somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

যুবায়ের খান
দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স সমমান),nজামিয়া ইসলামিয়া লালমাটিয়া মাদরাসা, n৬/২৬, ব্লক-এফ লালমাটিয়া, মুহাম্মাদপুর, ঢাকা-১২০৭nnতাখাসসুস ফিল ফিক্হ ওয়াল ইফতা, nজামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া, সাত মসজিদ, মুহাম্মাদপুর, ঢাকা-১২০৭nnশিক্ষক, nইদারতুল কুরআন ঢাকা, nপশ্চ

মেঘের আড়ালে চাঁদ:ঃ জামিল ইবরাহীম

০৬ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছেলেটার প্রশ্ন শুনে চমকে উঠতে হলো।
সেই কবে গ্রাম ছেড়েছি। গ্রামের কথা মনে রাখবোনা বলে পিছনের সব মন থেকে ঝেড়ে ঝুড়ে ফেলেছি। কখনো মনে গ্রামের পথ ঘাট পূর্ব পুরম্নষের ভিটে মাটি চকিতে উঁকি দিলেও দূর দূর বলে তাড়িয়ে দিয়েছি। যারা আমাকে গ্রাম থেকে বের করে দেয় তাদের কথা কেন মনে রাখবো?।
তিন বছরে এই শহরে দিব্যি দাঁড়িয়ে গেছি। কারো দয়ার উপর বাঁচতে হয় না। নিজের খাও, নিজে বাঁচো, কেউ দুই কথা শোনাতে আসবেনা। তিন বছরে গ্রামের কথা বেশ ভুলেই গেছিলাম। কোথাকার এই ছোকরার প্রশ্ন সব গুলিয়ে দিলো। সকাল থেকে এক টানা অফিসের কাজ করে দুপুরবেলা একটুখানি বেরিয়েছি। অবেলায় বাদাম খেতে ইচ্ছে হলো। ছোকরাটাকে পাঁচ টাকার বাদাম দিতে বললাম। তুই বাদাম বিক্রেতা, বাদাম দিবি। তা, না। মুখ তুলেই বললো, আপনি মুনশি বাড়ীর আলতাফ ভাই না? আপনাকে গিরামেত্তে বাইর কইরে দিছিলোনা? চমকে উঠতে হলো।
এই চট্টগ্রামের বাদাম বিক্রেতা ছোকরার পÿে ফরিদপুরের মুনশি বাড়ির কাহিনী জানার কথা নয়।
-তুই কিডারে? উত্তেজনায় গ্রামের ভাষা বলে ফেললাম।
-"আমাগে বাড়ি আপনাগে ফুলতলিতেই। আপনি যহন ফুলতলি প্রগতি সংঘের সভাপতি ছিলেন তহনেত্তে আপনারে চিনি।
- গ্রাম ছেড়ে চিটাগাং কি করে আসলি?
- 'পলায় আইছি' -ছেলেটির সরল উত্তর- 'আমার বাপরে পরানমুনশি বাজারে কান ধইরে ঘুরোইছে, বাজান ঐ রাত্তিরিই স্টক কইরে মইরে গেছে'। পরানমুনশির নাম শুনতেই পা থেকে মাথা পর্যন্ত্ম দপ করে জ্বলে উঠলো। শালা কুত্তার বাচ্চা!।
- তোর মা তোরে সাথে নিলোনা কেন?, আমি জিজ্ঞাসা করলাম।
ছেলেটা চুপ করে গেলো ফ্যালফ্যাল করে তাকালো তারপর বললো, 'উনি আমার সৎ মা। আমি কোলে থাকতি আমার মা মইরে গেছে" ছেলেটার সাথে আমিও চুপ হয়ে গেলাম। ফুলতলির পাড়ে আডিয়াল খাঁ নদী। ছেলেটার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। মনে হচ্ছে আমি ফুলতলির পাড়ে দাড়িয়ে আছি। সামনে প্রবহমান আড়িয়া খাঁ। ছেলেটি কান্না থামিয়ে হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে উঠলো,
-'রাজাকারের ছেলে সরকারী দল কইরে চেয়ারম্যান হইছে। এ্যহন মানুষির টাকায় রাস্ত্মা কইরে নাম দেছে জনাব মুক্তিযোদ্ধা খালেকুজ্জামান সড়ক। আমার বুড়া বাপে কইলো- "রাজাকারের ছেলে সরকারী দলের চেয়ারম্যান হলি বাপ কি মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যায় নিকি?" তাতেই আমার বাপরে উরা মাইরে ফ্যলালো, ছেলেটি কেঁদে ফেলতে যাচ্ছিলো। আমি অসহিষ্ণু হয়ে উঠলাম,
-'আমিও তো সে কথাই বলেছিলাম, তোরা আমাকে গ্রাম থেকে বের করে দিলি কেন?'
