বহুদিন পর ব্লগ করতে আইসা ব্যাপক আকথা শুনলাম।
যেমন সবচে চালু কথাটা হলো, এই চিনাবাদামরা কোই থাকে? আজিজের কোনায়? চারুকলায় আর ছবির হাটে? পেরেসকেলাবের সামনে বাইশগজে?
উত্তরে বলি: জনাব, চিনা অচেনা নির্বিশেষে বামরা কোই থাকে, তা তো জানেই। বিএনপি= আওয়ামী লীগ নির্বিশেষে তারা মন্টু ঘোষ হয়া মার খায়, মোশরেফা মিশু হয়া ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে শীতের রাতে মেঝেতে পড়ে কাৎরায়। কোথায় থাকে বামরা, সেইটা তো অজানা কিছু না।
কিন্তু আজাদ মাস্টার, পাঁচটা বচ্ছরের আর বাকি আছে কয় মাস, সময় গেলে তোমাগোরে খুঁইজ্জা পামু তো!
মাস্টারে কয়, বামরা স্লাট। খানকি। মানে ভাড়া খাটে।
মাস্টারে মনে হয় অনেক বচ্ছর মা্স্টারি করছে, কথা বলা তাই অভ্যাস। মাস্টারের কি মনে আছে, বাপের মৃত্যুর পর দেশে যখন কান্দনের লোক পাোয়া যায় নাই, মন্টু ঘোষ তখন এই নির্মম হত্যার নিন্দা কইরা জেল খাটছিল? মনে নাই, কারণ মাস্টারের ভাবে সাবে যা বুঝলাম, এ আদতে জানেই না কিছু। যাকে বলে মুরুক্খু।
মাস্টাররে তাই কোই, মাস্টার, বেশ্যা কথাটার ব্যবহারটাই এইভাবে করাটা নিন্দনীয়, কিন্তু রাজনিতির মাঠে বেশ্যা যদি কেউ হয়া থাকে সে হৈল তারাই, যারা পয়সা পাইলে এইডসের ভয় মাথায় নিয়াও ভাড়া খাটে, পয়সা যখন নাই, তাদের দুই পয়সার দেখাও মিলে না। বেশ্যা যদি কাউরে বলতেই হয়, নিজের পার্টি অফিসে গিয়া বলো, বিম্পি অফিসে গিয়াও বলতে পারো।
কিন্তু কেউ যদি বেশ্যাবৃত্তিতে নামেই, তার একটা আচরণগত পরিবর্তন হয়। সেটা কি? সেটা হলো নিজের কালিমাটা সে পরের মুখেও চাপায়া দিতে চায়। টাকাপয়সার এই কাড়াকাড়ির আমলে কেউ সত্য কথা স্মরণ করায়া দিলে তারেও তাই চোর বলতে বাধে না আসল চোরার। তাইতো বলে, চোরের মার বড় গলা!
কিন্তু আজাদ মাস্টার একটা বিরাট অনুসন্ধানী কর্মও পরিচালনা কর্ছেন। সেইটার জন্য তারে সাধুবাদ দেই। যদিও পরিশ্রমটা বৃথা গেছে ইতিহাসের মর্মটা না বুঝতে পারার জন্য।
মাস্টার মশাই বইপুস্তক ঘাইটা দেখতে পাইয়াছেন যে রুশ বিপ্লবের পর চেকা হৈছিল। চিনা বিপ্লবের পরও এম্নি আরেকটা। বাংলাদেশে বিপ্লবের পর কিছু হৈলে তাইলে দোষ কুনখানে-- মাস্টারে প্রশ্ন।
মাস্টাররে উত্তরে বলি: প্রশ্নটার দুইটা উত্তর আছে, প্রথমটুকু আমার উত্তর না, সাফাইও না। সেইটা হৈল এই দুই বিপ্লবে তাদের সম্পত্তিচ্যুত করা হৈছে যারা ছিল সম্পত্তিবান শুধু না, তাদের সম্পত্তি মালিকানাটার ধরনই ছিল এমন যে সেটা দেশে উৎপাদন বিকাশের পথে বিরাট বাধা ছিল। কিন্তু এই দুই দেশের বিপ্লব ঠেকাতে নামছিল বড় বড় দেশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ফরাসি, জার্মানসহ আরও সব শত্রুরা। দীর্ঘদিন গৃহযুদ্ধ চলে এই দেশীল বড়লোক (যারা দেশের প্রায় সব সম্পদ ইজারা দিছিল বিদেশীদের কাছে) আর বিদেশী ভাড়াটিয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে। এবং রুশ আর চিনারা বিজয়ী হৈছিল এই গৃহযুদ্ধেও, কারণ তাদের উদ্দেশ্য ছিল সৎ্
আমি এই পেটোয়া বাহিনীর পক্ষে না, এবং মনেও করি ইতিহাস প্রমাণ করেছে যে এইভাবে বিপ্লব টিকায়ে রাখাও যায় না। এইটা আমি বলতে বাধ্য যে, শত্রু নির্মম ছিল বলেই তাদেরকেও নির্মম হতে হয়েছে-- যদিও এখন স্ববিরোধিতা এইখানে যে, এই সমস্যার সমাধান একটা না বের করতে পারলে পরের বিপ্লবটাও চিনা কিংবা রাশিয়ার মতই শেষমেষ হয়তো স্বৈরতন্ত্রই প্রতিষ্ঠিত হবে শ্রমিকের গণতন্ত্রের বদলে। এই জায়গাতেই আমি খারেজি।
কিন্তু তারপরও, মাস্টার মশাই, মুজিবুর রহমানের রক্ষীবাহিনীর সাথে ওনাদের একটা মৌলিক পার্থক্য আছে। ওনারা ওই সব বাহিনী করছিলেন যারা বিপ্লবী পুনর্গঠনের শত্রু, তাদের দমন করার জন্য। রক্ষীবাহিনী গঠনই করা হৈছিল ব্যাপক লুণ্ঠণরে পাহারা দেয়ার জন্য। শেখ সাহেব যখন মৃত্যুবরণ করেন, দেশের প্রধান দুই ধনী ব্যক্তি তখন শেখ ফজলুল হক মনি। আর গাজী গোলাম মোস্তফা।
খোঁজ নিয়া জানায়েন তো মাস্টার মশাই, পিয়ালরেও পারলে জিগায়েন, এই দুইজনের পেশা কি ছিল ৭১ সালের আগে? কেমনে তারা দেশের সবচে বড়লোক হৈছিলেন?
