধ্যা আলেমগণ রাসুলের হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা করে কাব্য কিংবা সঙ্গীতকেই আক্রমণ করে বসে। অথচ তাদের উচিৎ ছিল এমন সঙ্গীতকে উৎসাহ প্রদান করা যেসব সঙ্গিতে সমাজের অনাচারের মুখশ উন্মোচিত হয়। অথচ নবিজি মিথ্যুক কবিদের মিথ্যার মুখোশ খুলে দেবার জন্য একদল সত্যাশ্রয়ী কবি নিয়জিত করেছিলেন- যারা তাদের সত্য কাব্যের ভাষায় মিথ্যাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছিল। তারা সৃষ্টি করেছিল একটি সত্যাশ্রয়ী সংস্কৃতি। যার পরতে পরতে মিশে ছিল সত্য ও বিপ্লবের আহবান।এই সর্বনাশী কালযুগে আমরা প্রতি নিয়ত কথায় কথায় পাশ্চাত্য সংস্কৃতিকে আক্রমণ করছি। কিন্তু আমরা কি কোন এ যুগে কোন শক্তিশালী সংস্কৃতি সৃষ্টি করতে পারছি?
উত্তর- না!!

আমি ততোক্ষণ অন্য কোন মূল্যবোধকে আক্রমণ করবোনা, যতক্ষন্না আমি আমাদের মূল্যবোধের শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্ব তাদের সম্মুখে উন্মোচিত করতে সক্ষম হই। আমাদের জিহাদ কি শুধুমাত্র কিছু শরিয়া আইন কায়েম করবার জিহাদ- নাকি সমাজের প্রতিটি অঙ্গনে-হোক সেটা রাজনিতি-অর্থনীতি-সাংস্কৃতিক কিংবা সামরিক তথা সমাজের প্রতিটি বিভাগে সত্যকে সমুন্নত করবার জিহাদ…???
বিরুদ্ধাচারিরা এর উত্তর দিবেন দয়া করে??

এমন গোঁড়া আলেমগনের মাত্ত্রারিতিক্ত বাড়াবাড়ির কারণেরই আজ মুসলিম সমাজ কল্যাণময় কোন শক্তিশালী সংস্কৃতি সৃষ্টি করতে ব্যার্থ। অন্ততপক্ষে সেই ৯বম শতাব্দীর উৎকর্ষতার স্মৃতিচারণ ছাড়া অন্য সব সম্ভাবনার পথ আজ প্রতিবন্ধী আলেমদের সঙ্কীর্ণ চিন্তা-ধারার জঞ্জালের নিচে চাঁপা পড়ে রয়েছে। আবার যেসব বিষয়ে বাড়াবাড়ি করা বর্তমানে ১০০% নিশ্চিত ফরজে পরিনত হয়েছে-যেখানে সমাজের প্রতিটি অঙ্গনে আজ ইসলাম হুমকির মুখে-সেখানে আল্লাহ্‌র দ্বীনকে সমুন্নত করতে-জিহাদের দায়িত্ব পালনে বাড়াবাড়ি দেখাতে তারা কিন্তু একটুও প্রস্তুত নয়। যেখানে প্রতি নিয়ত জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে আল্লাহ্‌র দ্বীন আজ আক্রান্ত –পদদলিত!!!
কি দুরভিসন্ধি…!!! ভণ্ডামির একটা সীমা থাকা উচিৎ…!!!

যাই হোক –সঙ্গিতের নিষিদ্ধতা সম্বন্ধে যেসব হাদিস তারা প্রচার করে থাকেন তার প্রতিটি হাদিসই প্রায় সমালোচনা ও সন্দেহের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত এবং এর বেশির ভাগ হাদিসকেই ভুল অর্থে সঙ্গায়ন করা হয়। বিখ্যাত চার ইমাম থেকে শুরু করে বেশিরভাগ আইন বিজ্ঞানীগণই এসব হাদিসের সঠিক অর্থ ও সমাধান প্রদান করেছেন বহু শতাব্দিআগেই। এরসবগুলো যুক্তিখণ্ডন বিশদভাবে করতে গেলে লিখাটি অনেক বড় হয়ে যাবে। তাই সংক্ষেপে ২-১ টি উদাহরণ তুলে ধরার চেষ্টা করবো। চিন্তাশীল বিচার-বুদ্ধিসম্পন্নগন এতেই পরিতুষ্ট হবেন ইনশাল্লাহ! তাছাড়া বিতর্কিত সন্দিহান উদ্বৃতিগুলো বিশদভাবে তুলে ধরার প্রয়োজনবোধ করছিনা যেখানে চার ইমাম ও গাজ্জালির মতো ফুরকানের অধিকারীগণ বহু পূর্বেই বিষয়গুলো সমাধান করে গেছেন তাদের আল্লাহ্‌ প্রদত্ত ফুরকানের প্রভায়। আপনে যদি চার ইমাম ও গাজ্জালির মতো ফকিহদের চ্যালেঞ্জে করতে চান তবে খুব সম্ভবত এই প্রবন্ধ আপনার জন্য নয়।

প্রচলিত হাদিসের একটি হল- “নিশ্চই আল্লাহ্‌ গায়িকা ক্রীতদাসীর বেচাকেনা ও শিক্ষাদান হারাম ঘোষণা করেছেন"।

চিন্তা করুণ- শিক্ষাদানও ইসলামে হারাম…!! যেখানে কুরআনের প্রথম আয়াতই নাজিল হয়েছে-“ পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি শিক্ষা দিয়েছেন…।” জ্ঞানী পাঠকদের আর কোন সন্দেহ থাকবার কোথা নয় যে এটি রাসুলের নামে কতবড় মিথ্যাচার। যেখানে প্রতিটি নর-নারীর জন্য জ্ঞান অর্জন আবশ্যক(ফরজ)।”

মনে রাখা দরকার কোন হাদিসের মৌলিক শিক্ষা যদি কুরআনের বিরুদ্ধে যায় – ফকিহগন সেসব হাদিসে জাল বা দুর্বল হিসেবে প্রতিপন্ন করেন- এটি বিশুদ্ধ হাদিস নির্ণয়ের মুল নীতিমালাগুলোর একটি। এই জন্যই বিশুদ্ধ হাদিস নিরুপনে ইমাম হানাফির মূলনীতি হল-"যদি কোন হাদিস স্বাভাবিক মানবীয় বিচার-বুদ্ধি বিবর্জিত হয়, বুজতে হবে সেটা একটি ফেক (বানোয়াট) হাদিস"-(ইমাম হানিফা)।
আর এই বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগের পথ পরিহার করে-ধর্মান্ধের ন্যায় বাপ-দাদার উত্তরাধিকারে সুত্রে প্রাপ্ত সব কিছুকে অন্ধের মত সত্য মেনে নিয়ে, বুদ্ধিবৃত্তিক নীতিমালাকে আস্তাবলে ছুঁড়ে ফেললে- জাতির নিকট যা আশা করা যায়, তা হল-" যারা বিবেক বুদ্ধি প্রয়োগ করে কাজ করে না তিনি (আল্লাহ্‌) তাদের উপর অকল্যান চাপিয়ে দেন। (সূরা ইউনূসঃ ১০০)।

নবিজি জানতেন যে ভবিষ্যতে মানুষ তার(সাঃ) নামে মিথ্যা রচনা করবে। তাইতো নবীজি বলেছেন- “মনে রেখ- আমার কথা কুরআনকে রদ করবেননা, বরং কুরানের বানী আমার বানীকে রদ করবে।”


তথাপিয় খুঁত অন্বেষণকারীদের বলছি- উক্ত হাদিসকে ইমাম তিরমিজি (রা) ও ইমাম ইবনে কাসির সন্দেহতিত ভাবে দুর্বল বা জয়িফ ঘোষণা করেছেন। ইমাম কাসির বলেছেন- এই হাদিসের বর্ণনাকারী আলি ইনবে জায়েদ, তার উস্তাদ এবং শীর্ষ সকলেই দুর্বল বা সন্দেহযুক্ত।

আবার ইমাম গাজ্জালি (রাঃ) ‘কায়না’ শব্দটির প্রকৃত অর্থ সম্পর্কে বলেছেন-“কায়নার মুলত ঐ কৃতদাসীর অর্থে ব্যবহিত হয় যে মদের আসরে পুরুষদের গান শোনায়। নারির যে গানে(অশ্লীন) যে গানে(মদের আসরে)পুরুষের বিপথে পরিচালিত হবার সম্ভাবনা থাকে তা হারাম। মনিবের সামনে ক্রীতদাসীর গান ওই হাদিস থেকে সঙ্গীত বাতিল হওয়া বুঝায়না, বরং মনিব ব্যতীত অন্য মানুষের সম্মুখেও গান গাওয়া বৈধ-যদি এতে পথভ্রষ্ট হবার সম্ভাবনা না থাকে।”-(আল-গাজ্জালি-এহইয়াউল উলুমুদ্দিন)।

আরও কিছু হাদিস যা সঙ্গীত নিষিদ্ধকরণে গোঁড়াদের ইন্ধন যোগায়-যেমন- রাসুল(সঃ)বলিয়াছেন “আমার পরোয়ারদিগার আমাকে আদেশ করিয়াছেন সকল বাদ্যযন্ত্র ও বাঁশি উচ্ছেদ করিতে।” আরেকটি হাদিসে উল্লেখ আছে-“আমার উম্মাহর মধ্যে এমন লোক থাকবে যারা ব্যভিচার, রেশম, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে বৈধ বানিয়ে ফেলবে।”
মনে রাখা দরকার যে রাসুল এই হাদিসে ম’আজিফ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। তৎকালীন সময়ে মা’আজিফ বলতে অশ্লীল গান গুলোকে বুঝানো হত। আর ব্যভিচার, রেশমী কাপড় ও মদ-এর কথা উল্লেখ করার পর মা’আজিফ শব্দটি উল্লেখ করার মাধ্যমে রাসুল (সঃ) মূলত অশ্লীলগান গুলোকেই হারাম বলে ঘোষনা করেছেন।তাই এই হাদিস এর সঠিক অনুবাদ হবে- ” নিশ্চয়ই আমার উম্মাহ এর মধ্যে একদল লোক থাকবে যারা ব্যভিচার, রেশমী কাপড়, মদ ও বাদ্য-যন্ত্র দ্বারা অশ্লীল গান গুলোকে বৈধ করে নেবে।”