- 'আপনার বংশের লোক আপনারে বাইর করে দেছে। গ্রামের মানুষ ভয়ে কিছু কতি পারিনি। আমার বাপরে পরানমুনশি মাইরে ফ্যলালো, কেউ কিছু কইছে'?।
ছেলেটি বলতে বলতে কেঁদে ফেললো, 'ভাই আমারে সাথে নিয়ে যান, আমি চেয়ারম্যান হয়ে ঐ শালারে'..........
আমি কোথায় নিয়ে যাবো। ইসাপুর এতীমখানা মাদরাসায় ভর্তি করে দিলাম। তোর চেয়ারম্যান হওয়ার দরকার নেই। মেম্বারও হওয়ার দরকার নেই। তুই মানুষ হ।ছেলেটি কোন প্রতিবাদ না করে দিব্যি লেখা পড়া শুরম্ন করে দিলো।, পাঞ্জাবী, টুপিতে ওকে বেশ মানিয়ে গেছে।

সবুজ পরীÿায় ফাস্ট হয়েছে। হুজুর আমাকে দেখেই বললেন, 'রাস্ত্মা থেকে তো মানিক কুড়িয়ে এনেছেন ভাই, এখন মিষ্টির ব্যবস্থা করেন'। সবুজ ছাত্রদের মাঝে মিষ্টি বিতরনের সময় আমার চোখে পানি এসে পড়লো, ও আমার রক্তের কেউ না, কিন্তু এই মূহুর্তে মনে হচ্ছে, পৃথিবীতে সবুজই আমার সব। ছেলেটা হঠাৎ আমার দিকে তাকালে দেখলাম ওর চোখেও জল চিক চিক করছে।
ধ্যান জ্ঞান সব সবুজের দিকে থাকায় অন্যকোন দিকে মনোযোগ দিতে পারিনি। এর মধ্যে দেশের পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে উঠেছে। ঢাকায় কামাল শিকদার ওরফে কালু মিয়া নামে জনৈক লোক আলস্নাহর রাসূলের নামে কটুক্তি করেছে। পরশু সন্ধ্যায় খবর প্রকাশ হওয়ার পর থেকে সকাল বিকাল মিছিল বিÿোভ হচ্ছে। "রাসূলের অবমাননা সইবোনা সইবোনা। ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই, কামালের ফাঁসি চাই।, নারায়ে তাকবীর ............ কান ঝালাপালা হবার জোগাড়।
রাস্ত্মার পাশে দোতলার ছোট ঘরে আমার বাস। মিছিল এলেই সেরেছে! আওয়াজে টেকা দায়। আজ বিকালে মিছিলের আওয়াজ শুনে জানালার পাশে গিয়ে দেখি সাদা পাঞ্জাবী আর টুপির সমুদ্র। সবুজকে দেখলাম হাত নেড়ে শেস্নাগান দিচ্ছে। চকিতে একবার সে আমার জানালার দিকে তাকিয়ে নিজেকে আড়াল করে ফেললো। মিছিলটি ইসাপুর বাজার পার হতেই ধিম ধিম গুলির শব্দ। তারপর মানুষের ছোটাছুটি। