somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুসংস্কার x Error 404 (পর্ব-১)

২৮ শে জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সর্বনাশের এই ভ্রান্তিময় যুগে মুসলিম সমাজ আজ যে সব কুসংস্কার ও বিভ্রান্তির বোঝা বয়ে বাড়াচ্ছে তার মধ্যে এক অভিনব-অদ্ভুত ধারণা এই যে- স্রষ্টাকে একমাত্র আরবী আল্লাহ্ নামেই সম্বোধন করতে হবে-তাছাড়া পৃথিবীর অন্য কোন ভাষায় ডাকলে স্রষ্টার নাম তার বিশুদ্ধতা হারাবে তথা দূষিত হবে...!!!

অথচ সাধারণ যুক্তিবাদী মননশীলতা বা কমনন্সেন্স এমন অদ্ভুত ধারণার পক্ষে কোন প্রকার অর্থপূর্ণ কিংবা যুক্তিপূর্ণ কারণকে আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়না। যদি তাই হয় তবে কুরআনের তত্ত্ব সাংঘর্ষিক হয়ে পড়ে এই কারণে যে কুরআনের বক্তব্য অনুসারে আল্লাহ এই অজস্র বৈচিত্র্যময় ভাষা কিংবা জাতি-গোত্র সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তার সৃষ্টির অপরুপ বিচিত্রতার মহিমা ও নিদর্শনস্বরূপ। কোন প্রকার ভাষাগত বা সাম্প্রদায়িক বৈষম্য বা বিভেদ সৃষ্টির জন্য নয়।আল্লাহ্‌র রাসুল (সাঃ) সুস্পষ্ট ভাবে আমাদের ভাষাগত বিভেদ সৃষ্টি কিংবা জাতিতত্ত্বের নিকৃষ্ট ঔদ্ধ্যত্যের সীমারেখা অঙ্কন করতে ঘোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। আর বাহিরের ধারনাকে মেনে নিলে- ইসলামের আদর্শকে কখনই সিঙ্গুলার বা গ্লোবাল জীবনদর্শন বলা যায়না। কারণ তা সিঙ্গুলারিটির তত্ত্বের সাথে সংঘাত সৃষ্টি করবে। ইসলাম কখনই কোন নিদৃষ্ট ভাষার শৃঙ্খলের বন্দীশালায় আবদ্ধ হতে পারেনা।

সাধারণ যুক্তি আমাদের এই প্রস্তাব পেশ করে যে-- যে কারণে মূসা(আঃ) এর সম্প্রদায়ের মাতৃভাষা ইবরাণী বা হিব্রু হবার ফলে ওল্ড টেস্টামেন্ট বা তাওরাত হিব্রু ভাষায় নাজিল হয়েছিল ; যে কারণে কিং ডেভিট বা দাউদ(আঃ) এর গোত্রের মাতৃভাষা ইউনানী হবার ফলে ‘যাবুর’ ইউনানী বা আরামাইক ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছিল। ঠিক একই যুক্তিতে কুরআন আরবী ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছিল- শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র রাসুলের (সাঃ) ও আরবের মাতৃভাষা আরবী বলে। কারণ অনারব বা আজমি ভাষায় কুরআন নাজিল হলে আরবরা কখনই সৃষ্টিকর্তার অবতীর্ণ ম্যাসেজ বুঝতে সক্ষম হতোনা। আর এই কথাটিই কুরআনে বলা হয়েছে-
“আমি যদি আজমি বা বিদেশী ভাষায় কুরআন নাজিল করতাম তবে তোমরা নিশ্চই অভিযোগ করে বলতে- এ কেমন কিতাব? যা আমাদের বোধগম্যতার জন্য আমাদের ভাষায় বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা হইনি। কি অদ্ভুত!! এ কেমন রাসুল যার মাতৃভাষা আরবী, অথচ এটির (কুরানের) ভাষা বিদেশী। (৪১:৪৪)।”

সৃষ্টিকর্তা বলেছেন- “আমিতো বোধগম্যতার জন্য তোমার মাতৃভাষায় কুরআনকে জন্য সহজ করে দিয়েছি, যাতে (দ্বীনের) কর্তব্য পালনকারীদের তুমি এর (কুরানের) মাধ্যমে তাদের সুসংবাদ দিতে পার।(১৯:৯৭)।”

এটাই স্বাভাবিক যে “আল্লাহ্ প্রত্যেক রাসুলকেই তার স্বজাতির নিজ নিজ ভাষায় কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যাতে বার্তাবাহকগণ তাদের সম্প্রদায়ের নিকট (আল্লাহর বার্তা বোধগম্যতার জন্য তাদের মাতৃ ভাষায়) পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে। (১৯:৯৭)।”