প্রক্ষান্তরে এমন সব হাদীসকে ইবন হাযম, মালিক, ইবনে হাম্বল ও শাফেয়ীর অনুসারীরা দুর্বল বলে ঘোষণা করেছেন ও সন্দেহ পোষণ করেছেন। কাযী আবু বাকার ইবনুল আরাবী তার কিতাব আল আহকাম-এ বলেছেন সঙ্গীত নিষিদ্ধ বলে যেসব হাদীসে দেখা যায়, সেগুলোর একটিও নির্ভরযোগ্য বলে বিবেচিত নয়। ইমাম গাজ্জালিও একই অভিমত পোষণ করেছেন।
ইবনে তাহিরের বক্তব্য, এসব হাদীসের কোনোটার এমনকি একটি মাত্র বর্ণও সত্য ও নির্ভরযোগ্য বলে প্রমাণিত হয় নি। আর ইবনে হাযম তো সরাসরি একথা বলতেও দ্বিধাবোধ করেন নি যে- এ প্রসঙ্গে বর্ণিত সবক’টি হাদীসই ভুয়া ও বানোয়াট। সত্যিকার অর্থে ইসলামের প্রাথমিক ও স্বর্ণযুগের ইতিহাসে সঙ্গীত অনুশীলন কখনই নিশিদ্ধ ছিলনা। কিংবা সঙ্গিতে বাদ্যযন্ত্র ব্যাবহারও তারা ভালভাবে গ্রহন করেছিল।

একদা আয়েশা (রাঃ) যখন এক আনসারের সাথে তার আত্মীয় মহিলার বিবাহ দিয়েছিলেন। তখন রসুল (সাঃ) বলিলেন, হে-‘আয়েশা, তাদের জন্য কি চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করিয়াছে ? আনসারেরাতো চিত্তবিনোদন ভালবাসে (বুখারি)।’

অপর রেওয়াতে আছে-” হজরত আয়েশা (রাঃ) তার নিকটাত্নীয় মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন আনসার বংশের এক ছেলের সাথে।রাসুল আয়েশাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি মেয়েটিকে (বিয়ের কনে) উপহার হিসেবে কোনো জিনিস দিয়েছ? উপস্থিত লোকজন বলল, হ্যাঁ। তিনি প্রশ্ন করলেন, তোমরা কি একজন গায়িকাকে তার সাথে পাঠিয়েছ? না। তখন(সাঃ) তিনি বললেন আনসাররা খুব গান পছন্দ করে। এ কারনে দুলহিনের সাথে তোমরা যদি একটি মেয়ে পাঠাতে যে গাইত।” (ইবনে মাজাহ)।

হজরত আয়েশা(রাঃ) আরেকটি ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায়। তিনি বলেন-“একদিন আমার ঘরে একটি মেয়ে গান গাইছিল। এমন সময় উমর বিন খাত্তাব ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। উমরের (রাঃ) পদধ্বনি শোনামাত্র মেয়েটি ভয়ে পালিয়ে গেল।তা দেখে রাসুল (সঃ) মৃদুভাবে হেসে ফেললেন। তাঁর(সঃ)হাস্যঅবস্থায় উমর(রাঃ) নবীজির ঘরে প্রবেশ করলেন।হজরত উমর (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন- হে আল্লাহ্‌র রাসুল, আপনে কেন হাসছেন? উত্তরে নবিজি বললেন-‘একটি মেয়ে এখানে গান গাইছিল। কিন্তু তোমার পদধ্বনি শোনামাত্র ভয়ে পালিয়ে গেল।’

উমর (রাঃ) বললেন- “আল্লাহ্‌র নবী(সঃ) যে গান শুনছিল তা না শোনা পর্যন্ত আমি নবীগৃহ ত্যাগ করছিনা।”অতঃপর নবীজি মেয়েটিকে ডেকে পাঠালেন এবং তাকে গান গাইতে নির্দেশ দিলেন। আর তিনি তা শুনতে লাগলেন (কাশফ-আল-মাহজুব)।

বুখারীতে আরো একটি ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় যে, রাসূল(সা) যখন মদীনায় প্রবেশ করেন তখন সবাই দ্বফ ও ড্রাম জাতীয় বাদ্য বাজিয়ে গান গাইছিল যে, “তালা’আল বাদরু আলাইনা…”। তখন আবু বকর(রা) তাদেরকে নিষেধ করতে চাইলে রাসূল(সা) বললেন, না- “বরং ইয়াহুদীদের জানতে দাও যে আমাদের ধর্মেও আরাম ও বিনোদনের স্থান রয়েছে।”

বুখারী শরীফে একটি ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়, তা হল- একবার এক মহিলা রাসূল(সা) এর কাছে এসে শপথ করে বলল, “হে রাসূল! আপনি যদি যুদ্ধ থেকে বিজয়ী বেশে ফিরে আসেন তবে আমি একটি গান গাইব।” রাসূল(সাঃ) কিন্তু ঐ মহিলাটিকে এই কথা বলে মন ভেঙ্গে দেননি যে, না…তুমি এটা করতে পারনা। গান গাওয়া হারাম। বরং রাসূল(সা) যুদ্ধ থেকে ফিরএসে মহিলাটিকে তার শপথ পূরণ করার সুযোগ দেন কেননা ইসলাম পূর্বযুগে মহিলাদের কোন শপথ পূরণের সুযোগ দেওয়া হতনা। মহিলাটি খুবই সাধারণ ভাবে একটি গানের কিছু অংশ গাইল।একদা নবীজি এক বিয়ের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণে উপস্থিত হলেন। সেখানে কিছু মেয়ে ছিল যারা দফ বাজাচ্ছিল ও যুদ্ধের শোকগাঁথা গাইছিল। তাদের মধ্যে একজন নবীজিকে(সঃ) দেখতে পেয়ে তার সাথীদের বলে উঠল- এতো এমন এক নবী যিনি ভবিষ্যৎ বলতে পারেন। এই কথা নবীজি শুনতে পেয়ে বললেন- এমন কথা আর কখনোই বলোনা। বরং গাইতে থাক। (বুখারি)।

বিয়ের অনুষ্ঠানে সঙ্গীত তথা গান-বাজনা পরিবেশন করা তখনকার একটি রীতিতে পরিণত হয়েছিল। নবীজি কখনই এই উত্তম চিত্ত বিনেদনের খোরাককে রহিত করেননি। কিংবা সঙ্গীত-কবিতাকে বাতিল ঘোষণা করেননি । বরং নবীজি দু”জন কবিকে পুরস্কৃতও করেছিলেন। ইয়াসির নামক একজন কবি নবীজীর পক্ষে তাগুদি চেতনাধারি কবিদের কাব্যিক ঠাট্টা-বিরূপের বিরুদ্ধে কবিতার মাধ্যমে জবাব দিতেন। তাছাড়া আমরা জানি- মহাবীর খালিদ(রাঃ) একজন কবিকে মোটা অংকের অর্থ দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন। এই ঘটনার কারণে খলিফা উমরের (রাঃ) সাথে অবশ্য খালিদের কিছু ভুল-বঝাবুঝিও হয়। কিন্তু উমর যখন জানতে পারে যে খালিদ কবিকে যে অর্থ প্রদান করেছিল তা তার ব্যক্তিগত সম্পদ থেকে।তখন উমর তার ভুল বুঝতে পারে।নবীজী , সাহাবা-কেরাম, তাবেইন বা তাবে-তাবেয়িনরা কখনই সঙ্গীতকে স্রষ্টার পথে অন্তরায় হিসেবে গণ্য করেননি। এমনকি মুসলমানগণ যখন ক্ষমতার শীর্ষে, যখন মুসলমানগণ স্পেন শাসন করছিল ৩০০ হিজরির পর পর্যন্ত কোন খলিফা, ফকিহ কিংবা মন্ত্রণা পরিশোধের প্রতিনিধিগণ কখনোই গান-বাজনাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেননি।ইসলামের ইতিহাসে এর হাজারও তথ্য-প্রমাণ বিদ্যমান। তাছাড়া নবীজির নিজেও বিয়েতেও তো সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়েছিল। কিছুদিন আগে পাকিস্থানের একটি ব্যান্ড গানগুলো রক ভার্শনে রিলিজ করবার জন্য বন্ধ্যা আলেমগণ তাদের এ্যালবাম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। কি দুরভিসন্ধি…!!
যেখানে স্যাটানিক ব্যান্ড গুলো তাদের গানের ভাষায় স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে প্রস্ন তুলে আমাদের নিকট প্রস্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন-“Where is your God..??” শিরোনামে- সেখানে তাদের কোন মাথাব্যাথা নেই? যেখানে আজ ইরাকের Anti-Islamic Black Metal Band- “Janaja” কুরআনের সত্যতা চ্যালেঞ্জে করে এ্যালবাম বের করছেন-“Brun the pages of Quran” টাইটেলে, সেখানে তাদের কোন মাথাব্যাথা নেই।অথচ এরাই আবার নিজেদের একমাত্র নবীর ভালবাসায় বিভোর হয়ে দাঁড়ি-টুপী-জুব্বা পড়ে নবীর মতো সাঁজার নাটক করেন।

হে নবি পূজারীর দল! নবীজি মুস্রিক কবিদের মিথ্যাশ্রয়ী কাব্যের আক্রমণের জবাব দিয়েছিলেন একদল সত্যাশ্রয়ী কবির মাধ্যমে। আর আজ ব্লাক মেটালের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তোমরা কি ভুমিকা পালন করছ?? আজ যখন ‘Anti-christ’ স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে প্রস্ন তুলে আমাদের নিকট প্রস্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন-“Where is your God..??” নামক গানের টাইটেলে। সেখানে আমাদেরও কি উচিৎ ছিলনা তাদের জবাব স্বরূপ “God Is Everywhere” এর মত টাইটেলের একটি সত্যাশ্রয়ী সুর সৃষ্টি করা!! আজ ‘Anti-Islamic Black Metal’ ব্যান্ড অবতীর্ণ হয়- কিন্তু ‘Islamic Black Metal’ নামে কোন সত্যাশ্রয়ী ব্যান্ড সৃষ্টি করেনা। আজ Children of Bodom এরা ‘prepare for war if you want’ টাইটেলে জিহাদি গান সৃষ্টি করছে- তারা আহলে কিতাবের অনুসারি হয়েও যুদ্ধের গুরুত্ব উপলব্ধি করে গান লিখছেন ‘যদি শান্তি চাও-তবে জিহাদের জন্য তৈরি হও’ যদিও মার্ক-জনদের বিকৃত গস্পেলে জিহাদের উল্লেখ নেই বললেই চলে। অথচ আমাদের কুরান-হাদিসে হাজার-হাজার বার জিহাদের নির্দেশ দেয়া থাকলেও আমরা কোন উদ্দীপক জিহাদের আগুনঝরা বিপ্লবী সঙ্গিত সৃষ্টি করবার চিন্তাও আমাদের আসেনা। আজ মুসলমানগণ সৃষ্টি করে কুফরের সঙ্গিত- ‘ও প্রিয়া,ও প্রিয়া তুমি কোথাই’ হায়রে মুসলমান -আজ আমাদের কি হল? আমরা কোথায় ফিরিয়া যাইতেছি……?? !!

