আমার এ দেশে ছয় ঋতু পালা বদলেতে..
মধুমাস নামে কিছু মাস রহিয়াছে।
মাসের শুরুতে আম্র কাননে ভরিয়া উঠিয়া মন,
কাল-বৈশাখী গর্জে উঠিয়া জানায় নিমন্ত্রণ!
বালক-বালিকা ছুটোছুটি করিছে আম্র বাগান জুড়ি,
গায়ের লাজুক বধুটিও এল সহাস সঞ্চার করি।
বৃষ্টি-জলে-কাদা মাখা মাখি ঝড়ের সীমানা ভুলি,
প্রতিযোগিতায় নামিয়াছে তাহারা আম্র গুলোরে তুলি।
বাজের শব্দে ভয়ে কাপিয়া বাড়ির পথটি ধরি,
হাসিয়া কুটি কুটি হইয়াছে দেখ আলোকিত বিভাবরী।
লিচুর বাগানে উঁকি দিয়াছে তাহারা মালিনীরে নাহি দেখি
গাছেতে উঠিয়া পারিয়া আনিল আধপাঁকা লিচু সেকি!
মুখেতে দিতেই রসে ভরপুর মিষ্টি মাতাল ঘ্রাণ,
মধুর মাসেই ফলের রসেতে ওদের ভরিছে প্রাণ।
কালো জামের এক ডাল ভাঙ্গিয়া পরিয়াছে পুকর পাড়ে,
খোকাখুকু এক দৌড়ে গিয়াছে ,হারায়ে দিবে কে কারে ?
জামের রসেতে রাঙ্গাবে বলিয়া তাহারা হইল রে পরিকর,
রক্তকণা ও মেধা বৃদ্ধিতে জেন বিকল্প নাহি আর।
বায়ুচলনের গতিকে বোঝা যদিও হইয়াছে ভার..
রহস্য ঘিরিয়া চন্দ্রের আলোকে, মেঘ মানিয়াছে হার।
মধু মাসের যামিনী বুঝিবা ফলের পাঁকা ঘ্রাণে..
মায়াপাশে রাখিল মোদের অদৃশ্য এক টানে।
গাছের ডালেতে সাজিয়াছে কামরাঙ্গা ফুলের মতন সাজে,
থোকা থোকা জামরুল ঘ্রাণের পসরে ঘরে থাকিলাম না যে।
কাঁচা-পাকা পেয়ারা যেমন দেখিয়া লোভী হইয়াছে মন,
আয় কে যাবি গাছের শাখেতে আজি পেয়ারা নিমন্ত্রণ।
আমাদের বাড়ির এক পাশে গাব বৃক্ষ রহিয়াছে..
জ্বীনের আবাস শুনিয়া দামালেরা কভূ যেন ভয় পাইয়াছে।
হলুদ রঙের ফল দেখি তাহারা ভয়-ডরকে পিছনে রাখিয়া...
শাখ হইতে আনিল যেমন সুগন্ধি গাব পারিয়া।
করমচা গাছের ঝোপের মাঝে লাল ও সবুজ ফল....
কাঁটা ভরা ডালে হাত বাড়ায়ে জুড়িয়াছে কোলাহল।
ছবেদা গাছের সব চেয়ে উচু শাখে তাহারা বসে....
মন ভরালো পাকা ছবেদার রসে।
নটকনের ঘ্রাণে মন মাতানো ক্ষণ...
জুড়াইছে তাহারা পাইয়াছে যতটাক্ষণ।
শুধু গোল গোল ফল দেখা গিয়াছে পাতাহীন বেল গাছে ...
পাকিলে পথিকের মাথায় পরিবে এই ভাবনা কি আর আছে ?
শাখে উঠিয়া পারিল তাহারা বেল নামক এক ফল...
এই ফলের উপকারীতা গুলি জানা নাহি কার বল!
মধু মাসের প্রারম্ভে দেখিয়াছিলাম তরমুজ ও বাঙ্গির প্রাচুর্যতা...
কৃষকের মুখে হাসি...দোকানির ক্রয়-বিক্রয় হরদম চলিয়াছে।
এক দন্ড সস্তি পাইয়া মনে বড় আনন্দ হইয়াছিল উল্লাসে...
বুঝি দারিদ্র সীমায় যে রহিয়াছে সেও মধুর এ স্বাদ পাইয়াছে।
হাটবারে খুঁজিয়া পাইলাম টকফল ডেউয়া এক কোণে...কাঁঠালের মত দেখি.
সারি সারি কোয়া আছে বলিয়া তাহাকে কাঁঠালের ভাই বলিবে কি ?
হ্যা , কাঁঠাল! জাতীয় ফল বলিয়া তাহার ঢের গুরুত্ব রহিয়াছে..
প্রচুর ফলনের এই ফল রোজ বাজারে বেশ সস্তা হইয়াছে।
মধু মাসের নামের সন্ধিতে রসালো কাঁঠালের রহিয়াছে যে অবদান...
আনারসও সাথে সাথে হাজিরা দিয়েছে ধারাকে রাখিবে সে বেগবান।
একা একা মধুর ফলের এ ভোগ আমাদের অধিকার নয়...
প্রতিটি মানুষের মন ভরিবে যে ভোগে তাহাই মধু মাসের প্রত্যয়।
তানিয়া হাসান খান
সময়: রাত্রি ১২:০৯মি.
তারিখ: ৪/৭/২০১৩ইং
উৎসর্গঃ আমার কবিতার একজন একনিষ্ঠ ভক্ত আঙ্কেল সামীর গুপ্তকে কবিতাটি উৎসর্গ করা হল। তার অনুরোধ ছিল যেন মধু মাস নিয়ে আমি কাব্য লিখি। ধন্যবাদ আর শ্রদ্ধা তাঁর জন্য।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