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে সবুজকে খোঁজার চেষ্টা করলাম। পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে এক দৌড়ে ওর মাদরাসার গিয়ে দেখি- সবুজের মাথায় সাদা কাপড় বাঁধা। রক্তে লাল হয়ে আছে। উত্তেজিত ভঙ্গিতে ও চারপাশে জড়ো হওয়া ছেলেগুলোকে হাত পা নেড়ে কী যেন বলছে। আমি সোজা হুজুরকে গিয়ে বললাম, 'আপনি ওকে মিছিলে যেতে দিলেন কেন? খানিক চুপ থেকে হুজুর বললেন, 'কয়লা ধইলে ময়লা যায়না ভাই। আপনি ওকে রাস্ত্মা থেকে নিয়ে এসেছেন। কালও মিছিলে যেতে নিষেধ করেছি। আজকে গেট তালা দিয়ে রেখেছি। সে দেয়াল টপকে বের হয়ে গেছে। রাস্ত্মার বেয়াড়া ছেলে রাস্ত্মার দিয়ে আসেন না হয় নিজেই কবে ফেঁসে যাবেন'।
হুজুর থামলেন। আমি ঠান্ডা হয়ে গেলাম। আমার গ্রামের ছেলে, পথ থেকে ওকে নিয়ে এসেছি ঠিক কিন্তু পথে ফেলে দেব না। হুজুরকে অভয় দিয়ে বললাম, একটা রাবার বুলেট তো, ঠিক হয়ে যাবে।আপনি ও নিয়ে চিন্ত্মা করবেননা। বাসায় এনে সবুজকে অনেক বুঝালাম। এসব করতে নিষেধ করলাম। কোন কিছুতে ছেলেটা হ্যা-ও বললোনা, না-ও বললোনা। কলা গাছের মতো গম্ভীর হয়ে থাকলো। গম্ভীর সবুজকে কেমন অদ্ভুত অচেনা মনে হলো।
রক্তে চপ চপ ব্যান্ডিস বদলে নতুন ব্যান্ডিস লাগিয়ে দিলাম। বেচারা সবুজটা এসে আমাকে ভীষণরকম গ্রামের কথা মনে পড়িয়ে দিয়েছে। ঘুম থেকে জাগলেই মনে হয় আমি গ্রামের বাড়িতে আছি। আর কি অদ্ভুত, টিনের চালে আমের পাতা ঝরার শব্দ পাই, অথচ আমার উপরে ছাদ। সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হলো- ঘুম ভাঙ্গলে মনে হয় এক দৌড়ে আড়িয়াল খাঁর তীরে চলে যাই। সেখানে আমার ভেলা বাঁধা আছে।
এমন তো হতো আমার এগারে বছর বয়সে। সরদারদের কলাগাছ মিয়ারা কেটে উজাড় করে দিলে কতগুলো কলাগাছ নিয়ে আমি আড়িয়াল খাঁয় ভাসিয়ে দিয়েছিলাম। ঘুম ভাঙ্গলেই ভেলা নিয়ে মাঝ নদিতে চলে যেতাম। তারপর শুন্যে হাইজ্যাম্প করে পানি কাঁপিয়ে এক ডুবে নদীর ঐ পার।
আরো হয় কি, ঘুমের ভিতর মিছিলের শব্দ শুনলে আঁতকে উঠি। সরদার আর মিয়াদের লড়াই বুঝি শুরম্ন হয়ে গেলো। সেও তো আমার শৈশবের ঘটনা।
এমন হচ্ছে কেন? কৈশরের পরের স্মৃতি থেকে আমি কি বিস্মৃত হয়ে যাচ্ছি? নাকি সবুজের যে বয়স অনুরাগে অবচেতনে বারবার সেই বয়সে ফিরে যাচ্ছি?