অথচ পশ্চিমা সমাজ আজ তাদের গর্বের মেটাল গানে যে উচ্চমানের বিপ্লবী গান লিখছেন- আমাদের পূর্বপুরুষ সে ধরনের বিপ্লবী গানের কবিতা-গানে গৌরব অর্জন করেছিল সেই ৭তম শতাব্দিতে। এমনকি তখন প্রতিটি বিয়ের অনুষ্ঠানে মুসলিমগণ এসব বিপ্লবি গান ও যুদ্ধের শোঁক-গাঁথার কনসার্ট আয়োজন করতেন। পশ্চিমারা কয়টি বিয়ের বাড়িতে ‘Arch Enemy’ র গান শুনতে চাইবে যেখানে আজও তাদের মেটাল গানগুলো সাধারণ শ্রেণীর মানুষের মস্তিষ্ক ধারণ করতে অক্ষম তাদের প্রতিবন্ধী জ্ঞানের রিক্ততায়। তাহলে একবার চিন্তা করে দেখুন, আরবদের মানুষিক বিকাশ কোন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিল।

আর যদি আমরা ইতিহাসের দিকে দৃকপাত করি তাহলে এটা স্পষ্ট রুপে প্রতিভাত হবে যে – ইসলামের স্বর্ণযুগে আইনের সীমারেখা বজায় রেখে মুসলিম নারীপুরুষ সকলেই কবিতা ও সঙ্গীত চর্চাকে খুব আদরের সাথেই গ্রহন করেছিল। সারাদিনের কর্ম ব্যস্ততা শেষে আরবের নাড়ি-পুরুষ সঙ্গীত রজনীতে অংশ নিত সামান্য চিত্ত বিনেদনের জন্য। যেখানে দফ, বাঁশি , আরবিয় গিটারের তালে সঙ্গীত ছিল প্রধান চিত্ত বিনেদনের খোরাক । এমনকি নবীজীর সবচেয়ে আদরের কন্যা ফাতেমাও তখনকার সময়ে অসামান্য গায়িকা ছিলেন। উত্তর শহরের মহিলারাও খুবই প্রতিভাশিল গায়িকা ছিল। ভাষ্যকারদের মতে- টহলদারির সময় উমরের কঠোর হৃদয়ও সুরের মূর্ছনায় থমকে যেত। নব ঐশী প্রেরনা তাদের সঙ্গিত ও কবিতাকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছিল। কিছুদিন আগেই অজ্ঞানতার যুগে যাদের সঙ্গিত ও কবিতার বার্তা শুধুমাত্র নারী, মদ কিংবা ঘোড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, সেই সংস্কৃতিক অঙ্গনে যোগ হল এক অনন্য আধ্যাত্মিক মাত্রা। যেসব সঙ্গীতে ইতিপূর্বেই তাদের জাগতিক বা পার্থিব আশা-আকাঙ্খা কিংবা ব্যর্থতার গ্লানি ফুটে উঠত ,সেই কবিতা বা সঙ্গীতের মাধ্যমেই এইবার প্রকাশ হতে থাকল তাদের স্রষ্টার মহিমা, প্রকাশ হতে থাকল বিপ্লবী সব-যুদ্ধের গান, শহীদদের শোকগাথা ও কোন এক মহাজাগতিক স্বত্বার মহিমা, অন্যায়-অনিয়মের কথা ইত্যাদি।
বিস্ময়করভাবে এই ধরনের সংগ্রাম বিপ্লবী সঙ্গীত পশ্চিমা অঙ্গনে কিছু heavy metal, trash metal কিংবা melodic death metal জনরাতেই অনুশীলন করা হয়। শরিয়া বোর্ড সেন্সরের মাধ্যমে আজ বর্তমান পৃথিবীতে প্রচলিত বিভিন্ন ঘরানার সঙ্গীতগুলোর বৈধতা যদি বিচার করা হয়, তাহলে- কিছু মেটাল ব্যান্ড যারা তাদের গানের মাধ্যমে সমাজের অনিয়ম তুলে ধরে তারা ব্যাতীত যত পপ সম্রাট ও রাব সম্রাট আছেন- আর যত বলিউডের যত গান আছে তার ৮০% গানই হয়ত নিষিদ্ধ হিসেবে গণ্য হবে। কারণ সমকালীন যুগের সঙ্গীত অঙ্গনগুলো আমরা বিশ্লেষণ করে এটিই অবলোকন করেছি যে- একমাত্র মেটাল মিউজিক গুলোতেই বেশিরভাগ ক্ষেত্ত্রে সমাজের অন্যায়-অনিয়ম তুলে ধরা হয়, অপ্রিয় সত্যগুলো তাদের লিরিক ও বিপ্লবী কণ্ঠের চিৎকারে উঠে আসে- আর ইসলাম আমাদের শেখায় জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে হোক তা পরিবার কিনবা সমাজ অথবা রাষ্ট্র, এক কোথায় সমাজের প্রতিটি বিভাগেই মিত্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ,মিথ্যার মুখোশ উন্মোচিত করতে -এবংহক-বা সত্য ও অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করতে। যে কারণে একজন প্রাকটিচিং মুসলিমের মতো মেটালহেডদেরও অনেক ভ্রুকুটি সহ্য কুরতে হয় এবং তাদের অসামাজিক মনে করা হয় এবং সমাজ তাদের পাগল আখ্যা দিয়ে থাকেন অন্ধকার দুনিয়ার শাশ্বত নিয়ম অনুসারে। কারণ যখনই আপনি মিথ্যার বীরুধে অবস্থান নিবেন- তখনই আপনি তথাপথিত (মুখোশধারী) সুশীল সমাজের ভ্রূকুটি ও অন্ধকারের পিশাচদের আক্রমনের শিকার হবেন। একথা ঠিক যে মেটাল সঙ্গীতই সমকালীন সঙ্গিত জগতে একমাত্র ধারা যা অন্যান্য কলুষিত হিপ-হপ কিনবা বলিউডের গান অপেক্ষা ইসলামী শিক্ষার অধিক নিকটবর্তী । কারণ মেটাল ব্যান্ড গুলোতে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা হয়- আর ইসলামও আমাদের তাই বলে। আর কিছু ব্লাক কিংবা স্যাটানিক ব্যান্ডগুলো ছাড়া মেটালের অন্যান্য শাখায় অশ্লীনতা ও অসাড়তা নেই বললেই চলে।

তাই মেটাহেডদের মধ্যে যারা সঙ্গীত অনুশীলন করেন- তাদের প্রতি আমাদের উপদেশ এই যে- সঙ্গীতের মাধ্যমে যদি আপনেরা আল্লাহ্‌র ক্রোধের পাত্র না হতে চান- তবে অবশ্যই আপনাদের বিশুদ্ধ ধারা বজায় রাখা বাঞ্ছনীয় । সমাজের অনিয়ম ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে আপনাদের লিরিকের মাধ্যমে জিহাদ ঘোষণা করুন। সত্যকে উন্মোচিত করুণ।কিন্তু ভুল করেও –“তুমি আমার জিবন-তুমি আমার মরণ” এই টাইপের লিরিক লিখে জাহান্নাম ক্রয় করবেননা।” কারণ কুরআন ঘোষণা করেছে-“বল-আমার জীবন-মরন-প্রার্থনা ও বিসর্জন সবকিছুই স্রষ্টার তরে নিবেদিত (৬ঃ১৬২)।”

ভাবতে অবাক লাগে যে –জ্ঞানের এই উন্নতশীল ধারার সঙ্গীত যা পশ্চিমা মস্তিষ্ক সবেমাত্র ৩০-৪০ বছর হল ধারণ করতে শিখেছে-সেই একই উচ্চশ্রেণীর আধ্যাত্মিক ও বিপ্লবী সঙ্গীত আরবের সর্বশ্রেণীর বিশ্বাসীদের মধ্যে আন্দোলিত হয়েছিল।শুধু তাই কি!! ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি- মুসলিম আর্মিরা যখনই কোন যুদ্ধ অভিযানে বের হতো, মুস্লিম নারীরাও তাদের সঙ্গে যেত- যেইসব বিশ্বাসী বীরাঙ্গনারা যুদ্ধের প্রাক্কালে তাদের বিপ্লবী কবিতা ও সঙ্গীতের মাধ্যমে মুস্লিম সেনাদের যুদ্ধে দৃঢ়পদ থকবার জন্য অনুপ্রেরণা যোগাতো। আমি প্রশ্ন করতে চাই আমেরিকানরা তাদের কোন যুদ্ধে এমন উদাহরণ সৃষ্টি করতে পেরেছে যেখানে তাদের সেনাদের পেছনে মেটালিকা কিংবা মেগাডেথ বিপ্লবী সঙ্গীতের মাধ্যমে যুদ্ধের ময়দানে তাদের উদ্দীপ্ত করেছে……??

আপনেরা হাজার কৌটি ডলার দিয়েও এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম হবেননা- কারণ আপনাদের জুলুমনীতি ও মেটালিজমের আদর্শ পরস্পর বিরোধী…যদিও আপনেরা সেটা নিয়ে অহমবোধ করেন। আপনাদের- মেটালিকার ‘Sad but true, স্কিড রো এর Quicksand juses এর মতো আধ্যাত্মিক ও ঐশ্বরিক সঙ্গীত কিংবা আর্চিএনিমির War Etarnal এর লিরিকগুলো সেই সপ্তম শতাব্দীর বদর-ওহুদ, কিংবা তৎকালীন মরুবাশীদের বিপ্লবী সঙ্গীত ও শোঁক-কাঁথার লিরিকের সাথে মিলিয়ে দেখুন- আপনে বিস্ময়ে বিমোহিত হতে বাধ্য হবেন, শিহরিত হয়ে উঠবে আপনাদের অন্তর, ভেগে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে আপনাদের মেটালিজমের অহংকার………………………………!!!!!!!