ইসলামে কোন প্রকারের ভাষাগত বা জাতিগত আগ্রাসন নেই। উম্মার একতার নামে মুসলিমদের মাঝে একটি ভাষা চাপিয়ে দেয়ার অর্থ হল-একটি জুলের বোঝা ও ঘৃণ্য জাতীয়তাবাদের আগ্রাসন চাপিয়ে দেয়া। যা কখনই আল্লাহ্‌ ও রাসুল(সাঃ) সমর্থন করেননি। আজকের প্রচলিত এই আরবী আগ্রাসন ইসলামের আন্তর্জাতিক লক্ষ্যের সাথে সংঘাতময় একটি পরস্পর বিরোধী সাম্প্রদায়িক মতবাদ। যা সম্পূর্ণভাবে আল্লাহ্‌র নীতি বিবর্জিত ও ইসলাম বিরুদ্ধ। যেখানে স্রষ্টা নিজেই আদম থেকে শুরু করে আজ আবধি যতগুলো নবী-রাসুল এসেছেন তাদের কারও প্রতি কোনপ্রকার নির্ধারিত ভাষার সীমারেখায় ধর্মকে আবদ্ধ করেননি- সেখানে নিছক তথাকথিত উম্মার ঐক্যের নামে এই ঘৃণ্য ভাষাগত আগ্রাসন চালানোর অধিকার আমাদের কে দিয়েছে?

যারা স্রষ্টার বানীর অর্থ বোঝেনা- আল-কুরানে আল্লাহ্‌ পাক তাদের পুস্তক বহনকারী গাধার সাথে তুলনা করেছেন। যারা নামাজে আল্লাহ্‌র সাথে কি ভাব-বিনিময় করছে তার অর্থ বোঝেনা- সেইসব নামাজীকে মহান প্রভু নেশাগ্রস্থদের সাথে তুলনা করেছেন। স্রষ্টা প্রত্যেক স্বজাতির মাতৃভাষায় এই কারণেই কিতাব অবতীর্ণ করেছেন-যেন আমরা মানবজাতি আল্লাহ্‌র পথ নির্দেশ বুঝে- স্রষ্টা আমাদের জন্য কি কি বিধিনিষেধ প্রদান করেছেন তা উপলব্ধি করে-নিজ নিজ ভাষায় অনুভবের সহিত স্রষ্টার আনুগত্য তথা ইবাদত করতে সক্ষম হই।
কারণ স্রষ্টার প্রদত্ত কিতাবের বিধি-বিধান যদি আমরা বুঝতেই সক্ষম না হই, তবে কি করে আমরা স্রষ্টাপ্রদত্ত আদেশ-বিধানের আনুগত্য করব ??

এই কারণেই নিজ নিজ ভাষায় আল্লাহ্‌র আনুগত্য বা উপাসনা করা উচিৎ-যাতে আমরা আল্লাহ্‌র নিকট নেশাগ্রস্থ বা পুস্তকবহনকারী গাধা হিসেবে পরিগণিত না হই। এই জন্যই ইমাম হানাফি আরবিতে পণ্ডিত হওয়া শর্তেও মাতৃভাষায় সালাহ আদায় ও ইবাদত করবার পক্ষপাতী ছিলেন। এই বিষয়ে ইমাম হানাফিকে প্রশ্ন করা হলে উত্তরে তিনি বলেন-“সালাহ আদায়ের সময় কুরআনের অর্থের চেয়ে ব্যাকরণের প্রতি আমার খেয়াল চলে যেত।” আর এই কারণেই তিনি মাতৃভাষায় নামাজ আদায় করতেন-যা আমাদের উপমহাদেশের তথাকথিত হানাফি মাজাবের অনুসারীগণ তাদের গুরুর এই অতি-গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত পদ্ধতি ও রায় (ফতুয়া) সম্বন্ধে অবগত নয়।[গরীয়ান কুরআন-কৈফিয়ত অধ্যায়ঃ-পৃ-৫]।

তবে উপমহাদেশের কিছু জায়গায় ও বাহিরে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের মসজিদে প্রকৃত হানাফি পদ্ধতির ফলোয়ারগণ আজও তাদের নিজ নিজ অঞ্চলের মাতৃভাষায় নামাজ আদায় করেন। নবীজি কখনই আল্লাহ্‌র ইবাদতের মাঝে ভাষাগত বোঝার জাতীয়তাবাদী আগ্রাসন চাপিয়ে দেননি।
প্রখ্যাত সাহাবী সাল্মান ফার্সি নবীজির নিকট তার মাতৃভাষায় (তথা ফার্সি)ভাষায় নামাজ আদায় করা যাবে কিনা এই প্রশ্নের উত্তরে- নবীজি সাল্মান ফার্সিকে মাতৃভাষায় সালাহ আদায় করবার অনুমোদন প্রদান করেন। আর এই তত্ত্বের ভিত্তিতেই আজও পৃথিবীর কিছু অঞ্চলের মসজিদে তাদের স্থানীয়ভাষায় নামাজ আদায়ের অনুশীলন করা হয়। [এই বিষয়ে পরবর্তীতে কোন ভিন্ন প্রবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করবো ইনশাল্লাহ]।

