somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোম- (পর্ব-১)

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“রোমকরা পরাজিত হয়েছে। নিকটবর্তী এলাকায় এবং তারা তাদের পরাজয়ের পর অতিসত্বর বিজয়ী হবে। কয়েক বছরের মধ্যে। অগ্র-পশ্চাতের কাজ আল্লাহর হাতেই। সেদিন মুমিনগণ আনন্দিত হবে। (সুরা আর-রূম:১-৪)।

কুরআনে উল্লেখিত ভবিষ্যৎবানীটি করা হয়েছিল যখন রোমানরা পারসিকদের হাতে পরাজিত ও পর্যদুস্ত হতে হতে চূড়ান্ত বিপর্জয় ও পতনের সম্মুখে দাঁড়িয়েছিল। পরাক্রমশালী পারস্য সাম্রাজ্যের সৈন্যরা তখন রোমান অধিনস্ত এশিয়ার সমগ্র অঞ্চল অধিকার করে ইউরোপের রোমান অধিনস্ত ভূখণ্ডগুলোও গ্রাস করতে উদ্যত; আর রোমান সম্রাট যখন কনস্টান্টিনোপলে তার প্রাসাদের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে বসফরাসের অপর তীরে পারস্য সৈন্যদের তাঁবু অবলোকন করছিলো যারা তার সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে এক ভয়াবহ ক্রাস সৃষ্টিকারী অজেয় শক্তিরুপে দণ্ডয়মান !!

এমনতর প্রেক্ষাপটেই অবতীর্ণ হয়েছিল সূরা রোম। এমনকি যখন স্বয়ং রোমানরাও ধারণা করতে পারেনি যে এরূপ বিপর্যস্ত ও ভগ্নপ্রায় অবস্থা হতে তারা কি করে পরাক্রমশালী পারসিদের পরাজিত করতে সক্ষম হবে !!
এটা সেই সময়ের ঘটনা যখন হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) নবুয়াত লাভ (৬১০ খ্রিষ্টাব্দে) করেছেন এবং মক্কা ও তার আশেপাশের জনগণের মাঝে তার একত্ববাদের দর্শন প্রচার করতে শুরু করেছেন।

যেহেতু অগ্নিপুজারী পারসিকদের তুলনায় রোমানরা (যেহেতু খৃষ্টান) মুসলিমদের ধর্মীয় চেতনার অধিক নিকটতর ছিল তাই রোমানদের পরাজয়ে সেই মুষ্টিমেয় মুসলমানরা মানুষিকভাবে আঘাত পেয়েছিল, আর তাছাড়া মক্কার মুস্রিকদের ঠাট্টাবিদ্রূপ তাদের মানুষিক যাতনাকে আরও তীব্রতর করে তুলেছিল; আর এই প্রেক্ষাপটেই মুসলিমদের সান্ত্বনা দেয়ার উদ্দেশ্যে সৃষ্টিকর্তা রোমানদের আগাম বিজয়ের সুসংবাদ প্রদান করেন।
এখানে লক্ষণীয় যে, আল-কুরআন এখানে রোম বা রোমান বলতে ইতালির রোমের অধিবাসী কিংবা রোম কেন্দ্রিক শাসিত রোমান সাম্রাজ্যের অধিবাসী রোমকদের চিহ্নিত করেনি। কারণ তৎকালীন সময়ের বহু পুর্বেই বর্বর জার্মানদের নিকট রোম সাম্রাজ্যের পশ্চিম অংশের বিলুপ্তি ঘটে।
আরও পরিষ্কারভাবে বুঝতে হলে একটু পেছনের ইতিহাসে দৃকপাত করা প্রয়োজন।

রোম সম্রাট কনস্টানটাইন (৩৩০ খ্রী) বিশাল রোমান সাম্রাজ্যের সুষ্ঠ শাসনব্যবস্থা পরিচালনা ও সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে একপ্রকার বিকল্প কিংবা দ্বিতীয় রাজধানী রুপে তিন মহাদেশের মিলনকেন্দ্র বসফরাস প্রণালির তীরে একটি সুশ্রী ও মনোরম শহর নির্মাণ করেন যা অচিরেই একটি জাকজমকপুর্ণ ও সমৃদ্ধশালী নগরে পরিনত হয় এবং যেই শহরটি সম্রাটের নামানুসারেই কনস্টান্টিনোপল নামে পরিচিতি লাভ করে। পরবর্তীতে রোম সম্রাট থিওডাস (৩৯৫ খ্রী:) সাম্রাজ্যেকে পশ্চিম ও পুর্ব দুইভাগে বিভক্ত করে এবং মৃত্যুর পুর্বে তিনি তার দুই ছেলের উপর এই সাম্রাজ্যের শাসনভার ন্যস্ত করে যান।