পরিশেষে আক্ষরিক ফ্রেমে আবদ্ধ বন্ধ্যাদের বলতে চাই -ইসলামকে ধ্বংস করে দুই দল-

১) গোঁড়ামির আক্ষরিক ফ্রেমে আবদ্ধ চরম্পন্থি দল ২) অতিরিক্ত উদারপন্থী দল ।

আল-হাসান আল বসরি বলেছেন- “চরম্পন্থা ও উদাসীনদের কার্যকলাপেই মূলত আসল দ্বীন হারিয়ে যায়”

প্রথমদল দল যুক্তি-প্রমানের পথ ছেড়ে একাতারে সবকিছুই নিষিদ্ধ বা হারাম ঘোষণা করবে আর শেষদল অতিরিক্ত উদারতায় আল্লাহ্‌র আইনের সিমারেখা লঙ্ঘন করে সবকিছুই বৈধ ঘোষণা করবে।

প্রথম দল-তারা গোঁড়া মাজাবপন্থি হবে এবং ইস্তিহাদের সব পথ বন্ধ করে দিবে।

আর দ্বিতীয় দল- সকল মাজাবকে তুচ্ছজ্ঞান করে হকপন্থি ইমামদের সকল ভাল ভাল নীতি বিকৃতভাবে খণ্ডন করবে।

প্রকৃত বিষয় এই যে ওইসব বন্ধ্যাগণ কখনোই কুরআন-হাদিসের আক্ষরিক অর্থের বন্দীশালা থেকে কখনই মুক্ত হতে রাজি নয়। আক্ষরিক অর্থের বাহিরে ভাববার কোন যোগ্যতা কিংবা বিজ্ঞতা কিছুই তাদের নেই। এটা তাদের নিকট ঘোরতর পাপ।

মূলত মাত্রাতিরিক্ত গোঁড়ামি ও উদারপন্থি দলের পরস্পর দ্বন্দ্বের রোষানলেই প্রকৃত ইসলাম মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনা ।

ইমাম হানাফি মাতৃভাষায় সালাহ আদায় করতেন বলে মাতৃভাষায় সালাহ বৈধ হয়ে যায়না- তবে আল্লাহ্‌র রাসুল সাল্মান ফার্সিকে মাতৃভাষায় সালাহ আদায়ের অনুমোদন দিয়েছিলেন বলে এটি বৈধ হতেও পারে।

ইমাম গাজ্জালি ‘স্টাডিজেস থিওরি’ সমর্থন করেছেন বলে তা বিজ্ঞানবিশুদ্ধ তত্ত্ব হতে পারেনা- কিন্তু আল-কুরান ‘বিগবাঙ্ক থিওরিকে’ সমর্থন করেছে বলে তা অনস্বীকার্যভাবে বিজ্ঞান-বিশুদ্ধ ফাক্ট ।

ইমাম মালেক হস্তমৈথুন হারাম ঘোষণা করেছেন বলেই- যেমন তা হারাম হয়ে যায়না, আবার ইমাম হাম্বলি হস্তমৈথুন বৈধ-জ্ঞান করেছেন বলেই তা বৈধ হয়ে যায়না। তবে আল্লাহ্‌র কিতাবের তত্ত্ব অনুযায়ী যা হারাম- তা অবশ্যই হারাম। কুরআনে আম-জাম-কাঁঠালের উল্লেখ নেই বলেই আম-জাম-কাঁঠাল ভক্ষণ হারাম নয়। তবে আল্লাহ্‌ ও রাসুল যা হারাম ঘোষণা করেছেন তার বাহিরে সবই বৈধ ।

ইমাম সুফিয়ানি সাওয়ারি বলেন, “যুক্তি-প্রমানের ভিত্তিতে কোন কিছু বৈধ ঘোষণা করা বুদ্ধিদীপ্ততার পরিচয়, আর গোঁড়ামিতেতো যে কেউ কোন কিছুকে হারাম ঘোষণা করতে পারে।” বন্ধ্যা আলেমদের মনগড়া ফতুয়ার জঞ্জালের নিচে যাদের মন সঙ্গীত বিষয়ে সংশয়পূর্ণ-এই রচনাটি তাদের জন্য।যাতে যেসব বিশ্বাসীগণ যারা বিষয়টি নিয়ে হীনমৌনতায় ভোগেন এবং কিছু কাঠ মোল্লার অন্ধ অনুসারীগণ যারা শরিয়াতের এই স্পর্শকাতর বিষয়সমুহও পক্ষে-বিপক্ষে যাচাই না করে একাতারে গান-বাজনাকে হারাম বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন, তারা যাতে বিষয়টির সত্যতা উপলব্ধি করতে সক্ষম হন। ওইসব গোঁড়া আলেমগণ নিজেদের অতিমাত্রায় ধর্মভীরু প্রমাণ করবার জন্য সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও-মূলত তারা সাধারণ বিশ্বাসী জনগণের বিদ্বেষ ছাড়া আর কিছুই অর্জন করেননা!!

যারা সঙ্গীতকে নিষিদ্ধ মনে করেন তাদের প্রতি আমরা এই প্রবন্ধের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করলাম-“আল্লাহ তার বান্দাদের জন্যে যেসব শোভনীয় উপকরণ ও পবিত্র জিবিকা দান করেছেন, কে তা নিষিদ্ধ ঘোষণা করল? (সূরা আরাফ :৩২)।

যদি আপনি বন্ধ্যা আলেমদের অন্ধ অনুসরণ না করে মুক্তমনে ফুরকানের আলোর মানদণ্ডে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চান তবে এর বিরুদ্ধে বিশুদ্ধ ও সুস্পষ্ট দলিল পেশ করুণ যার বিরুদ্ধে সর্বসম্মত আইনবেত্তাগন কোন প্রকার সন্দেহ পোষণ করেননি।এবং ইতিহাসের সত্যতাকে অবশ্যই আপনাকে গ্রহণ করতে হবে যদি সেই সম্বন্ধে বিতর্কের অবকাশ না থাকে- কোন ডিগ্রি বা টাইটেলের অহমে নিজের জ্ঞানকে শ্রেষ্ঠ এবং এই অধমের বক্তব্যকে হেয় প্রতিপন্ন করবেননা।
“কে বলছে এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়-কি বলছে তাই গুরুত্বপূর্ণ।”

সঙ্গীত কিংবা কবিতা মানব মনের গভীর চেতনা ও অনুভূতি প্রকাশের একটি শক্তিশালী মাধ্যম। যা শিল্পেরই একটি অধ্যায়। যে শিল্পের মাধ্যমে কথা,ছন্দ ও সুরের ঐশ্বরিক তালের স্পন্ধনের সমন্বয়ে সৃষ্টি হয় একটি সঙ্গীত। যার মাধ্যমে মানুষ তার মনের গভীর অনুভবগুলো প্রকাশ করে থাকে। একটি কবিতা কিংবা সঙ্গীতের মাধ্যমে সমাজকে অনেক গভীর বার্তা প্রদান করা সম্ভব। পবিত্র কুরানে একটি আয়াতও নেই যেখানে আল্লাহ্‌ সুস্পষ্ট ভাবে সঙ্গীতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। শুধু পবিত্র কুরআন কেন বাইবেল-বেদ-গিতা সহ পূর্ববর্তী একটি ঐশীগ্রন্থও পাওয়া দুষ্কর যেখানে সঙ্গীতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

আবার “কিং ডেভিডকে আমরা দাউদ (আঃ) বলে জানি। তিনি মূলত ধর্মনেতা,যোদ্ধা, জ্ঞানী ব্যক্তি সর্বোপরি একজন নবী ছিলেন। ইতিহাসের পাতায় তাঁকে আমরা দেখতে পাই একজন কবি ও সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবেও” –(সেনানায়ক-মহানবী (সঃ)− যুদ্ধ ও শান্তি −ব্যারিস্টার তমিজুল হক, পৃষ্ঠা)।

আর ইঞ্জিলের তো বহু অধ্যায় ঈশ্বরের কাওয়ালী ও প্রশংসনীয় গানে ভরপুর। আর যেহেতু পবিত্ত্র কুরআন পূর্ববর্তী ঐশীগ্রন্থের সমর্থক এবং কুরআনের কোন আয়াতে যেখানে স্রষ্টা সঙ্গীতকে রদ করেননি-সেখানে সঙ্গিতের মতো এই ঐশ্বরিক উপহারকে বাতিল ঘোষণা করবার অধিকার ওই বন্ধ্যা আলেমদের কে প্রদান করেছে??

হাঁ তবে পবিত্র কুরআনে বিভ্রান্ত কবির নিন্দা করা হয়েছে, এবং তাদের অনুসরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।তবে তার অর্থও এই নয় যে কুরআনে কাব্যচর্চা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। বরং উক্ত আয়াতে সেইসব কবিদের সমালোচনা করা হয়েছে যারা তাদের কাব্যের ভাষায় ইসলাম ও নবীজিকে আক্রমণ করত।

উক্ত আয়াতে বলা হয়েছে-“বিভ্রান্তরাই কবিদের অনুসরণ করে। তুমি কি প্রত্যক্ষ করোনা উদ্ভ্রান্তের ন্যায় তারা ঘুরে বেড়ায়। এবং তারা যা (কবিতার ভাষায়)বলে বাস্তবে তা করেনা। তবে যারা বিশ্বাসস্থাপন করে, সৎকর্ম করে, আল্লাহ্‌র স্মরণে অধিক মাত্রায় নিবিষ্ট এবং অত্যাচারিত হলে নিজেদের আত্মরক্ষায় সচেষ্ট হয়েছে-তাদের জন্য এই বানী প্রযোজ্য নয়।”

যখন পবিত্র কুরআনের এই বানী অবতীর্ণ হল তখন আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা, কাব ইবন মালিক ও হাসসান ইবন সাবিত কাঁদতে কাঁদতে নবীজির নিকট উপস্থিত হয়ে নবিজিকে বলেন- ‘হে আল্লাহ্‌র রাসুল(সঃ)! কবিদের প্রতি এই আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে আর আমরা তো কবি।”

উত্তরে নবীজি বলেন- ‘আগে পুরো আয়াতটি পড়ে দেখো, এখানে বিশ্বাসী(মুমিন)ও সৎকর্মপরায়ণদের কথা বলা হয়নি।’