আরবী যদি কোন প্রকার স্পেশাল ভাষাই হয়ে থাকে তবে পূর্ববর্তী ধর্ম গ্রন্থেতো এর উল্লেখ থাকবার কথা ছিল। অথচ পূর্ববর্তী একটি ধর্মগ্রন্থেতেও এমন কোন আভাস পাওয়া যায়না যে আরবী আল্লাহ্র ভাষা, আরবী জান্নাতের ভাষা কিংবা করবরের সাওয়াল-জবাবের ভাষা। যদি তাই হয়-তবে বলতে হবে স্রষ্টা পূর্ববর্তী মানব-জাতির প্রতি এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করে পূর্ববর্তী মানবজাতির প্রতি ঘোর অবিচার করেছেন। কারণ পূর্বে পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের পৃথিবীর বেশিরভাগ নবী-রাসুল ও তাদের সাহাবী-জনগনেরই ভাষা আরবী ছিলনা কিংবা তারা আরবী জানতোও না। তাহলে কি করে তারা পরকালের বিচারের কাঠগোঁড়াই আরবীতে সাওয়াল-জবাবের উত্তর প্রদান করবেন ?

এও কি সম্ভব স্রষ্টার দ্বারা এতবড় একটি ভুল সংগঠিত হবে? অথচ কুরআন বলে আল্লাহ কারও প্রতি কোন প্রকার জুলুম করেননা কিংবা তিনি কোন তথ্য বিস্মৃতও হননা। এটা কখনই একজন স্রষ্টার চরিত্র হতে পারেনা। স্রষ্টাই যদি সকল ভাষার স্রষ্টা হয়ে থাকেন- তবে পরকালে তিনি তার সৃষ্ট সব জাতির ভাষায় দেয়া উত্তর বা কথোপকথন বুঝবেন- এটাই স্বাভাবিক।
অতএব !! শুধু মাত্র কিছু জয়িফ হাদিসের ভিত্তিতে ইসলামকে যারা আরবীয় ফ্রেমে আবদ্ধ করতে চায়- তারা মূলত ইলিয়ায়ের গর্ভে জন্ম নেয়া তাব্লিক মার্কা জামাতের ন্যায় ধর্মান্ধ গোঁড়া ও পুস্কক বহনকারী গাধার দল ব্যতীত আর কিছুই নয়। [মূলত ওইসব হাদিস বহু পূর্বেই বহু আলেম ও ফিকাহবিদ কর্তৃক জাল বা বাতিল সাব্যস্ত হয়েছে- তাই নতুন করে এইসব জাল হাদিস উল্লেখ করবার প্রয়োজন অনুভব করছিনা- ওইসব জাল হাদিসের তথ্য বিস্তারিত জানতে খন্দকার আলমের- ‘হাদিসের নামে জালিয়াতি’ বইটি পড়ুন। মূলত ওইসব হাদিস ‘ইলিয়াসি ফাজায়েল আমল’ ছাড়া কোন বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থে খুঁজে পাওয়া যায়না ]।

এই সব জাল হাদিদের ভিত্তিতেই তারা মনে করে যে- যেহেতু আরবী কুরআন ও রাসুলের ভাষা সে কারণে পরকালে বিচারের কাটগোঁড়ায় আরবিতে প্রশ্ন-উত্তর নেয়া হবে। আর এই কারনেই আরবিই জান্নাতের ভাষা, স্রষ্টার ভাষা, আরবি এক অক্ষর পাঠ করলে ১০ টি করে নেকি ইত্যাদি ইত্যাদি??

তারা এমনও কিছু অদ্ভুত হাদিস আবিস্কার করেছে -যেখানে বলা হয়েছে ফার্সি ভাষায় কথা বলাও পাপ। কি দুরভিসন্ধি...!!!
অথচ তাদের ধারনার স্বপক্ষে কুরআন কিংবা সহি-হাদিসের শিক্ষার সাথে সংঘাতপূর্ণ। এইসব আক্ষরিক ফ্রেমে আবদ্ধ গোঁড়াগণদের মতে- আরবী ব্যতীত অন্য যেকোন অনারব ভাষায় কুরান পাঠ, সালাত, দাওয়াত চর্চা, ইবাদত, প্রার্থনা এই সব কিছুই ঘোরতর অপরাধ বা পাপ কর্ম । অথচ কয়েকশো বছর আগেও এমন ধারণার তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়না।