কিন্তু কিছুকাল অতিক্রান্ত হতেই পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্য (যার রাজধানী ছিল ইতালির রোম) বর্বর জার্মানদের (Hun) দ্বারা ৪৭৬ খ্রীষ্টাব্দে বিধ্বংস ও অতঃপর বিলুপ্ত হয়। তথাপি পূর্ব রোম সাম্রাজ্য তখনও স্বীয় স্বগৌরভ ও স্বমহিমায় টিকে থাকে এবং তাদের পুর্বাঞ্চলিয় রাজধানী কনস্টান্টিনোপলকে কেন্দ্র করে অত্যন্ত উদ্যত ও দম্ভের সাথে রাজত্ব করতে থাকে। আর মাসেঞ্জার মোহাম্মাদের (সাঃ) আবির্ভাবের সময়কালে এই পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যেই অস্তিত্বশীল ছিল যার রাজধানী (পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের ইতালির) রোম নয়, বরং ছিল কনস্টান্টিনোপল ( যা বর্তমান সময়ে তুরস্কের অন্তর্ভুক্ত ইস্তাম্বুল নামে পরিচিত এবং যা ওসমানীয় খিলাফতের রাজধানী ছিল ১৯২৪ সাল পর্যন্ত। তবে খিলাফত বিলুপ্ত হবার সাথে সাথে ইস্তাম্বুল তার রাজধানীর মর্যাদা হারিয়ে ফেলে) এবং তৎকালীন আরববাসীসহ আশেপাশের সকল অঞ্চলের লোকজন যেমন পারস্য সাম্রাজ্যের অধিবাসীদের কাছেও কনস্টান্টিনোপল কেন্দ্রিক সাম্রাজ্যই রোমান সাম্রাজ্য হিসেবে পরিচিত ছিল।
তাছাড়া রোমান বলতে শুধুমাত্র রোমের অধিবাসীদেরই বোঝানো হতোনা। বরঞ্চ যেমন ওসমানীয় খিলাফতের আলোচনায় ঐতিহাসিকগণ তুর্কি জনগোষ্ঠী তথা তুরস্কের মূল ভূখণ্ডের অধিবাসী না হলেও সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের সাথে সংশ্লিষ্ঠশীল অথবা কার্যত সকলকেই (যেমন সৈনিকগণ) তুর্কি হিসেবে অভিহিত করেছেন তেমনি মূল রোম শহর ব্যতীত পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য যা পরবর্তীতে একমাত্র রোমান সাম্রাজ্যের অধিনস্ত বা দায়িত্বশীল সকল লোকদের রোমান হিসেবে অভিহিত করা হত।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে মহান সৃষ্টিকর্তা সূরা রোমে সুস্পষ্টভাবে রোমান বা রোমক বলতে কনস্টান্টিনোপল কেন্দ্রিক রোমান সাম্রাজ্যের কথাই উল্লেখ করেছেন যারা সর্বশক্তিমান প্রভুর ভবিষ্যৎবাণী বাস্তবায়ন করে অত্যন্ত অভিনব রুপে ঘুরে দাঁড়িয়ে পাল্টা আঘাত হানতে শুরু করে মুস্রিক পারসিকদের উপর এবং একের পর এক তাদের যুদ্ধে পরাজিত করে পারস্য সাম্রাজ্যের রাজধানী মাদায়েনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় এবং পারসিকরা তাদের সাথে সন্ধিচুক্তি করতে বাধ্য হয়।

সুতরাং রোমের সাথে চুক্তি সংশ্লিষ্ট রাসুলের (সাঃ) এর যে ভবিষ্যৎবানী রয়েছে, (যার প্রস্তাব অনুসারে মুসলমানদের সাথে রোমের একটি সন্ধি চুক্তি হবার কথা কোন এক তৃতীয় পরাশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য) সেটা যে ইতালির রোম এমনতর ভাবনার কোন সুযোগ এখানে নেই। এমন ধারণা সম্পুর্ন অযৌক্তিক।