মুলত উক্ত আয়াতটিতে সেই সব কবিদের বিভ্রান্ত বলা হয়েছে যেই মুস্রিক কবিরা তাদের কবিতার মাধ্যমে নবীজির নামে কুৎসা রটাত এবং অত্যন্ত অশ্লীন ও অসার ছন্দের ভাষায় ইসলাম ও ইসলামের অনুসারীদের আক্রমণ করত। মক্কার মুস্রিকদের কবিতার ভাষায় রাসুল এতোটাই ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন যে তাদের অসার কাব্যের পাল্টা প্রতিউত্তর দেবার জন্য নবীজি তিনজন কবিকে নিয়োজিত করেছিলেন। যারা ইসলাম ও নবীজির হয়ে স্রষ্টাদ্রোহী কবিদের কাব্যিক আক্রমণের প্রতিউত্তর দিতেন। ইসলামের পক্ষে যে কবিগণ আল্লাহ্‌ ও রাসুলের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন এই তিনজনই হল আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা, কাব ইবন মালিক ও হাসসান ইবন সাবিত। এ থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে- সব কিছুরই ব্যাবহারিক দুটি দিক আছে। ভালো আর মন্দ- সৎ এবং অসৎ। এখানে ফলাফল নির্ভর করছে নিয়তের উপর। যেখানে নবীজি বলেছেন- ‘প্রত্যেক মানুষকেই তার নিয়ত এর উপর কর্মফল প্রদান বা বিচার করা হবে।” যেখানে ওইসব মন্দ চরিত্রের মুস্রিক কবিগণ যারা অসার ভাষায় ইসলামকে আক্রমণ করবার জন্য আল্লাহ্‌ তাদের বিভ্রান্ত বলেছেন ঠিকই- কিন্তু তার সাথে যেসব কবি ইমানদার ও সৎ তাদের ক্ষেত্রে এই ‘বিভ্রান্ত’ কথাটি প্রযোজ্য নয় এই ঘোষণাও দিয়েছেন। যারা ইসলামের পক্ষে তাদের কবিতার ভাষায় কুফফার কবিদের বিরুদ্ধে কাব্যযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল।

ঠিক এই কারনেই নবিজী বলেন-” যারা হাতিয়ার দিয়ে আল্লাহ্‌ ও রাসুলকে সাহায্য করেছে, জিহবা দ্বারা সাহায্য করবার জন্য কে তাকে বাঁধা প্রদান করল ?

– উত্তরে কবি ছাবিত বলেন আমি প্রস্তুত।” (শাওকি দায়ফ ২/৪৭)।

এখানে একদল কবি যারা কবিতা লিখেছেন তাদের অসৎ নিয়তে যারা তাদের অসার কবিতার মাধ্যমে সত্যের দ্বীন ইসলামকে আক্রমণ করেছিল। প্রক্ষান্তরে- আরএকদল কবি কবিতা লিখেছে একটি সৎ নিয়তে-হক বা সত্য দ্বীনের পক্ষে মিথ্যা কাব্যকে পরাভুত করার জন্য। তাহলে দেখা যাচ্ছে আমাদের কবিতা কিংবা গান যদি সত্যকে সমুন্নত করবার উদ্দেশ্যে লিখা কিংবা গাওয়া হলে-কখনই তা মন্দ ভাবার কারণ নেই বরং তা অবশ্যই একটি মহৎ ও সৎকর্ম।

নবীজি নিজেও কবিতার প্রতি দুর্বল ছিলেন। তিনি কবিতা শুনতে ভালবাসতেন। সেইসব কবিতা যেসব কবিতায় ভাল ভাল ম্যাসেজ আছে। এই জন্যই তিনি(সঃ)বলেছেন-“যে কবিতা সত্যনিষ্ঠ তা সুন্দর। আর যে কবিতায় সত্যের অপলাপ হয় – তাতে মঙ্গল নেই” (মিস্কাত)।

নবিজি আরও বলেন- ‘কিছু কিছু বাগ্মীতায় যাদু আছে, আর কিছু কবিতায় রয়েছে জ্ঞান ও হিকমত (শাওকি দায়াফ, তারিখ-২-৪৪)।” এছাড়াও সহি বুখারির একটি হাদিসে উল্লেখ আছে- যেখানে নবীজি বলেছেন-“ ভাল কবিতায় নিহিত আছে গভীর জ্ঞান ও কৌশলের বাণী।’’

এ থেকে এটাই প্রতিয়মান হয় যে- যে কবিতার বানী তার জ্ঞানের ছন্দে সত্যকে তুলে ধরে, এবং যে কাব্যে শিক্ষণীয় কিছু আছে তা অবশ্যই বিশুদ্ধ ও ভাল। এবং এইসব কাব্য চর্চায় ইসলাম তো কখনো বাঁধা প্রদান করেইনা বরং উৎসাহ প্রদান করে। অপরপক্ষে আমার কবিতা বা গানের ভাষায় যদি আল্লাহদ্রোহী কোন ম্যাসেজ থাকে, যদি মক্কার মুস্রিকদের মতো আমরা অশ্লীন ও অসার ভাষায় কবিতা বা গান লিখি এবং সেইসব কবিতা বা গান ইসলামী মূল্যবোধ ও শিক্ষার বিরুদ্ধে যায় তবে অবশ্যই সেইসব গান হারাম বা নিষিদ্ধ। ঠিক যে কারণে নবীজি অশ্লীন ও অসার কাব্যের বিরোধিতা করেছেন আর ভাল কবিতা চর্চায় উৎসাহ মূলক কমেন্ট করেছেন- ঠিক একই কারণে নবীজি ঐসব গানের বিরুদ্ধাচারণ করেছেন- যেসব গানে অসার কিংবা কলুষতাময় উপাদান বিদ্যমান। তাই আমরা অবশ্যই বলিউডের সেইসব গান পরিহার করবো যেই গানের ভাষায় বলা হয়-‘তুঝমে রাব দিখতাহে ইয়ারা মে কিয়া কারুন…”

চিন্তা করুন- গানের মাধ্যমে নায়ক তার নায়িকার মাঝে তার ‘রবকে’ দেখতে পাচ্ছে। শিরক!!!

এটা চরম সত্য যে তাগুদি সমাজ ব্যবস্থায় এমন কুফুর আর শিরকের ভাষায় কাব্য ও গান ভরপুর। নিশ্চিতভাবে সেসব সঙ্গীত ও কাব্য পরিহার যোগ্য। বর্তমানে খুব কম জন্রার গানেই সত্য উঠে আসে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে ওই কুফরদের অসার গানের জন্য পৃথিবীর সব সঙ্গীতই ইসলামে নিষিদ্ধ।এমন প্রেক্ষাপটে যখন সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সত্যের গানের লিরিকের বড়ই ক্রাইসিস সেখানে ইসলাম আরও হুমকির মুখে পড়ে যখন বন্ধ্যা আলেমগণ রাসুলের হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা করে কাব্য কিংবা সঙ্গীতকেই আক্রমণ করে বসে। অথচ তাদের উচিৎ ছিল এমন সঙ্গীতকে উৎসাহ প্রদান করা যেসব সঙ্গিতে সমাজের অনাচারের মুখশ উন্মোচিত হয়। অথচ নবিজি মিথ্যুক কবিদের মিথ্যার মুখোশ খুলে দেবার জন্য একদল সত্যাশ্রয়ী কবি নিয়জিত করেছিলেন- যারা তাদের সত্য কাব্যের ভাষায় মিথ্যাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছিল। তারা সৃষ্টি করেছিল একটি সত্যাশ্রয়ী সংস্কৃতি। যার পরতে পরতে মিশে ছিল সত্য ও বিপ্লবের আহবান।এই সর্বনাশী কালযুগে আমরা প্রতি নিয়ত কথায় কথায় পাশ্চাত্য সংস্কৃতিকে আক্রমণ করছি। কিন্তু আমরা কি কোন এ যুগে কোন শক্তিশালী সংস্কৃতি সৃষ্টি করতে পারছি?

আমি ততোক্ষণ অন্য কোন মূল্যবোধকে আক্রমণ করবোনা, যতক্ষন্না আমি আমাদের মূল্যবোধের শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্ব তাদের সম্মুখে উন্মোচিত করতে সক্ষম হই। আমাদের জিহাদ কি শুধুমাত্র কিছু শরিয়া আইন কায়েম করবার জিহাদ- নাকি সমাজের প্রতিটি অঙ্গনে-হোক সেটা রাজনিতি-অর্থনীতি-সাংস্কৃতিক কিংবা সামরিক তথা সমাজের প্রতিটি বিভাগে সত্যকে সমুন্নত করবার জিহাদ…??? বিরুদ্ধাচারিরা এর উত্তর দিবেন দয়া করে??

এমন গোঁড়া আলেমগনের মাত্ত্রারিতিক্ত বাড়াবাড়ির কারণেরই আজ মুসলিম সমাজ কল্যাণময় কোন শক্তিশালী সংস্কৃতি সৃষ্টি করতে ব্যার্থ। অন্ততপক্ষে সেই ৯বম শতাব্দীর উৎকর্ষতার স্মৃতিচারণ ছাড়া অন্য সব সম্ভাবনার পথ আজ প্রতিবন্ধী আলেমদের সঙ্কীর্ণ চিন্তা-ধারার জঞ্জালের নিচে চাঁপা পড়ে রয়েছে। আবার যেসব বিষয়ে বাড়াবাড়ি করা বর্তমানে ১০০% নিশ্চিত ফরজে পরিনত হয়েছে-যেখানে সমাজের প্রতিটি অঙ্গনে আজ ইসলাম হুমকির মুখে-সেখানে আল্লাহ্‌র দ্বীনকে সমুন্নত করতে-জিহাদের দায়িত্ব পালনে বাড়াবাড়ি দেখাতে তারা কিন্তু একটুও প্রস্তুত নয়। যেখানে প্রতি নিয়ত জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে আল্লাহ্‌র দ্বীন আজ আক্রান্ত –পদদলিত!!! কি দুরভিসন্ধি…!!! ভণ্ডামির একটা সীমা থাকা উচিৎ…!!!