মূলত ইসলামের আন্তর্জাতিক লক্ষ্য থেকে পথভ্রষ্ট করবার জন্যই –বিরুদ্ধবাদীরা কিছু ইমান বিক্রয়কারী আলেম কর্তৃক- জাতিতত্ত্বের এই বিষবাস্প ইসলামের মধ্যে অত্যন্ত সুনিপুণ কৌশলে প্রবেশ করিয়েছেন। যাতে মুসলমানদের মন-মগজ থেকে ইসলামের আন্তর্জাতিক লক্ষ্যে মুছে ফেলা যায় এবং ভবিষ্যতে কখনই জাতে বড় পরিসরে কোন ইসলামী বিপ্লব সৃষ্টি না হয় এবং যদি তা হয়েও থাকে তথাপিও এই ভ্রান্ত মতবাদে আক্রান্ত হবার ফলে প্রকৃত ইকামতে দ্বীনের সৈনিকগণ যাতে দুনিয়াবাসীর নিকট সাম্প্রদায়িক হিসেবে চিহ্নিত হয়।
সবচেয়ে ভয়ানক বিষয় হল- এই কুসংস্কার ইসলামের শিক্ষিত শ্রেণির মাঝেও এমন আসন গেঁড়ে বসেছে যে- যারা আজ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ইসলামের গ্লোবাল লক্ষ্য কায়েম করবার তথা দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করছে- তারাও ভালভাবে এই জাতিতত্বের কলুষতা কিংবা জাতীয়তাবাদের পরিপূর্ণ অর্থ ও সংজ্ঞা সম্বন্ধে স্পষ্ট নয়।

মূলত কিছু পথভ্রষ্ট উলামাগন ইসলাম ও স্রষ্টাকে ভাষাগত বা ট্র্যাডিশনের বন্ধিশালায় আবদ্ধ করতে চায়। কি করে সম্ভব যে স্রষ্টা একটি নিদৃষ্ট ভাষা কিংবা ট্র্যাডিশনের মধ্যে বন্ধী থাকবেন ??
অথচ আল্লাহর ধর্মের বিষয়ে এই ট্র্যাডিশনাল আগ্রাসন প্রবেশের সম্বন্ধে সতর্ক বার্তা দিয়েছেন পুরো কুরআন জুড়ে। ট্র্যাডিশন কি করে আল্লাহ্‌র ইবাদত হতে পারে??!!

আল্লাহ যদি তিনি বাস্তবিকই পুরো মহাবিশ্ব ও পুরো মানব জাতির স্রষ্টা হয়ে থাকেন- আর পৃথিবীর সবভাষা ও জাতি-বর্ণ যদি তারই বৈচিত্র্যময় সৃষ্টি হয়ে থাকে -তবে সেই স্রষ্টাকে অবশ্যই হতে হবে সকল ভাষাগত ও জাতিতত্ত্বের বিভেদ থেকে মুক্ত এবং ভাষার সকল জাতির সার্বজনীন একজন স্রষ্টা।

আর ইসলাম যদি সত্যিই একটি আন্তর্জাতিক বা গ্লোবাল ধর্ম বা জীবন ব্যবস্থা হয়ে থাকে এবং কুরআন যদি বাস্তবিকই পুরো মানব জাতির জন্য পথ নির্দেশ হয়ে থাকে তবে এই ইসলামকে হতে হবে সকল প্রকার জাতীয়তা কিংবা ট্র্যাডিশনের বাঁধন থেকে মুক্ত। এছাড়া কোন ভাবেই এটিকে বিশ্বজনীন মানবতার ধর্ম বলা যাবেনা ।

আল্লাহ্ যদি মহানবীকে বাস্তবিকই পুরো মানব জাতির পথ প্রদর্শক হিসেবে মনোনীত করে থাকেন-তবে সেই রাসুলকে অবশ্যই হতে হবে সকল প্রকার ট্র্যাডিশনাল বন্ধন ও ভাষাগত শ্রেষ্ঠত্বের পৃথকীকরণ ও বৈষম্য থেকে মুক্ত এক আন্তর্জাতিক আদর্শের ম্যাসেঞ্জার। অন্যথায় যদি রাসুল (সাঃ) এর আদর্শ আরবীয় ফ্রেমে বন্ধি হয়ে পড়ে -তবে কোনভাবেই আল্লাহ্র রাসুল (সাঃ) কে বিশ্বনবী বলা যাবেনা। আর এমন ধারনা সত্য হলে কুরআনের শিক্ষা বা তত্ত্বকে পরস্পর বিরোধী ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ ঐশী-কিতাব বলতে হবে। অথচ আল্লাহ্র দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা এই যে- “ইহা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারও রচনা হলে ইহাতে অনেক অসামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত করত।”