বরং আমাদের বিচার করতে হবে যে সেই সময়ের কনস্টান্টিনোপল কেন্দ্রিক রোমান সাম্রাজ্যের ভিত্তিতে বর্তমানকালীন প্রেক্ষাপটে রোমক বলতে কোন জাতি বা জাতিগোষ্ঠীকে আমরা চিহ্নিত করতে পারি কিংবা তারা কারা হতে পারে?
প্রথমে আমরা সেই চুক্তিভিত্তিক হাদিসটি উল্লেখ করে চাই যেখানে আল্লাহ্‌র রাসুল (সঃ) ভবিষ্যৎবানী করেছেন-
“তোমরা রোমানদের সাথে সন্ধিচুক্তি করবে। অতঃপর তোমরা এবং রোমানরা সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ করবে কোন তৃতীয় শক্তির বিরুদ্ধে। তোমাদের সাহায্য করা হবে। ফলে তোমরা প্রচুর যুদ্ধলব্ধ সম্পদ অর্জন করবে। অতঃপর তোমরা নিরাপদে ফিরে আসবে; যেখন তোমরা সবুজ শ্যামল টিলাময় এক ভূমিতে অবতরণ করবে। একজন খ্রিষ্টান তখন ক্রুশ উঁচু করে বলবে যে ক্রুশের বিজয় হয়েছে। একথা শুনে মুসলমানদের একজন বলবে যে “বরং আল্লাহ্‌র বিজয় হয়েছে” বলে গোস্বায় ক্রুশ ভেঙে ফেলবে। ফলে রোমানরা তাদের পূর্বের কৃত চুক্তি ভেঙে ফেলবে এক মহাযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হবে। তখন মুমিনরাও অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে। মুসলমানদের এই দলটিকে আল্লাহ্‌ শাহাদাতের মর্যাদায় সম্মানিত করবেন।” –[ হাদিসটি বিভিন্ন উৎস থেকে রেফারেন্সড করা যেতে পারে। প্রায় সবগুলো হাদিসের মূল প্রস্তাবনা একই]।

উপরোল্লেখিত হাদিসটিতে রোমকদের সাথে মুসলমানদের একটি সন্ধি-চুক্তি হবার প্রস্তাব এসেছে যেখানে তাদের সম্মিলিত শক্তি সমেত (মুসলিম ও খৃষ্টানরা) তৃতীয় কোন পরাশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।
পূর্বের বিস্তারিত আলোচনার পর- যৌক্তিকতার বিচারে এটা আলোচনা করা নিষ্প্রয়োজন যে, রোম বলতে কোনভাবেই ইতালির রোমকে বিবেচনা করা যাতে পারে। যেহেতু আল্লাহ্‌র রাসুলের (সাঃ) সমকালীন সময়ে রোম বলতে অর্থোডোক্স খ্রীষ্টানদের কেন্দ্র বাইজেন্টাইন বা পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য অথবা একমাত্র রোমান সাম্রাজ্যের (৪৭৬ খ্রিঃ যখন পশ্চিম সাম্রাজ্য জার্মানদের আগ্রাসনে বিলুপ্ত হয়ে যায়) রাজধানী Nova Roma তথা নতুন রোম কনস্টান্টিনোপলকেই বোঝানো হত।

সুতরাং উল্লেখিত হাদিসটিতে রোম বলতে বর্তমানে তাদের উত্তরসূরি হিসেবে কাদের নির্দেশ করে তা আমরা ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দুটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গীর আলোকে এই যুগের রোমকদের পরিচয় চিহ্নিত করবার প্রয়াস নিতে পারি। এই পর্বে আমরা প্রথম দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই খানিক আলোকপাত করবো।

প্রথমত, যদি আমরা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে অর্থাৎ অর্থোডোক্স খ্রীষ্টানদের কেন্দ্রভূমি বা বর্তমানে তাদের নেতৃত্বপ্রদানকারী দেশ হিসেবে বিবেচনা করি তবে নিশ্চিতভাবেই রাশিয়ার অবস্থান আমাদের সামনে চলে আসে। তবে শুরুতেই অর্থোডোক্স ও ক্যাথলিকদের মধ্যকার প্রার্থক্যটা কিঞ্চিৎ পরিষ্কার হওয়া দরকার।