উত্তর না জানা থাকলে আমি দিবানি। যদি আল্লায় হায়াত দারাজ করে। কিন্তু আসলেই, এইটা জানার জন্য খারেজির মুখের দিকে চায়া থাকার দরকার নাই, অজস্র ওই বয়েসী মানুষ জানে, তাদের স্মৃতিকথাগুলাতে সেই সব কথায় ভরপুর। বাংলা বই তো আপনে নাকি হুমায়ুন আহমেদ ছাড়া তেমন বেশি পড়েন নাই, তাই আপনার হয়তো জানা নাই।
চিনা আর রাশিয়ান নানান কিসিমের বাহিনীররেও আমি সমর্থন করি না, কিন্তু মাস্টার সাহেব, এই হৈল পার্থক্য। রুশরা একটা বিপ্লবের পর দুনিয়ার সবার আগে মহাকাশে মানুষ পাঠাইছিল। দুই দুইটা বিশ্বযুদ্ধের পুনর্গঠন করছিল। বিজ্ঞানে-শিক্ষায়-নারীর অগ্রগতিতে তার অবদানরের কারণে মানব প্রজাতি বহু শত বচ্ছর তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো। তাদের চেকা কারও লুণ্ঠনরে পাহারা দেয় নাই। চিনারা, তাদেরও আমি সমর্থন করি না, কিন্তু মাস্টার, তারা নিজের দেশে সহস্র কোটিপতি বানাইছে, সেই জন্য গোপন বাহিনী লাগে নাই, গোপন বাহিনীটা লাগছিল এমন মানুষগুলারে উচ্ছেদ করতে, যারা চিনরে ভিক্ষুক, আফিমখোর বানয়া রাখছিল; যাদের আয় ছিল ব্হুজাতিকদের-সাম্রাজ্যবাদীদের দালালী আর নিজের দেশের চাষাদের রক্তপান। উৎপাদনের বিকাশে যারা ছিল বাধা। রক্ষীবাহিনী সকল উপায়ে এই মানুষগুলারেই রক্ষা করার জন্য গঠিত হৈছে, প্রথম থেকে দেশটাকে ভারতের, আর পরিনতিতে (কেননা দেশটারে একা গিলার ক্ষমতা ভারতরে একার ছিল না) এইটা মার্কিন, চিন সবার বাজারেই পরিণত হৈল।
ইতিহাসের বিচারে তাই এই বাহিনীগুলা গঠনের মাঝেই একটা মৌলিক তফাত ছিল। এমনকি বিখ্যাত সব গণতান্ত্রক বিপ্লবের পরও (যেমন ফরাসি বিপ্লব, বৃটেনে পার্লামেন্টারি বিপ্লব) একই ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছিল। আমি এই আদর্শকে সমর্থন না করতে পারি, কিন্তু তাদের লক্ষ্যকে অসত বলতে পারতেছি না। কিন্তু রক্ষী বাহিনীর গঠনের উদ্দেশ্যই ছিল অসত। নির্যাতন তাই প্রধান অভিযোগ না, নির্যাতনের লক্ষ্যট আরও বড় অভিযোগ।
আশা করি মাস্টার বুঝতে পারছে কিছু। না পারলেও ক্ষতি নাই। মাস্টারের গালিগালাজকে উপলক্ষ্য করে জুম্মবারে যদি পাবলিকরে খুতবা দিয়া কিছু সওআব হয়, তাতেই বা ক্ষতি কি।
অনির্দিষ্টকালের জন্য ব্লগ হতে আবার বিদায়।
আমিন।