অতএব- জাতিতত্ত্বের যেই ধারনা আজ ইসলামের মাঝে প্রবেশ করেছে- তা কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই নয়।
ওহে বন্ধ্যা উলামাগন- “ইসলামকে আরবীয় ফ্রেমে আবদ্ধ করবার অধিকার তোমাদের কে দিয়েছে”??
ইসলাম কখনই আরবীয় ফ্রেমে আবদ্ধ থাকতে পারেনা। কিনবা ইসলাম কখনই ভাষাগত বা জাতিগত বৈষম্যের কারণ হতে পারেনা ।রাসুল (সা) বজ্রকন্ঠে জাতিয়তাবাদের বিরুদ্ধাচারণ করে বলেছেন- “যারা নিজ জাতিয়তা নিয়ে গর্ব করে কিংবা জাতীয়তাবাদের জন্য লড়াই করে কিংবা এর জন্যই মৃত্যুবরণ করে সে আমাদের (মুসলমানদের) দলভুক্ত নয়”- (বুখারি-মুস্লিম)।

যাই হোক- মোট কথা এই যে- ইসলাম কখনই কোন ভাষার সীমারেখায় আবদ্ধ কোন জাতীয়তাবাদী বা ট্র্যাডিশনাল ধর্ম নয়। বংশগতভাবে কেউ মুসলিম হতে পারেনা। মুসলিম অর্থই হল- আত্মসমর্পণকারী । যে নিজেকে স্রষ্টার নিকট সমর্পণ করে তার বিধি-বিধান মেনে চলবে সেই মুসলিম। বংশগতভাবে যেমন একজন মানুষ মুসলিম হতে পারেনা- ঠিক তেমনি ট্র্যাডিশনও কখনোও ইবাদত হতে পারেনা।

তাহলে কি করে আমরা আল্লাহ্র ইবাদতকে আরবী জাতিয়তাবাদ , ভাষা কিংবা ট্র্যাডিশনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করতে পারি??? আমাদের তথাকথিত উলামাগনের এই আচরণ- বৈদিক যুগের সেই ব্রাহ্মণদের অনুরূপ নয় কি ??!!

যে সৃষ্টিকর্তা এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন- যেই স্রষ্টা দুনিয়াতে বৈচিত্র্যময় ভাষা সৃষ্টি করেছেন- সেই স্রষ্টার ধর্ম একটি নিদৃষ্ট ভাষায় বন্ধী থাকবেন এমন অদ্ভুত ধারণা কি করে মুসলমানদের মধ্যে প্রবেশ করল- তা আজও আমার বোধগম্য হলনা ??
আমরা কি আমাদের স্বাভাবিক বিচার-বুদ্ধিও হারিয়ে ফেলেছি। অথচ আল্লাহ্ বলেন- “বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন জ্ঞানীদের জন্যই আছে নিদর্শন” -[আল-কুরআন]।

সত্যিকার অর্থে ‘আল্লাহ্’- নামটি আরবদের নিকট কখনই অপরিচিত ছিলনা। সেই ৭তম শতাব্দির আরবদের আবু-জেহেল-লাহাবগণ, ইহুদি-নাসারাগন, কাফের-মুনাফেক, বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী এক কথায় আরবজাতির সকলেই স্রষ্টাকে আল্লাহ্ নামেই সম্বোধন করত। কারণ আরবী ভাষায় স্রষ্টা মানেই আল্লাহ্‌।

ভাষা হিন্দি হবার কারণে যে জন্য ভারতীয়রা স্রষ্টাকে ভগবান বলে ডাকে, যে কারনে মাতৃভাষা ফার্সি হবার কারণে পার্সিয়ানরা স্রষ্টাকে খোদা বলে ডাকে - ঠিক একই কারণে মাতৃভাষার কারণেই আরবরা স্রষ্টাকে বাংলায় ঈশ্বর না বলে আরবীতে আল্লাহ্ বলে ডাকে। এটা সাধারণ বিচার-বুদ্ধির বিষয় ।

ঈশ্বরের আরবি শব্দই হল “আল্লাহ্”। এই শব্দটি নতুন কিছু নয়। স্রষ্টাকে বোঝাতে আরবরা তাদের পূর্ব-পুরুষের সময় থেকেই আজ অবধি এই শব্দ ব্যবহার করে আসছে (অর্থাৎ প্রফিটের অগমনের বহুকাল পূর্ব থেকে)। বিষয়টি কুরআনেও উল্লেখ আছে-“হে নবি, তুমি যদি তাদের প্রশ্ন কর মহাবিশ্ব ও পৃথিবী কে সৃষ্টি করেছেন ? তখন তারা অবশ্যই স্বীকার করে বলবে-আল্লাহ্।”
সুতরাং আল্লাহ্র ইবাদতের জন্য আরবী ভাষার আলাদা কোন স্পেশালিটি আছে বলে মনে হয়না। যদি তাই হতো তবে কুরাআনে এবং পূর্ববর্তী গ্রন্থগুলোতে বিষয়টি উল্লেখ থাকবার কথা ছিল। তাছাড়া যেই স্বর্গ-নরকের জন্য এতো যুদ্ধ সেই স্বর্গের ভাষা কি হবে তার উল্লেখ পর্যন্ত পৃথিবীর কোন ঐশীগ্রন্থে নেই ?? এতো বড় একটি তথ্য গোপন করে পূর্ববর্তী মানবজাতির প্রতি এমন অন্যায় আচরণ কি কখনও স্রষ্টার ক্রিয়া-কলাপ হতে পারে? একজন সর্বময় ও সার্বজনীন স্রষ্টার জন্য এটি কখনই শোভনীয় নয়।
স্রষ্টা বলেছেন-“আমি কোন কিছুই অর্থহীন সৃষ্টি করিনি।” নবীজি বলেছেন- “কোন আরব অনারবের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়, কিংবা কোন অনারবও আরবের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়।”