অর্থোডোক্সরা ক্যাথলিকদের মত Jesus Christ বা ইসা (আঃ) এবং Mother Merry তথা কুমারী মাতা মরিয়ামের প্রতিমার উপাসনা করেনা। প্যাঁগণ রোমের অনেক প্রথা যেমন ক্যাথলিকদের ধর্মীয় আচার বা রীতিনীতিকে সম্পূর্ণ কলুষিত করে ফেলেছে, অর্থোডোক্সদের মাঝে এমন কলুষিত রীতিনীতি অনুপস্থিত। আর এই কারণেই পশ্চিমা রোমান ক্যাথলিক চার্চের পোপ নবম লিও এবং প্রাচ্যের কনস্ট্যান্টিনোপল চার্চের প্যাট্রিয়ার্ক সেরুলারিয়াস খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে এক মহাবিভক্তির ঘোষণা দিয়েছিলেন (১০৫৪ সালে )। এরপর বহুবার এ দুই সম্প্রদায়েকে একত্রিত করবার প্রসায় চলেছে, কিন্তু তা সফল হয়নি কখনও।
যদিও অর্থোডোক্সদের ধর্মীয় চেতনাও বিকৃতি থেকে মুক্ত নয়; তা শর্তেও প্রকৃত খ্রীষ্টানের অনেক বৈশিষ্ট্য এখনও তাদের মাঝে পরিলক্ষিত হয়। এবং মুসলিম বিশ্বাসের সাথে খ্রীষ্টানদের যে দলটি অধিকতর নিকটতর তারা নিঃসন্দেহে অর্থোডোক্স খ্রীষ্টান।
আর এতেও কোন সন্দেহ নেই যে, কুরআনে যেই খ্রীষ্টানদের অধিকতর নিরাপদ বলা হয়েছে তারা অর্থোডোক্স খ্রীষ্টান।
“তুমি সব মানুষের চাইতে মুসলমানদের অধিক শত্রু হিসেবে ইহুদী ও মুশরেকদেরকে পাবে এবং মুসলমানদের সাথে বন্ধুত্বে অধিক নিকটবর্তী তাদেরকে পাবে যারা নিজেদেরকে খ্রীষ্টান বলে। এর কারণ এই যে, খ্রীষ্টানদের মধ্যে অনেক আলেম-দরবেশ রয়েছে যাদের মাঝে অহংকার প্রবনতা নেই ।” [সূরা মায়েদাঃ৮২]।

সুতরাং বর্তমানেকালে অর্থোডোক্স খ্রীষ্টানদের উত্তরসূরি হিসেবে যদি কোন নির্দিষ্ট জাতি বা দেশকে বিবেচনা করি তাহলে আমাদের রাশিয়া ও তার পূর্ব ইউরোপের এবং এশিয়ার মিত্র অর্থোডোক্স খ্রীষ্টান অধ্যুষিত দেশ বা জাতিগোষ্ঠীকেই হিসেবের আওতায় আনতে হবে যাদেরকে বর্তমান কালের রোমান হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
বর্তমান কালের বিশ্বপরিস্থিতি আমাদের এ ধারণার পক্ষে সমর্থন জানায় যে- রাশিয়া ইতিমধ্যেই সোভিয়েত পরবর্তী ভাঙনের দুর্বলতা কাটিয়ে পৃথিবীমঞ্চে আবারও শক্তিমত্তার সাথে আবির্ভূত হয়েছে যা আমরা দেখতে পেয়েছি ইউক্রেনের নিকট থেকে ক্রিমিয়া দখলের সময় এবং বর্তমানে সিরিয়ার রণাঙ্গনে।

কিন্তু এবার তারা সোভিয়েত আমলের সেই নাস্তিক্যবাদী শক্তি হিসেবে নয়; বরং অর্থোডোক্স খ্রীষ্টানদের নেতৃত্বশালী দেশ হিসেবেই আমরা তাদের দেখতে পাচ্ছি যারা ইতিমধ্যেই অর্থোডোক্স খ্রীষ্টান অধ্যুষিত দেশ ছাড়াও তুরস্ক্‌, শিয়া অধ্যুষিত ইরান ও মধ্য এশিয়ার মুসলিম দেশগুলোর সাথেও সুসম্পর্ক স্থাপন ও জোট গঠনে সক্ষম হয়েছে।
সুতরাং রাসুলের (সাঃ) সময়কালের রোমকদের উত্তরসূরি হিসেবে ধর্মীয় উত্তরাধিকারের ভিত্তিতে নিশ্চিতভাবেই আমরা রোমক বলতে রাশিয়াকে চিহ্নিত করতে পারি।