সবুজের কপালে হাত রাখলাম।
ঘুমন্ত্ম ছেলেটার চেহারা আড়িয়াল খাঁর মতো নিষ্পাপ ও মায়াবী হয়ে উঠেছে। আহারে এতো টুকুন ছেলেটা গুলি খেয়েছে!।

দেশের পরিস্থিতি যতো খারাপ হচ্ছে পালস্না দিয়ে সবুজের স্বভাবও খারাপ হচ্ছে। গতকাল একটা ছেলেকে ঘুষি মেরে কপাল ফাটিয়ে দিয়েছে। পরশুদিন ক্রিকেট খেলতে গিয়ে গ্রামের একটা ছেলেকে স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়েছে।, হুজুরের জগ গস্নাস ভেঙ্গে ফেলেছে। দৈনিক একটা না একটা নালিশ শুনতেই হচ্ছে। আসলেই কয়লা ধুইলে ময়লা যায় না। তোকে নিয়ে আসলাম রাস্ত্মা থেকে। মাসে মাসে তোর পিছনে কতগুলো টাকা ঢালছি। আর তুই আছিস মানুষের কপাল পাটানো নিয়ে। মিয়াদের পুত না? রক্তের দোষ কি যায়!।
পরিস্থিতি আরো উত্তাল হয়ে উঠেছে। মানুষের অবস্থা দেখলে মনে হয় কালু শিকদারের ফাঁসি না দিয়ে যাবে না। সরকারও চটেছে। মিছিল হলেই গুলি। প্রতিদিন মিছিল হচ্ছে প্রতিদিন গুলিও হচ্ছে। সরকার কি জনতা কেউ নড়ছেনা।
এখন প্রায়ই নিজেকে ঘরে বন্দি রাখি। ভালো লাগে না।, প্রতিদিন গুলির শব্দ শুনতে কারই বা ভালো লাগে। ওদিকে সবুজ হয়েছে দিলিস্নকা লাড্ডু। গিলতেও পারছিনা ফেলতেও পারছিনা। আজ বিকালে পরিস্থিতি খানিকটা শান্ত্ম দেখে সোনাই মাঠের দিকে বের হলাম। মাঠের দÿিন দিকে বাবু ভাইয়ের চায়ের দোকান। এই এক জিনিষ! বাবু ভাইয়ের দোকানের আগুন গরম চা খেলে মনে হয় পৃথিবীতে আসাটা একেবারে মন্দ হয়নি। মাঠের কাছাকাছি আসতেই দেখি সবুজ কাঁদতে কাঁদতে ছুটে আসছে। বুকের ভেতরটা ধক করে উঠলো।
- 'কিরে, তোর কি হইছে?'
-'কুত্তোর বাচ্চা নাস্ত্মিকটা আমারে চড় মারছে, ঐ চুল খাড়া বাবুল্যা।
সবুজের গালে দেখি পাঁচ আঙুলের দাগ'।
- 'কেন তুই কি করেছিস?'
- 'আমি কিছু করি নাই, দোকানে গিছিলাম বিস্কুট কিনতি। অইতি টুপি কাইড়ে নিয়ে কইলো, 'পুইচকা মৌলবাদি, মিলাদ পাওনা মিছিলে নামো? ...দিমু কাইট্টা?' আমি ভালো বায় কইছি 'টুপি দিয়ে দেন'।
অইতি কয়, 'টুপির ভিতরেই যতো শয়তান থাকে'।, আমি রাগ সামলাতি না পাইরে কইছি, 'কুত্তোর বাচ্চা, শয়তান তোর লুঙ্গির মধ্যি থাহে।, অমনি অইতি আমারে ঠাস কইরে .......
আরিফ ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলো।
- 'থাপড়ে তোর দাঁত ফেলে দেবো'-আমি রাগ সামলাতে পারলাম না -'আমাকে বললে আমি বিস্কুট কিনে দেইনা? তুই বাবুলের সাথে ঝগড়া বাধাতে যাস, ওকে তুই চিনিস, সরকারী দলের ক্যাডার, রাস্ত্মা ঘাটে ছুরি মেরে দিলে আমি কিছু করতে পারবো?
-বাবুলের গুষ্ঠি আমি......