আল্লাহ্ বিভিন্ন বর্ণ-গোত্র, ভাষা-জাতি সৃষ্টি করেছেন যাতে আমরা তার প্রজ্ঞা, মহিমা ও ক্ষমতা উপলব্ধি করতে পারি। এবং যাতে আমাদের বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়, যাতে আমরা তার অজস্র বিচিত্রতার বিশালতা অবলোকন করে স্রষ্টার প্রতি বিস্মিত-বিনীত চিত্তে ভয় ও আশার সহিত তার কাছে নতজানু-নিবেদিত হতে পারি। কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে পারি। পুরো কুরআন জুড়ে বারবার এই ব্যাখ্যাটিই বিশদভাবে বিবৃত করা হয়েছে। (দ্রঃ ১২ঃ২,৪৬ঃ১২,৩৩ঃ২২-২৫,১৪ঃ৪ প্রভৃতি)।

তাকিয়ে দেখুন কতো শত অজস্র প্রকারের তৃণলতা ও পশু-প্রাণীর বিচিত্রতায় ভরপুর এই পৃথিবী। কিন্তু সমস্যা হল- চক্ষুষ্মানরাই তার বৈচিত্র্যের কারণ উপলব্ধি করতে পারেন।

যদি আপনি পূর্বপুরুষের চাপিয়ে দেয়া প্রচলিত বিকৃত ইসলামের সীমারেখা অতিক্রম করতে সক্ষম হন। এবং ইতিহাসের সত্যতাকে মেনে নেবার যোগ্যতা কিংবা বিজ্ঞতার সামান্য বিচার-বুদ্ধিও আপনার মস্তিষ্কে অবশিষ্ট থাকে- তবে ইতিহাসের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে আপনে জানতে সক্ষম হবেন যে- মধ্যযুগের মরুবাসী ‘সামাইটস্’-দের নিকটও “আল্লাহ্” শব্দটি কখনই অপরিচিত ছিলনা। এটা প্রাচীন এক-ঈশ্বরবাদের সাথে জড়িত এবং যারা ইব্রাহীমের মতাদর্শে বিশ্বাসী একটি ধর্ম। খুব স্বল্পসংখ্যক মানুষই অবশিষ্ট ছিল যারা এই একত্ববাদের ধারায় বিশ্বাস স্থাপন করত এবং আমাদের মতো তারাও সালাহ আদায় করতো। যেহেতু তাদের উপাসনাও নিরেট কিছু আচার-পদ্ধতি মধ্যেই আবদ্ধ ছিল এবং অন্যান্য প্রাণহীন ধর্মের মতো তাদের মতাদর্শও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল যা সমাজ ও রাষ্ট্রের বিষয়ে কোন প্রকার মাথা ঘামায়না। সেজন্য আরবদের গোত্র-প্রধান, মূর্তিপূজারক ও ক্ষমতাসীনরা তাদেরকে কখনই হুমকির কারণ মনে করেননি।

তাছাড়া প্যাঁগণ আরবদের প্রধান সৃষ্টিকর্তাকেও আল্লাহ্ নামেই ডাকা হত। একজন ইংলিশ যেমন সৃষ্টিকর্তাকে-তাদের মাতৃভাষায় ‘গড’ বলে, পার্সিয়ানরা যেমন খোদা বলে ঠিক তেমনি আরবরাও স্রষ্টাকে গড বা খোদা না বলে তাদের মাতৃভাষা আরবিতে ‘আল্লাহ্’ শব্দটি ব্যবহার করে।