যাই হোক –সঙ্গিতের নিষিদ্ধতা সম্বন্ধে যেসব হাদিস তারা প্রচার করে থাকেন তার প্রতিটি হাদিসই প্রায় সমালোচনা ও সন্দেহের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত এবং এর বেশির ভাগ হাদিসকেই ভুল অর্থে সঙ্গায়ন করা হয়। বিখ্যাত চার ইমাম থেকে শুরু করে বেশিরভাগ আইন বিজ্ঞানীগণই এসব হাদিসের সঠিক অর্থ ও সমাধান প্রদান করেছেন বহু শতাব্দিআগেই। এরসবগুলো যুক্তিখণ্ডন বিশদভাবে করতে গেলে লিখাটি অনেক বড় হয়ে যাবে। তাই সংক্ষেপে ২-১ টি উদাহরণ তুলে ধরার চেষ্টা করবো। চিন্তাশীল বিচার-বুদ্ধিসম্পন্নগন এতেই পরিতুষ্ট হবেন ইনশাল্লাহ! তাছাড়া বিতর্কিত সন্দিহান উদ্বৃতিগুলো বিশদভাবে তুলে ধরার প্রয়োজনবোধ করছিনা যেখানে চার ইমাম ও গাজ্জালির মতো ফুরকানের অধিকারীগণ বহু পূর্বেই বিষয়গুলো সমাধান করে গেছেন তাদের আল্লাহ্‌ প্রদত্ত ফুরকানের প্রভায়। আপনে যদি চার ইমাম ও গাজ্জালির মতো ফকিহদের চ্যালেঞ্জে করতে চান তবে খুব সম্ভবত এই প্রবন্ধ আপনার জন্য নয়।

প্রচলিত হাদিসের একটি হল- “নিশ্চই আল্লাহ্‌ গায়িকা ক্রীতদাসীর বেচাকেনা ও শিক্ষাদান হারাম ঘোষণা করেছেন।

চিন্তা করুণ- শিক্ষাদানও ইসলামে হারাম…!! যেখানে কুরআনের প্রথম আয়াতই নাজিল হয়েছে-“ পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি শিক্ষা দিয়েছেন…।” জ্ঞানী পাঠকদের আর কোন সন্দেহ থাকবার কোথা নয় যে এটি রাসুলের নামে কতবড় মিথ্যাচার। যেখানে প্রতিটি নর-নারীর জন্য জ্ঞান অর্জন আবশ্যক(ফরজ)।”

মনে রাখা দরকার কোন হাদিসের মৌলিক শিক্ষা যদি কুরআনের বিরুদ্ধে যায় – ফকিহগন সেসব হাদিসে জাল বা দুর্বল হিসেবে প্রতিপন্ন করেন- এটি বিশুদ্ধ হাদিস নির্ণয়ের মুল নীতিমালাগুলোর একটি।

নবিজি জানতেন যে ভবিষ্যতে মানুষ তার(সাঃ) নামে মিথ্যা রচনা করবে। তাইতো নবীজি বলেছেন- “মনে রেখ- আমার কথা কুরআনকে রদ করবেননা, বরং কুরানের বানী আমার বানীকে রদ করবে।”



তথাপিয় খুঁত অন্বেষণকারীদের বলছি- উক্ত হাদিসকে ইমাম তিরমিজি (রা) ও ইমাম ইবনে কাসির সন্দেহতিত ভাবে দুর্বল বা জয়িফ ঘোষণা করেছেন। ইমাম কাসির বলেছেন- এই হাদিসের বর্ণনাকারী আলি ইনবে জায়েদ, তার উস্তাদ এবং শীর্ষ সকলেই দুর্বল বা সন্দেহযুক্ত।
আবার ইমাম গাজ্জালি (রাঃ) ‘কায়না’ শব্দটির প্রকৃত অর্থ সম্পর্কে বলেছেন-“কায়নার মুলত ঐ কৃতদাসীর অর্থে ব্যবহিত হয় যে মদের আসরে পুরুষদের গান শোনায়। নারির যে গানে(অশ্লীন) যে গানে(মদের আসরে)পুরুষের বিপথে পরিচালিত হবার সম্ভাবনা থাকে তা হারাম। মনিবের সামনে ক্রীতদাসীর গান ওই হাদিস থেকে সঙ্গীত বাতিল হওয়া বুঝায়না, বরং মনিব ব্যতীত অন্য মানুষের সম্মুখেও গান গাওয়া বৈধ-যদি এতে পথভ্রষ্ট হবার সম্ভাবনা না থাকে।”-(আল-গাজ্জালি-এহইয়াউল উলুমুদ্দিন)।

আরও কিছু হাদিস যা সঙ্গীত নিষিদ্ধকরণে গোঁড়াদের ইন্ধন যোগায়-যেমন- রাসুল(সঃ)বলিয়াছেন “আমার পরোয়ারদিগার আমাকে আদেশ করিয়াছেন সকল বাদ্যযন্ত্র ও বাঁশি উচ্ছেদ করিতে।” আরেকটি হাদিসে উল্লেখ আছে-“আমার উম্মাহর মধ্যে এমন লোক থাকবে যারা ব্যভিচার, রেশম, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে বৈধ বানিয়ে ফেলবে।”
মনে রাখা দরকার যে রাসুল এই হাদিসে ম’আজিফ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। তৎকালীন সময়ে মা’আজিফ বলতে অশ্লীল গান গুলোকে বুঝানো হত। আর ব্যভিচার, রেশমী কাপড় ও মদ-এর কথা উল্লেখ করার পর মা’আজিফ শব্দটি উল্লেখ করার মাধ্যমে রাসুল (সঃ) মূলত অশ্লীলগান গুলোকেই হারাম বলে ঘোষনা করেছেন।তাই এই হাদিস এর সঠিক অনুবাদ হবে- ” নিশ্চয়ই আমার উম্মাহ এর মধ্যে একদল লোক থাকবে যারা ব্যভিচার, রেশমী কাপড়, মদ ও বাদ্য-যন্ত্র দ্বারা অশ্লীল গান গুলোকে বৈধ করে নেবে।”

প্রক্ষান্তরে এমন সব হাদীসকে ইবন হাযম, মালিক, ইবনে হাম্বল ও শাফেয়ীর অনুসারীরা দুর্বল বলে ঘোষণা করেছেন ও সন্দেহ পোষণ করেছেন। কাযী আবু বাকার ইবনুল আরাবী তার কিতাব আল আহকাম-এ বলেছেন সঙ্গীত নিষিদ্ধ বলে যেসব হাদীসে দেখা যায়, সেগুলোর একটিও নির্ভরযোগ্য বলে বিবেচিত নয়। ইমাম গাজ্জালিও একই অভিমত পোষণ করেছেন।
ইবনে তাহিরের বক্তব্য, এসব হাদীসের কোনোটার এমনকি একটি মাত্র বর্ণও সত্য ও নির্ভরযোগ্য বলে প্রমাণিত হয় নি। আর ইবনে হাযম তো সরাসরি একথা বলতেও দ্বিধাবোধ করেন নি যে- এ প্রসঙ্গে বর্ণিত সবক’টি হাদীসই ভুয়া ও বানোয়াট। সত্যিকার অর্থে ইসলামের প্রাথমিক ও স্বর্ণযুগের ইতিহাসে সঙ্গীত অনুশীলন কখনই নিশিদ্ধ ছিলনা। কিংবা সঙ্গিতে বাদ্যযন্ত্র ব্যাবহারও তারা ভালভাবে গ্রহন করেছিল।

একদা আয়েশা (রাঃ) যখন এক আনসারের সাথে তার আত্মীয় মহিলার বিবাহ দিয়েছিলেন। তখন রসুল (সাঃ) বলিলেন, হে-‘আয়েশা, তাদের জন্য কি চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করিয়াছে ? আনসারেরাতো চিত্তবিনোদন ভালবাসে (বুখারি)।’

অপর রেওয়াতে আছে-” হজরত আয়েশা (রাঃ) তার নিকটাত্নীয় মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন আনসার বংশের এক ছেলের সাথে।রাসুল আয়েশাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি মেয়েটিকে (বিয়ের কনে) উপহার হিসেবে কোনো জিনিস দিয়েছ? উপস্থিত লোকজন বলল, হ্যাঁ। তিনি প্রশ্ন করলেন, তোমরা কি একজন গায়িকাকে তার সাথে পাঠিয়েছ? না। তখন(সাঃ) তিনি বললেন আনসাররা খুব গান পছন্দ করে। এ কারনে দুলহিনের সাথে তোমরা যদি একটি মেয়ে পাঠাতে যে গাইত।” (ইবনে মাজাহ)।

হজরত আয়েশা(রাঃ) আরেকটি ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায়। তিনি বলেন-“একদিন আমার ঘরে একটি মেয়ে গান গাইছিল। এমন সময় উমর বিন খাত্তাব ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। উমরের (রাঃ) পদধ্বনি শোনামাত্র মেয়েটি ভয়ে পালিয়ে গেল।তা দেখে রাসুল (সঃ) মৃদুভাবে হেসে ফেললেন। তাঁর(সঃ)হাস্যঅবস্থায় উমর(রাঃ) নবীজির ঘরে প্রবেশ করলেন।হজরত উমর (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন- হে আল্লাহ্‌র রাসুল, আপনে কেন হাসছেন? উত্তরে নবিজি বললেন-‘একটি মেয়ে এখানে গান গাইছিল। কিন্তু তোমার পদধ্বনি শোনামাত্র ভয়ে পালিয়ে গেল।’

উমর (রাঃ) বললেন- “আল্লাহ্‌র নবী(সঃ) যে গান শুনছিল তা না শোনা পর্যন্ত আমি নবীগৃহ ত্যাগ করছিনা।”অতঃপর নবীজি মেয়েটিকে ডেকে পাঠালেন এবং তাকে গান গাইতে নির্দেশ দিলেন। আর তিনি তা শুনতে লাগলেন (কাশফ-আল-মাহজুব)।