মানুষ তো নয় গলায় আস্ত্ম একটা কাঁটা বিঁধিয়েছি। কান ধরে টানতে টানতে ওটাকে মাদরাসায় দিয়ে আসলাম।
সন্ধ্যার পরে টেবিলে বসে দুই লাইন লিখছি আর কাটছি। ভালো লাগছে না। রাস্ত্মা থেকে কী একটা ধরে আনলাম। জীবনটাই তেজপাতা করে দিচ্ছে।
-'আসসালামু আলাইকুম'
তাকিয়ে দেখি সবুজ। আমি ওকে ভিতরে ঢুকতে বলিনি। ও আমার চেয়ারের পাশে পা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলো, 'ভাইজান আমার শক্র কে?'। মাথায় রক্ত চড়ে গেলো। মাদরাসার ছাত্র আর এলাকার ছেলেদের গুষ্ঠি ঠেঙ্গিয়ে আমার কাছে এসেছে শক্র কে জানতে।
-শালা, লাথি মেরে ঘর থেকে বের করে দেবো। রাস্ত্মা থেকে কাল সাপ ধরে এনেছি আর দুধ কলা দিয়ে ত্‌াই পুষছি। মাগরিবের পর পড়ার সময় তিনি শক্রর তালাশে বের হয়েছেন। ইবনে বতুতা কোথাকার।
- ভাইজান আমি বলিতিছিলাম.......
-চোপ, থাপড়ে দাঁত সবকটা ফেলে দেব। তুই আমার কী হোস? তোর জন্য সকাল বিকাল মানুষের কথা শুনতে হবে। চেহারা তো এক্কেবারে মহাত্মা গান্ধির মতো। ভিতরটা ইবলিশের বাসা।
-'ভাইজান আমি বলিতিছিলাম.....
-'একটাও কথা বলবিনা'-আমি সাফ জানিয়ে দিলাম-'সোজা আমার ঘর থেকে বের হয়ে যা। আর কখনো তোকে যেন আমার চোখের সামনে না দেখি'। সবুজ নি:শব্দে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।

তিন ধরে রাস্ত্মায় রাস্ত্মায় ঘুরছি। সবুজকে কোথাও পাচ্ছি না। এখানে ওখানে গোলাগুলি হচ্ছে। কোথায় কোন মিছিলে গিয়ে ছেলেটা না মারা পড়ে!। এই তিনদিনে সরকার মনে হচ্ছে ÿেপে গেছে। ঢাকার বায়তুল মোকাররম, চট্টগ্রামের জমিয়াতুল ফালাহ খুলনার নূর মসজিদের মুসলিস্নদের উপর এক হাত নিয়েছে। মানিকগঞ্জে জুম্মার পর পাচজনকে স্বর্গ দেখিয়েছে। তিন দিন অফিসে যাচ্ছি না। দিনভর রাস্ত্মায় ঘুরে ঘুরে সন্ধ্যার খবরের আগে বাসায় ফিরি। টিভিতে আবার না বলে বসে পুলিশের গুলিতে লাওয়ারিশ এক বাচ্চা নিহত।
আজকেও টিভির সামনে বসে আছি। দেশেল পরিস্থিতি ও কালাম শিকদার সম্পর্কে আজকে সরকারের অবস্থান জানা যাবে। সন্ধ্যা ঠিক সাতটার সময় টিভি পর্দায় জেসমিন জাহান দেখা দিলেন। সাড়ে সাতটায় খবর শেষ হতে না হতেই রাস্ত্মায় বিÿুদ্ধ মানুষের শেস্নাগান শোনা গেলো।
তারপর গুলির শব্দ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, 'এটা গনতান্ত্রিক দেশ। মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা সবার আছে। কালু সিকদারের ইস্যু নিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি সরকার বরদাশত করবেনা'। আইনমন্ত্রী বলেছেন, 'কালু শিকদার ফাঁসি অথবা বড় ধরনের কোন শাস্ত্মি পাওয়ার মতো অপরাধ করেনি'। ধর্মমন্ত্রী বলেছেন, ইসলাম ÿমা ও উদারতার ধর্ম। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ফেতনা ফাসাদের সুযোগ ইসলামে নেই। আল ফিতনাতু আশাদু মিনাল কাতল।