এখন আমরা আমাদের প্রথম দৃষ্টিভঙ্গি ও বিবেচনার আলোকে হাদিসে উল্লেখিত তৃতীয়শক্তি সম্পর্কে একটি তাত্ত্বিক আলোচনা করতে পারি।
যদিও আমরা মনে করি এই সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কোন রায় দেবার সময় এখনও আসেনি। তবে প্রথম দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে তৃতীয় শক্তি বলতে আমরা মনে করি- এটি মুসলিম-ইহুদী-খ্রীষ্টানদের বাহিরের কোন শক্তি যা শক্তিশালীভাবে আত্মপ্রকাশ করবে অথবা ইতিমধ্যেই আত্মপ্রকাশ করেছে।

আর বর্তমানকালে ত্রিশক্তি তথা বাহিরের Rising Power হিসেবে প্রথমেই আমরা চীন ও দ্বিতীয়ত ভারতকে বিবেচনা করতে পারি। তবে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তিমত্তার বিচারে চীনকেই তৃতীয়শক্তি হিসেবে গণ্য করা যায়। কারণ হাদিসে তৃতীয়শক্তি বলতে পেছনের শক্তিও বলা হয়েছে। এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় পেছনের শক্তি কোন ভৌগলিক দিক নির্দেশনা দ্বারা বিচার করা যায়না। তাই খুব সম্ভবত পেছনের শক্তি বা Rear power এর অর্থ হবে ‘Challenging Power’ যার প্রকাশ দেখে দিয়েছে অর্থনৈতিক লেনদেন ও সামর্থের সূচকে USA কে পেছনে ফেলে ২০১৬ সালে চীনের ১ নম্বর অবস্থানে আসা। যদিও পরিসংখ্যান সম্পূর্ন সত্য নয় এবং নিশ্চিতরুপেই USA এখনও অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক দিয়ে ১ নম্বর শক্তি তথাপিও চীন আজ বিশ্বমঞ্চে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে ক্রমাগত তাদের প্রভাব বিস্তার করে চলেছে।

এই মুহুর্তে এরূপ সম্ভাবনা অসম্ভব মনে হলেও একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বিশ্বপরিস্থিতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রীয় স্বার্থের কারণে যেকোনো পরিস্থিতি পরিবর্তিত হতে পারে যা সুনির্দিষ্ট সময়কাল নিকটবর্তী না হওয়া পর্যন্ত আমরা কেবল অনুমান করতে সক্ষম।

এই তৃতীয়শক্তির পরিচয় বিষয়ে বর্তমানকালের গবেষকদের মাঝে আমরা পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাই। তাই চীনকে তৃতীয় শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা একটি অনুমিত সিদ্ধান্ত। আর সঙ্গত কারনেই এই রায়ের স্বপক্ষে আমরা শক্তিশালী কোন প্রমাণ উপস্থিত করতে সক্ষম নই।
তবে শ্রদ্ধেয় ইমরান নজর তৃতীয়শক্তি হিসেবে যেমন ইসরাইলকে উল্লেখ করেছেন সে সম্বন্ধে আমরা একমত নই। আমদের বিশ্বাস- তৃতীয়শক্তি অবশ্যই ইহুদী-খ্রীষ্টান শক্তিবলয়ের বাহিরের কোন পরাশক্তি। যেটি চীন না হলেও ভারত হবারও প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া শেষ জানানায় মুস্রিক হিন্দুস্থানের বিরুদ্ধে (মুসলমানদের) যুদ্ধ সংক্রান্ত হাদিস আমরা সবাই জানি.................. চলবে..........................................

[পরবর্তীপর্বে রোমকদের সম্বন্ধে আমরা আরেকটি বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে আলোচনা করতে চাই। কেননা রোমকদের উত্তরসূরি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (NATO) হবার সম্ভাবনাও প্রবলতর। রাজনৈতিক ও সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে রোমকদের উত্তরসূরি হিসেবে ব্রিটিশ ও তার মৈত্রী জোট যেমন ন্যাটো হবার সম্ভাবনাকেও আমরা অস্বীকার করতে পারিনা]।

- সৌরভ খান

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:৩১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড্রাকুলা

লিখেছেন সুদীপ কুমার, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১২

কোন একদিন তাদের মুখোশ খুলে যায়
বেরিয়ে আসে দানবীয় কপোট মুখায়ব।

অতীতে তারা ছিল আমাদের স্বপ্ন পুরুষ
তাদের দেশ ছিল স্বপ্নের দেশ।
তাদেরকে দেখলেই আমরা ভক্তিতে নুয়ে পড়তাম
ঠিক যেন তাদের চাকর,
অবশ্য আমাদের মেরুদন্ড তখনও... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×