আর এটাই স্বাভাবিক যেকোন জাতি তাদের মাতৃভাষাতেই তাদের স্রষ্টার নামকরণ করবে আর সেই নামেই তারা তাদের ঈশ্বরকে আহবান করবে এবং তাদের বোধগম্য ভাষাতেই তার ইবাদত করবে।
এটি সাধারণ জ্ঞানের বিষয়। বিষয়টি আধুনিক কালের ঐতিহাসিক ও চিন্তাশীল গবেষকগণ জানেন বলেই তারা কুরআন অনুবাদ করতে “আল্লাহ” শব্দটির পরিবর্তে ইংরেজিতে “গড” কিংবা বাংলায় ঈশ্বর ব্যবহার করছেন।
আর অপরপক্ষে গোঁড়া আলেমগণ অনুমানের ভিত্তিতে অজ্ঞানতাবশত এমন অদ্ভুত যুক্তি প্রদর্শন করে করে যে- যেহেতু আরবি “আল্লাহ্” শব্দটির কোন বহুবচন কিংবা বিপরীত লিঙ্গ নেই সেহেতু আরবী “আল্লাহই” শব্দটিই স্রষ্টার একমাত্র বিশুদ্ধ নাম। এই কাঠ মোল্লারা যেন স্রষ্টার নামকরনের বিশুদ্ধতার সনদ বা লাইসেন্স প্রদান করছেন। অথচ যার কোন প্রকার অনুমোদন পৃথিবীর কোন ঐশীগ্রন্থে নেই। আবার এই কাঠ মোল্লারাই তাদের আল্লাহ্র মেহেনতের কাজ করতে গিয়ে মাঝে মাঝে খানা-পিনা, খোদা, বেহেশত, নামাজ- রোজা ইত্যাদি ফার্সি শব্দদ্বয় ব্যবহার করেন । হাস্যকর...!!!

আল্লাহ্ শব্দটির বহুবচন নেই এই ধারনাটি কস্মিনকালেও সঠিক নয়। ইতিহাস ও আরবী ভাষা সম্বন্ধে কোন প্রকার গভীর জ্ঞান না থাকবার ফলেই মূলত তারা এই অদ্ভুত ধারনা পোষণ করেন। তৎকালীন জাহেলি যুগের বিভিন্ন মুস্রিক শ্রেণীর আরবরা বিভিন্ন নারী দেবতায় বিশ্বাসী ছিল এবং তারা তাদের ধর্মবিশ্বাস অনুসারে তাদের নারী ঈশ্বর বা দেবতার ইবাদত করত যা কুরআনেও উল্লেখ রয়েছে।
এই সব নারী দেবতাকে তারা ‘Allah’-এর বিপরীত লিঙ্গে ‘Allat’ শব্দের মাধ্যমে তথা ‘আল্লাত’ নামে ডাকতো বা আহবান করতো। সব ঐতিহাসিকগনই তা জানেন। এই ‘Allat’ শব্দটি আল্লাহ শব্দেরই fimilar gendar বা স্ত্রী-লিঙ্গ। ইংরেজিতে যাকে বলা হয় ‘GODDESS’ এবং বাংলায় ‘দেবী’। এবং তারা অনেক নারী ঈশ্বরকে আল্লাহ্র স্ত্রী হিসেবে গণ্য করতো যেই তথ্য কুরআনেও মুদ্রিত রয়েছে। যেহেতু আল্লাহ্ এক ও অদ্বিতীয়, এবং ঈশ্বরের কোন স্ত্রী, সন্তান বা কন্যা নেই, এবং সৃষ্টিকর্তাকে কোন লিঙ্গ দ্বারা অনুমান করা যায়না, তাই মধ্যযুগের এই ধর্মীয় কুসংস্কার ও অসার ধারণার বিরুদ্ধে কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে তীব্র প্রতিবাদ করা হয়েছে (উদাহরণ স্বরূপ-সুরা,৬:আয়াত১০১)।

আল্লাহ্ তথা “আল-ইলাহ”র মধ্যে ‘আল’ অর্থ- ‘ঐ’। এখানে ঐ বলতে স্রষ্টার অসামান্যতা বোঝায়। আবার ‘ইলাহ’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়- উপাস্য, হুকুমদাতা, সৃষ্টিকর্তা, আইন প্রণেতা, মুনিব, ঈশ্বর বা দেবতা বোঝাতে। পবিত্র কুরাআনে এই সবকটি অর্থেই ‘ইলাহ’ শব্দটি ব্যবহিত হয়েছে। তবে সাধারণ অর্থে ইলাহকে দেবতা বা ঈশ্বর হিসেবেই ব্যবহার করা হয়, যা ‘রব’ শব্দটির খুবই নিকটবর্তী অর্থ প্রকাশ করে। ইংরেজিতে যাকে বলা হয় ‘গড’।