কালু শিকদার খুন হয়েছে। কে বা কারা রাতের অন্ধকারে খুন করে বাসার সামনে ছুরিবিদ্ধ লাশ ফেলে গেছে। কাঁচা হতের খুন।
সকালের সংবাদে কালু শিকদারের খুনের খবর প্রচার হওয়ার পর জানালার কাছে দাঁড়িয়ে দেখি বাবুলের নেতৃত্বে চাপাতি সজ্জিত একদল লোক "কালু শিকদারের খুনিদের রÿা নাই রÿা নাই" বলতে বলতে ইসাপুর বাজার পার হয়ে যাচ্ছে। সারাদিন উৎকন্ঠায় কাটালাম। কার উপর কি বিপদ নেমে আসে!। সন্ধ্যার পর টিভি খুলেই শুনি কালু শিকদারের খুনি গ্রেফতার। যাক বাবা, সন্দেহজনক ধরপাকড় আর নীরিহ মানুষের উপর অত্যাচার অন্ত্মত বন্ধ হলো। টিভির ব্যামেরা ঘুরিয়ে খুনির উপর ধরতেই তড়াক করে লাফিয়ে উঠলাম সবুজ!!!।
টিভির পর্দায় জেসমিন জাহান শব্দ করে উঠলেন, পুলিশ বেষ্টিত চৌদ্দ বছরের এই বালকটিই কালু শিকদারের খুনি। আমি বোধহয় ধপাস করে পড়ে গেলাম।

গুলি খাওয়ার পর আরিফের মাথায় যেমন একটা পট্টি বাঁধা ছিলো এখন আমার মাথায়ও তেমন একটা পট্টি বাঁধা। হানিফ এঙ্প্রেসের সি ফোর সিটে বসে ঢাকায় যাচ্ছি। পরিবহনের টিভিতে খবর দেখাচ্ছে। একটা খবর শেষ হলে হেলপার চ্যানেল ঘুরিয়ে আরেকটা খবরে যাচ্ছে। চৌদ্দ বছরের একটা ছেলে কালু শিকদারকে খুন করে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে। যাত্রীরা কৌতুহল নিয়ে ওকে দেখছে। টিভি পর্দায় সবুজের হাস্যোজ্জল একটা ছবি দেখাতেই এক যাত্রী বলে উঠলো, একে তো স্বর্ণ পদক দেয়া উচিত। দেখেছেন ছেলেটার কী সাহস! ফাঁসির আদেশ হতে যাচ্ছে অথচ ওর ভিতরে কোন টেনশন নেই। আরেক যাত্রী গর্জে উঠলো, আপনাদেরকে জুতা দিয়ে পেটানো উচিত। খুনির পÿে কথা বলেন, মুখে বাঁধে না? তৃতীয় আরেক যাত্রী গলা উঁচু করলো, রাসূলকে গালি দিলে মুখ দিয়া রা বাইরায় না, রাসূলের বন্ধরু পÿে কইলে গায়ে বিন্ধে, না?
গাড়ির ভিতর ধুন্ধুমার ঝগড়া বেঁধে গেছে। একটু আগে যে লোকটা জুতা দিয়ে পেটাতে চেয়েছিলো তাকেই এখন সবাই জুতা দিয়ে পেটাতে উদ্যত। মেজরিটির বিপÿে গিয়েও লোকটা দমে যায়নি। ঢাকা গিয়ে সব ক'টাকে দেখে নেবে বলে হুমকি দিচ্ছে। যাত্রীদের চেচামেচি থামাতে না পেরে হেলপার হতাশ হয়ে টিভি বন্ধ করে দিলো।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি বলেছেন, 'খুনির বিচার তারা করেই ছাড়বেন। আইনমন্ত্রি বলেছেন, 'এই ছেলের বিচারের জন্য যদি আইন সংশোধন করতে হয় তাও আমরা করবো।, ধর্মমন্্ত্রী বলেছেন, 'আন নফসু বিন নফস, হত্যার বিনিময়ে হত্যা।
গতকাল সাংবাদিকদেরকে সবুজ বলেছে, 'ও লাওয়ারিশ, বাবা- মা কেউ নেই। চট্টগ্রামে একজন পাতানো ভাই আছে। তার সাথে ও দেখা করতে চায়'। সকালের পত্রিকায় সংবাদটা পড়ে রওনা দিয়েছি। মহা সড়কের ভিড় ঠেলে ঢাকায় পৌঁছতে রাত দশটা। রাতের বেলা আসামীর সাথে দেখা করা যাবে না। একটা দিন লালবাগে এক আত্মীয়ের বাসায় কাটালাম। পরদিন বিকালের দিকে কাউকে কিছু না জানিয়ে কারাগারের সামনে চলে এলাম। জেলগেটে মানুষের ভীড়। চৌদ্দ বছরের বালক কালু শিকদারকে খুন করে সরকারের গালে চরম এক থাপ্পড় বসিয়ে দিয়েছেন। একবার যদি দেখা যায়!।