বুখারীতে আরো একটি ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় যে, রাসূল(সা) যখন মদীনায় প্রবেশ করেন তখন সবাই দ্বফ ও ড্রাম জাতীয় বাদ্য বাজিয়ে গান গাইছিল যে, “তালা’আল বাদরু আলাইনা…”। তখন আবু বকর(রা) তাদেরকে নিষেধ করতে চাইলে রাসূল(সা) বললেন, না- “বরং ইয়াহুদীদের জানতে দাও যে আমাদের ধর্মেও আরাম ও বিনোদনের স্থান রয়েছে।”
বুখারী শরীফে একটি ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়, তা হল- একবার এক মহিলা রাসূল(সা) এর কাছে এসে শপথ করে বলল, “হে রাসূল! আপনি যদি যুদ্ধ থেকে বিজয়ী বেশে ফিরে আসেন তবে আমি একটি গান গাইব।” রাসূল(সাঃ) কিন্তু ঐ মহিলাটিকে এই কথা বলে মন ভেঙ্গে দেননি যে, না…তুমি এটা করতে পারনা। গান গাওয়া হারাম। বরং রাসূল(সা) যুদ্ধ থেকে ফিরএসে মহিলাটিকে তার শপথ পূরণ করার সুযোগ দেন কেননা ইসলাম পূর্বযুগে মহিলাদের কোন শপথ পূরণের সুযোগ দেওয়া হতনা। মহিলাটি খুবই সাধারণ ভাবে একটি গানের কিছু অংশ গাইল।একদা নবীজি এক বিয়ের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণে উপস্থিত হলেন। সেখানে কিছু মেয়ে ছিল যারা দফ বাজাচ্ছিল ও যুদ্ধের শোকগাঁথা গাইছিল। তাদের মধ্যে একজন নবীজিকে(সঃ) দেখতে পেয়ে তার সাথীদের বলে উঠল- এতো এমন এক নবী যিনি ভবিষ্যৎ বলতে পারেন। এই কথা নবীজি শুনতে পেয়ে বললেন- এমন কথা আর কখনোই বলোনা। বরং গাইতে থাক। (বুখারি)।

বিয়ের অনুষ্ঠানে সঙ্গীত তথা গান-বাজনা পরিবেশন করা তখনকার একটি রীতিতে পরিণত হয়েছিল। নবীজি কখনই এই উত্তম চিত্ত বিনেদনের খোরাককে রহিত করেননি। কিংবা সঙ্গীত-কবিতাকে বাতিল ঘোষণা করেননি । বরং নবীজি দু”জন কবিকে পুরস্কৃতও করেছিলেন। ইয়াসির নামক একজন কবি নবীজীর পক্ষে তাগুদি চেতনাধারি কবিদের কাব্যিক ঠাট্টা-বিরূপের বিরুদ্ধে কবিতার মাধ্যমে জবাব দিতেন। তাছাড়া আমরা জানি- মহাবীর খালিদ(রাঃ) একজন কবিকে মোটা অংকের অর্থ দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন। এই ঘটনার কারণে খলিফা উমরের (রাঃ) সাথে অবশ্য খালিদের কিছু ভুল-বঝাবুঝিও হয়। কিন্তু উমর যখন জানতে পারে যে খালিদ কবিকে যে অর্থ প্রদান করেছিল তা তার ব্যক্তিগত সম্পদ থেকে।তখন উমর তার ভুল বুঝতে পারে।নবীজী , সাহাবা-কেরাম, তাবেইন বা তাবে-তাবেয়িনরা কখনই সঙ্গীতকে স্রষ্টার পথে অন্তরায় হিসেবে গণ্য করেননি। এমনকি মুসলমানগণ যখন ক্ষমতার শীর্ষে, যখন মুসলমানগণ স্পেন শাসন করছিল ৩০০ হিজরির পর পর্যন্ত কোন খলিফা, ফকিহ কিংবা মন্ত্রণা পরিশোধের প্রতিনিধিগণ কখনোই গান-বাজনাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেননি।ইসলামের ইতিহাসে এর হাজারও তথ্য-প্রমাণ বিদ্যমান। তাছাড়া নবীজির নিজেও বিয়েতেও তো সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়েছিল। কিছুদিন আগে পাকিস্থানের একটি ব্যান্ড গানগুলো রক ভার্শনে রিলিজ করবার জন্য বন্ধ্যা আলেমগণ তাদের এ্যালবাম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। কি দুরভিসন্ধি…!!
যেখানে স্যাটানিক ব্যান্ড গুলো তাদের গানের ভাষায় স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে প্রস্ন তুলে আমাদের নিকট প্রস্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন-“Where is your God..??” শিরোনামে- সেখানে তাদের কোন মাথাব্যাথা নেই? যেখানে আজ ইরাকের Anti-Islamic Black Metal Band- “Janaja” কুরআনের সত্যতা চ্যালেঞ্জে করে এ্যালবাম বের করছেন-“Brun the pages of Quran” টাইটেলে, সেখানে তাদের কোন মাথাব্যাথা নেই।অথচ এরাই আবার নিজেদের একমাত্র নবীর ভালবাসায় বিভোর হয়ে দাঁড়ি-টুপী-জুব্বা পড়ে নবীর মতো সাঁজার নাটক করেন।

হে নবি পূজারীর দল! নবীজি মুস্রিক কবিদের মিথ্যাশ্রয়ী কাব্যের আক্রমণের জবাব দিয়েছিলেন একদল সত্যাশ্রয়ী কবির মাধ্যমে। আর আজ ব্লাক মেটালের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তোমরা কি ভুমিকা পালন করছ?? আজ যখন ‘Anti-christ’ স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে প্রস্ন তুলে আমাদের নিকট প্রস্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন-“Where is your God..??” নামক গানের টাইটেলে। সেখানে আমাদেরও কি উচিৎ ছিলনা তাদের জবাব স্বরূপ “God Is Everywhere” এর মত টাইটেলের একটি সত্যাশ্রয়ী সুর সৃষ্টি করা!! আজ ‘Anti-Islamic Black Metal’ ব্যান্ড অবতীর্ণ হয়- কিন্তু ‘Islamic Black Metal’ নামে কোন সত্যাশ্রয়ী ব্যান্ড সৃষ্টি করেনা। আজ Children of Bodom এরা ‘prepare for war if you want’ টাইটেলে জিহাদি গান সৃষ্টি করছে- তারা আহলে কিতাবের অনুসারি হয়েও যুদ্ধের গুরুত্ব উপলব্ধি করে গান লিখছেন ‘যদি শান্তি চাও-তবে জিহাদের জন্য তৈরি হও’ যদিও মার্ক-জনদের বিকৃত গস্পেলে জিহাদের উল্লেখ নেই বললেই চলে। অথচ আমাদের কুরান-হাদিসে হাজার-হাজার বার জিহাদের নির্দেশ দেয়া থাকলেও আমরা কোন উদ্দীপক জিহাদের আগুনঝরা বিপ্লবী সঙ্গিত সৃষ্টি করবার চিন্তাও আমাদের আসেনা। আজ মুসলমানগণ সৃষ্টি করে কুফরের সঙ্গিত- ‘ও প্রিয়া,ও প্রিয়া তুমি কোথাই’ হায়রে মুসলমান -আজ আমাদের কি হল? আমরা কোথাই ফিরিয়া যাইতেছি…… !!!

অথচ পশ্চিমা সমাজ আজ তাদের গর্বের মেটাল গানে যে উচ্চমানের বিপ্লবী গান লিখছেন- আমাদের পূর্বপুরুষ সে ধরনের বিপ্লবী গানের কবিতা-গানে গৌরব অর্জন করেছিল সেই ৭তম শতাব্দিতে। এমনকি তখন প্রতিটি বিয়ের অনুষ্ঠানে মুসলিমগণ এসব বিপ্লবি গান ও যুদ্ধের শোঁক-গাঁথার কনসার্ট আয়োজন করতেন। পশ্চিমারা কয়টি বিয়ের বাড়িতে ‘Arch Enemy’ র গান শুনতে চাইবে যেখানে আজও তাদের মেটাল গানগুলো সাধারণ শ্রেণীর মানুষের মস্তিষ্ক ধারণ করতে অক্ষম তাদের প্রতিবন্ধী জ্ঞানের রিক্ততায়। তাহলে একবার চিন্তা করে দেখুন, আরবদের মানুষিক বিকাশ কোন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিল।

আর যদি আমরা ইতিহাসের দিকে দৃকপাত করি তাহলে এটা স্পষ্ট রুপে প্রতিভাত হবে যে – ইসলামের স্বর্ণযুগে আইনের সীমারেখা বজায় রেখে মুসলিম নারীপুরুষ সকলেই কবিতা ও সঙ্গীত চর্চাকে খুব আদরের সাথেই গ্রহন করেছিল। সারাদিনের কর্ম ব্যস্ততা শেষে আরবের নাড়ি-পুরুষ সঙ্গীত রজনীতে অংশ নিত সামান্য চিত্ত বিনেদনের জন্য। যেখানে দফ, বাঁশি , আরবিয় গিটারের তালে সঙ্গীত ছিল প্রধান চিত্ত বিনেদনের খোরাক । এমনকি নবীজীর সবচেয়ে আদরের কন্যা ফাতেমাও তখনকার সময়ে অসামান্য গায়িকা ছিলেন। উত্তর শহরের মহিলারাও খুবই প্রতিভাশিল গায়িকা ছিল। ভাষ্যকারদের মতে- টহলদারির সময় কোঠর হৃদয় উমরও তাদের গান শুনে থমকে যেত। নব ঐশী প্রেরনা তাদের সঙ্গিত ও কবিতাকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছিল। কিছুদিন আগেই অজ্ঞানতার যুগে যাদের সঙ্গিত ও কবিতার বার্তা শুধুমাত্র নারী, মদ কিংবা ঘোড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, সেই সংস্কৃতিক অঙ্গনে যোগ হল এক অনন্য আধ্যাত্মিক মাত্রা। যেসব সঙ্গীতে ইতিপূর্বেই তাদের জাগতিক বা পার্থিব আশা-আকাঙ্খা কিংবা ব্যর্থতার গ্লানি ফুটে উঠত ,সেই কবিতা বা সঙ্গীতের মাধ্যমেই এইবার প্রকাশ হতে থাকল তাদের স্রষ্টার মহিমা, প্রকাশ হতে থাকল বিপ্লবী সব-যুদ্ধের গান, শহীদদের শোকগাথা ও কোন এক মহাজাগতিক স্বত্বার মহিমা, অন্যায়-অনিয়মের কথা ইত্যাদি। বিস্ময়করভাবে এই ধরনের সংগ্রাম বিপ্লবী সঙ্গীত পশ্চিমা অঙ্গনে কিছু heavy metal, trash metal কিংবা melodic death metal জনরাতেই অনুশীলন করা হয়। শরিয়া বোর্ড সেন্সরের মাধ্যমে আজ বর্তমান পৃথিবীতে প্রচলিত বিভিন্ন ঘরানার সঙ্গীতগুলোর বৈধতা যদি বিচার করা হয়, তাহলে- কিছু মেটাল ব্যান্ড যারা তাদের গানের মাধ্যমে সমাজের অনিয়ম তুলে ধরে তারা ব্যাতীত যত পপ সম্রাট ও রাব সম্রাট আছেন- আর যত বলিউডের যত গান আছে তার ৮০% গানই হয়ত নিষিদ্ধ হিসেবে গণ্য হবে। কারণ সমকালীন যুগের সঙ্গীত অঙ্গনগুলো আমরা বিশ্লেষণ করে এটিই অবলোকন করেছি যে- একমাত্র মেটাল মিউজিক গুলোতেই বেশিরভাগ ক্ষেত্ত্রে সমাজের অন্যায়-অনিয়ম তুলে ধরা হয়, অপ্রিয় সত্যগুলো তাদের লিরিক ও বিপ্লবী কণ্ঠের চিৎকারে উঠে আসে- আর ইসলাম আমাদের শেখায় জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে হোক তা পরিবার কিনবা সমাজ অথবা রাষ্ট্র, এক কোথায় সমাজের প্রতিটি বিভাগেই মিত্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ,মিথ্যার মুখোশ উন্মোচিত করতে -এবংহক-বা সত্য ও অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করতে। যে কারণে একজন প্রাকটিচিং মুসলিমের মতো মেটালহেডদেরও অনেক ভ্রুকুটি সহ্য কুরতে হয় এবং তাদের অসামাজিক মনে করা হয় এবং সমাজ তাদের পাগল আখ্যা দিয়ে থাকেন অন্ধকার দুনিয়ার শাশ্বত নিয়ম অনুসারে। কারণ যখনই আপনি মিথ্যার বীরুধে অবস্থান নিবেন- তখনই আপনি তথাপথিত (মুখোশধারী) সুশীল সমাজের ভ্রূকুটি ও অন্ধকারের পিশাচদের আক্রমনের শিকার হবেন। একথা ঠিক যে মেটাল সঙ্গীতই সমকালীন সঙ্গিত জগতে একমাত্র ধারা যা অন্যান্য কলুষিত হিপ-হপ কিনবা বলিউডের গান অপেক্ষা ইসলামী শিক্ষার অধিক নিকটবর্তী । কারণ মেটাল ব্যান্ড গুলোতে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা হয়- আর ইসলামও আমাদের তাই বলে। আর কিছু ব্লাক কিংবা স্যাটানিক ব্যান্ডগুলো ছাড়া মেটালের অন্যান্য শাখায় অশ্লীনতা ও অসাড়তা নেই বললেই চলে।