আবার ওল্ড টেস্টামেন্টে এই ‘ইলাহ’ যাকে ‘ইলোআহ’ (Eloah) বলা হয়েছে, যার মূল হচ্ছে এল (EL)। ‘এল’ শব্দটি উৎপত্তি হয়েছে উল(UL) থেকে; যার অর্থ – ‘to be strong’ বা শক্তিশালী হওয়া’। নতুন নিয়মে হিব্রুতে যা এল্লাই বা সর্বশক্তিমান সত্ত্বা অর্থে ব্যবহিত হয়েছে। এই সর্বশক্তিমান সত্ত্বাকেই আরবীতে আল্লাহ্ বা বাংলাতে ঈশ্বর বলা হয়। তাছাড়া বাংলা ও হিন্দির মতো - হিব্রু ও আরবী ভাষা খুব কাছাকাছি হবার ফলে উভয় ভাষার মাঝে কিছু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়াও কুরআনে ঈশ্বরকে ‘রহমান’ নামেও ডাকা হয়েছে।
এই ‘রহমান’ শব্দটি মূলত হিব্রুভাষার বিশেষ্য পদ, কস্মিনকালেও তা আরবী নয় বা ছিলনা। ওল্ড টেস্টামেন্টে ব্যবহিত এই ‘রেহেম’ শব্দটির অর্থ দয়া (Mercy) । এই ‘রেহেম’ শব্দটিকেই আরবীতে রহমান বলে ডাকা হয়-যার অর্থ দয়ালু।
সৃষ্টিকর্তা বলেছেন- “তোমরা আমাকে রহমান বা দয়ালু বলেই ডাক কিংবা আল্লাহ্ বলেই ডাক। সকল সুন্দর সুন্দর নাম আল্লাহ্রই।সুতরাং তোমরা সেসব নামেই আমাকে ডাক। ” পবিত্র কুরআনে আরও বলা হয়েছে- “নিশ্চই সকল সুন্দর সুন্দর নাম আল্লাহ্রই এবং জ্ঞানীরা তাকে বহুনামে ডাকে।’’

কোন ব্যক্তি তার প্রভুকে বিভিন্ন নামে ডেকে থাকলে সেটা তার জ্ঞানেরই পরিচায়ক-[আলকুরআন-৭:১৭৯]।
পূর্ববর্তী ঐশীগ্রন্থগুলোর মতো কুরআনেও সৃষ্টিকর্তার বহু গুণবাচক সুন্দর সুন্দর নামের উল্লেখ রয়েছে।
যথা-‘আল-মালিক’ (The sovereign lord ) অর্থাৎ শাসনকর্তা, আল-খালিকু (The Creator) বা সৃষ্টিকর্তা, আল-কালাম (The judge) অর্থাৎ বিচারপতি বা বিচারক, আল-ওয়াহুদ (The Loving) বা প্রেমময়, আল-সালাম (The source of peace) অর্থাৎ শান্তিদাতা ইত্যাদি এমন আরও শত-খানিক।

সুতরাং ঈশ্বর ,গড, আল্লাহ্, খোদা, ভগবান, শান্তিদাতা, পরম দয়ালু, পথ প্রদর্শক, বিচারপতি, অন্তর্যামী তথা যেকোন ভাষা কিংবা নিজেদের পছন্দনীয় যে নামেই আমরা স্রষ্টাকে সম্বোধন বা আহবান করি না কেন কোন সমস্যা নেই যদি আমরা সকল ধর্মের ফলোআর বা অনুসারীগণ অন্তত একটি আন্তর্জাতিক বিশ্বাসের ভিত্তিকে মানবজাতিকে আহবান করি যে -

“এসো সেই কথায় আমরা একমত পোষণ করি যা তোমাদের ও আমাদের মাঝে একক ও সমভাবে সার্বজনীন। তা এই যে-আমরা এক ঈশ্বর ব্যতীত অন্য কারও দাসত্ব/আনুগত্য করবনা। প্রভুত্ব ও কর্তৃত্বে অন্য কাউকে আমরা ঈশ্বরের সমতুল্য মনে করবনা। এবং ঈশ্বর ছাড়া অন্য কাউকে হুকুমদাতা হিসেবেও মানবনা। এর পরও কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলে, বল- তোমরা সাক্ষী থাক যে আমরা ঈশ্বরের অনুগত।[আল-কুরআন-৩:৬৪]।”

জাতিধর্ম গোত্র-বর্ণ নির্বিশেষে সব ধর্মের অনুসারীদের জন্য এটি একটি আন্তর্জাতিক বা সার্বজনীন একত্ববাদের এক বৈপ্লবিক আহবান। কারণ পৃথিবীর প্রায় সকল ঐশী কিতাবই মূলত আমাদের এক ও অদ্বিতীয় সর্বময় প্রভুর প্রভুত্বকে স্বীকার করবার ও নিরবিচ্ছিন্নভাবে সেই অদ্বিতীয় ঈশ্বরেরই দাসত্ব বা অনুগত্যে করবার নির্দেশ প্রদান করে।

- (সৌরভ খান)।

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:১০
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড্রাকুলা

লিখেছেন সুদীপ কুমার, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১২

কোন একদিন তাদের মুখোশ খুলে যায়
বেরিয়ে আসে দানবীয় কপোট মুখায়ব।

অতীতে তারা ছিল আমাদের স্বপ্ন পুরুষ
তাদের দেশ ছিল স্বপ্নের দেশ।
তাদেরকে দেখলেই আমরা ভক্তিতে নুয়ে পড়তাম
ঠিক যেন তাদের চাকর,
অবশ্য আমাদের মেরুদন্ড তখনও... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×