আমি জেলগেট দিয়ে ভিতরে ঢোকার সময় সাংবাদিকদের ক্যামেরার ফ্ল্যাশে মনে হলে চামড়া সাদা হয়ে যাবে। খুনির একমাত্র আত্মীয় বলে কথা।

লোহার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে সবুজ।
আমার থেক দূরত্ব মোটে দুই হাত। কিন্তু ছুঁতে পারছিনা। গ্রীলের ফাঁক দিয়ে আঙুলও ঢুকবেনা। অনেÿণ চুপ থেকে সবুজ বললো, 'ভাইজান, সত্যি কি আমার ফাঁসি হয়ে যাবে'? -সবুজের চেহারাটা বিষন্ন। 'ছোটদের তো শুনেছি ফাঁসি হয় না'।
আমার ভিতরটা হুহু করে উঠলো।ছেলেটা জানেনা আজ রাত বারোটায় ওর ফাঁসি হবে। ওকে খুন করার জন্য আইন পরিবর্তন করা হয়েছে। অনেক কষ্টে চোখের পানি আটকালাম। আজকে আমি কাঁদবোনা। সবুজ বলতে লাগলো। 'আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আমার শক্র কে? কেন করেছিলাম জানেন? আমার যখন কেউ ছিলোনা গ্রামের মানুষ তখন আমাকে আশ্রয় দিতে চেয়েছিলো। আমি যখন বাদাম বিক্রেতা তখন আপনি আমাকে আশ্রয় দিলেন। কিন্তু যখন আমি মাদরাসায় পড়া শুরম্ন করলাম তখন দেখি আমার পাশে আর কেউ নেই। প্রথম যেদিন মাদরাসায় ভর্তি হয়েছি, তার পরের দিন বাবুলের দলের একটা ছেলে আমার পিঠে ঘুষি মেরেছিলো। আমি নাকি জঙ্গী। হুজুর তাকে কিছু বলার সাহস পাননি। মাদরাসায় আসার দুই মাস পর আমার বন্ধু আতিক রোড এঙ্েিডন্টে মারা গেলো। কেউ একটু প্রতিবাদ করলোনা। অথচ জাহাঙ্গীর নগরের একটা ছেলে গাড়ি এঙ্েিডন্টে মারা গেলে ঐদিন শত শত গাড়ি ভংচুর হলো। যেদিন বাবুল আমাকে মেরেছিলো সেদিন উল্টো আপনি আমাকে বকা দিলেন। বুঝতে পরলাম আমি প্রতিবাদের শক্তিহীন দুর্বলদের কাতারে নেমে এসেছি। আমাদের শত্রম্নরা মহা শক্তিধর।
মুক্তিযুদ্ধের কথা বললেও নপুংসক রাজাকারদের পাপাত্মা এদের দেহে ঘুরে বেড়ায়। এদের কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করা মানে নিজের মৃত্যুর ফরমান নিজ মুখে পাঠ করা।
অভিজ্ঞতা থেকে বুঝে নিয়েছি আমার বাবার খুনি শুধু পরান মুনশি নয়, এরা সবাই। বাবা যেহেতু দুর্বল কিন্তু প্রতিবাদি ছিলেন তিনি তাই এদের সবার প্রতিপÿ ছিলেন'।
সবুজ দম নিলো। লাল চোখ দুটোয় বিন্দু বিন্দু পানি জমেছে। গ্রীল ধরা হাত গুটো থরথর করে কাঁপছে। ও কথা বলতে শুরম্ন করলো,
'যে পাপাত্মা ৭১ এর রাজাকারদের ভিতরে ছিলো। যে পাপাত্মা পরান মুনশির ভিতরে আছে। যে আত্মা থাকলে একজন মুক্তযোদ্ধাকে বাজারে কান ধরে ঘুরিয়ে হত্যা করা যায়। সে আত্মা এদের সবার ভিতরে আছে। এরা সবাই আমার বাপের খুনি। যদি সম্ভব হতো এদের সবগুলোকে আমি খুন করতাম। আমি ভেবে দেখেছি, কৃষক মজুরদের রক্তে কেনা স্বাধীনতাকে কুÿিগত করা এরা সবাই রাসূলের দুশমনের পÿে। কালু শিকদারকে খুন করতে পারলে এদের সবার গালে একটা থাপ্পড় বসে যায়। আমি তাই...............