তাই মেটাহেডদের মধ্যে যারা সঙ্গীত অনুশীলন করেন- তাদের প্রতি আমাদের উপদেশ এই যে- সঙ্গীতের মাধ্যমে যদি আপনেরা আল্লাহ্‌র ক্রোধের পাত্র না হতে চান- তবে অবশ্যই আপনাদের বিশুদ্ধ ধারা বজায় রাখা বাঞ্ছনীয় । সমাজের অনিয়ম ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে আপনাদের লিরিকের মাধ্যমে জিহাদ ঘোষণা করুন। সত্যকে উন্মোচিত করুণ।কিন্তু ভুল করেও –“তুমি আমার জিবন-তুমি আমার মরণ” এই টাইপের লিরিক লিখে জাহান্নাম ক্রয় করবেননা।” কারণ কুরআন ঘোষণা করেছে-“বল-আমার জীবন-মরন-প্রার্থনা ও বিসর্জন সবকিছুই স্রষ্টার তরে নিবেদিত (৬ঃ১৬২)।”

ভাবতে অবাক লাগে যে –জ্ঞানের এই উন্নতশীল ধারার সঙ্গীত যা পশ্চিমা মস্তিষ্ক সবেমাত্র ৩০-৪০ বছর হল ধারণ করতে শিখেছে-সেই একই উচ্চশ্রেণীর আধ্যাত্মিক ও বিপ্লবী সঙ্গীত আরবের সর্বশ্রেণীর বিশ্বাসীদের মধ্যে আন্দোলিত হয়েছিল।শুধু তাই কি!! ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি- মুসলিম আর্মিরা যখনই কোন যুদ্ধ অভিযানে বের হতো, মুস্লিম নারীরাও তাদের সঙ্গে যেত- যেইসব বিশ্বাসী বীরাঙ্গনারা যুদ্ধের প্রাক্কালে তাদের বিপ্লবী কবিতা ও সঙ্গীতের মাধ্যমে মুস্লিম সেনাদের যুদ্ধে দৃঢ়পদ থকবার জন্য অনুপ্রেরণা যোগাতো। আমি প্রশ্ন করতে চাই আমেরিকানরা তাদের কোন যুদ্ধে এমন উদাহরণ সৃষ্টি করতে পেরেছে যেখানে তাদের সেনাদের পেছনে মেটালিকা কিংবা মেগাডেথ বিপ্লবী সঙ্গীতের মাধ্যমে যুদ্ধের ময়দানে তাদের উদ্দীপ্ত করেছে……??

আপনেরা হাজার কৌটি ডলার দিয়েও এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম হবেননা- কারণ আপনাদের জুলুমনীতি ও মেটালিজমের আদর্শ পরস্পর বিরোধী…যদিও আপনেরা সেটা নিয়ে অহমবোধ করেন। আপনাদের- মেটালিকার ‘Sad but true, স্কিড রো এর Quicksand juses এর মতো আধ্যাত্মিক ও ঐশ্বরিক সঙ্গীত কিংবা আর্চিএনিমির War Etarnal এর লিরিকগুলো সেই সপ্তম শতাব্দীর বদর-ওহুদ, কিংবা তৎকালীন মরুবাশীদের বিপ্লবী সঙ্গীত ও শোঁক-কাঁথার লিরিকের সাথে মিলিয়ে দেখুন- আপনে বিস্ময়ে বিমোহিত হতে বাধ্য হবেন, শিহরিত হয়ে উঠবে আপনাদের অন্তর, ভেগে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে আপনাদের মেটালিজমের অহংকার………………………………!!!!!!!

পরিশেষে আক্ষরিক ফ্রেমে আবদ্ধ বন্ধ্যাদের বলতে চাই -ইসলামকে ধ্বংস করে দুই দল-

১) গোঁড়ামির আক্ষরিক ফ্রেমে আবদ্ধ চরম্পন্থি দল ২) অতিরিক্ত উদারপন্থী দল ।

আল-হাসান আল বসরি বলেছেন- “চরম্পন্থা ও উদাসীনদের কার্যকলাপেই মূলত আসল দ্বীন হারিয়ে যায়”

প্রথমদল দল যুক্তি-প্রমানের পথ ছেড়ে একাতারে সবকিছুই নিষিদ্ধ বা হারাম ঘোষণা করবে আর শেষদল অতিরিক্ত উদারতায় আল্লাহ্‌র আইনের সিমারেখা লঙ্ঘন করে সবকিছুই বৈধ ঘোষণা করবে।

প্রথম দল-তারা গোঁড়া মাজাবপন্থি হবে এবং ইস্তিহাদের সব পথ বন্ধ করে দিবে।

আর দ্বিতীয় দল- সকল মাজাবকে তুচ্ছজ্ঞান করে হকপন্থি ইমামদের সকল ভাল ভাল নীতি বিকৃতভাবে খণ্ডন করবে।

প্রকৃত বিষয় এই যে ওইসব বন্ধ্যাগণ কখনোই কুরআন-হাদিসের আক্ষরিক অর্থের বন্দীশালা থেকে কখনই মুক্ত হতে রাজি নয়। আক্ষরিক অর্থের বাহিরে ভাববার কোন যোগ্যতা কিংবা বিজ্ঞতা কিছুই তাদের নেই। এটা তাদের নিকট ঘোরতর পাপ।

মূলত মাত্রাতিরিক্ত গোঁড়ামি ও উদারপন্থি দলের পরস্পর দ্বন্দ্বের রোষানলেই প্রকৃত ইসলাম মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনা ।

ইমাম হানাফি মাতৃভাষায় সালাহ আদায় করতেন বলে মাতৃভাষায় সালাহ বৈধ হয়ে যায়না- তবে আল্লাহ্‌র রাসুল সাল্মান ফার্সিকে মাতৃভাষায় সালাহ আদায়ের অনুমোদন দিয়েছিলেন বলে এটি বৈধ হতেও পারে।

ইমাম গাজ্জালি ‘স্টাডিজেস থিওরি’ সমর্থন করেছেন বলে তা বিজ্ঞানবিশুদ্ধ তত্ত্ব হতে পারেনা- কিন্তু আল-কুরান ‘বিগবাঙ্ক থিওরিকে’ সমর্থন করেছে বলে তা অনস্বীকার্যভাবে বিজ্ঞান-বিশুদ্ধ ফাক্ট ।

ইমাম মালেক হস্তমৈথুন হারাম ঘোষণা করেছেন বলেই- যেমন তা হারাম হয়ে যায়না, আবার ইমাম হাম্বলি হস্তমৈথুন বৈধ-জ্ঞান করেছেন বলেই তা বৈধ হয়ে যায়না। তবে আল্লাহ্‌র কিতাবের তত্ত্ব অনুযায়ী যা হারাম- তা অবশ্যই হারাম। কুরআনে আম-জাম-কাঁঠালের উল্লেখ নেই বলেই আম-জাম-কাঁঠাল ভক্ষণ হারাম নয়। তবে আল্লাহ্‌ ও রাসুল যা হারাম ঘোষণা করেছেন তার বাহিরে সবই বৈধ ।

ইমাম সুফিয়ানি সাওয়ারি বলেন, “যুক্তি-প্রমানের ভিত্তিতে কোন কিছু বৈধ ঘোষণা করা বুদ্ধিদীপ্ততার পরিচয়, আর গোঁড়ামিতেতো যে কেউ কোন কিছুকে হারাম ঘোষণা করতে পারে।”

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:৪৫
৭টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড্রাকুলা

লিখেছেন সুদীপ কুমার, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১২

কোন একদিন তাদের মুখোশ খুলে যায়
বেরিয়ে আসে দানবীয় কপোট মুখায়ব।

অতীতে তারা ছিল আমাদের স্বপ্ন পুরুষ
তাদের দেশ ছিল স্বপ্নের দেশ।
তাদেরকে দেখলেই আমরা ভক্তিতে নুয়ে পড়তাম
ঠিক যেন তাদের চাকর,
অবশ্য আমাদের মেরুদন্ড তখনও... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×