somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ শোনা হল না গল্পটি

১১ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাদামের খোসা ছাড়তে ছাড়তে চোখ আটকে গেল বাদামগুলোকে আগলে রাখা কাগজটির দিকে। রুলটানা রঙ্গিন কাগজটি নীড় হারা কোন ডায়রীর দলছাড়া পালক। হাতের লেখাগুলো বড্ড নজর কাড়া, বড় বড় আর ভাঙ্গা ভাঙ্গা কিন্তু সুন্দর।
রঞ্জু বাদামগুলোকে শার্টের বুক পকেটে রেখে আগ্রহ ভরে কাগজটি পড়া শুরু করল,

“তাং-১৯/০৪/২০০৩
এক দেশে ছিল রাজা আর রানী..... রাজার ছিল প্রচুর ধন সম্পত্তি, গোলা ভরা ধান ঘোরাশাল ভর্তি ঘোড়া, টাকশাল ভর্তি টাকা , সোনা মণি মুক্তা...... রাজা মশাইয়ের ছিল তিন কন্যা.......... মিষ্টি কন্যা, টক কন্যা আর লবণ কন্যা। তো একদিন রাজা মশাইয়ের ইচ্ছে হল তার প্রতি কন্যাদের ভালোবাসার পরিক্ষা নেবেন...... যেই কথা সেই কাজ............
রূপকথার সেই রাজা, রানী আর তাদের কন্যাদের গল্পের বাকি অংশটুকু আর কোন দিন শোনা হয় নি। রাতে ভয় পেতাম বলে মা’র গলা ধরে শুয়ে পড়তাম। প্রতিদিন গল্প না শুনলে আমার ঘুম ধরত না। মা একই গল্প প্রতিদিন বলতেন, হয়ত অন্য গল্প জানতেন না বলে। মা চুলে আঙ্গুল বুলিয়ে দিতে দিতে গল্প শুরু করে দিতেন। গল্পে গল্পে চলে যেতাম সেই রাজার রাজপ্রসাদে,তার রাজ্যে। চিন্তিত রাজার মুখখানী ভেসে উঠত কল্পনার মানসপটে। কল্পনার রাজ্যে পায়চারী করতে করতে কখন যে স্বপ্নের দেশে চলে যেতাম। গল্পের একই জায়গায় এসে ঘুমিয়ে পড়তাম। আর শোনা হয় নি বাকিটুকু।

আজ বড্ড শুনতে ইচ্ছে করছে গল্পটি। কি হল রাজার, কি হল তার তিন কন্যার, পিতার প্রতি ভালোবাসার পরিক্ষায় কে পাশ করল শেষে? বড্ড শুনতে ইচ্ছে করছে। রাত বাড়ছে , ভয়ও বাড়ছে। মা’র গলা ধরে থাকতে ইচ্ছে করছে। মা আজ আমাকে ছাড়াই শুয়ে পড়েছে। সে স্বার্থপরের মত আমাকে একা রেখেই ঘুমোচ্ছে। আমার যে ভয় করছে, প্রচন্ড ভয় করছে। হাসপাতালের এই ৩০২ নাম্বার রুমের জানালাটা দিয়ে লাশকাটা ঘর দেখা যাচ্ছে। মা, আমার খুব ভয় করছে। শেষ বারের মত একবার গল্পটি শুনতে চাই মা। আর মাত্র একবার তোমার গলা ধরে শুতে চাই। রাতের সাথে ভয়ও বাড়ছে,মা চোখ বুজে ঘুমোচ্ছেন। ভয় কাটানোর আমি ডাইরী লিখছি আর মাঝে মাঝে মা’র মায়াভরা মুখখানীর দিকে তাকাচ্ছি। ভয় কমছে না, এ ভয় অন্য কিছুর।

মা ঠিক আমার সামনে শুয়ে আছেন ,রুম নাম্বার ৩০২, সদর হাসপাতাল। মা ব্রেইন স্ট্রোক করেছেন। তিন দিন যাবত লেফট সাইড প্যারালাইসড। খুব ইচ্ছে করছে মা’কে ডেকে তুলতে, সেই গল্পটি শুনতে মা’র গলা ধরে শুয়ে থাকতে। পারছি না, মা প্যারালাইসড.........

তাং-২৫/০৪/২০০৩
হ্যা, মা’র সেদিন ঘুম ভেংগেছিল। পুত্রকে জেগে রেখে মা ঘুমোবে এ কেমন কথা। মা জানতেন আমি ভয় পাচ্ছি, মায়ের মন বলে কথা। ঘুম ভেঙ্গে মা আমার দিকে করুন দৃস্টিতে তাকিয়ে পানি ইশারা করেছিলেন। মা’র চোখ জোড়া কেমন জানি অচেনা লাগছিল। বেদনাশ্রুত চোখ জোড়া এই বুঝি কেদে দেবে। গ্লাস ভরে পানি আনতে আনতেই মা ছটফট শুরু করলেন। আমি ইমার্জেন্সির ডাক্তারকে ডাকতে গেলাম। ডাক্তার এলেন কিন্তু মা চলে গেলেন।
রুপকথার গল্পটি আর শোনা হল না, মা’র গলা ধরে আর শোয়া হল না”।

রঞ্জুর চোখের পানিতে কাগজটি ভিজে গেছে। অক্ষরগুলো রঙহারা হয়ে যাচ্ছে, কিছুটা স্যাঁতস্যাঁতে। বাদামগুলো হাতে রেখে রঞ্জু কাগজটি বুক পকেটে রেখে দিল। ঘরে ফেরার সময় হয়ে গেছে।
নাহ, আজ আর ঘরে যাবে না সে, বৃদ্ধাশ্রমে যাবে। অনেক দিন যাবত মা’র খবর নেয়া হয় না। খুব দেখতে ইচ্ছে করছে মা’কে।










সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:২১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×