লাশ পরে, রক্ত ঝরে। জাতি হারায় তাদের মেধাবী সন্তানদের, দেশ হারায় জাতির বিবেকদের। তবুও নেই কোন বিচার, নেই প্রতিকারের ব্যবস্থা। তাই আজও লাশ পরছে, থামছে না রক্তের পৈশাচিক হোলি খেলা।
১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ, ৬৬'র ছয় দফা, '৬৯-এর গণআন্দোলন, '৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন এবং '৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এই বিশ্ববিদ্যালয়টির আছে গৌরবের ইতিহাস।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এমনো ইতিহাস আছে যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। শিক্ষক ডঃ মোহাম্মদ শামছুজ্জোহার শহীদ হবার ইতিহাস, যিনি ছাত্রদের জীবন রক্ষার্থে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছিলেন।
আফসোস বড়ই আফসোস, আজ সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই শিক্ষকদেরই হত্যা করা হচ্ছে নির্মম ভাবে!
গত দশ বছরে সেখানে হত্যা করা হয়েছে তিনজন শিক্ষক,জাতির বিবেককে। রাজশাহীর মতিহারের এই সবুজ চত্ত্বর আজ রক্তাত্ত্ব প্রান্তরে পরিণত হয়েছে। ২০০৪ সালে হত্যা করা হয় অর্থনীতির অধ্যাপক ইউনূসকে, ২০০৬ সালে হত্যা করা হয় ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদকে আর লেটেস্ট গত শনিবার হত্যা করা হল, ডঃ শফিউল ইসলাম লেলিনকে। শিক্ষকদের পবিত্র রক্তে রঞ্জিত বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্নাঢ্য ইতিহাস যেন দিনে দিনে ধূসর হয়ে যাচ্ছে।
এতো গেল শিক্ষকদের কথা, গত ৩২ বছরে প্রাণ হারিয়েছে ৩১ জন শিক্ষার্থী। বাবা-মা’র আদরের মেধাবী সন্তানগুলো দুচোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে ঠিকই কিন্তু ফিরে যায় লাশ হয়ে। আরো কতশত যে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে তার ইয়ত্তা নেই। দুঃখের কথা সুষ্ঠু বিচার হয়নি কোন ঘটনার। বিভিন্ন সরকারের লালনে পালনে বেড়ে ওঠা সন্ত্রাসীরা আজ ফ্রাংকেনস্টাইনের দানব হয়ে গেছে, রেহাই নেই কারুর।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আজ মোটামোটিভাবে একটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ কেন পৃথিবীর অন্যকোন দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে হলে পুলিশ ফাড়ি আছে কিনা জানা নেই, কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে রয়েছে পুলিশ ফাড়ি। এরপরেও থামছে এই যুদ্ধ, থামছে না লাশের রাজনীতি।
ক্যাম্পাসটিতে এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে উত্তরনের উপায় আছে, সেখানে ছাত্র রাজনীতি চিরতরে নিষিদ্ধ করতে হবে নতুবা সেনাবাহিনীর স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করতে হবে!!!!! যে করেই হোক, রক্তের এই নির্মম উৎসব বন্ধ করতে হবে। কে জানে কাল হয়ত আমার বন্ধুটিও প্রাণ হারাতে পারে কিংবা জাতি হারাতে পারে তার আরো এক বিবেবকে।
কোন একদিন ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ড. মুহাম্মদ এনামুল হক, সাবেক প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি হাবিবুর রহমান, ডেভিড কফ, হাসান আজিজুল হক, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন প্রমুখের মানুষেরা হয়ত লজ্জা পাবেন তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছিলেন বলে।
কিংবা, বিশিষ্ট নাট্যকার মাসুম রেজা, মলয় ভৌমিক, চিত্রপরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিম, সংগীত শিল্পী এন্ড্রু কিশোর, এহসান রাহি, ক্রিকেটার আল-আমিন ও সাবেক ক্রিকেটার মুশফিক বাবু,যুক্তরাজ্যের হাই-কমিশনার অধ্যাপক সাইদুর রহমান খান প্রমুখের মত মানুষ গুলো হয়ত লজ্জা পাবেন তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন বলে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির ইমেজ দিনে দিনে তলিয়ে যাচ্ছে গভীর থেকে অতল গভীরে।