আর শোনা গেলো না। ফাঁসির আসামীর সাথে বেশীÿণ কথা বলা যাবে না। কতগুলো পুলিশ আমাকে টেনে বের করে দিচ্ছে। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম, চোখ বন্ধ করে লোহার গ্রীলে হাত রেখে সবুজ কথা বলে যাচ্ছে। ভেজা চোখের পানি গাল বেয়ে নেমে বুক পকেট ভিজিয়ে দিচ্ছে। ছেলেটা বুঝতে পারেনি ওর শেষ কথা গুলো শোনার জন্য-ও আর কেউ রইলো না।
না, আছেন অদৃশ্য থেকে একজন খুব মনোযোগ দিয়ে ওর কথাগুলো শুনছেন।

সন্ধ্যার আঁধার নেমে এসেছে। পুরান ঢাকার ঘিঞ্চি রাস্ত্মা দিয়ে উদ্দেশ্যহীনভাবে হেঁটে বেড়াচ্ছি।
লাঠি সোটা নিয়ে একদল লোক মিছিল করতে করতে আমাকে অতিক্রম করে পিছনের দিকে গেলো। কামরাঙ্গীর চরের মাঝামাঝি একটা জায়গা থেকে মুসুলিস্নদের একটা মিছিল আমাকে পিছনে ফেলে সামনের দিকে চলে গেলো। আমি সরম্ন একটা গলিতে ঢুকে পড়লাম।
কতÿণ হেঁটেছি বলতে পারবোনা- সামনে দেখি চাঁদের আলোয় বিশাল এক নদী বয়ে চলেছে। এই নদী নাকি ঢাকা শহরের সমস্ত্ম আবর্জনা টেনে নিয়ে যায়। যারা একটি শিশুকে হত্যা করার জন্য আইন পরিবর্তন করে নদীটি কি সেসব আবর্জনাগুলোকে টেনে নিয়ে যেতে পারে না?।
আজ রাত বারোটা এক মিনিটে সবুজের ফাঁসি। বুড়িগঙ্গার পাড়ে বসে আছি। মাথার উপরে মস্ত্ম বড় চাঁদ। সবুজকে বলার মতো কতো কথা ছিল। কিছুই বল হলো না। ভেবেছিলাম ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে বলবো, তুই ছাড়া আমার কেউ নাইরে ভাই, তুই চলে যাবি?। ছেলেটা জানেনা আজ রাতেই ওর ফাঁসি। কথাটা তাই বলা হলো না। একখন্ড মেঘ মস্ত্ম চাঁদটাকে আড়াল করে দুনিয়াদারি অন্ধকার করে দিলে ঘড়ির দিকে তাকালাম। বারোটা দুই মিনিট।
তারপর মেঘের আড়াল থেকে চাঁদটা মুক্তি পেলে দেখি সমস্ত্ম চরাচর চাঁদের জোসনায় ভেসে যাচ্ছে। আর কি রম্নদ্ররোষে নদীটা ঢাকা শহরের সব আবর্জনা ভাটির দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
ঢাকা শহরের ময়লা আবর্জনাগুলোকে সাগরে ছুড়ে ফেলতে এই চাঁদ বহুবার দেখেছে। ঢাকা শহরের মানব আবর্জনাগুলোকে সাগরে ছুড়ে ফেলতে এই চাঁদ কবে দেখবে
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×